তো হ্যাঁ কি যেন একটা বলছিলাম গতকাল ..
জীবন
তোমাকে ছুঁতে চেয়ে
হাজার হাজার হাজার হাজার
মাস কাল বছর বন্দর সহর নগর পাহাড় সুমদ্র নদী গ্রাম বাড়ি
পেরিয়ে আসার পর..
জীবন তোমাকে ছুঁতে চেয়ে...
কি অদ্ভুত না ? আমরা সবাই ছুটছি। কেউ ঊর্ধ্বশ্বাসে কেউ সবেগে কেউ ধীরে কেউ যেমন খুশি ছুটছি। কেউ থামছি না, অনেকে কেন ছুটছে কেউ জানে না, আমিও জানি না কেন ছুটে চলছি। আজ দিল্লি কাল ব্যাঙ্গালোর পরশু কলকাতা মাসের শেষে একটা সিঙ্গাপুর বা সস্তার বিদেশ .. কেন ছুটছি আমি ?
রাতগুলো যখন শান্ত হয়ে আসে, হুই উচুঁ ফ্ল্যাট বাড়ির খোপ কাটা জানালা দিয়ে আলো গুলো তেরছা সরু হতে হতে ল্যাম্পপোস্ট ছুঁয়ে আকাশ বাতি, সবেগে একটা এরোপ্লেন একদম সামনে দিয়ে বেপাত্তা সাত সুমুদ্দুর.. নিজেকে নিজের সামনে দাঁড় করাই, কি করেছি আজ ? কি করলাম এতদিন ধরে ? শুধুই প্রশ্ন, উত্তর গুলো নিজের কাছেই কেমন যেন মিথ্যে কথা মনে হয়। বাড়ি থেকে বহু দূরে বসে অনলাইনে আনানো জ্যমাটো বা সুইগির বিকেলে রান্না করা খাবারের প্যাকেট গুলোর দিকে তাকালে নিজেকে কেমন যেন মন হয়। জানালা খুললে সাউথ দিল্লির স্কাই লাইন, সুন্দরীদের ভিড়। রাস্তায় আলো আনন্দ আর তরতরিয়ে হেঁটে যাওয়া যৌবন... একটু ওপরে অরকমই একটা ফ্ল্যাট বাড়ির খোপ জাটা জানালার সামনে সময়কে জাপটে ধরে স্থির বসে থাকা একটা মানুষ।
দার্শনিক রা বলে টপ এঞ্জেল থেকে দেখলে নাকি সবকিছু ছোট আর সুন্দর মনে হয়। এটাও সেরকমই। মধ্যরাত্রি আগতপ্রায়। দিল্লির অলি গলিতে এখন সন্ধ্যা রাত্রি। আর এই ১০০০ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট বাড়িটা শূন্য। একটা মানুষের জন্য এতটা জায়গা লাগে না বোধহয়। অনেক কম, আরো অনেকটা কম জায়গা দরকার শুধু আমার বিছানা টুকুর জন্য। ব্যস ।আর ততটুকুই ছাদ। এটুকুর জন্য বেচেঁ থেকে লড়াই করে হোচট খেতে খেতে সবাইকে টপকে যেতে হবে ?
