স্মৃতির পাতা থেকে: শ্রমিক দিবসে ভলান্টিয়ারিং চিকিৎসা সেবা দেয়ার মূহুর্ত

in hive-129948 •  8 months ago 

|| আজ ১লা মে,২০২৪ || রোজ: বুধবার ||

হ্যাল্লো বন্ধুরা

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ পরিবার, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। এমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি আপনারা সকলে এমন গরমের মাঝেও ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদে পরিবারসহ বেশ ভালোই আছি। আজ আবারো আপনাদের সামনে হাজির হলাম নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আজকের পোষ্ট এ আমি আমার জীবনের স্মৃতির পাতা থেকে একটা দিনের কথা তুলে ধরবো। আশা করবো আজকের পোষ্ট টি আপনাদের ভালো লাগবে।


[ছবিটি চ্যানেল আই প্রচারিত সংবাদ থেকে স্ক্রিনশট নেয়া।ডাক্তারের সাথে একদিনের এসিস্ট্যান্ট tithyrani ]

১লা মে- সকলেই বিশ্ব শ্রমিক দিবস হিসেবে জানে। এর পেছনের কাহিনীও হয়তো কম বেশি অনেকেরই জানা। ওসব নিয়ে লিখছি না। তখন আমি ভার্সিটির স্টুডেন্ট। ভার্সিটিতে ভর্তির আগে থেকেই যুক্ত ছিলাম " Lighter Youth Foundation " নামের একটি ভলান্টিয়ারিং অর্গানাইজেশনের সাথে। সময়, সুযোগ, সামর্থ্য আর দেশের জন্য নিজের অবস্থান থেকেই কিছু করার সদ্বিচ্ছা থেকেই সেই অর্গানাইজেশনের সাথে যুক্ত হওয়া, ২০১৩ সাল থেকেই। সেই সুবাদে নিজের অবস্থান থেকে বেশ কিছু কাজ করার সুযোগ ও হয়েছে। নিয়মিত রক্তদান ছিলো তার মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও বন্যার সময় বন্যাকবলিত মানুষ গুলোর কাছে সহায়তা পৌঁছে দেয়া, শহর টাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, রমজান মাসে ফ্রি তে ইফতার বিতরণ করা এগুলো ছিলো রুটিন ওয়ার্ক। এছাড়াও প্রতি মাসেই আলাদা আলাদা ছোট খাটো অনেক প্রজেক্ট করা হতো, জন সচেতনতা মূলক প্রজেক্ট ছিলো সবগুলোই। যখন ই আমার পক্ষে সম্ভব হতো, যুক্ত হতাম এসব প্রজেক্ট এ।


একবার ঠিক হলো শ্রমিক দিবস উপলক্ষে যে সাধারণ ছুটির দিনটা থাকে, সেই দিনটাকে কাজে লাগিয়ে আমরা বেশ কয়েকজন প্রোফেশোনাল চিকিৎসক এর সাহায্য নিয়ে ফ্রি চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়া হবে গ্রাম জুড়ে গরীব মানুষদের।
রাঙুনীয়া থাকার দক্ষিণ নিশ্চিন্তাপুর গ্রামের একটি সরকারি বিদ্যালয়ে সেদিন চিকিৎসা ক্যাম্প করা হয়। আগে থেকেই গ্রামবাসীকে মাইকিং এর মাধ্যমে জানানো ছিলো। ১২ জন প্রোফেশনাল ডাক্তার, সাথে আরো কয়েকজন মেডিকেল স্টুডেন্ড এর সমন্বয় এ তৈরি করা হয় মূল টীম। উনারাই মূল চিকিৎসা সেবা দিবে আর সাথে সার্বক্ষণিক ভাবে আমরা এক ঝাঁক ভলান্টিয়ার বিভিন্ন ভাবে তাদের সহোযোগিতায় ছিলাম। কেউ সাহায্য করেছে মানুষদের সমস্যার কথা শুনে নির্দিষ্ট বিভাগের ডাক্তারের রুমে পাঠাতে, কেউ বা তাদের প্রেসার মেপে দিচ্ছেন ডাক্তারের রুমে যাওয়ার আগে, কেউ বা ব্লাড গ্রুপ পরীক্ষা করে জানিয়ে দিচ্ছেন, কেউ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডায়বেটিস চেক করে দিচ্ছেন।


সকাল ১০ টা থেকে শুরু হয়েছিলো সেই ফ্রী চিকিৎসা ক্যাম্পেইনিং। তবে আমাদের কাজ শুরু হয়েছিলো আরো আগে থেকে। কীভাবে প্র্শার সঠিকভাবে মাপতে হয়, কীভাবে ব্লাড গ্রুপিং করতে হয়, কীভাবে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হয়, এসব বিষয় এ আমাদের সকল ভলান্টিয়ার দের ব্রিফিং দিয়েছিলেন প্রথমে ডাক্তার গণ এবং ওয়ান টু ওয়ান দেখে চেক করেও নিয়েছিলেন প্রত্যেকে সঠিকভাবে সেইগুলো করতে পারছে কিনা। আমাদের কেন্দ্র ছিলো স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সকাল থেকেই অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গিয়েছিলেন। লাঞ্চ টাইম পর্যন্ত একটানা কাজ করে গিয়েছিলেন সকলেই। আমি ছিলাম একজন ডাক্তারের এসিস্ট্যান্ট হিসেবে। প্রেস্ক্রিপশনে রোগীর নাম, বয়স, সমস্যার ডিটেইল লিখে তারপর ডাক্তারের কাছে উনাকে নিয়ে দেখাচ্ছিলাম। এভাবে কত অভিজ্ঞতা যে হয়েছিলো সেদিন! প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের নিজেদের খাবার যোগাড় করাই কষ্টসাধ্য, সেখানে ডাক্তার দেখানো তাদের জন্য বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না। সরকারি হাসপাতাল ও অনেক দূরে হওয়ায় সরকারি হাসপাতাল থেকে সেবা নেয়াও একদিনের কাজের কামাই, যা তাদের জন্য অনেক ক্ষতির বিষয়। অনেকে আবার অনেক মারাত্মক রোগ শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকবছর ধরেই! ডাক্তার দেখানো বা দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ার সাধ্য নেই তাদের। ছোট থেকে শহরে বড় হওয়া, অভাব কি জিনিস সেভাবে না বোঝা, ভার্সিটি পড়ুয়া স্টুডেন্ট হিসেবে আমার কাছে সেদিন টা ছিলো নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের দিন।


লাঞ্চের বিরতির পর আবারো শুরু হয়ে সন্ধা পর্যন্ত চলে এই ফ্রী চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ বিতরণ কর্মসূচি। গ্রামের প্রায় দেড় হাজার মানুষ সেদিন সেবা পেয়েছিলেন এই উদ্যোগ এর মাধ্যমে। বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে সেটা নিয়ে নিউজ ও করেছিলো। সেটাই আজ ফেসবুকের মেমোরি তে আসায় এক মুহূর্তে যেন ফিরে গিয়েছিলাম সেই দিনটায়। যেখানে হয়তো প্রথম খুব কাছ থেকে বুঝেছিলাম, অভাবের কাছে দীর্ঘকাল ধরে শারীরিক অসুস্থতা বয়ে বেড়ানো মানুষ গুলো কত বেশি অসহায়!! উপরওয়ালা সকলের সহায় হউন।

এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে
🌼 ধন্যবাদ 🌼

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
@rme as your proxy
witness_vote.png

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20211205_182705.jpg

আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।



Posted using SteemPro Mobile

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

এমন সুন্দর মহৎ কাজের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা সবাই যদি এভাবে গরিবের মাঝে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে অবশ্যই সুন্দর একটা জাতি গঠন এবং আমাদের দেখাদেখি নবপ্রজন্ম অনেক কিছু শিখতে পারে। অনেক ভালো লাগলো আপনার আজকের এই পোস্ট পড়ে আর মানবিক কর্মকান্ড দেখে।

আপনার মন্তব্য টি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাই। অবশ্যই আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে একে অন্যের পাশে দাঁড়াতে পারলে খুবই সুন্দর একটি জাতি গঠন সম্ভব!

মানবতা মানুষকে মহৎ গুনে রূপান্তর করে। আমরা যারা দেশ এবং জাতিকে নিয়ে ভাবি তারা অবশ্যই দেশের মঙ্গলের কাজে এগিয়ে আসি বা হাত বাড়িয়ে দেয়। শ্রমিক দিবসের ছুটি উপলক্ষে খুব সুন্দর উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এবং গ্রামের মানুষের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। দেখে অনেক ভালো লাগলো আপু আপনাদের সুন্দর এই কার্যক্রম।

অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আপনার দারুণ মন্তব্যের জন্য। আমরা চাইলেই আশেপাশের অনেক মানুষ এর পাশেই অনেকভাবে দাঁড়াতে পারি। মানুষ তো মানুষের ই জন্য।

হঠাৎ ফেসবুকের মেমোরি পোস্ট হয়তো আমাদের এরকম একটা চমৎকার পোস্ট পেতে সাহায্য করলো।
প্রথমেই আপনাদের এই চমৎকার কর্মকাণ্ডকে আমি একটি মানবিক সহায়তা পূর্ণ কাজ হিসেবে সম্মান জানাচ্ছি। এখনকার সময়ে এ ধরনের কাজগুলো কজন মানুষ করতে পারে বলুন? আপনারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই সমস্ত মানুষের চিকিৎসা দিয়েছেন যাদের দুমুঠো খাবার যোগাড় করতে কষ্ট হয়ে যায়। নিশ্চয়ই উপরওয়ালা আপনাদের এই কাজের উত্তম প্রতিদান দেবেন।
অনেক ভালো লাগলো আপনার আজকের পোস্টটি।

হ্যা ভাই। ফেসবুকের মেমোরি গুলো মাঝেমাঝে দারুণ কিছু উপহার দেয়। আর মানুষ হয়ে মানুষের জন্য অনেক কিছুই করা যায় চাইলে। বেশ কয়েক বছর আমি সেই সংগঠন টার সাথে যুক্ত ছিলাম। এবং এধরনের বেশ কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। ইচ্ছে আছে আস্তে ধীরে সেগুলোও শেয়ার করবো... অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।