|| জলসার এক দিনে... ||

in hive-129948 •  2 years ago 

আমার জীবনে মজার কিছু ঘটনার মধ্যে জলসার মাইকের শব্দকে লক্ষ্য করে সেই উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়া এবং গুরুতর বিপদের মুখে পড়া হল একটি। আমার এ যাত্রার সঙ্গী ছিল গ্রামের এক বন্ধু। তার নাম- অসীম। আজকের এই মজার গল্পটি আপনাদের একটু হলেও মন ভালো করতে পারে। তাহলে আর দেরি না করে চলুন, গল্পে...

bicycle-7384245__480.jpg

Source

আমার পাড়ার বন্ধু অসীমের গায়ে-গতরে শক্তি ছিল আমাদের থেকে অনেক বেশি। শুধু শক্তি নয়, তার সাহসও ছিল অসীম। নামের সাথে তার ভালোই মিল পাওয়া যেত সমস্ত ক্ষেত্রে। অসীমের সাহস গাঁয়ের সকলেই জানে। তার সাহসের কথা শুধু গাঁয়ে নয়, গ্রামের বাইরেও অনেকেই জানে যারা দেখেছে।
যে সকল কাজে মানুষের ভয়, অসীমের সেখানে কোন ভীতি নেই। মধ্যরাতে যদি শ্মশানেও তাকে পাঠানো যায় বা কবরস্থানে, তার কোন ভয় আমরা দেখিনি। সে জায়গায় আমরা সকলে ভয়ে কাঁদতাম। মাঝে মাঝেই সে জেদ করে চলে যেতো কবরস্থানে মধ্যরাতে ঘোর অন্ধকারে, তার সাথে বেট লাগা একরকম ভয় সেটা সকলেরই জানা ছিল।

অসীম সাধারণ এক কৃষকের ছেলে। বাপ গৃহস্থালি করে খেটে খায়। শীতে বোনে হলুদ ফুলের বাহারি সর্ষে। শীতের মাঠকে এক ভালবাসায় স্নিগ্ধ করে তোলে। শীত চলে গেলে গরমে বোনে পাট। আর বর্ষার সিজিন এলেই পাট কেটে যাক দিয়ে আবার কোন না কোন কিছু ফসল বোনে।
আর এ সকল কাজই করে অসী। সকল কাজ বলতে মাঠে পড়ে থাকার কাজটা তো অসীমের দ্বারায় সম্ভব।

অন্ধকার রাতে দিনের পর দিন মাঠে পড়ে থাকার দরুন সে অগাধ সাহস সঞ্চার করেছিল বুকের মধ্যে। রাতের দুনিয়া ছিল তার। তার কাছে রাত দিন ছিল। আমরা যেমন দিনের বেলা সমস্ত জায়গা বনে বাজারে ঘুরে বেড়াতে পারি, নির্ভয়ে নিঃসংকচে! তেমনই রাতের বেলা একই ভাবে ঘুরে বেড়াতে পারতো অসীম।
পৃথিবীর আজব আজব ঘটনা ও গল্পের আড়ৎ ছিল অসীমের মধ্যে। আশ্চর্য ভয়ানক ভূতের গল্প তার মুখ থেকে শুনতাম। মাঝে মাঝে আজগুবি মনে হলেও তার বলার ধরনের বিশ্বাস করতেই হতো। এমনই ছিল তার কথা বলার ধরন। মাঝে মাঝে সে আমাদের বেশ ভয় দেখিয়ে ছাড়তো।

হঠাৎ করে দেখতাম চোখ মুখ বুজে মাঠের মধ্যে শুয়ে পড়তে। আমরা প্রথমে তাকে নিয়ে মজা করতাম কিন্তু সে এতটাই কঠিন হয়ে যেত যে একসময় আমাদের ভয় ধরত। দেখতাম কোনভাবেই তাকে নড়ানো যাচ্ছে না। একেবারে কাঠ হয়ে পড়ে আছে। তারপর আমরা ভয়ে সেখান থেকে কাউকে ডেকে আনার চেষ্টা করতাম কিন্তু বড় কেউ আসার আগেই অসীম লাফিয়ে উঠত। আর বলতো, " তোরা আয় আয়, ছুটে আয়! আমি এমনি মজা করছিলাম!"

মজা যে এতটাও এমনি হয় তা তার কাছ থেকে আমরা দেখেছিলাম।
একবার বেশ সাহস করেই তার সাথে আমি বেরিয়ে পড়েছিলাম রাত্রিবেলা। গল্পটা বেশ আশ্চর্য এবং অবাক করার মতই। আমরা জলসা শুনতে যাওয়ার নাম করে বেরিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু জলসা ঠিক কোথায় হচ্ছে তা আমাদের মোটেই জানা ছিল না। একরকম আওয়াজ শুনেই আমরা ছুটেছিলাম বড় একটা সাইকেল নিয়ে। আমি আর অসীম সেই আওয়াজ কে লক্ষ্য করে চলে যায় জলসাঘরের পানে। জলসার মাইকের শব্দ লক্ষ্য করে যাওয়াটা একরকম বোকামি, কিন্তু সেই মুহূর্তে সেটাই আমাদের বেশ মজার একটি বিষয় ছিল। এভাবেও যদি আবিষ্কার করা যায় সেটা বেশ আনন্দের হবে।

আমরা সত্য সত্যই বেরিয়ে পড়লাম। তারপর আওয়াজ লক্ষ্য করে যেতে যেতে এমন একটা জায়গায় এলাম, সেখানে পৌঁছানোর পর আর কোন পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভারী মুশকিলে পড়লাম। দুজনে সাইকেলে বসে আছি। একটাই বড় সাইকেল! ড্রাইভার এর আসনে আছে অসীম আর আমি পেছনের ক্যারিয়ারে। ঘন জঙ্গল আর এর মাঝখানে আমরা গেলাম ফেঁসে।
আওয়াজ লক্ষ্য করে আসার এই যে বিপদ ছিল তা বুঝে বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। অসীমও খানিক ভয় পেয়েছে, তার কথাতে আন্দাজ করতে পেরেছিলাম।
কিন্তু অসীমের কাছে সব সময় থাকতো একটা চেন, সাইকেলের সিটের তলায় সেটা বেঁধে রাখতো।
ওয়াসিম সেই সাইকেলের চেইন বের করে দেদার ঘুরাতে লাগলো। তার বক্তব্য এই যে চারপাশে অন্ধকার জঙ্গলে যদি কোন ভূত বা অন্য কিছু অ্যাটাক করতে আসে তাহলে চেনের বাড়ি খেয়ে সে ধরাশায় হয়ে যাবে। ঘুরতে থাকা চেনের ভয়াবহ গতি দেখে আমারও একটু সাহস হলো। এটুকু বিশ্বাস জন্মিলো যে, এই চেনের সামনে যে আসবে, সে তার আস্ত থাকবে না, সে ভুত হোক বা আর কিছু!

শেষ পর্যন্ত আমরা জলসাঘরে আর পৌঁছাতে পারলাম না। কোনরকম শব্দের আর কিনারা পাওয়া গেল না। মনে হয় চারিদিকেই শব্দ।
এমন কঠিন পরিস্থিতি থেকে আমি আর অসীম দুজন মিলেই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম। বাড়ি ফেরার পথে দেখি সাইকেল এর হ্যান্ডেলে একটা হাত রেখে অন্য হাতে চেন নিয়ে অসীম দেদার ঘুরাচ্ছে, তা থামার কোন লক্ষণ আমি দেখতে পেলাম না। আমি কোনো রকমে মাথা বাচিয়ে বসে আছি। কোন রকমে আমায় যদি একবার লাগে সে চেন, তাহলে আমাকেও রক্ষা কেউ করতে পারবেনা।

সে যাই হোক, সেদিন ঈশ্বরের কৃপায় আমরা বেঁচে গেছিলাম। ভালোভাবে বাড়ি পৌঁছে এই প্রতিজ্ঞা করলাম যে আর এভাবে কোনদিন বেরোবো না। আর রাত্রিবেলা ওয়াসিমের পাল্লায় পড়া যে কঠিন বিষয় তা সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম। আর ওই ভয়াবহ গতিতে ঘুরতে থাকা চেনের কথা মনে পড়লে আমার এখনো বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে!

আজ এই অব্দি রইল। আগামীকাল আবার নতুন কিছু কথা, নতুন একটি লেখা নিয়ে হাজির হব। ততক্ষণ আপনারা ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

@tarique52

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

তারপর আওয়াজ লক্ষ্য করে যেতে যেতে এমন একটা জায়গায় এলাম, সেখানে পৌঁছানোর পর আর কোন পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভারী মুশকিলে পড়লাম। দুজনে সাইকেলে বসে আছি। একটাই বড় সাইকেল! ড্রাইভার এর আসনে আছে অসীম আর আমি পেছনের ক্যারিয়ারে।

আসলে এখনো জঙ্গলের ভিতরে এমন ভয়ংকর আওয়াজ পেলে ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। আসলে দুই বন্ধু একটি সাইকেলে বেড়াতে যাচ্ছিল ঘন জঙ্গলের মাঝখানে গিয়ে আর পথ খুঁজে পাচ্ছিল না তারা এবং অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিল দুজনে আসলে এমন মুহূর্তটা অনেক ভয়েরই হয়ে থাকে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য বাকি অংশটুকু এর আশায় রইলাম ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ মন্তব্য রাখার জন্য । ভালো থাকবেন।

গল্পটা সাধারণ হলেও আপনি যেভাবে প্লট টা সাজিয়ে লিখেছেন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।একদম সাসপেন্স গল্পের মতো লাগলো লেখাটা।যাইহোক যতই সাহস থাক ওয়াসিম এর মত এরকম রতবেরাতে না বের হওয়াই ভালো।

হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন দাদা। না বেরণই উচিত অভাবে। ধন্যবাদ মন্তব্য রাখার জন্যে।