আজ ১৭ -ই সেপ্টেম্বর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন। এই দিনে মহান কথাশিল্পী জন্মেছিলেন। যার সৃষ্ট সাহিত্য বাংলা-সাহিত্যকে অনেক খানি পরিপুষ্ট করেছে তা স্বীকার করতে হয়। বিশেষত বাংলা সাহিত্যের উপন্যাসে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
আজ কথাশিল্পীর জন্ম দিবসে গভীর শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাই।
আমি ছোটবেলায় শরৎচন্দ্রের ' লালুর পাঁঠাবলি' পড়েছিলাম। সেখান থেকেই মূলত শরত-প্রেম জন্মে। গল্পটি হাসির ছিল। খুবই হাস্যরসে ভরা একটি গল্প। হাসির ঘটনা কতই আছে, সবেতেই কি আমরা হাসি? সবাই কি হাসাতে পারে? সে হিসেব তখন আর করিনি।
তারপর নিজে থেকে শরৎচন্দ্রের ছোটদের ওপর লেখা অনেক গল্পই পড়েছিলাম তখন। তারপর আর একটু বড় হলে সিলেবাসে নতুন গল্প যোগ হলো। আমাদের বয়সের পরিপ্রেক্ষিতে গল্প যোগ হচ্ছে সিলেবাসে।
কিন্তু আলটিমেটলি সাথে শরৎচন্দ্রকে পাচ্ছি। ছোটবেলায় ছোটদের মতো মজার ও আনন্দের গল্প দিয়েছিল সিলেবাসে, যখন বড় হলাম তখন ' মহেশ '-এর মতো গল্প যোগ হল। শরৎচন্দ্র আমাদের মস্তিষ্কে সুন্দরভাবে গেঁথে থাকলো।
ধীরে ধীরে আরো যখন বড় হলাম শরৎচন্দ্রকে অনেক বড় করে আবিষ্কার করতে পারলাম। এখন বড় হয়ে বুঝতে পারি তার হাসির গল্পে কেন এত হাসতে পারতাম, যেগুলো দুঃখের গল্প সেগুলোতে চোখের জল কেন ধরে রাখতে পারতাম না! আসলে তিনি ছিলেন কথাশিল্পী। অমর কথাশিল্পী। কথা দিয়ে যে গদ্য তিনি গেঁথে দিতেন, তার বিকল্প আর কিছু যেন হতে পারে না! হাসির জন্য তিনি যে শব্দ ও ভাষার প্রয়োগ করতেন, যে ঘরানায় লিখতেন, তখন সত্যিই হৃদয় থেকে হাসি বের হত।
আর তার এই শিল্প দিয়ে তিনি যখন দুঃখের কথা বা গল্প লিখতেন তখন হৃদয় বেদনায় গলে যেত। আসলে তিনি যে ছিলেন একজন বিরাট কথাশিল্পী। তিনি যে শব্দ, ভাষা দিয়ে আশ্চর্যভাবে কথা গেঁথে দিতে পারেন সেটা বড় হয়ে জানতে পারলাম। এবং সমস্ত কিছুই আমাদের মধ্যে পরিষ্কার হলো যে শরৎচন্দ্রকে আমরা কেন এত ভালো বাসলাম! 'লালুর পাঁঠাবলি' থেকে 'দেবদাস', আর 'দেবদাস' থেকে 'শ্রীকান্ত', শরৎচন্দ্র সমস্ত বয়সের জন্য লিখে গেছেন।
আমি ছোটবেলা থেকেই বহু জনের মুখে শুনতাম যে 'শ্রীকান্ত'-র মতো উপন্যাস নাকি বাংলায় নেই! শ্রীকান্ত নাকি খুব একটি ভালো ও শরৎচন্দ্রের সব থেকে বেশি কথাশিল্পীর যে মুন্সিয়ানা তা এই ' শ্রীকান্ত '-এ রয়েছে এটা আমি অনেকের মুখেই শুনতাম।
আমি তো হোস্টেলে পড়তাম। সেই সূত্রে আমার বই পড়ার অনেক সুবিধা ছিল। স্কুলের লাইব্রেরীতে লাইব্রেরীতে অনেক বই রয়েছে। যখন সবার মুখ থেকে কথা শুনতাম তখন আমি প্রথম ক্লাস এইটে গিয়ে শ্রীকান্ত বইখানা নিয়ে নিজের ঘরে চলে আসি। তারপর পড়তে শুরু করি কিন্তু দেখি মাথায় মুন্ডুতে কিছুই ঢোকে না। তার দর্শন, ভাবনা চিন্তা যে ভাবে বিস্তৃত হয়েছে, যেটা অন্যান্য উপন্যাস বা গল্পে হয়নি। আমি প্রথমে যখন পড়তে শুরু করলাম, ভাবলাম হয়তো একটু পরেই সমস্ত কিছু বুঝতে পারব। কিন্তু সেভাবে কিছুই ধরতে পারলাম না। কিছু কিছু কাহিনী যেগুলো সহজ ভাবে বর্ণিত তা বুঝতে পারলাম কিন্তু কিছু কিছু দর্শনমূলক, চিন্তামূলক তা আমার বোধগম্যের বাইরেই থাকলো।
তারপর বইটা আমি জমা দিয়ে দিলাম। ধীরে ধীরে বড় হলাম খানিক। ক্লাস এইটের পর থেকে আর শ্রীকান্ত হাতে ছুঁইনি। যখন ইলেভেনে উঠলাম, বোর্ডিং স্কুল ছেড়ে গ্রামের স্কুলে এলাম, তখন ' শ্রীকান্ত ' আবার পড়তে শুরু করলাম। বইয়ের দোকান থেকে ' শরৎ রচনাবলী' (প্রথম খন্ড) কিনে আনলাম। আর এর মধ্যেই রয়েছে শ্রীকান্ত। এবার যখন শ্রীকান্ত পড়তে শুরু করলাম তখন সমস্ত মানে বুঝতে পারলাম এবং এটাও বুঝতে পারলাম যে শ্রীকান্ত পড়ার মতো বয়স তখন আমার হয়নি। ক্লাস এইট যে বয়সটুকু তাতে শ্রীকান্ত বোঝার ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু এবার একটু বয়স হতে যখন পড়তে শুরু করলাম তখন শ্রীকান্তর কিছু কিছু লাইন যেগুলো বুঝতে পারিনি, ধীরে ধীরে তা বোধগম্য হতে লাগলো এবং এটা সত্যিই এক আশ্চর্য বাংলার সেরা একটা উপন্যাস তা বুঝতে পারলাম। এখানে লেখক তার সব থেকে বেশি আধ্যাত্মিক মননের প্রয়োগ করেছেন। তা শরৎচন্দ্রের সমস্ত বই পড়লে এবং শ্রীকান্ত যদি পড়া থাকে তাহলে আন্দাজটা করা যাবে। শ্রীকান্ত মূলত একটি উপন্যাস যেখানে উত্তম পুরুষে লেখক কথা বলেছেন। যেখানে লেখক সরাসরি নিজে কথা বলছেন তার ভ্রমণের কথা তার জীবনের বিভিন্ন গল্প। শরৎচন্দ্রের এই শ্রীকান্ত উপন্যাসের বেশিরভাগটাই ভ্রমণ জীবনের উপর লেখা। তিনি যেখানে যেভাবে গেছেন, কাজ করেছেন সেটাই লিখেছেন। তার শব্দ শিল্পের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। এবং তার রস আমরা আস্বাদন করে অনেক তৃপ্ত হয়েছি। সাহিত্যের রস এতটা মধুর আর কোথাও যেন নেই।
আজ ১৭ -ই সেপ্টেম্বর, কথাশিল্পীর জন্মদিবসে গভীর শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাই।
আজ এই অব্দি রইল। আগামীকাল আবার নতুন কিছু কথা, নতুন একটি লেখা নিয়ে হাজির হব। ততক্ষণ আপনারা ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
অমর এই কথা শিল্পীর জন্মদিনে আপনি তার সম্বন্ধে এতগুলো কথা না লিখলে হয়তো আমরা জানতেই পারতাম না। সত্যি বলতে আমি আজকে আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক কিছুই জানতে পারলাম ।এই কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা অসাধারণ। আমি নিজেও অনেক গল্পের বই পড়তাম ।খুব ভালো লাগলো আপনার আজকের পোস্টে তার সম্বন্ধে এতগুলো কথা জেনে। আমি নিজেও অনেক বই পড়তাম কিন্তু এখন ব্যস্ততার কারণে বই পড়া হয়না ।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ। আপনার সুগঠিত মতামত ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
I'm new members please add me ☺️
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে একজন শিল্পীর আসল মহত্ব সেখানেই যখন তার গল্পগুলো সরাসরি মানুষের হৃদয়ে গিয়ে আঘাত হানবে।লালুর পাঠাবলি বইটা পড়েছিলাম সম্ভবত মাধ্যমিকে।আপনার পোস্টটা দেখে নাম মনে পড়লো কিন্তু গল্পটা আর মনে পড়ছে না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
পড়েছেন, এটা শুনে ভালো লাগলো। মতামত প্রদানের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাইয়া অমর এই কথা শিল্পীর জন্মদিন উপলক্ষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিখেছেন আপনি। অমর এই কথা শিল্পীর লেখা উপন্যাস গুলো পড়তে আমার খুবই ভালো লাগে। অসাধারণ একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সুন্দর কমেন্ট করে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মনে পড়ে ছোটবেলায় শরৎচন্দ্র ছিলেন আমার প্রিয় লেখক(এখন যে নন তা নয়, তবে তখন পুরোই বায়াস্ড ছিলাম ওনার প্রতি) কারণ একটাই, পড়াশোনা যখন করতাম তখন রবি ঠাকুর বা বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষা কিছু মাথায় ঢুকত না। ছোট ছিলাম বলেই হয়তো। কিন্তু এই একজন লেখক যার লেখা খুব সহজেই বুঝে যেতাম। এই কারণে হয়তো ওনাকে 'কথাশিল্পী' বলা হয়। আপনাকে দেখতে আমআর কল্পনায় দেখা 'শ্রীকান্ত'র মতই।😄
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ ছোটদের পড়ার মতো করে সাজিয়ে লিখতেন। অসামান্য কথাশিল্পীর হাত। ধন্যবাদ আপনাকে সুগঠিত মন্তব্য রাখার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
I'm new members please add me
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit