প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সকলে ভালোই আছেন। বর্ষার মরশুমে এক ফোঁটা বৃষ্টির জন্যে আকাশের পানে চেয়ে থেকে এবং অবশেষে না পেয়ে যখন নিরাশ হয়ে ঘরে ফিরছি তখন দেখি এক দু'ফোঁটা করে শুরু হয়েছে। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস শেষ হবার পর দেখি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাও ভালো বর্ষণ হল কই? ওই মন রাখার মত। যাকগে এতেই আমরা খুশি।
আজকের লেখা নিয়ে এখানে আর কিছু বললাম না। মূল লেখা নিচে রইল। আপনারা চাইলে পড়তে পারেন।
প্রথম শ্রেণী হবে হয়তো! নার্সারী স্কুলে প্রথমবার একজন শিক্ষকের মুখ থেকে শুনলাম, পৃথিবীতে তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল। আমার ক্ষুদে মন বিষয়টা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলো না। বাবার সাইকেলে করে রোজ স্কুলে আসি, আসে পাশে দু'একটা খাল ডোবা ছাড়া তো কিছুই দেখতে পায়না। শুনেছি বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে বড় নদী আছে, কিন্তু সেও তো সামান্য! আমি নানান হিসেব নকশা মিলিয়েও শিক্ষকের দেওয়া এই হিসেব মিলাতে পারলাম না।
প্রশ্নটা স্কুল থেকে কাঁধে করে নিয়ে এসে বাবার সামনে আছড়ে ফেললাম। কিন্তু এখানেও আমায় আশ্চর্যই রয়ে যেতে হলো। বাবা শিক্ষকের কথাতেই সহমত হলেন।
তারপর একটু করে বয়স বাড়লো। পৃথিবীর বড় বড় সমুদ্রের কথা জানতে পারলাম। ভূগোল বই পড়ে জানতে পারলাম প্রশান্ত মহাসাগরের কথা। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মহাসাগর। আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরতা পড়ে চমকে উঠলাম। সাগরের তলে নাকি পাহাড় আছে। এদের সামুদ্রিক শৈলসিরা বলে। ততদিনে আমি শিক্ষকের ওই কথা মেনে নিয়েছি।
তারপর শুনলাম আমাদের শরীরেও নাকি তিন ভাগ জল।
সময়ের সাথে সাথে সেটাও বুঝলাম এবং মেনে নিলাম।
এই শেখা ও জানার সময়গুলো খুব সুন্দর। এই সময় জীবন নিয়ে না থাকে চিন্তা না থাকে মাথা ব্যাথা। এই সময় আমরা বনের মধ্যে গান গাইতে গাইতে ফুল তুলি। সেই ফুলের মালা বানিয়ে নিজের গলায় পরে আনন্দে ছুটে বেড়ায়।
খাবার জোগাড়ের চিন্তা থাকেনা মোটে। মা মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দেয়। বাবা স্নানের পর সুন্দর করে এলোমেলো মাথার চুল আঁচড়িয়ে দেয়। বড় দিদি ব্যাগ বই গুছিয়ে দিয়ে স্কুলে পাঠায়। শৈশব কাটে। কৈশোরও কেটে যায়।
তারপর সবকিছু কেমন ভাঙতে থাকে। ছন্দ হারাতে থাকে। আমরা আরেকটু বড় হয়ে যায়। মুখে নতুন নতুন দাড়ি গোঁফ গজাতে শুরু করে। বাবার বকার ধরন পাল্টায়।
একদিন আচমকা আমরা পায়ের তলায় জলের স্পর্শ পায়। যতদিন দিন যায় জল ক্রমশ বাড়তে থাকে। মা বাবার কথার ওপর কথা ফেলতে ফেলতে আমরা আমরা টেরও পায়না পায়ের তলার সে জল হাঁটু ছাড়িয়ে কখন কোমর অব্দি পৌঁছেছে।
তারপর আমরা আরো খানিকটা বড় হয়ে যায়। পরিচিতির পরিধি বাড়ে। চারিপাশে কত লোক। কত ধরনের লোক। এ সকল দেখতে দেখতে এও দেখতে পায় বাবার মাথার সমস্ত চুলে পাক ধরেছে। হার্ট এর সমস্যাটা অনেকটাই বেড়েছে। মা এতদিন ধরে যে অসুখগুলো লুকিয়ে রাখতো তা এখন বাইরে থেকেই দেখা যায়। আমাকে রোজ এখন ওষুধের দোকান যেতে হয়। ক'বছরে ওষুধের দাম বেড়েছে অনেক। বাবার হার্ট এর ট্যাবলেটগুলোর দাম মেটাতে গিয়ে আমি হাঁসফাঁস করি। যেনো নাকের গোড়াটা কেউ চেপে ধরেছে।
আমার বুঝতে বাকি থাকেনা পায়ের তলায় স্পর্শ পাওয়া সে জল আমার বুক গলা পার করে নাক ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এবার আমাকে সাঁতার কাটতে হবে। আমি সাঁতার কাটতে চেষ্টা করি। সাঁতার কাটতে কাটতে চোখে জল আসে আমার। আবছা হয়ে যায় চোখ। আবছা হওয়া চোখ মুছে হটাৎ দেখতে পায় আমার চারিপাশে হাজার হাজার সাঁতারু। সকলেই সাঁতার কাটছে।
ছেলেবেলার শিক্ষকের কথা মনে পড়ে। তিনি সবই বলেছিলেন শুধু জীবনের তিন ভাগ জলের কথাটা বলেননি।
আজ এই অব্দি রইল। আগামীকাল আবার নতুন একটি লেখা নতুন একটি কথা নিয়ে হাজির হব। ততক্ষন ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
বাহ, ভালো লিখেছিস।
কেও বলেনা, জীবন বুঝিয়ে দেয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একেবারেই। যাইহোক পড়েছিস। ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit