একটি ছাদ কুমড়ো গাছের জীবন বৃত্তান্ত।।

in hive-129948 •  6 months ago 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ তায়ালার নামে আরম্ভ করিতেছি
-

হ্যালো বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন, আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে একটি ছাদ কুমড়ো গাছের বৃত্তান্ত শেয়ার করবো।

আমার শাশুড়ি খুবই প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। আমার শ্বশুর বাড়িটা তেমন বড় নয়। আবার তেমন ছোট নয়। মধ্যম সাইজের একটি বাড়ি। তারপর নতুন করে আমার শ্বশুর বিল্ডিং করার পরে বাড়িতে জায়গা খুবই কম গেছে। তবে আমার শাশুড়ির প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা কমে যায় নি। আমার শাশুড়ি এই বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর থেকেই বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা লাগাতো। বিভিন্ন প্রকারের শাক সবজি চাষ করতো। যেখানে অল্প একটু জায়গা পেতো সেখানেই তিনি গাছ লাগিয়ে দিতেন।

আমার শাশুড়ির পছন্দের সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম শিম, লাউ, মিষ্টি, কুমড়া, চাল কুমড়ো, কহি,ঝিঙ্গে ও লাল শাক পুঁইশাক। আমার হাজব্যান্ডের ও প্রকৃতির প্রতি ভীষণ টান রয়েছে। তিনি তার মায়ের সাথে গাছ লাগাতেন,গাছের পরিচর্যা করতেন । আমার শ্বশুরের যখন টিনের ঘর ছিল তখন আমার শাশুড়ি ঘরের চালের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গাছ তুলে দিতেন। এখন গাছের সবজি বা ফসল পারতে গিয়ে ঘরের চাল নষ্ট করে ফেলতেন। এ কারণে আমার শশুর একপ্রকার আমার শাশুড়ির সাথে রাগ করেই টিনের ঘর ভেঙ্গে বেল্ডিং তৈরি করলেন।

কিন্তু আমার শাশুড়ি ও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন। তিনি ছাদের মধ্যেই চাল কুমড়া গাছ তুলে দিলেন। তারপর আমাদের একটি বড়ই গাছ আছে, সেই গাছের ডাল কেটে ছাদের মধ্যে বিছিয়ে দিলেন। চাল কুমড়ো গাছ এ কাটার উপরে তার প্রভাব বিস্তার করে। আজকে আমি ছাদের মধ্যে ওঠে চাল কুমড়ো গাছটি দেখে ভীষণ খুশি হয়েছি। বৃষ্টির পানি পেয়ে চাল কুমড়ো গাছটি যেন নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। চাল কুমড়ো গাছে প্রচুর পরিমাণে ফুল এসেছে। আবার কিছু কিছু ফুল থেকে চাল কুমড়াও ফুটতে শুরু করেছে।

অলরেডি এই চাল কুমড়ো গাছ থেকে অনেকগুলো চাল কুমড়ো আমরা খেয়েছি। এছাড়াও ছাদের মধ্যে অনেক প্রকারের সবজি গাছ রয়েছে। আমার শাশুড়ি এই চাল কুমড়া গাছটি মাটিতেই লাগিয়ে ছিল। তারপর বিভিন্ন গাছের ডালপালা দিয়ে মই বানিয়ে নিয়ে গাছটিকে বাড়ির ছাদের মধ্যে বিচরণ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

আপনারা দেখতে পাচ্ছেন বিভিন্ন জায়গার ফুল থেকে কিভাবে চাল কুমড়ো ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। গাছের মধ্যে এত চাল কুমড়ো একসাথে বড় হলে সবগুলো খাওয়া সম্ভব নয়। আমি শুনেছি আমার শাশুড়ি অনেক সবজি বাজারেও বিক্রি করতেন। আমার হাজবেন্ড যখন ছোট ছিল তখন তিমি বিভিন্ন সবজি বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। বাসার ছাদে গাছ তুলে দেওয়া তো সহজ কাজ। আমার শাশুড়ি নারিকেল গাছের মধ্যেও গাছ তুলে দিতেন। এই গাছের জন্য আমার শশুরের ছোট ছোট অনেক গাছ মারা পড়ে যায়। আমার শ্বশুর অনেক গাছের চারা লাগিয়ে থাকে,কিন্তু আমার শাশুড়ি সবজি গাছের কারণে ছোট ছোট গাছের চারা গুলো উপরের দিকে উঠতে পারে না।

শুনেছি অনেকদিন আগে একবার নাকি আমার শাশুড়ি একটি চাল কুমড়ো গাছ বরই গাছের মধ্যে তুলে দিয়েছিল। যার ফলে আমার শ্বশুর রাগ করে সেই চাল কুমড়ো গাছ টেনে ছিড়ে বরই গাছ থেকে নামিয়ে ফেলেছিল। যার ফলে আমার শাশুড়ি আবার রাগ করে শশুরের বরই গাছ কেটে ফেলেছিল। সেটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছিল। তারপর থেকে আর বরই গাছের মধ্যে চাল কুমড়া গাছ তুলে দেন না।

এখন বিল্ডিং এর বিশাল বড় ছাদ পেয়েছেন, ছাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির গাছ লাগিয়ে থাকেন। উপরের ছবিতে একটি চাল কুমড়ো দেখতে পাচ্ছেন, মোটামুটি এটি কিছুটা বড় হয়ে গেছে। হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যেই এটি খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে যাবে। চাল কুমড়ো বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। তবে নতুন পানির মাছ দিয়ে এই চাল কুমড়া খেতে ভীষণ ভালো লাগে। এখন নদীতে মোটামুটি পানি এসেছে, কিছুদিনের মধ্যে হয়তো নতুন মাছ জন্ম নেবে। সেই মাছ দিয়ে এই চালকুমড়া খাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

বন্ধুরা আপনারা হয়তো আমার টাইটেলে ছাদ কুমড়ো শব্দটি দেখে অবাক হচ্ছেন। এটা অবাক হওয়ার কিছু নেই। আগে মানুষ ঘরের চালের মধ্যে এই কুমড়ো গাছ তুলে দিত। যখন চালের মধ্যে এ কুমড়ো গুলো বড় হতো, তখন সবাই এগুলোকে চাল কুমড়ো বলে সম্বোধন করত। এখন যেহেতু এগুলো ঘরের ছাদের মধ্যে বড় হয় তাহলে আমি ছাদ কুমড়ো বলতেই পারি, হে হে হে।

বন্ধুরা সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এখান থেকেই বিদায় নিতে হচ্ছে। আগামীকাল আবার আপনাদের সাথে নতুন কোন ব্লগ নিয়ে হাজির হবো ইনশাআল্লাহ।

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,আল্লাহ হাফেজ।।

ফটোগ্রাফির বিবরণ:

2gsjgna1uruv8X2R8t7XDv5HGXyHWCCu4rKmbB5pmEzjYSj1ATxRsaEvyH89EyziiK3D1ksn1tTDvDwLCveqrhctVcDnDqtNbsqFMtuqD1RetzrgjG.png

ডিভাইসমোবাইল
মডেলরেডমি নোট-৮
শিরোনামএকটি ছাদ কুমড়ো গাছের জীবন বৃত্তান্ত।।
স্থাননিজ বাসা, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ,বাংলাদেশ।
কমিউনিটিআমার বাংলা ব্লগ
ফটোগ্রাফার@titash

2gsjgna1uruv8X2R8t7XDv5HGXyHWCCu4rKmbB5pmEzjYSfQKFP87GjNCaLdCLKkYFWdxRmYuKurkfDpnYWoUUypXiwgziwKKNP24nNC65i32Am8Fp.png

JvFFVmatwWHRfvmtd53nmEJ94xpKydwmbSC5H5svBACH7xbS7ungTbMjNMsQ7fPnm8uUBT2bU8Azf8zCDQrq3tkzHjjCFyraxJQeY79tPTN45w8XxU9wtvaFmWRaLhgHSy5GYKQ6bg.png

আমার পরিচিতি

আমি মোছাঃ মুসলিমা আক্তার নীলা। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @titash নামে পরিচিত। আমার জন্মস্থান চট্রাগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভাদুঘর গ্রামে। আমি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে বাংলা বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করতেছি। আমি বিবাহিত,আমার একটি কন্যা সন্তান আছে। আমি আমার হাসবেন্ডের সাথে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত নারায়নগঞ্জ জেলায় বসবাস করছি। আমি আমার হাসবেন্ডের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। প্লাটফর্মটার বিষয়ে জেনে আমি এখানে কাজ করার আগ্রাহ প্রকাশ করি। তারপর ২০২৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্মে যুক্ত হয়। আমি ভ্রমন করতে,মজার মজার রেসিপি করতে,বই পড়তে, নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে ও সৃজনশীল জিনিষ তৈরী করতে ভালোবাসি। আমি বাঙ্গালী জাতি হিসাবে ও আমার বাংলা ব্লগের সদস্য হতে পেরে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি।

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9uuNWjCEgJj5LnknUa3pWA9yop6dT9GDfEUZtz2oDgA9ocMHrCEtkFpngXowo13q8Mn1YvzEMh5bSRg1SNaKSZwbsLwb3YA.png

mCz6aUXpYgcE9hndDxJeFHNCvijWNENnxm5KqcEUM3o1siCoMX3by8iWdE4qYzWA7pZHzh4KthdoHPj2eEciPaXhHTdxhx5dKApkU8hxE3mUrybeUbtQCvbs4JC247APSjksrR6prneL2GBtrunMiz4r5CiYySVGKj1e3nT19qBCX5ekz5F.png

5QqP4NVdsPNcDeePyfoZLTLv8efTACU5P6GADTBgMgfXR7uJx5fN91AE46tFfFA7GwMq22wjUwwY5XDyUBMksyZSJGUEyK1Re6UWVZ1PqVR2ntgu73qAW8iDh6yPt8YVsiJ7enc87gmY874JVVHPQo6hSZvUs47FymTjqs43bSUF1Wvtd8T.jpg

4gZTTLyoV1msFb1u1BdB14ZHSP5sNg8hbP9cbJyTmUqfzL1as2zt5nA5iP9iEBmXtJKZZD3SHGtdFKZ13Up5EmSAxpDYtwYvvxyhsR48F5wdZ6ZhgEKtW9w1csKVawJHrqc3fgSkcpz8WsTY1MvhswZsey8zNe3vkwTdKjCivA3Z6dpaPre.png

Posted using SteemPro Mobile

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

অনেক ভালো লাগলো আপু আপনার এই সুন্দর একটি পোস্ট দেখে। এখন কুমড়ো গাছ হওয়ার সময়। আর এ কোন গাছগুলো কিন্তু খুব সহজে হয়ে যায়। যাইহোক ঠিক তেমনি একটি সুন্দর গাছে যেখানে ফল ফুল ধরেছে তার বিস্তারিত বিষয় উপস্থাপন করেছেন আমাদের মাঝে। আর এর মধ্য দিয়ে কিন্তু অনেক কিছু জানার সুযোগ হলো।

জি আপু এখন প্রচুর বৃষ্টি হবে। আর এখন চাল কুমড়ো বা জালিকুমড়ো হয়ার সময়। সুন্দর কমেন্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ছাদ কুমড়া দেখে আসলেই কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম, তবে আপনার যুক্তিও ঠিক আছে 😂😂। আপনার পোস্ট পড়ে আপনার শ্বশুর এবং শাশুড়ির বিভিন্ন মজার মজার কান্ড জেনে ভীষণ মজা পেলাম। কেউই কারোর থেকে কম যান না 🤭। বেশ ভালো লাগলো পুরো পোস্ট টি।

জি আপু আমার শশুর ও শাশুরির আরো মজার মজার কান্ড আছে, পরে কোনো এক ব্লগে শেয়ার করবো।ইনশাল্লাহ। 🤭🤭🤭