সালটা ২০১২। আমি তখন সবে মাত্র হলিক্রস কলেজে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আইডিয়াটা তখন প্রথম মাথায় আসে... সামনে আমার আঠারো বছর পূর্তি হবে... আমি খুব এক্সাইটেড এই জন্মদিনটা নিয়ে। তার কারণ আমি একটা চিঠি লিখেছি। আমার প্রিয় লেখককে। সেই চিঠিতে তাকে আমার ১৮তম জন্মদিনে আমি ইনভাইট করেছি। আমার ইচ্ছে, আমার ১৮ তম জন্মদিনে আমি ১৮ টা বই কিনবো সেই প্রিয় লেখকের, উনি বাসায় এসে আমার সেই ১৮ টা বই এ অটোগ্রাফ দিয়ে দিবেন!! আমি মোটামুটি কনফিডেন্ট ছিলাম, যেহেতু আমার সেই প্রিয় লেখক উদ্ভট উদ্ভট কাজ করতে পছন্দ করেন, এক তরূণী পাঠকের এমন অদ্ভুত মনের ইচ্ছে তিনি পূরণ করে তরূণীর ১৮ তম জন্মদিনটা সারাজীবনের জন্য স্মরণীয় করে রাখবেন অবশ্যই! চিঠি তো লিখে বসে আছি, কিন্তু বিপত্তি বাধলো, পাঠাবো কোন ঠিকানায়! আমি তো তার ঠিকানা জানি না। এমন কাউকেও চিনি না যিনি তার ঠিকানা জানেন! কি করা যায়, কি করা যায়!
ভাবতে ভাবতে একবার মনে হয় পত্রিকায় খোলা চিঠিতে পাঠিতে দিবো? মন সায় দিলো না, এভাবে পাঠালে আদৌ কি সে লেখা তার পর্যন্ত পৌঁছাবে? মনে হয় না। মাঝখান দিয়ে বাকিরা অনেকেই মজা নিবে! একবার মনে হলো, খোলা চিঠি না পাঠাই, পত্রিকার সম্পাদক বরাবর যদি চিঠিটা পাঠিয়ে অনুরোধ করি, উনি তো পৌঁছে দিতে পারে। এটা মনে ধরেছে।তবে এখনই দেয়া যাবে না। জন্মদিনের আগে আগে পোস্ট করবো। এত আগে পেলে তো আর কারোরই মনে থাকবে না তারিখটা....
এদিকে যাকে ঘিরে উদ্দেশ্যে এত আয়োজন, তিনি তো অসুস্থ। বিদেশে চিকিৎসারত আছেন। তার ক্যান্সার, ক্যামোথেরাপী চলছে। এটুকুই জানি। অনেক দিন থেকে বিদেশে আছেন, ওখান থেকেই মাঝে মধ্যে তার লেখা বের হচ্ছে পত্রিকায়।
হুট করে একদিন, খবরে দেখাচ্ছে সেই মানুষটা আর নেই.... আমার সে কি কান্না সেদিন! মৃত্যু ব্যাপারটার সাথে তখনো ওভাবে ঠিক পরিচিত নই আমি। তবুও বুকের মধ্যে কেমন ভারী হয়ে এলো! সামনের বইমেলায় তার আর নতুন কোন বই আসবে না,, তার পরিচালিত কোন নতুন নাটক আর আসবে না- ব্যাপারগুলো হজম হচ্ছিলো না। আজ এগারো বছর হয়ে গেলো সেই আকস্মিক দিনটার, আমার আসলে এখনো এই ব্যাপারগুলো হজম হয় না....
প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ,
আজ থেকে ঠিক এগারো বছর আগে আপনার নতুন যাত্রা শুরু হয়েছিলো.......
আশা করছি যেখানে আছেন, খুব ভালো আছেন।
এগারোটা বছর! খুব কম সময় না। তবুও এই আজকের তারিখটা আমার ঠিক হজম হয় না। আপনি আপনার লেখায় বলতেন, প্রকৃতি কখনো শূন্যস্থান পছন্দ করে না। কিন্তু দেখুন, আপনার শুন্যস্থান কিন্তু প্রকৃতি পূরণ করতে পারে নি। আমার সেই তরুণী হৃদয়ের স্বপ্নটা আর পূরণ হয় নি। এখন আর কোনো ভক্ত হিমু, রূপা বা মিসির আলীর আপডেট জানতে পারে না। বছর বছর বইমেলায় আপনার নতুন বইয়ের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে না কেউ, কিন্তু বইমেলায় আপনার নতুন বই বের হওয়ার শুন্যস্থানটা এখনো শুন্য! আপনি সত্যিই গল্পের জাদুকর ছিলেন। কত সহজ ভাষায় কত অদ্ভুত অদ্ভুত কান্ড করে বেড়াতেন বই জুড়ে৷ আপনার বই এর পাতায় পাতায় থাকতো চমক। একটানে পড়ে শেষ না করলে যেন অন্য কিছুতে মন বসতো না ঠিকমতো। আমাদের ছেলেবেলা কিংবা মেয়েবেলাটাকে আপনার জাদুর মাধ্যমে অন্যরকম করে তোলার জন্য ভালোবাসা জানবেন... এটাও জেনে রাখবেন, আপনার শূন্যস্থানটা শুন্যই থেকে যাবে সবসময়। কারণ, সব শুন্যস্থান পূরণ করার ক্ষমতা প্রকৃতির নেই.....
ভক্ত তো এমনি হওয়া উচিত। কত রাত একা একা খালি পায়ে হেঁটেছি, কতবার শূন্য পকেটে বেড়িয়েছি, কতবার হিমু হওয়ার চেষ্টায় ব্রত ছিলাম তার কোন হিসেব নেই। পরে দেখলাম হিমু হওয়া মোটেও সহজ না।
বেশ ভালো লিখেছেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনিও হিমু হতে চেয়েছিলেন ভাই! হিমু হওয়া আসলেও সোজা না! হয়তো হিমুর একটা দুটো অভ্যেস লালল করা যায়। তবে হিমু একটা ঘোর! আমরা যা হতে পারি না, হিমু ঠিক তাই.....
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit