পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান সৃষ্টিকর্তার নামে শুরু করতেছি-
হ্যালো আমার প্রিয় বাংলা ব্লগবাসি বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের জন্য নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে ফেলে দেওয়া কিছু জিনিস দিয়ে একটি ফুলের তোড়া তৈরী করে শেয়ার করবো। আশা করি ব্লগটি সবার কাছে ভালো লাগবে।
আমরা অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহার করে অপ্রয়োজন মনে করে ফেলে দেয় । অনেক সময় ফেলনা জিনিস দিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর ওয়ালমেট বা ঘর সাজানোর জিনিস তৈরি করা যায়। যা আমরা একটু চিন্তাভাবনা করেই তৈরি করতে পারি। আর এই কাজগুলো বিশেষ করে মেয়েরাই করে থাকেন।আমরা মেয়েরা ঘর সাজাতে খুবই পছন্দ করি। পুরুষরা পারেনা। তবে এই কাজগুলো করতে কিছুটা সময় সাপেক্ষ। কিছুটা সময় নিয়ে ফেলে দেওয়া বা পুরুনো জিনিস দিয়ে অনেক কিছুই তৈরি করা যায়। তেমনি আমিও চেষ্টা করেছি ফেলে দেওয়ার জিনিস দিয়ে একটি ফুলের তোড়া তৈরি করতে। আমার বাসার বারান্দায় একটি নয়ন তারা গাছ লাগিয়েছিলাম। গাছটি আমি বাড়িতে যাওয়ার পর পানির অভাবে মারা যায়। গাছটি একেবারে শুকিয়ে যায়। তাই গাছটি ফেলে না দিয়ে, এটিকে আবার নতুন রুপ ধারণ করেয়েছি। বাসায় কিছু পলিথিনের মরানো প্লাস্টিকের দড়ি ছিল। আমি আমার এই গাছটিকে নতুন রূপ দেওয়ার জন্য সেই প্লাস্টিকের দাড়িগুলোকেই ব্যবহার করেছি। আমি এখানে কোনরকম নতুন জিনিস ইউজ করেনি। সবকিছুই ফেলে দেওয়া ও পুরনো জিনিস ব্যবহার করে একটি সুন্দর ফুলের তোড়া তৈরি করেছি। আজকে আমার এই ফুলের তোড়াটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে। কেননা বাংলা ভাষায় নিজের অনুভূতি শেয়ার করার একটি মাধ্যম পেয়েছি। আমার বাংলা ব্লগ এমন একটি প্লাটফর্ম। যেখানে আমরা আমাদের মনের অনুভূতিগুলো নিজের বাসায় সুন্দর করে আপনাদের মাঝে প্রকাশ করতে পারি। যাইহোক বন্ধুরা, চলুন আমার এই ফুলের তোড়া তৈরি করার প্রত্যেকটি ধাপ আপনাদের মাঝে শেয়ার করি।
- প্লাস্টিক / কাগজের দড়ি।
- শুকনো গাছের ডাল
- গোনা
- হলুদ কালারের টুকরো কাপড়
- শুকনো ক্লে
- কাছি
- স্কেল
- আগুন
ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে ফুলের তোড়া তৈরি করার প্রক্রিয়া-
প্রথম ধাপ-
প্রথমে কাগজের দড়ি গুলোকে আলতোভাবে পেঁচানো থেকে ছুটিয়ে কাগজের রুপ ধারণ করালাম। এই কাজটি করতে কিছুটা কষ্ট সাপেক্ষ। একটু জোরে চাপ পড়লেই কাগজগুলো ছিড়ে যায়। দড়ির ভাঁজগুলো এমনভাবে ছোটাতে হবে যেন ছিড়ে না যায়। পেজগুলো ছুটানোর পর একটি স্কেল নিয়ে আট ইঞ্চিপরিমাণ মেপে নিলাম। তারপর আট ইঞ্চি বরাবর কেচি দিয়ে কেটে নিলাম।
দ্বিতীয় ধাপ-
তারপর এই পর্যায়ে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ কাগজটাকে প্রথমে একটি মাজ বরাবর ভাজ দিয়ে দিলাম। যাতে করে কাগজটি একটু মজবুত হয়। তারপর ফুলের পাপড়ি বানানোর জন্য কাগজের দুইটি মাথা ভাজ করে একত্রিত করে নিলাম।
তৃতীয় ধাপ-
এ পর্যায়ে কাগজের দুটি মাথা ভাজ করে নেয়ার পর, মাঝখানে এরকম ফাঁকা রেখে কাগজটিকে সুন্দরভাবে নিচের দিকে কুচি দিয়ে মোড়িয়ে নিতে হবে। কাগজটি মোড়ানোর পর একটি পাপড়ির মতো দেখা যাচ্ছে।
চতুর্থ ধাপ-
তারপরে সুতা দিয়ে কাগজের ফুলের পাপড়ি নিচের অংশের গিট দিয়ে দিলাম। গেটুটা কিছুটা শক্ত করে দিতে হবে নইলে কাগজের পাপড়ি গুলো সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে না।
পঞ্চম ধাপ-
এ পর্যায়ে ফুলের গর্ব মুন্ড বা ফুলের বোটা তৈরি করার জন্য একটি হলুদ কাপড় নিয়ে নিলাম। আমার মেয়ের জামা বানানোর পরে কিছুটা টুকরা রয়ে গিয়েছিল। যেটা দিয়প কোন কাজ করা যাবে না। সেই কাপড়ের মাঝখানে ছোট করে কেটে নেওয়া শুকনো ক্লে দিলাম। ক্লেটা কাপড়ের মাঝখানে রেখে ভালোভাবে মুড়িয়ে নিলাম।
ষষ্ঠ ধাপ-
এ পর্যায়ে ক্লে ও কাপড়ের মোড়ানো ফুলের বোঁটাটিকে সুতা দিয়ে ভালোভাবে বেঁধে দিলাম। তারপর কেচি দিয়ে কেটে নিলাম। এভাবে তৈরি হয়ে গেল একটি ফুলের গর্ব মুন্ড বা গর্ব কেশর।
সপ্তম ধাপ-
তারপর একটি করে পাপড়ি নিয়ে ফুলের বোটার সাথে সংযুক্ত করে দিলাম। একটি ফুলের পাপড়ি সংযুক্ত করার সময় সুতা দিয়ে ভালোভাবে পেচিয়ে নিতে হবে তাহলে ফুলের পাপড়ি গুলো খুলে যাবে না।
অষ্টম ধাপ-
তারপর এমনভাবে পাঁচটি পাপড়ি ফুলের বোটার সাথে সংযুক্ত করে দিলাম। তারপর সুতা দিয়ে ভালোভাবে বেদে দিলাম।
নবম ধাপ-
এইভাবে আমি একে একে অনেকগুলো ফুল তৈরি করে নিলাম।
দশমধাপ-
এপর্যায়ে পাতা বানানোর জন্য সবুজ কালারের কাগজের দড়ি নিয়ে নিলাম। কাগজের দড়িটাকে মাজের দিক দিয়ে আলতোভাবে অল্প অল্প করে কাগজের ভাজগুলো ছুটিয়ে নিলাম। তারপরে দুই অংশে মোড়ানো কাগজের দড়ি গুলো রেখে মাঝখানে হালকাভাবে চাপ দিয়ে দিয়ে পাতার সেইভ দিয়ে দিলাম। তারপর কেচি দিয়ে কেটে দিলাম। কেটে দিয়ে একটি অংশ কম কাটবো আরেকটি দিক অর্থাৎ পাতার নিচের অংশ বড় রাখবো। যাতে করে পাতা গুলো ডালপালার সাথে সুন্দর ভাবে সংযুক্ত করাতে পারি।
এগারোতম ধাপ-
এ পর্যায়ে একটি ম্যাসলাইট নিয়ে পাতার সেইভ দেওয়ার জন্য পাতাটার মাথার অংশে আগুন দিয়ে আটকিয়ে দিলাম। এই অংশে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যাতে করে হাতে আগুন লেগে বা পলিথিনের অংশ না লেগে যায়। আর গরম থাকা অবস্থায় সাথে সাথে আঙ্গুল দিয়ে পাতার মাথার অংশটা চেপে ধরতে হবে তাহলে সুন্দর একটি পাতা তৈরি হয়ে যাবে। এভাবে আমি অনেকগুলো পাতা তৈরি করে নিলাম।
বারোতম ধাপ-
এ পর্যায়ে তৈরি করে রাখা ফুল গুলো ডালপালার সাথে গুনা দিয়ে এক একটি করে আটকে দিলাম। আটকানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যে ফুলগুলো যেন সুন্দর ভাবে শক্তভাবে শুকনো ডালের সাথে আটকিয়ে থাকে। আমি গুনা দিয়ে খুব শক্তভাবে ফুলগুলোকে শক্ত করে আটকিয়ে দিলাম।
চৌদ্দতম ধাপ-
এভাবে সবগুলো ফুল আমার শুকনো নয়ন তারা গাছের ডালের মধ্যে লাগিয়ে দিলাম। এপর্যায়ে মনে হচ্ছে যেন আমার মৃত নয়ন তারা গাছটি আবার জীবিত হয়ে গিয়েছে।
পনেরোতম ধাপ-
এইবার তৈরি করে রাখা পাতাগুলো ডালপালার ফুলের সাথে ভালোভাবে একটি একটি করে জোড়া লাগিয়ে দিলাম পাতাগুলো শুকনো ডালে লাগানোর সময় মনে হচ্ছে যেন গাছের সুন্দর্য আরো বেশি ফুটে উঠছে। গাছটি এত সুন্দর হয়েছে দেখতে। আমার এই কাজটি তৈরি করার পেছনের কষ্টটা দূর হয়ে গিয়েছে। আমার মৃত নয়নতারা গাছটি আবারো নতুন করে জীবিত হলো এই কাগজের ফেলনা জিনিসগুলো দিয়ে।
উপস্থাপনা-
এটি হলো আমার আজকে ডাই প্রজেক্ট এর ফাইনাল আউটপুট। আমার রুমের রং তেমন ভালো না। তাছাড়া আমার মোবাইলের ক্যামেরাও ভালো না। তার কারণে ফটোগ্রাফি গুলো ভালো হয়নি। তবে বাস্তবে ফুলের তোড়াটি দেখতে খুবই সুন্দর হয়েছে।
বন্ধুরা কেমন হলো আমার ডাই প্রজেক্ট। অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। সেই আশায় রইলাম। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। সবাই সবার জন্য দোয়া করবেন।
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,আল্লাহ হাফেজ।।
ফটোগ্রাফির বিবরণ:
ডিভাইস | মোবাইল |
---|---|
মডেল | রেডমি নোট-৮ |
শিরোনাম | ডাই প্রজেক্ট- ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে ফুলের তোড়া তৈরি।। |
স্থান | নারায়নগঞ্জ , ঢাকা,বাংলাদেশ। |
তারিখ | ২৪-০২-২০২৫ |
কমিউনিটি | আমার বাংলা ব্লগ |
ফটোগ্রাফার | @titash |
আমার পরিচিতি
আমি মোছাঃ মুসলিমা আক্তার নীলা। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @titash নামে পরিচিত। আমার জন্মস্থান চট্রাগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভাদুঘর গ্রামে। আমি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে বাংলা বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করতেছি। আমি বিবাহিত,আমার একটি কন্যা সন্তান আছে। আমি আমার হাসবেন্ডের সাথে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত নারায়নগঞ্জ জেলায় বসবাস করছি। আমি আমার হাসবেন্ডের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। প্লাটফর্মটার বিষয়ে জেনে আমি এখানে কাজ করার আগ্রাহ প্রকাশ করি। তারপর ২০২৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্মে যুক্ত হয়। আমি ভ্রমন করতে,মজার মজার রেসিপি করতে,বই পড়তে, নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে ও সৃজনশীল জিনিষ তৈরী করতে ভালোবাসি। আমি বাঙ্গালী জাতি হিসাবে ও আমার বাংলা ব্লগের সদস্য হতে পেরে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি।
Task done :
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
চমৎকার সুন্দর করে ফেলনা জিনিস দিয়ে সুন্দর করে ফুলের তোড়া বানিয়েছেন আপু। ফুল গুলো তাজা ফলের মতো লাগছে।দারুণ বানিয়েছেন। ধাপে ধাপে ফুলের তোড়া বানানো পদ্ধতি চমৎকার সুন্দর করে আমাদের সাথে ভাগ করে নিয়েছেন। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর করে ফেলনা জিনিসের ফুলের তোড়া বানানো পদ্ধতি আমাদের সাথে ভাগ করে নিয়েছেন জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ফেলনা জিনিস দিয়ে চমৎকার একটি ফুলের তোড়া তৈরি করেছেন আইডিয়াটা কিন্তু দারুণ ছিল আপু। ফুলগুলো দেখে মনে হচ্ছে হয়তোবা বাজার থেকে কিনে আনা কোন আর্টিফিশিয়াল ফুল। খুব সুন্দর ভাবে তৈরি করেছেন আপু দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ধন্যবাদ পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কি সুন্দর বানিয়েছেন আপনি এই ফুলের তোড়াটি। প্রথমে তো বুঝতেই পারেনি আপনি কি দিয়ে বানিয়েছেন। পরে যখন দেখলাম জাস্ট অবাক হয়ে গিয়েছে। দারুন আইডিয়া আপনার। প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে করে দেখেছি। আবার প্লাস্টিক ব্যাগ দিয়েও হয়। এরকমটা আগে দেখিনি। ভীষণ সুন্দর হয়েছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit