মার্গারিটা ও তিন পাহাড়ের বিভীষিকা --- ( দ্বিতীয় পর্ব ) - [ ১০% shy-fox ভাই এর জন্য বরাদ্দ ]

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

image.png

image source

★★★★★ মার্গারিটা ও তিন পাহাড়ের বিভীষিকা ★★★★★

দ্বিতীয় পর্ব

প্রথম পর্বের লিঙ্ক

source

*************

গার্ড আঙ্কেলদের পাঠিয়েছিলেন তিনি। তারা মুলত পায়ের ছাপ খুঁজতেই গিয়েছিল সেখানে, কিন্তু সেখানে কোন পায়ের ছাপ না পাওয়া গেলেও, ওই স্থানের এমন কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন তারা লক্ষ্য করেছিলেন, যা তাদের মনে বয়ে এনেছিল কোন আসন্ন অমঙ্গলের পূর্বাভাষ। গম্ভীর মুখে ফিরে এসেছিলেন গার্ডরা, তারা সেখানে যা যা দেখেছিলেন, একে একে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেছিলেন সুপার ম্যাডামকে -

দোতালার যেই ঘরে আমি ও সিসিলিয়া থাকতাম, সেই ঘরের জানলার নিচে সুন্দর পাহাড়ি ফুল আর পাতাবাহারি গাছপালার একটি বাগান ছিল।
সেই বাগানের আশপাশটা জুড়ে ছিল বেশ কিছু পাইন গাছের সারি। আর সেই ছোট জঙ্গল পেরিয়ে ঢালু হয়ে নেমে গেছে পাইন গাছের ঘন বন। সেই ঢালু ঘনবনে সূর্যের আলোও খুব একটা প্রবেশ করতে পারত না। সেই ঘন বন শুরু হওয়ার ঠিক আগে ফুল বাগানের পাশে পাইন গাছের ঝোঁপ ছিল, সেখানে গাছগুলোর এতটা ঘন হয়ে বেড়ে উঠেছিল যে তাদের ছায়ায় সে জায়গাটিতে বেশ আলো আঁধারি হয়ে থাকত। তার পাশেই সদ্য কিছু নতুন ফুলের চারা এনে লাগিয়ে ছিল গার্ডেনার আঙকল রা, বেশ সুন্দর ফুল ফুটত সেখানে। পরিবেশটা এত সুন্দর ছিল যে গার্ড
আঙ্কলরাও ওখানে বাগান আর পাইন ঝোঁপ সামনে বসেই পাহাড়া দিত।

কিন্তু সেদিন যখন গার্ড কাকুরা সেখানে কোন অবাঞ্চিত অনুপ্রবেশকারীর গত রাতের উপস্থিতির প্রমাণ সন্ধানে গিয়েছিলেন তারা সন্মুখীন হয়েছিলেন এক অতি বিস্ময়কর অমঙ্গলজনক পরিস্থিতির। তারা গিয়ে দেখেছিলেন যে সেই বাগানের ভেতরের দিকে যেখানে বেশ কয়েকটি ফুলে ভর পরিপক্ক ফুলগাছ ছিল, যা কিনা কাল পর্যন্ত দিব্যি সুন্দর প ফুল পাতা শাখা প্রশাখা ভরা ছিল৷ সেদিন তারা দেখল, কোন এক অজ্ঞাত কারনে গাছগুলির ফুল ডাল পাতা গুলো শুকিয়ে কালো হয়ে ঝরে পরে গিয়েছিল। সেখানে পাশেই পাইন গাছের ছোট জঙ্গল যেটা সেই জঙ্গলে ঢোকার মুখেই বেশ কয়েকটি হিমালয়ান ফ্লাইক্যাচার পাখির নিথর ঘাড় ভাঙা প্রাণহীন দেহ পরেছিল।

এসব শুনে ভয়ে মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল, সুপার ম্যাডামের। কিছু না বুঝতে পেরে থানাতে খবর দিয়েছিলেন। অফিসার এসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছিলেন সবকিছু। তিনিও যথেষ্ট অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। বুঝতে পারছিলেন না কি ঘটে গিয়েছিল গত রাতে।

অবশেষে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করে সুপার ম্যামের কাছে বিদায় নিতে গিয়ে তাকে বলেছিলেন, "কি বলছে কি মেয়েটা রাতের অন্ধকারে কিসব দত্যি দানব নাকি হাওয়াতে ভেসে দাড়িয়েছিল ওখানে। যত্তসব! শুনুন ম্যাডাম! বাচ্চাদের অমন মনের ভুল হয় অনেক সময়। পাশে তো ঘন জঙ্গল বাদুড় -ইত্যাদির উড়ে এসে জানালায় বসা অসম্ভব না। রাতে ঘুম চোখে ওই ঘন কুয়াশার মধ্যে এমনই বাদুড়-টাদুর কিছু দেখে ভয় পেয়েছে। তবে চিন্তার কিছু নেই, আমি দুজন কনস্টেবল রেখে যাচ্ছি, আর আরও দুজন পাঠিয়ে দিচ্ছি। তারাও আপনাদের গার্ডদের সাথে চব্বিশ ঘন্টা পাহাড়া দেবে।"

তারপর বেশ কিছুদিন একেবারে চুপচাপ ছিল। মনের ভয়টাও ধীরে ধীরে প্রায় কেটেই গিয়েছিল। আমারও এমনটা মনে হওয়া শুরু হয়েছিল, যে আমি হয়ত সত্যিই সেদিন রাতে চোখে ভুল দেখেছিলাম। তারপর জানুয়ারীর মাঝামাঝি সময়, সেই একই ভয়ানক দৃশ্য দেখেছিলাম মাঝ রাতে। আর সবচেয়ে ভয়ের কথা হল, সেদিনও যখন সেই ভয়ানক জমাট বাঁধা ধোঁওয়াটে অন্ধকারের মধ্যে থেকে সে তার দগদগে জ্বলন্ত নিস্পলক চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিল, আমার মনে হচ্ছিল আমার শিঁড়দাঁড়া দিয়ে যেন বরফ গলা হীম শীতল জলের স্রোত নেমে এসেছিল। একবার ইচ্ছে করেছিল চিৎকার করে সবাইকে ডাকি, কিন্তু কোন এক অদ্ভুত মায়াবলে একটি আওয়াজক বের হতে পারেনি মুখ থেকে। হঠাৎ করে প্রচন্ড শীত করতে থাকে আমার, দু-দুটো কম্বল টেনে নিয়ে তার ভেতরে মুখ লুকোই। তবুও ঠক ঠক করে কাঁপছিলাম।

তারপর হঠাৎ দেখলাম অন্ধকারের পিন্ডটি যেন ধীরে ধীরে দুরে চলে যাচ্ছে। আমি মুখ তুলে দেখেছিলাম। তিন পাহাড়ের ওই ঘন বনের ঢালু জমির পরেই, আবার চড়াই শুরু হয়েছে, আর সেখানে কিছুদুর গেলেই রয়েছে একটি, ছোট সরোবর। তাকে দেখেছিলাম সেই জলাশয়ের মধ্যে গিয়ে, বাতাসে মিলিয়ে যেতে।

পরের দিন সকালে সব কথা খুলে বলেছিলাম ম্যামকে। সারারাত ধরে পাহাড়ায় থাকা পুলিশ কর্মী ও গার্ডদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন ম্যাম এই বিষয়ে। তারা বলেছিলেন, " কই? আমরা তো কাল সারারাত এখানেই ছিলাম পাহাড়ায়। নজর রেখেছিলাম জানালার দিকে, কই? কোন বাদুড় জাতীয় প্রাণীও তো চোখে পড়েনি।"

রহস্যটি তখন ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছিল। কোনো ভাবে পৌছেছিল সাংবাদিকদের কাছেও। তারা এসে আমার থেকে শুনেও ছিল সমস্ত ঘটনা। তার হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। আমি বোঝাতাম কি করে তাদের যে আমি ছাড়া তাকে আর কেউ দেখতেও পাচ্ছে না। পর পর আরও কয়েকবার আবার একই ঘটনা ঘটল।

সে যদিও আমার কোন ক্ষতি করত না। আগুনে দৃষ্টিতে গভীর চোখে নিস্পলক তাকিয়ে থাকত। যতক্ষন ও থাকত আমি ওর চোখের থেকে চোখ সরাতে পারতাম ন। শরীরে কেমন যেন অদ্ভুত শিহরণ খেলে যেত। ওই চোখ দিয়েই ও যেন আমার শরীরের আনাচে কানাচে নিজের সেই হীমশীতল স্পর্শ ছড়িয়ে দিত।

এরপর আরও বার পনেরো এই একই ঘটনা ঘটেছিল আমার সাথে। শেষবার যখন হয়েছিল, আমি থাকতে পারিনি। ও যতক্ষন থাকত, ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে শরীরের বিশেষ জায়গায় অদ্ভুত শিহরণ অনুভব করতাম, তখন খারাপ লাগত না। ওই জ্বলন্ত চোখে কোন আবেগ ছিলনা। ছিল শুধু গভীর জিঘাংসা। তাও সেসময়টুকু যেন আমি অচৈতন্য হয়ে পড়তাম, ঠিক ভুল বিচারের শক্তি হারিয়ে ফেলতাম। মনে আবছা আবছস নোংরা ছবি ভেসে উঠত কিন্তু তারপরেই যখন ও চলে যেত নিজের ওপর কেমন অজানা ঘৃণা বোধ হত।

তাই শেষবার থাকতে না পেরে ম্যাডাম কে বলেছিলাম,
" ম্যাডাম!! দয়া করে আমার মা বাবা কে খবর দিন। মনে হচ্ছে ও আমাকে শেষ করে দেবে, যখনই আসে ওর চোখে আমি জ্বলতে দেখি জিঘাংসার আগুন।”...

( ক্রমশ )

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!