প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সকলে ভালো আছেন।
আজ কলেজের পরীক্ষা দিয়ে ঘরে একটু আরাম করবো ও সিনেমা দেখবো বলে প্রফুল্ল মনে ফিরছিলাম। এমন সময় হটাৎ এক বন্ধুর ফোন আসে। হসপিটালে সেই বন্ধুর জেঠিমা বেশ অসুস্থ। হসপিটালে ভর্তি হয়েছে এটা শুনে আমাকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়তে হয়।
গোটা দিনের অভিজ্ঞতায় আজকের পোস্টে লিপিবদ্ধ হয়েছে।
দিনক্ষণ ঠিক করেছি পরীক্ষা দেবো। দিয়ে ঘরে এসে আরাম করে খানিক গল্পের বই অথবা সিনেমা দেখবো। কিন্তু নিজের সাজানো দিনক্ষণ সবসময় মিলে যায়না। আজও যেমন মেলেনি। হটাৎ করেই আমার বন্ধুর ফোন এলো। তড়িঘড়ি মুকুন্দপুর আর.এন ট্যাগোর হসপিটালে যেতে হবে।
কিছুদিন আগেই সেই বন্ধুর জেঠিমার অসুস্থতার কারণে আমি এই মুকুন্দপুর আর.এন ট্যাগোর হসপিটালে এসেছিলাম। খুব বেশি হলে হয়তো দশটা দিন হয়েছে। কিন্তু একইভাবে হঠাৎ একই হসপিটালে ডাকতে একটু অবাক হলাম। ভাবলাম হয়তো সেই পেশেন্টের আবার কোন সমস্যা দাঁড়িয়েছে। কিন্তু পরক্ষণে ফোনের ওপার থেকে যা শুনলাম তাতে আমাকে একটু অবাক হতেই হল। তবে এটা নতুন পেসেন্ট।
ইনি হলেন তার জেঠিমা। তবে এটি অন্যরকম অসুখের কারণে আসা। বেশ গুরুতর হার্ট ব্লকের একটি বিশেষ সমস্যা। পেসেন্ট পূর্বে কোন সিমটম দেখতে পায়নি। হার্ট এর সমস্যায় এটাও বেশ অবাক করার মতো আজকাল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, শুধু হার্টের সমস্যায় নয়, যেকোনো অসুখের ক্ষেত্রে এখন বহু পূর্বে কোন সিমটম পাওয়া যাচ্ছে না। হার্ট ব্লক হয়ে যাওয়ার পথে... তবুও কোন সিমটম নেই! কেবল কিছুদিন পূর্বে হার্টের একটু সামান্য ব্যথা দেখা দিয়েছিল, তারপরে হঠাৎ করে ৯৫ শতাংশ ব্লক হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে চলে এসেছে।
যখন দেখানো হয় তখন ডাক্তার হঠাৎ করে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। তখন বাড়ির আর কেউ হসপিটালে পৌঁছতে পারেনি। যেহেতু হার্ট এর ব্লক হওয়া একটা বড় রকমের অসুখ এবং এর অপারেশনের একটা জীবন-মরণের ঝুঁকি থাকে, সেই সূত্রে বাড়ির একাধিক মানুষের উপস্থিতি খুব জরুরী কিন্তু সেখানে পেশেন্ট এবং একজন দেখভালের জন্য মহিলা ব্যতীত আর কেউ নেই।
ডাক্তার ফোনের মারফতে জানালো যে অবস্থা ভীষণ গুরুতর অবস্থা রাতভর রাখা যাবে কিনা সন্দেহ, এই মুহূর্তে ইমিডিয়েট অপারেশন করতে হবে! ডাক্তার বলে দিল যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যে অপারেশন শুরু না করা হয় তাহলে খুবই রিস্কি হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা।
প্রসঙ্গত বাড়ির সকল সদস্য ডাক্তারের এই সিদ্ধান্তে সম্পূর্ণ সহমত দিল এবং ফোন মারফত সাক্ষী দিয়ে দিল অপারেশনের অনুমতি প্রদানের জন্য। ডাক্তার আর দ্বিধা না করে তড়িঘড়ি অপারেশন শুরু করে এবং একটি আধুনিক পদ্ধতিতে অল্প সময়ের মধ্যে অপারেশন টি সম্পন্ন করে ফেলে। স্বস্তির বিষয় হলো ডাক্তারের সেই অপারেশন টি সম্পূর্ণভাবে সাকসেস হয়। এক্ষেত্রে একটি বিষয় বলে রাখা ভালো যে ডাক্তার পরিচিতির মধ্যেই ছিল। এই কার্ডিয়লজিস্ট বড় ডাক্তারটি সম্পর্কের মধ্যে থাকার কারণে এত তাড়াতাড়ি জবাব দেওয়ার সাহস হয় এত বড় একটা অপারেশনে এবং ডাক্তারও কোনরকম লিখিত সাক্ষীর প্রয়োজন দিকে না গিয়ে অপারেশনে উদ্যত হয়। যেহেতু জীবন বাঁচানোই লক্ষ্য!
যাইহোক, অপারেশনটি সাকসেস হলে সবার মধ্যে একটা শান্তি ফিরে আসে। আমি যখন পৌঁছই তখন অপারেশন শেষ হওয়ার পথে। তাড়াতাড়ি গিয়ে বাড়ির লোকের কাছে দাড়াই। কলকাতায় যেহেতু আমার থাকা সেই সূত্রে আমাকে দিয়ে যতটুকু তাদের সুবিধা করা যায় ততটুকু আমি করার চেষ্টা করি। নিখুঁত অপারেশনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ সাকসেস হওয়ার ফলস্বরূপ আমাদের চিন্তা অনেকটাই কমে। আমরা সহজ ভাবে ঘোরাফেরা করতে পারি।
পেশেন্ট তো ঘরের মধ্যেই আছে। আজ কোনমতেই ছাড়ার গল্প নেই। কালকে পেসেন্টকে ছেড়ে দেওয়ার একটা আভাস পাওয়া গেল, যেহেতু অপারেশনটি খুবই আধুনিক পদ্ধতিতে হয়েছে অতি সূক্ষ্ম পাইপের মাধ্যমে। যদি কালকে ছেড়ে দেয় তাহলে তারা বাড়ি চলে যাবে। এবং আমার সেই বন্ধুটিকে নিয়ে আমি রুমের মধ্যেই থাকবো এই সিদ্ধান্ত হল।
ডাক্তার ও সেখানকার স্টাফদের কথা ও নিয়ম-কানুন শুনে নিয়ে আমরা বেরোলাম।
গোটা দিন ছুটোছুটি করার দরুন পেটে কোন খাবার যায়নি।আমাদের খিদে পেয়ে গেছিল বেশ। একেবারে সন্ধ্যেবেলায় আমরা তিনজন মিলে একটি হোটেলের দিকে গেলাম। যদিও প্রথমে হসপিটালের ক্যান্টিনে উঁকি দিয়েছিলামম পূর্বে আসার দরুন এই অভিজ্ঞতা হয়েছে যে আরএন টেগোর হসপিটালের ক্যান্টিন টি বেশ পরিচ্ছন্ন এবং রুচি বোধ রয়েছে তাদের। খাবারদাবারের মান বেশ ভালো। মনে হয় না একটি হসপিটালের ক্যান্টিনে আমরা খাচ্ছি। ডাক্তার থেকে শুরু করে সমস্ত মানুষ দিব্যি বসে ভালো খাবার খেতে পারছে ন্যায্য মূল্যে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সন্ধ্যেবেলা ক্যান্টিন টি বন্ধ ছিল।
শেষমেষ আমরা হসপিটাল থেকে বেরিয়ে একটি পথ ধরে হাঁটতে থাকি, ভাবলাম যেখানে একটা ভালো রেস্টুরেন্ট বা দোকান পাব, সেখানে একটু কিছু খেয়ে পুনরায় হসপিটালে ফিরবো কিন্তু আমরা সকলে অবাক হলাম কলকাতার একটি নামজাদা রেস্টুরেন্টের শাখা দেখে। এখানে যে এমন সুন্দর এই রেস্টুরেন্টের শাখা রয়েছে তা ভেবে বেশ অবাক হলাম। রেস্টুরেন্টের নাম হল আমিনিয়া। কলকাতার একটি বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আমিনিয়ার সমস্ত শাখায় খাবারের মান বেশ ভালো। তবে এরা অত্যন্ত চড়া দাম নিয়ে থাকে। আমরা সেখানেই প্রথমে উঠি এবং তিনটি এগ-চিকেন রোলের অর্ডার করি। এগ-চিকেন রোল হাতে পেয়ে যখন খেতে শুরু করলাম তখন বুঝতে পারলাম আর যাই হোক, খাবারের মানটা কিন্তু ঠিক রেখেছে। আমি জানিনা তাদের অন্যান্য রেসিপি গুলো কেমন, তবে এই চিকেন-রোলটা বেশ ভালই লাগলো। পেশেন্টের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কলকাতার মধ্যে থাকা তাদের একটি ফ্ল্যাটে গিয়ে ওঠে। আমি আমার সেই বন্ধুটিকে নিয়ে আমার রুমে আসাটাই সঙ্গত মনে করি এবং তাদের কাছে অনুমতি চেয়ে আমরা দুজনে একেবারে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরি।
ক্যামেরা - iQOO 9se
মডেল - 12019
ফোকাস লেংথ - 35mm
আজ এই অব্দি রইল। আগামীকাল আবার নতুন একটি কথা, নতুন কিছু লেখা নিয়ে হাজির হব। ততক্ষণ আপনারা ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
আসলে প্রতিটা মানুষ কখন কোন পরিস্থিতির শিকার হয় সেটা কেউই জানে না। যেমন আপনি কিছু প্ল্যান করেছিলেন সেটার কমপ্লিট করা হলো না। অসুস্থতা মানুষের জীবনের জন্য খুবই কষ্টের এবং বেদনার। যাইহোক, আপনার বন্ধুর জেঠিমার অপারেশন সুন্দরভাবে হয়েছে যেটা অনেক বড় পাওয়া অনেক ভালো লাগলো পড়ে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ ভাই জেঠিমার অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে, এটা মূলত প্রশান্তির। তাই আমরা বেশ ভালোভাবেই হাঁটাচলা করতে পেরেছিলাম আনন্দের সাথে সুখবরটা পেয়ে। এখন জেঠিমা খুবই ভালো আছে। ধন্যবাদ আপনাকে একটি সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এটা সত্যি অবাক করা বিষয়। যদি এভাবে কেয়ার না করে থাকত তাহলে অনেক বড় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। যাক শেষ পযর্ন্ত অপারেশন টা যে শেষ পযর্ন্ত ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে শুনে ভালো লাগল। শেষ ভালো যার সব ভালো তার। এবং শেষে আপনাদের আমিনিয়া রেস্তোরাঁয় খাওয়াটাও বেশ চমৎকার ছিল বোঝা যাচ্ছে।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আজকাল মানুষ সত্যিই খুব সমস্যার পথে এবং রোগের ও বিভিন্ন ভয়াবহ দিক ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে যা সত্যি মানুষের কাছে একটা ভয়াবহ ব্যাপার। ৯৫% হার্ট ব্লক হয়ে যাওয়ার পরে জানাজায় তার আগে অব্দি কোন ক্লু পাওয়া যায়নি, সত্যিই এটা খুব অবাক করা বিষয়। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে এই প্রতিনিয়ত আমাদের সাথে এরকম হয়েই যাচ্ছে যে আমরা আজকের দিনটা অথবা কালকের দিনটা ঠিক করলাম এভাবে কাটাবো, কিন্তু দেখা যায় অনেক সময় সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। হঠাৎ করে যে কথা ধরনের অঘটন কিংবা ঘটনা ঘটে যায় তা বলা যায় না। তখন আমাদের দিনটা অন্যরকম কাটে। তবে একটা কথা শুনে খুবই খারাপ লাগলো উনার হার্ট ব্লক হয়ে গেল কিন্তু এর কোন সিমটম দেখা যায়নি। তার পরেও যে ডাক্তার পরিচিত থাকার কারণে এত তাড়াতাড়ি অপারেশন করতে পেরেছে এটা ভীষণ ভালো লাগলো । সবকিছু মিলিয়ে সত্যিই অনেক ধকল গিয়েছে আপনাদের উপরে। তাও উনি যদি ভালোভাবে সুস্থ হয়ে ওঠে তাহলেই আপনাদের এত পরিশ্রম সার্থক হবে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সেটাই সব থেকে অবাক করা কথা হার্ট এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা সেভাবে বোঝা যায়নি । একেবারে অবস্থা যখন বেগতিক তখনই জানা গেল যে হার্ট 95% ব্লক হয়ে গেছে।ইমিডিয়েট কোন ব্যবস্থা না নিলে পেশেন্ট কে বাঁচানো যাবে না । যাই হোক আমরা খুবই চেষ্টা করে পরিশ্রম করে তড়িঘড়ি পেশেন্টকে একদিনের মধ্যেই, একদিন বলা ভুল হবে, হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার আধঘন্টার মধ্যে অপারেশন শুরু করে দিতে পারি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হার্টের সাথে জড়িত রোগ দিনদিন বেড়েই চলেছে। হয় এটাক, অথবা ব্লক, অথবা কোলেস্টেরল বেশি কিছু না কিছু হচ্ছেই মানুষের, আর এর সংখাও বাড়ছে। যাই হোক আপনার সেই পেশেন্টের শেষ পর্যন্ত সাকসেসফুল অপারেশন হয়েছে জেনে ভালই লাগছে। কলকাতার নিউ মার্কেট এর পাশেই সম্ভবত একটি আমানিয়া হোটেলের শাখা আছে যেখানে আমি চিকেন বিরিয়ানি খেয়েছিলাম, খুবই মজার ছিল। ধন্যবাদ দাদা সুন্দর পোস্টের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিকই বলেছেন দাদা আগে কিন্তু হার্টের এত সমস্যা হতো না। মানুষ দিন দিন এই অসুখে বেশি করে ভুগতে শুরু করেছে। এখন ঘরে ঘরে হার্টের সমস্যা । আসলে দেশের অবস্থা যেভাবে বেগতিক হয়েছে মূলত খাবার-দাবারে এত পরিমাণ ভেজাল ও দুশ্চিন্তা জীবনে অনেক বেড়েছে তাছাড়া মানুষ ঘরের মধ্যে থেকে একেবারে অলস হয়ে পড়েছে। আগে তো মানুষ সমস্ত জায়গায় হেঁটে যেত তাতে হার্ট সুস্থ থাকার সুবিধা ছিল। যাই হোক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit