হ্যাল্লো বন্ধুরা
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি আপনারা সকলেই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় পরিবারসহ সুস্থ আছি, ভালো আছি।যদিও আসলে ঠান্ডায় গলার অবস্থা বেশি ভালো না, তবে সেটাকে এখনো তেমন বেশি পাত্তা দেয়ার চেষ্টা করেছি না আর কি! আজ আপনাদের সাথে নতুন একটি পোষ্ট শেয়ার করতে চলে এসেছি। ভাবলাম একটা গল্প অর্থাৎ ক্রিয়েটিভ রাইটিং পোস্ট করি। কমিউনিটি তে অনেকেই ক্রিয়েটিভ রাইটিং শেয়ার করে থাকেন। তাদের দেখে দেখে আমিও একটু চেষ্টা করলাম, বাকি টা আপনাদের কেমন লাগলো জানাবেন অবশ্যই... তো চলুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে চলে যাই আজকের পোষ্ট টি তে.... ৷
ছবিটি canva এপ দিয়ে তৈরি
আজ আবারো একই স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেলো তিয়াস এর । প্রায় এক বছর থেকে এই একই স্বপ্ন সে প্রায় প্রায় ই দেখে এবং এই ভোরের দিকেই দেখে।যে স্বপ্নে মৃত মানুষ কে দেখা হয়, তাকে আসলে দুঃস্বপ্ন বলাই ভালো। তবে সেই মৃত মানুষ টি যে তিয়াস এর বাবা! তাই তার স্বপ্ন কে দুঃস্বপ্ন বলতে বাঁধে তিয়াস এর। অবশ্য বলবেই বা কাকে,, এই স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন দেখার বিষয় টি এখনো কাউকে বলে নি তিয়াস। কাকেই বা বলবে! এমন মনের দু বলার মতোও তেমন কেউ আর নেই জীবনে!! দুজন ছিলো, যাদের সাথে মনের কথা গুলো বলতে পারতো। একজন তিয়াসের বাবা আরেকজন তার প্রেমিকা- শখ। তিয়াসের বাবা দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে দুনিয়া থেকে নিজেকে অব্যাহতি দিয়েছেন সেচ্ছায় আর তিয়াসের প্রেমিকা শখ তিয়াসের জীবন থেকে সরে গেছে সেচ্ছায়!
তিয়াস এর দেখা স্বপ্ন টা আহামরি কিছু না। তার মৃত বাবা তিয়াস কে হাত বাড়িয়ে ডাকে তার স্বপ্নে। বাবার মুখ দেখে তিয়াসের মনে হয় যেন বাবার অনেক কিছু বলার আছে তিয়াসকে! কিন্তু কিছুই তো বলেন না। কেবল ডেকে যান। একটা পর্যায়ে নিজেই নিজেকে আঘাত করতে থাকেন। সে আঘাত যখন তিয়াস এর সহ্য সীমার শেষ প্রান্তে চলে আসে, এমন সময়ে তিয়াসের ঘুম ভেঙে যায়। বিছানার ধরফর করে উঠেই বুকটা মোচর দিয়ে উঠে তিয়াসের। খুব মন খারাপ হয়ে যায় তিয়াসের। আহারে তার বাবা টা! সারাজীবনে তার বাবা সুখ পান নি। গুছিয়ে কথা বলতে পারতেন না যেন তিনি। তিয়াসের মা ছোটবেলায় তিয়াস আর তার বাবাকে ফেলে অন্য কারো সাথে পালিয়ে যান। তিয়াস তখন কেবল ক্লাস টু কি থ্রি তে পড়ে! কে জানে হয়তো তার বাবার এই অন্তর্মুখী স্বভাবের জন্যই কি না! এ নিয়েও বাবা কোনোদিন কোনকিছু বলেন নি তিয়াস কে। তিয়াসকে নিজের হাতেই একরকম বড় করেছেন। পরবর্তীতে আর কারোর সাথে ঘর ও বাঁধেন নি।কোনোরকমে একটা সরকারি চাকরি ছিলো তার বাবার। তাই খেয়ে পড়ে ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছিলো জীবনটা। বাবা বেশি কথা বলতেন না, তবে তিয়াস তার সব কথাই বাবার সাথে শেয়ার করতো। দুজন এর যেন ছোট্ট একটা পৃথিবী ছিলো। হুট করে তিয়াস এর বাবা একদিন ফ্যান এর সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করে বসে। তিয়াস এর মাথায় আকাশ নয় যেন পুরো পৃথিবী বা মহাবিশ্ব ভেঙে পরলো!!
বাবার মৃত্যুর একমাস পর থেকে তিয়াস এই স্বপ্ন দেখা শুরু করে। যেনো বাবা তিয়াস কে কিছু বলতে চায়... কি বলতে চায় বাবা?? এই প্রশ্নটা তিয়াস এর মাথায় ঘুরতে থাকে শুধু। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে তিয়াস মনে মনে তার বাবাকে প্রশ্ন করতে করতে ঘুমায় যে বাবা কি বলতে চায়?? এমন ই করতে করতে এক রাতে তার বাবার সাথে স্বপ্নে আবারো দেখা হয়। বাবাকে দেখা মাত্রই তিয়াস প্রশ্ন করে কি বলতে চাও তুমি? আমাকে কেনো ডাকো? আমি যাবো না তোমার সাথে.. তখন তিয়াস এর বাবা বলে -" না বাবা, না। তুই তোর বাপের মতো বোকামী করিস না। তোর বাবা তোকে একা করে এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছে, তার জন্য তোর কাছে আমি ক্ষমা চাই রে। তোকে একটু আদর করতে খুব মন চায়। তাই দেখতে আসি। কিন্তু তুই আমার কাছে চলে আসার জন্য আমার মতো ভুল করিস না বাবা। তুই মানুষের সাথে মিশবি, একজন মানুষ নিয়ে এই দুনিয়া না বাবা তিয়াস। তোর বাবা কাপুরষ ছিলো, তাই চুপচাপ পালিয়ে মুক্তি চেয়েছি বাবা। কিন্তু আমি এখন জানি, এপথে মুক্তি নাই.... তিয়াস তুই বাঁচবি, ভালো ভাবে সকলের সাথে মিলেমিশে এই দামী জীবনটা উপভোগ করবি তিয়াস৷ তোর বাবার মতো একা একা থেকে জীবন টা নষ্ট করবি না। তিয়াস, তুই তোর বাবার মতো হবি না বাবা। এখন আমি বুঝি মানব জীবনটা খুব দামী রে! আমি আর আসবো না, তবে তুই বাবার উপর অভিমান করে বাবার মতো একই ভুল করিস না - এটুকুই মনে রাখবি তোর বাবার শেষ ইচ্ছে। "
এরপর তিয়াস সত্যিই নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে একটু একটু করে। তার বাবার শেষ ইচ্ছের মর্যাদা রাখতে সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। জীবন চলার পথে চেষ্টা করতে করতে যখন ই থমকে গিয়েছে, হাপিয়ে উঠেছে তিয়াস, তখন ই বাবার বলা শেষ কথা গুলো ই তিয়াসকে আবারো পথ চলতে সাহস যুগিয়েছে, অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ৭ বছর পর এসে তিয়াস এখন জানে যে মানুষ চেষ্টা করলে সব পারে! খালি মাঝে মাঝে বাবার উপর অভিমান করে যে তার বাবা কেনো নিজের জন্য চেষ্টা টা করলো না.....
আজ আর আমি কথা বাড়াচ্ছি না। আমার জন্য দোয়ার দরখাস্ত রইলো আপনাদের কাছে। সকলের সুস্থতা কামনা করে আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি।
এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে 🌼 ধন্যবাদ 🌼
VOTE @bangla.witness as witness OR @rme as your proxy
আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit