আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আশা করি সবাই ভাল আছেন। বেশ কয়েকদিন টানা বৃষ্টি ও বস্ত্রপাতের কারণে বিভিন্ন স্থানে অনেক বন্যা হয়েছে। বিশেষ করে সিলেটে বন্যা দূর্গত মানুষের যে আত্মচিৎকার তা আমরা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখতে পেয়েছি। আমি তাদের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি যে তারা যেন এই বিপদ কাটিয়ে তাদের আগের অবস্থানে ফিরে আসতে পারে।
ভোর তখন পাঁচটা বেজে দশ মিনিট তখন ঘুমটা যেন এক অনাবিল আনন্দঘন মুহূর্তের সেই স্বপ্ন ঘেরা ঘুম ঘুম চোখে হঠাৎ দরজায় টক টক শব্দের আওয়াজ মুহূর্তে মজার ঘুমটা ভেঙে গেল দরজা খুলতেই দেখি বাবা আমায় ডাকছে টাবু ঘুম থেকে উঠে পড় চল আমরা আজ আমাদের গ্রামের বাড়িতে যাব।
তখন বাবাকে বললাম এখন যাবে এখন তো বৃষ্টি পড়ছে। বাবা বললেন চলো আজকে আমরা বাপ বেটা মিলে বৃষ্টিতে গ্রামের বাড়িতে যাব এবং আমাদের পুকুর এবং জমি গুলো একটু দেখে আসি। কি আর করা বাবার কথামতো ঝটপট রেডি হয়ে নিজেদের গাড়িটা পরীক্ষা করে ড্রাইভিং সিটে বসতেই বা বললেন আজকে আমরা গাড়িতে যাব না আমরা আজকে সিএনজিতে যাব।
তখন বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম কেন বাবা উনি আমায় বললেন যে আজকে আমরা একটু বৃষ্টিতে ভিজবো তাই এভাবেই আমরা গ্রামের বাড়িতে যাব তখন মনে মনে ভাবলাম আজকে বাবার বৃষ্টিতে ভেজা মনের মধ্যে একটা আনন্দের উৎস খুঁজে পেলাম তাই আমি বাবাকে বললাম চলেন তাহলে। শুরু হল আমাদের বৃষ্টি ভেজা পথযাত্রা।
বাড়ির দিকে রওনা হলাম কিছুদূর গাড়ি যেতেই রাস্তা ভেঙে যাওয়ার কারণে সিএনজির ড্রাইভার বললেন যে গাড়ি আর যাবে না তো কি আর করা বাবাকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম দেখলাম কিছু গরু এত বৃষ্টির পরও তাদের মাঠে ঘাস খাওয়ার দৃশ্যটা আমাকে অনেক ভাবিয়েছে বৃষ্টি পড়ুক আর যাইনা হোক তার ক্ষুধা নিবারণের জন্য তাকে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করতে হচ্ছে।
আরও বৃষ্টি বেড়েই চলেছে পথ আমাদের এখনো এক মাইল এর মতন আছে বাড়িতে পৌঁছাতে। বৃষ্টি মাঝে মাঝে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে তার কাছে আমরা কিছুই না কারণ বাবা আর আমি দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজে গেছি তাও আমাদের থেমে নেই পথ চলা গল্পে গল্পে কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম এক লোক তার আপন মনে ভাসা জাল বিছিয়ে মাছ ধরার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তখন মনে মনে ভাবতে লাগলাম বাবার সাথে আজকে গ্রামে যাওয়ার যাত্রাটা যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বৃষ্টিতে ভিজা যেমন একটি দারুণ অনুভূতি সেইসাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার।
হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো যাই হোক খুব কষ্টে মোবাইলটা বের করে দেখলাম আমার দিদি কল করছে আমায় অনেকদিন পর হয়তো আমি মনে করলাম যে আমাদের গ্রামটা এবং বৃষ্টির সাথে যে আমাদের পথচলা সেই দৃশ্য না দেখিয়ে দিদিকে আর থাকতে পারলাম না ভিডিও কল রিসিভ করে ওর সাথে কথা বলতে বলতে এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য অনুধাবন করাতে করাতে হঠাৎ কখন যে আছাড় খেয়ে মোবাইলসহ বসে পড়েছি মাটিতে খেয়াল করতে পারেনি হঠাৎ মনে হল আমি মাটিতে বসে আছি। তখন মোবাইলটা হাতে রয়ে গেল দেখলাম কাপড়-চোপড় আর কোনো জায়গায় বাকি নেই কাঁদায়। আশেপাশে দেখে যেন কেউ না দেখে তাড়াতাড়ি করে বাবার হাত ধরে উঠে পড়লাম লজ্জার ভয়ে। তখন বোন আমাকে বলে উঠল কি কিরে কি হলো? বললাম দিদি, আছাড় খেয়েছি দিদি তখন মুচকি হেসে বলল তাহলে টাকাটা পাঠিয়ে দিস আছাড় যখন খেলি। মজাটা করতেছিল দিদি আমেরিকার বুস্টনে বসে ভিডিও কলে। কাপড়ের অবস্থা দেখে ছোটকালের সেই ফুটবল খেলার কথা মনে পড়ে গেল যেন ফুটবল খেলা খেলে আসলাম এইমাত্র মাঠ থেকে।অবশেষে পৌছালাম বাড়িতে। বাড়ির পথঘাট পুকুর সব পানিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। পুকুরের মাছগুলো যেন প্রাণ ফিরে পেল নতুন পানিতে হেসে খেলে আনন্দে মুহূর্তগুলো তারাও যেন উদযাপন করতে লাগলো।
আমাদের বাড়িটা আগের দিনের মাটির তৈরি দুই তলা বিশিষ্ট তাই এখনো টিনের চাল দ্বারা আবৃত সেই ঘরটি যেন এক ভূতুড়ে পরিবেশের মতন। আপাতত কেউ থাকেনা এই ঘরে। তাই ঘরের নিস্তব্ধতা এবং বৃষ্টি দুই মিলে টিনের যে একটা শব্দ মন চাইছিল ঘুমিয়ে থাকি কিছুক্ষণ। তখন বাবা বললেন চল কাপড় টা পরিবর্তন করে নে তারপর বাপ বেটা মিলে দুজনে বের হলাম আমাদের জমি এবং রাস্তাঘাট দেখার জন্য। রাস্তার উপর আমাদের পাওয়ার টিলার টা পড়ে আছে পানি কোন অবস্থাতে ছুই ছুই এই অবস্থায়। বাবা বললেন তুই কি পাওয়ার টিলার চালাতে পারিস তখন আমি মুচকি হেসে বললাম দাঁড়াও ইউটিউব ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখি তারপর মজার যে বিষয়টা হলো যে যখন আমরা আমাদের পাওয়ার টিলার টি চালু করলাম তখন দেখি রিভার্স এ দেওয়া আছে সেটা পিছন দিকে আসতে শুরু করলো তখন আমরা পাওয়ার টিলার টিকে বন্ধ করে দিলাম কিভাবে সামনে দেয় সে জিনিসটা জানতাম না। যাই হোক পরে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে আবার চালু করলাম আমাদের পাওয়ার টিলার তাড়াতাড়ি করে গিয়ার হ্যান্ডেলটা এক নম্বর গিয়ারে ফেললাম দেখি এখন আবার সামনের দিকে যাচ্ছে কোনরকমে সামনের উঠোনে রেখে স্টার্ট বন্ধ করে দিলাম। নতুন অভিজ্ঞতা হলো পাওয়ার টিলার চালানো। আসলে কি এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সেই সময় সৃষ্টি হয়েছে পাওয়ার টিলার চালাতে না জানলে না যা হয় আরকি। তারপর বাবা আর আমি অনেকক্ষণ হাসতে লাগলাম এই বিষয়টি নিয়ে যে পৃথিবীতে সব কিছু জানার দরকার আছে না ভবিষ্যতে আমাদের কাজে লাগতে পারে। তো যাই হোক বাপ বেটা দুজনকে পাওয়ার টিলার বুঝালো যে আমাকে স্পর্শ করলে কাঁদা গায়ে জড়াতে হবে। এই বৃষ্টি মাঝে পুকুরে গোসল করা কি এক আনন্দ যেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এই প্রকৃতির মাঝে যে মনের কতটা প্রশান্তি সেটা বলে বা ব্যাখ্যা করে বোঝানো সম্ভব নয়। এই বৃষ্টি আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়।
যেমন : অভিজ্ঞতা ,অনুভূতি, বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা, স্মৃতি
আজকের এই অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি আমি এই পোষ্টে মাধ্যমে শেয়ার করছি সবচেয়ে ভালো লেগেছে আমার বাবাকে অনেকদিন পর আমি সময় দিতে পেরেছি তার সাথে ঘুরে বেড়িয়েছে তার সাথে কিছু সময় কথা স্মৃতি আদান-প্রদান করতে পেরে যে মনের অনুভূতি সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না বর্তমান প্রজন্মের আমরা যারা আছি তারা পিতা-মাতাকে বেশি একটা সময় দিতে পারি না। হয়তো পারি কিছু সময়ের জন্য কিন্তু এই বৃষ্টি কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে তার জন্য একমাত্র আমার বাবাকে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় বাবার সাথে সময় কাটাতে পেরেছি। সেদিনই বুঝেছি একটা জিনিস সেটা হচ্ছে আমার বাবারা বা আপনার বাবারাও চায় তাদের সঙ্গে কিছু সময় তারা যেন তার সন্তানাদিরা তাদের সাথে সময় কাটায়।
দারুন দারুন সব ফটোগ্রাফির মধ্য দিয়ে আপনি আপনার অনুভূতি শেয়ার করেছেন আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি কনটেস্টে। আশা করি প্রত্যেক কনটেস্টে আপনার অনুভূতি গুলো শেয়ার করবেন এভাবে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার এই সুন্দর একটি কমেন্ট আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য আমি আশা রাখি আপনার এই অনুপ্রেরণা মূলক কমেন্টে মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরো ভালো অনুভূতি শেয়ার করতে পারব।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit