আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
হ্যালো বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। প্রতিদিনের মতো আজকেও আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম, দীনবন্ধু মিত্রের লেখা "নীলদর্পণ" নাটক রিভিউ নিয়ে। আপনারা সবাই জানেন যে আমি বাংলায় অনার্স করছি। তাই দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ এই নাটকটি ও আমার পাঠ্য বইয়ের একটি অংশ। এই নাটকটি মূলত উপনিবেশিক শাসন আমলের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই লেখা হয়েছিল। কৃষকদের উপর ইংরেজদের বা নীলকরদের অত্যাচারের প্রেক্ষাপট এই নাটকের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। চলুন কথা না বাড়িয়ে আমি আপনাদের মাঝে নীল দর্পণ নাটকের বুক রিভিউটি শেয়ার করি।
বই পরিচিতি
বইয়ের নাম : নীলদর্পণ
লেখকের নাম: দীনবন্ধু মিত্র
বইয়ের ধরণ : নাটক সংকলন
টিকা,আলোচনা: ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্য
প্রকাশক : জয় প্রকাশন
প্রকাশনা সংস্থা : গ্রন্থস্বত্ব
প্রচ্ছদ: মশিউর রহমান
পূনঃ মুদ্রণ- মার্চ- ২০২২
মূল চরিত্র
গোলক বসুর পরিবারের পরিচিতি
গোলকচন্দ্র বসু: তিনি হলেন গ্রামের কর্তা বাবু
সাবিত্রী: গোলক বসুর স্ত্রী
নবীন মাদব: গোলক বসুর বড় ছেলে
সৈরন্ধ্রী নবীন: মাধবের স্ত্রী
বিন্দু মাধব : গোলক বসুর ছোট ছেলে
সরলতা : বিন্দু মাধবের স্ত্রী
আদরি : গোলাপ বসুর বাড়ির দাসী
সাধু চরণের পরিবারের পরিচিতি
সাধুচরণ : গোলক বসুর প্রতিবেশী
রেবতী : সাধু চরণের স্ত্রী
ক্ষেত্র মনি : সাধুচরণের মেয়ে
রাইচরণ :সাধু চরণের ভাই
নীলকরদের পক্ষের লোকের পরিচিতি
আই.আই. উড : বড় সাহেব
পি. পি. রোগ:ছোট সাহেব
পদী: ময়রানী
গোপীনাথ দাস :দেওয়ান আমিন
নীলদর্পণ নাটকের এই মূল চরিত্র গুলো আপনাদের মাঝে তুলে ধরলাম কারণ নাটকটি বুঝতে সুবিধা হবে এইজন্য। নীলদর্পণ নাটকটি মূলত নীলকরদের অত্যাচারের কাহিনী নির্ভর একটি নাটক। এই নাটকটি গোলক বসুর পরিবারকে কেন্দ্র করে রচনা করা হয়েছে। দীনবন্ধুর এ নাটকটি কৃষক নির্ভর একটি নাটক। ইংরেজরা কৃষকদের অত্যাচার করে নীল চাষ করাতো। দীনবন্ধু মিত্রের এই নাটকটি পাঁচটি অংক এবং আঠারোটি দৃশ্য বা গর্ভাঙ্ক রয়েছে।
বুক রিভিউ :
প্রথম অংক :
নাটকটি শুরু হয় গোলক বসু এবং সাধু চরণের কথাবার্তার মাধ্যমে। সাধু চরণ গোলক বসুকে বলে এই দেশে আর থাকা যাবে না। নীলকরদের অত্যাচারে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে তাদের। কিন্তু গোলক বসু বলছে এখানেই তার জন্ম এখানে এত সুন্দর সবুজ শ্যামলা পরিবেশ ছেড়ে সে কোথাও যাবে না। তখন সাধু চরণ বলেছে গতবারে আপনার ধান গিয়েছে এবারে আপনার মান যাবে। গোলক বসু বলে মানতো কবেই চলে গেছে। আমাদের পুকুরপাড়েও নাকি নীল চাষ করবে নীলকরা। তাই মেয়েরা পুকুর পাড়ে গোসল করতে যেতে পারে না। এমন সময় গোলক বসুর ছেলে নবীন মাদব এসে হাজির হয়। রাগান্বিত কন্ঠে বলে যে নীলকরদের বিরুদ্ধে মামলা করবে। তাদের চাষের জমিতে ধান চাষ করতে দিবে না, শুধু নীল চাষ করতে বলছে।
অন্যদিকে সাধুচরণের ভাই রায়চরণ কান্না করতে করতে বাড়ি এসে জানাই যে জোর করে তাদের ধান খেতে দাগ দিয়ে দিয়েছেন নীল চাষ করার জন্য। এমন সময় আই আই উডের পক্ষের আমিন রাইচরণ কে ধরে বেঁধে নিয়ে যায়। তখন সাধু চরণের মেয়ে ক্ষেত্র মনিকে দেখে আমিন বলে, এই মেয়েকে যদি রোগ সাহেবের কাছে নেওয়া যায় তাহলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে এবং ছোট সাহেব অনেক খুশি হবেন। অন্যদিকে আই আই উড ও দেয়াওনের মধ্যে কথা হচ্ছে। দেওয়ান বলছে যে কৃষকদেরকে অনেক চাপ দেওয়া হচ্ছে যাতে নীল চাষ করে। বড় সাহেব বলে উঠে, কৃষকদের যেনো শ্যামচাঁদ দিয়ে প্রহার করা হয়। শ্যামচাঁদ হচ্ছে চাবুকের নাম। রাইচরণকে বেঁধে নিয়ে এসে শ্যামচাঁদ দিয়ে প্রহার করে তার কাছ থেকে জমি লিখে নিয়ে যায়। আর নবীন মাদবকে অনেক অপমান করে বড় সাহেবের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে সাধু চরণের মেয়েকে যদি এক রাতের জন্য ছোট সাহেবের কাছে দেওয়া হয় তাহলে তাদের ধান খেত ফিরিয়ে দেবে এরকম যুক্তি ও করে। তাই রেবতী ও ক্ষেত্র মনি গোলক বসুর বাড়িতে যাই। সেখানে সৈরেন্দ্রী তাদেরকে দেখে অনেক খুশি হয়। এবং জানতে পারে ক্ষেত্রমোণী চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ক্ষেত্র মনিকে ছোট সাহেবের কাছে পাঠানোর জন্য সন্ধ্যাবেলায় পদিময়রাণীকে পাঠাবে এ কথা জানন সৈরেন্দ্রীকে।রেবতী বলে যে গোলক বসুকে যেন এই কথাটি জানিয়ে দেয়। সৈরেন্দ্রী রেবতীকে বলে সাবধানে বাড়ি চলে যেতে কারণ সন্ধ্যা হয়ে গেছে এবং মেয়েকে যেন সাবধানে রাখে । তখন ক্ষেত্র মনিকে নিয়ে রেবতী বাড়ি চলে যায়।
দ্বিতীয় অংক :
বেগুন বেড়ির কুঠির গুদাম ঘরে চারজন রায়ত কে ধরে শ্যামচাঁদ দিয়ে প্রহার করা হয়। যাতে তারা গোলক বসুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাক্ষী দেয়। পিপি রোগ সাহেব সেখানে গিয়ে তাদেরকে অত্যাচার করে। অত্যাচার সহ্য না করে মিথ্যা মামলায় সাক্ষী দেবে বলে রাজি হয়। অন্যদিকে পিপি রোগ সাহেব পদীময় রানীকে দায়িত্ব দেয় ক্ষেত্রমনিকে যেন তার কাছে নিয়ে আসে। প্রদীপময় রানী এতে রাগান্বিত হয় কারণ পরিমো রানি চায় না ক্ষেত্র মনের সাথে খারাপ কিছু হোক। পদীমরানি এক লাঠিয়াল কে বলেছিল কালো বকনা। লাঠিয়াল বলেছে পরে কোথাও পেলে তাকে এনে দিবে। পদিময়রানীকে সবাই রাস্তার মধ্যে দেখলে অপমান করত এবং ছড়া কাটতো। পদিময়রানীকে দেখে পাঠশালার কিছু শিশুরা বলে ওঠে,
ময়রানীলো সই
নীল গুজলি কই।
এমন সময় নবীন মাদবকে দেখে পদিময় রানী লজ্জা পেয়ে চলে যায়। নবিনমাধব শিশুদেরকে বাড়ি চলে যেতে বলে।
এইদিকে সরলতা জানত যে তার স্বামী বিন্দুমাদব বাড়িতে আসবে। কিন্তু চিঠির মধ্যে লিখে জানাই যে তার পরীক্ষার কারণে আসতে পারবে না। অন্যদিকে তার পিতার নামে মিথ্যে মামলা দিয়ে দুই মাসের জন্য কারাগারে রাখার চিন্তা করছে নীলকররা। এই কথা নবীন মাদকেও চিঠি লেখে বিন্দুমাদব জানিয়েদেয়। নবিন মাধব এই নিয়ে খুবই চিন্তিত যে তার বাবাকে মিথ্যা মামলা দেওয়ার জন্য কয়েকজন রায়তকেও অত্যাচার করছে নীলকররা। সন্ধ্যার সময় আরেকজন রায়তকে শ্যামচাঁদ দিয়ে প্রহার করতে করতে নিয়ে যাওয়ার সময় নবীন মাদবকে দেখে সেই রায়ত বলছে যে তার পরিবারকে যেন নবিন মাধব দেখে রাখে।
তৃতীয় অংক :
বেগুন বেরির কুঠিরের সম্মুখে গোপীনাথ দেওয়ান ও একজন খাড়া সে কথার মধ্য দিয়ে এই অংকটি শুরু হয়। গোপীনাথ দেওয়ান জানতে পারে আমিন পিপির ওকে খুশি করার জন্য নিজের বোনকে ছোট সাহেবের ওকে পাঠিয়েছে। তাই সে এর শায়েস্তা করার জন্য আমিনের বিরুদ্ধে বড় সাহেবের কাছে নালিশ করবে বলে চিন্তা করে। এমন সময় বড় সাহেব অর্থাৎ আইআই উড এসে হাজির হয়। আইআইও তো জানায় যে, গোপীনাথ দেওয়ানের কথা মত গোলক বসুকে মামলায় ফাসানো গেছে। এই কথা গোপিনাথ দেওয়ান জানতে পেরে আমিনের বিরুদ্ধে তাদের কাছে নালিশ করে। অন্যদিকে সৈরেন্দ্রী ও তার পুত্রবধূর স্বর্ণালঙ্কার বন্দক দিয়ে কিছু টাকা নিয়ে আসে বসুকে ছাড়িয়া আনার জন্য। নবীন মাধবের কাছে তেমন টাকা ছিল না যে টাকা দিয়ে তার বাবাকে গারাগার থেকে ছাড়িয়ে আনবে। এমন সময় রেবতী কান্না করতে করতে এসে জানাই যে, ক্ষেত্রমনিকে চারজন পেয়াদাএসে ধরে নিয়ে যায় ছোট সাহেবের কাছে। নবীন মাদব একথা শুনে দৌড়ে ছুটে যাই ক্ষাত্রমণিকে রক্ষা করার জন্য।
এই দিকে ক্ষেত্রণিকে কে পদিময় রানী ছোট সাহেবকে খুশি করার জন্য রাজি করানোর অনেক চেষ্টা করে।> ক্ষেত্রমনি বলে যে, জান দেবো তব মান দিব না। পরিমল রানীকে ব্যর্থ দেখে ছোট সাহেবই নিজেই পদক্ষেপ নেই। ক্ষেত্রমনি দুই হাত জোর করে বলে, সাহেব তুমি তো আমার বাবার মত। পিপি রোগ সাহেব অনেক জোরাজুরি করে ক্ষত্রমণিকে কিছুতেই রাজি করাতে পরছিলোনা। তাই তার পেটে একটি ঘুসি মারে এবং চুল টেনে হিছরে টানতে লাগে। এমন সময় নবিন মাদব জানালা ভেঙ্গে রোগ সাহেবের কক্ষে প্রবেশ করে। রোগ সাহেবের হাত থেকে ক্ষেত্রমনির চুল ছাড়ায়। আর অনেক গালাগালি করে তার এই ঘৃণ্য কাজের জন্য। নবিন মাদবের কথার ফাকে তুরাপ রোগ সাহেবকে কয়েকটি ঘুশি মারে এবং দুই হাতে চেপে ধরে। নবিন মাদব তুরাপকে রোগ সাহেবের কাছে রেখে ক্ষেত্রমনিকে নিয়ে বাড়িতে রওয়ানা হয়।অন্যদিকে তার স্ত্রী সৈরন্ধ্রী কিছু মুখে তুলছে না। সে বলে তার স্বামী নবিন মাদব যতক্ষণ না আসবে সে মুখে অন্য পানি তুলবে না।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
দীনবন্ধু মিএের নীলদর্পন নাটকটার নাম শুনেছি। ঐতিহাসিক একটা প্রেক্ষাপট নীল চাষ নিয়ে নাটক টা তৈরি করা। নাটকের প্রতিটা চরিত্রের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বেশ ভালো করেছেন। ঐ সময়টাতে আমাদের দেশের কৃষকদের কে নীল চাষের জন্য বাধ্য অত্যাচার করা হতো। যে বিষয়টি আপনার নাটকের মধ্যেও ফুটে উঠেছে। বেশ ভালো রিভিউ দিয়েছেন এইটুকুর।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি ভাইয়া এই নাটকটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নীল চাষ নিয়েই তৈরি করা হয়েছে। দীনবন্ধু মিত্রের অনেকগুলো নাটকের মধ্যে এই নাটকটি ছিল অন্যতম। তখন কৃষকদের উপর অত্যাচার করা হতো নীল চাষ করার জন্য। নীল চাষের জনকিশকদের উপর যে অত্যাচার করা হয়েছে তা একটি পরিবারের মধ্যে দিয়ে এই নাটকটি উপস্থাপন করা হয়েছে। নীলদর্পণ এই নাটকটি খুবই বেদনাদায়ক। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি কমেন্ট করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
নীলদর্পণ আমাদের বাংলা সাহিত্যের বেশ নামকরা এবং উল্লেখযোগ্য নাটক। আমার এটি আগে পড়া হয় নি। আপনার লেখাটি বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। আমার কাছে বেশ ভালোই লাগছে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি আপু আপনি ঠিকই বলেছেন নীল দর্পণ আমাদের বাংলা সাহিত্যের বেশ নামকরা এবং উল্লেখযোগ্য একটি নাটক। এই নাটকটি শুধু বাংলা বিভাগের ছাত্রীদের জন্যই পড়া হয় না এটা ইতিহাসের ছাত্র ছাত্রীদেরও পড়ানো হয়। নাটকটি পড়ার আগ্রহ দেখে খুবই ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit