বুক রিভিউ :- দুর্যোধন || লেখক- হরিশংকর জলদাস

in hive-129948 •  20 hours ago 

হ্যাল্লো বন্ধুরা

|| আজ ২০ জানুয়ারি, ২০২৫|| রোজ: সোমবার ||


প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি আপনারা সকলেই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় পরিবারসহ সুস্থ আছি, ভালো আছি। যদিও জীবনের পথ চলায় ভালো- মন্দ পাশাপাশিই চলে ! দুদিন ভালো গেলে দুদিন মন্দও যায় মাঝেমাঝে। এটাই হয়তো প্রকৃতির নিয়ম। এভাবেই যাচ্ছে জীবন। যাই হোক, আজ আপনাদের সাথে নতুন একটি পোষ্ট শেয়ার করতে চলে এসেছি। আজ একটি বুক রিভিউ পোস্ট শেয়ার করবো। পোস্ট টি আপনাদের কেমন লাগলো জানাবেন অবশ্যই। তো চলুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে চলে যাই আজকের পোষ্ট টি তে.... ৷ শুরুতেই এক নজরে বইটি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেখে নেই:-

IMG20250120183526.jpg



এক নজরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :-

নাম:- দুর্যোধন

লেখক :- হরিশংকর জলদাস

প্রকাশনী :- কথাপ্রকাশ

১ম প্রকাশ:- ফেব্রুয়ারী, ২০২২

পৃষ্ঠা:- ২৮০

মুদ্রিত মূল্য:- ৬০০ টাকা (৫ম মুদ্রণ)


" মহাভারত " এর নাম তো সকলেই কম বেশি জানেন ই। পঞ্চপান্ডব এবং কুরুপক্ষের ভীষণ ভয়াবহ যুদ্ধ, যা কিনা ধর্ম যুদ্ধ নামেও পরিচিত। তবে আমরা যেভাবে যা জানি তা কি একশো ভাগ সত্যিই? নাকি প্রকৃত ইতিহাসে মুদ্রার অপর পিঠেও কিছু অজানা রয়ে গেছে যা হয়তো সত্যের নামে লুকিয়েই রাখা হয়েছে? ইতিহাস - ভীষণ ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় লাগে আমার কাছে। ছোটবেলায় অবশ্য বোরিং লাগতো। এখন যতই জানার চেষ্টা করছি, ততই মজার লাগছে। মহাভারত এ সাথে যোগ হয়েছে প্রাচীন রাজনীতি! বিশাল কুরুরাজ্য সামলানোর জন্য কত অসংখ্য বার অসংখ্য মানুষ দ্বারস্থ হয়েছেন কত অসংখ্য রাজনীতি, কু-নীতি, শঠতা এবং ছলচাতুরীর তার সাথে যেনো নতুন করে পরিচয় হচ্ছে এই বই এর মাধ্যমে!




" দুর্যোধন" -বইটি নাম দেখেই অনুমান করা যাচ্ছে, দুর্যোধন এর দৃষ্টিতে মহাভারত এর কাহিনী লিখেছেন লেখক। হরিশংকর জলদাস মহাভারত এর বেশ কিছু কেন্দ্রীয় চরিত্র কিংবা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র দের নিয়ে পৃথক পৃথক বই লিখেছেন। যেমন- কর্ণ, দুর্যোধন, যুধিষ্ঠির, মৎস্যগন্ধা, সেই আমি নই আমি ইত্যাদি। লেখক হিসেবে লেখার হাত তার অসাধারণ ই লেগেছে আমার কাছে। দুর্যোধনের দৃষ্টিভঙ্গিতে এই বইটি পড়ে জানতে পারি, পঞ্চপাণ্ডব তাদের রাজ্যে অযাচিত বহিরাগত অতিথি, কারণ তাদের জন্ম ইতিহাস সম্পর্কে কারোর সঠিক ধারণা নেই। ওদিকে যুধিষ্ঠির বড় নাকি দুর্যোধন ই প্রকৃতপক্ষে বড়? প্রকৃতপক্ষে কে হস্তিনাপুর রাজ্যের উত্তরাধিকার এর অধিকারী? আমরা যে মহাভারত এর কাহিনী জানি, তাতে দুর্যোধন অসৎ, অত্যাচারী, বা খারাপ ক্যারেকটার, পান্ডবরা সত্যের পথের পথিক। শুধু এটুকুই কি সত্য? নাকি দুর্যোধনের দৃষ্টিতে তার রাজ্যাধিকার বঞ্চিত করার ভয় থেকেই না চাইতেও কিছুটা রাজনীতি করতে বাধ্য হওয়া কেউ? ছোটবেলায় ভীমকে হত্যার চেষ্টা করার কথা তো আমরা সকলেই মোটামুটি জানি,কিন্তু ভীম কতৃক দুর্যোধন এর বাকি ছোট ভাইদের অত্যাচার এর কথা আমরা কজন জানি? ছোট বেলা থেকেই কুরু - পান্ডবদের এই দ্বন্ধ এর পেছনে আসলে কি অন্য কারোর ভূমিকা ছিলো না? কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধতে পরিশেষে তো পান্ডব রা জয়লাভ করেছিলো, কিন্তু তারাও কি কম ছল-চাতুরির আশ্রয় কম নিয়েছিলো জিতার জন্য? তাহলে তারা কিভাবে সত্যের পথের পথিক থাকলো? যুদ্ধ জিতলেও আসলেই কি পান্ডবদের জয় লাভ হয়েছিলো? সবকিছুই নতুন দিকে, নতুন ভাবে ভাবতে শিখিয়েছে হরিশংকর জলদাস এর লেখা "দুর্যোধন " বইটি। মাঝে মাঝে গল্পের অন্য পাশ টাও অন্য ভাবে জানার প্রয়োজন আছে বৈ কি!


যাই হোক, আজ আর আমি বেশি কথা বাড়াচ্ছি না। আমার জন্য দোয়ার দরখাস্ত রইলো আপনাদের কাছে। সকলের সুস্থতা কামনা করে আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি।

এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে
🌼 ধন্যবাদ 🌼

JnhEU9gVzZMffiHru1FCCifZgfLf1KHZrcFaXmLESgE7XAVr1TuziH6edSQ6dMzDGSGumjPgPpqZ1K8goH4pfbdC2NpAwNr2ucTetouivc...eHirWAv2L4dLmHwKtLLAMCqZXh77gKzZVGaeE74Z5m2w5ZUPfFTAUP1CrLjBrUfhgEjz25bTs1ssz4GnzPtkmPvdKk2ApeC5Vzob7mNDsHP3Kxw9Cc62Kaaq7.webp

2ADPRBseKViTiLXUVCVcyKFFWwAQqRwPpNQSzHtUi2RNRAqmtaYXVePNznvthWTiKKFEk4EbRfwux6CuwsJ5AdzuSvjS6fzMA5fAA4Y1CW...qejroL7Ny1fgjD8vjRSRCARb7j8ome286FSutyVqFH96mi8ANj6PyFMjnWZcArE6PJDNk8DXMW8gVmYMokCaY4CX44YupoyUxF6CSnmBhY5cK3FBL7XWc4rv6.webp

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
@rme as your proxy
witness_vote.png

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20211205_182705.jpg

আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।



Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!

image.png

Screenshot_2025-01-20-23-14-23-03_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

Screenshot_2025-01-20-23-13-52-92_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

Screenshot_2025-01-20-23-07-02-37_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

Screenshot_2025-01-20-23-05-26-48_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

Screenshot_2025-01-20-22-59-09-42_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

Screenshot_2025-01-20-22-58-53-89_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

Screenshot_2025-01-20-22-56-56-60_0b2fce7a16bf2b728d6ffa28c8d60efb.jpg

মহাভারতের গল্প যা কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস লিখেছেন তাঁর অনুবাদে অনেক কিছুই সংযোজন ঘটেছে৷ তা মূল গল্পে হয়তো নেই। আর পরবর্তী লেখকরা বলা ভালো ক্রিটিকরাই এভাবে বলেছেন। পান্ডব পুত্ররা পান্ডুর ঔরসে নয় তারা দেবতাদের ঔরসে কুন্তী এবং মাদ্রির গর্ভজাত সন্তান৷ এই বিচার্য উল্লেখ করে যদি পান্ডবরা হস্তিনাপুরের অধিকারী না হয়ে থাকে তবে দুর্যোধনের ও কোন অধিকার নেই। কারণ পান্ডু এবং ধৃতরাষ্ট্র এই দুজনেই কিন্তু কেউই শান্তনু পুত্র চিত্রাঙ্গদ বা বিচিত্রবীর্য তথা হস্তিনাপুর রাজবংশের সন্তান নয়। বেদব্যাসের ঔরসে অম্বা অম্বিকার গর্ভজাত৷ তাই দুর্যোধনের ওই বক্তব্য একেবারেই ধোপে টেকে না৷

এরপর আসি ছল চাতুরীর প্রসঙ্গে৷ পাশা খেলাও পুরোপুরি প্রহসন ছিল৷ যুদ্ধে জয়লাভের জন্য রণনীতির প্রয়োজন। অভিমন্যু হত্যাও কিন্তু যুদ্ধের নিয়ম লঙ্ঘন করেই ঘটানো হয়েছিল৷ আসলে শকুনি তার প্রতিশোধ স্পৃহায় বাকি সব কিছুই ধ্বংস করে দিয়েছিলেন৷ যুদ্ধের মধ্যে অনেক কিছুই ঘটেছিল৷ দৈহিক বলের থেকে যে বুদ্ধির বল অনেক দামী তা প্রমাণ করে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ৷

দুর্যোধন আসলে আদরে বাঁদর একটি ছেলে। ধৃতরাষ্ট্রের অতিরিক্ত পুত্র স্নেহ এবং শকুনির প্রতিশোধ স্পৃহা দুই মিলেই দুর্যোধনকে সুপুরুষ হওয়া থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।

একটা বিশাল রাজ্য, রাজবংশ টিকিয়ে রাখার জন্য বংশ পরম্পরায় সে কত চল-চাতুরী! আর ভীষ্ম যা করেছিলেন শকুনীর পুরো বংশের সাথে, তারপর শকুনীর প্রতিশোধস্পৃহাও কি যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত নয়? একথা ঠিক যে যুদ্ধে বলের চেয়ে বুদ্ধির জোর এর খেলা ভালোমতোই চলেছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে। কোনো পক্ষই বুদ্ধির খেলায় পিছিয়ে ছিলো না কারোর থেকে!

এক পক্ষ তো অবশ্যই পিছিয়ে ছিল৷ নইলে হারতেই পারত না৷

শকুনির রাগ ক্ষোভ সমস্ত ভীষ্মের প্রতি যথাযথ। সেক্ষেত্রে প্রতিশোধ তিনি ভীষ্মের ওপর নিতেই পারতেন। কিন্তু ভীষ্ম যেহেতু হস্তিনাপুরের রক্ষক তাই হস্তিনাপুরের ভরত বংশ তচনচ করার মারণ খেলায় মেতেছিলেন। দুর্যোধন তাঁর ঘুঁটি বই কিচ্ছু না। এখানে প্রতিশোধ ধ্বংস এতোটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল যে দুর্যোধন যে আসলেই তার বোনের সন্তান তা ভুলে গিয়েছিলেন৷ যে কারণে গান্ধারীর অভিশাপ কুড়িয়ে ছিলেন। পরিনতির আন্দাজ কি শকুনি করতে পেরেছিলেন না বলে মনে হয়?

অথচ দেখুন ভীষ্মের প্রতি রাগ অম্বারও ছিল। তিনি কিন্তু হস্তিনাপুর ধ্বংস করতে উঠে পড়েননি।

যাইহোক, মানুষে মানুষে তফাৎ তো থাকবেই৷ কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস আমার দেখা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ লেখক যিনি এমন একটি মহাকাব্য সৃষ্টি করেছিলেন এবং যার ভেতরে প্রবেশ করলে তল খুঁজে পেতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয়।