|| একসময়ের প্রিয় ছড়াগুলো এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে ||

in hive-129948 •  2 years ago 

ছেলেবেলায় একসময় মা, দিদিমা, পিসিমাদের মুখে শোনা ছড়াগুলো ক্রমশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ছেলেবেলাকে ভরিয়ে রাখত যে সুন্দর সুন্দর ছড়া ও কবিতাগুলো, আজ সেগুলোর চর্চা একেবারে কমে গেছে।

সেই সমস্ত কবিতা ও ছড়াগুলোকে স্মরণ করে আজকের প্রতিবেদনটি রচনা করলাম। এই হারিয়ে যাওয়ার পেছনে আমার ব্যক্তিগত মতামতও রেখেছি। চাইলে আপনিও পড়তে পারেন। বিস্তৃত বর্ণনা নিচে রইলো।

boy-1300136__480.webp

Source

একটা সময় মা দিদিমা'দের মুখ থেকে কত ছড়া শুনতাম। খোলা আঙিনায় মস্ত বিছানা পেতে সবাই শুয়ে পড়তাম একসাথে। বেশির ভাগ পরিবার ছিল তখন একান্নবর্তী। এখন ধীরে সমস্ত কিছু বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

একান্নবর্তী পরিবারও নেই। তারই সাথে মা-পিসিমাদের ছড়া গুলিও হারিয়েছে। আমাদের ছেলেবেলা ছিল অনেকটা প্রকৃতি-সান্নিধ্য। খোলা আকাশের নিচে সন্ধ্যেবেলায় শুয়ে যেতাম দিদি, বোন, দাদা সবাই মিলে।
একসাথে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। দেখতাম হাজার হাজার বাদুড় উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। এই বাদুড় নিয়ে আমাদের কতই না কৌতুহল ছিল! মনে মনে কল্পনা করতাম এই বাদুরগুলো এক দেশ থেকে আরেক দেশ চলে যায়। আবার ফিরে আসে।
আমরা দেখতাম যে বাদুড়গুলো সন্ধ্যেবেলায় ঝাকে ঝাকে উড়ে যাচ্ছে। তারা ফিরে আসতো আবার ভোর বেলায়। ভোর বেলায় খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলে দেখতে পেতাম সারি সারি বাদুর ঝাকে ঝাকে উড়ে আসছে।

আমাদের এখানে একটা ঘন জঙ্গল ছিল। মূলত সেখানে পিতারুর গাছ ছিল সেখানে। সূত্রে আমরা জঙ্গলে যেতাম পিতারু সংগ্রহ করতে। আর সেখানে দেখতাম শ'য়ে শ'য়ে বাদুড় গাছে ঝুলছে।

দিদিমা সন্ধ্যেবেলায় বাদুরের যাত্রা দেখে আমাদের বলতেন যে, এরা সবাই চলে যাবে পাহাড়ের দেশে। সেই পাহাড়ে অনেক গাছপালা আছে, অনেক ফলমূল রয়েছে। গোটা রাত তারা ফলমূল খাবে, খাবার সংগ্রহ করে ভোরবেলা আবার ফিরবে। কথাগুলো ঠিক মিলে যেত। কারণ দেখতাম সত্যই ভোরবেলা বাদুরগুলো ফিরে আসছে।

আমাদের ছেলেবেলায় বাবা মায়ের মুখ থেকে একটি আঞ্চলিক ছড়া শুনতে পেতাম, "আ রে আ কাল বাদুড়ের ছা...কালাইতে আছে পোকা, বেছে বেছে খা!"

কি দারুন লাগতো শুনে ছড়াটি। এখন আমাদের গ্রামে গঞ্জে এলাকায় এই ছড়াটি আর নেই। কারো মুখেই শুনতে পায়না। আসলে না থাকার একটি কারণও দেখতে পায়, এখন আর এলাকায় বাদুরও নেই।
পিতারুর বনে অত অত বাদুর আর একটিও নেই। সঙ্গত কারণেই ছড়াও হারিয়েছে। আসলে সমাজের ওপর, সমকালীন পরিস্থিতির ওপর ছড়া লেখা হয় বা মুখে মুখে রচিত হয়। ঠিক সেই সময়, সেই সময়ের পরিস্থিতি হারিয়ে গেলে ছড়ারও ধীরে ধীরে হারাতে থাকে।

আরো অনেক কবিতা/ ছড়া যেগুলো ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, সেই সমস্ত কবিতাগুলো, ছড়াগুলো আজকে আমি কয়েকটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

"আয় আয় চাঁদ মামা
টিপ দিয়ে যা
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিপ দিয়ে যা।
ধান ভানলে কুঁড়ো দেব
মাছ কাটলে মুড়ো দেব
কাল গাইয়ের দুধ দেব
দুধ খাবার বাটি দেব
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিপ দিয়ে যা।"

এই ছড়াটি ছেলেবেলায় কতই না শুনেছি, ধীরে ধীরে কেমন যেন বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

"আয়রে আয় টিয়ে
নায়ে ভরা দিয়ে
না' নিয়ে গেল বোয়াল মাছে
তাই না দেখে ভোদড় নাচে
ওরে ভোদড় ফিরে চা
খোকার নাচন দেখে যা।"

তারপর এই ছড়াটিও বহুবার পিসিমাদের মুখ থেকে শুনেছি। শুনেছি দিদিমার মুখ থেকে। এখন এই ছড়াটিও সেভাবে আর শুনতে পাওয়া যায় না। এখনকার শিশুরা এই ছড়াগুলো থেকে একেবারেই বঞ্চিত হয়েছে।

"খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল বর্গী এল দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে, খাজনা দেব কিসে?
ধান ফুরাল, পান ফুরাল, খাজনার উপায় কী?
আর কটা দিন সবুর কর, রসুন বুনেছি।"

যখন দেশে ইংরেজ শাসন চলতো সেই সময়ের এই ছড়াটি এখন আর সেভাবে শুনতে পাওয়া যায় না। এই ছড়াটও সময়ের সাথে সাথে কেমন যেন বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

"বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এল বান,
শিব ঠাকুরের বিয়ে হল তিন কন্যা দান।
এক কন্যা রাঁধেন বাড়েন এক কন্যা খান,
এক কন্যা রাগ করে বাপের বাড়ি যান।"

এটা তো আমাদের ছেলেবেলার খুবই প্রিয় একটি ছড়া ছিল। আমরা ছোট ছোট শিশুরা মিলে এই ছড়াটি সুর করে বৃষ্টির দিনে আবৃত্তি করতাম। অনেক সময় পাল্টেছে। কত কি পরিবর্তন হলো। তারই সাথে ছড়াগুলোও কেমন যেন বিলীন হয়ে গেল।

আজ এই অব্দি রইল। আগামীকাল আবার নতুন কিছু লেখা, নতুন কিছু কথা নিয়ে হাজির হব। ততক্ষণ আপনারা ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

@tarique52

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

কতগুলো ছড়া আজ আপনি একসাথে আমাদের মাঝে শেয়ার করলেন ।আসলে মনে হয় যেন ছোটবেলায় ফিরে এসেছি কতই না পড়তাম এই ছড়াগুলো। খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো ছড়াটি আমি বেশি পড়তাম।

হ্যাঁ খুব প্রিয় ছিল সেই ছড়া টি। ধন্যবাদ সুন্দর একখানা মন্তব্য করার জন্য।

ওয়াও একসাথে এতগুলো কবিতা আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। সত্যি ছোটবেলায় কবিতাগুলো বেশি পড়তাম এখন অনেকটাই ভুলে গেছি। আয় আয় চাঁদ মামা কবিতাটি আগে বেশি বেশি পড়তাম। আপনি অনেক সুন্দর করে অনেকগুলো কবিতা আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করেছেন ছোটবেলার। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।

চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা ছড়া টি সত্যি খুব শুনতাম ও পড়তাম আমরা। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।

সময়ের সাথে সাথে আজ অনেক পরিবর্তন যাচ্ছে ৷হুম ঠিক ভাই সে কালের কথা খুব মনে পরছে যে দিদিমা ঠাকুর দাদা ঠাকুর দিদি বাড়ির আঈনিয়া চট বিসিয়ে কত না গল্প বলেছিল ৷আর আকাশে চাঁদের আলোর ঝলমল চকচকে তারা ৷ শুয়ে শুয়ে আকাশঁ দেখা৷ আরও নানা ধরনের গল্প কথা কবিতা ৷সত্যি সেই পুরনো দিন গুলো কোথায় হারিয়ে গেলো ৷

কথার মাধ্যমে সুন্দর দৃশ্য তুলে ধরলেন। অদ্য বিষয়ের ওপর মন্তব্য প্রদানের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।