আসলে শুন্যতা বা ভয়েড জিনিসটা অস্বাভাবিক। বলা হয় শুন্যতা মানুষকে গ্রাস করে, আসলে উল্টো, মানুষই শুন্যতা কে আঁকড়ে ধরে। পশুরা ঠিক উল্টো। এই এখন যেমন আমি দেখতে পাচ্ছি রাস্তা দিয়ে অগণিত মানুষ হেঁটে যাচ্ছে, প্রচুর প্রেমিক প্রেমিকা, আগত যৌবন, মধ্য যৌবন, বিগত যৌবনা সব, সমস্ত বয়সের রঙের ধর্মের মানসিকতার চিন্তনের সবাই হাঁটছে। কেউ কেউ অন্য কারোর হাত জড়িয়ে হাঁটছে। আসলে সবাই সবার মাঝে থেকেই একা হয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু কেউ পারছে না। আমিও তাই, অত্যন্ত ভিড়ের মাঝে নিজের চারপাশে একটা সামুদ্রের মত শান্ত গভীর নিরবতা, নিশ্চল একটা অবর্তের মধ্যে আটকে যেতে গিয়েও আটকে যাচ্ছি ভিড় আর সময়ের ফাঁকে।
অদ্ভুত লাগে জানেন, যোখন দেখি একান্তে আড়াল হতে চাওয়া দুটো নর নারী চোখের কোন দিয়ে উল্টো দিকে হেঁটে যাওয়া অন্য কোনো মানুষ কে দেখে নেন। আমি মানুষ বিশ্বাস করি, নারী পুরুষ, বয়স্ক, বাচ্চা কিছুতেই না। চলে ফিরে বেড়ানো একটা মানুষ শুধু। ব্যস। তার লিঙ্গ ধর্ম বয়স রং ভাষা জেনে তাকে ক্যাটাগরীতে নিয়ে আসার বিরোধী। অসংখ্য হাজারো গুচ্ছ মানুষ । অতলান্ত স্রোতের মত হেঁটে যাচ্ছে। হাসছে, ভাবছে, কালকের কথা ভেবে ভয় পাচ্ছে অথচ কেউ শান্ত হয়ে বসতে পারছে না। দু দণ্ড স্থির হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতেই পারছি না আমরা কেউ কেন এত অশান্ত আমরা।
কেন দৌড়াচ্ছি। কাল যদি না দৌড়ায় কি হবে ? চাকরি টা হয়তো থাকবে না, অন্য কেউ পাবে, আচ্ছা অন্য কেউ যদি না দৌড়ায় তাহলে ? আরো একজন , কিন্তু কেউ যদি না দৌড়ায় তাহলে ? কম্পিউটার গুলো থেমে যাবে ? ট্রেন বাস এরোপ্লেন গাড়ি সব থেমে যাবে। স্থির শান্ত অখণ্ড সময়ের মত যদি থেমে যাওয়া যায় একটু সময় প্রথিবি কি থেমে যাবে ?
কিছুই হবে না, কারোর কিছুই হবে না শুধু দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় দুম করে থেমে যাব আমরা। এক এক করে, আগে পরে হিসেবে। আসলে এটাও হচ্ছে, গোটা পৃথিবী জুড়েই প্রত্যেক মিনিটে সেকেন্ডে একজন করে জন্মাচ্ছে আর একজন করে মরে যাচ্ছে । কেউ জানতেও পারছে না কে এলো কোথা থেকে এলো, কে গেল কোথায় গেল। শুধু একজনের দৌড় থেমে গিয়ে অন্য একজনের দৌড় শুরু হয়ে গেল।
শুধু এটুকুই। ব্যস একজনের দৌড় থেমে গিয়ে অন্য জনের শুরু...মাঝের সময় কাল টুকুই জীবন। সৃষ্টির শুরু থেকেই সবাই দৌড়াচ্ছে। কিন্তু কেউ কারো হিসেবই রাখে না কেন দৌড়াচ্ছে। আমি কতজনকে চিনি এরকম ?? অসংখ্য অগুনতি , আসলে যাকেই দেখি সেই দৌড়াচ্ছে। আমিও তাই, কাল সকালেই অফিস, হয়তো কালই শেষ। তারপর অনন্ত সময় হাতে, প্রায় বছর দুই কাটালাম এখানে, পরিচিত মুখ, ডেস্ক, ক্যাফেটেরিয়া সবাইকে কালকেই টাটা করবো। কেউ কেউ থেকে যাবে কেউ চলে যাবে। যারা থেকে যাবে তারাও দৌড়াচ্ছে। যদি ক্লান্ত হয় তাহলে থেমে যাবে। আমিও একদিন থেমে যাব। এভাবেই। কিছুদিন আগে পরে মাত্র। ব্যস আর কিছু না। থামতে তো হবেই। আমাকে আপনাকে সবাইকে। শুধু যতক্ষণ আছি ততক্ষণ ঊর্ধ্বশ্বাসে না দৌড়ে একটা কথাও স্থির হয়ে বসতে শিখিনি। বলতে পারিনি সময়কে তুমি এগিয়ে যাও ভাই, আমি দিব্যি আছি।
পাগল রা পারে। সময়কে তুরি মেরে নিজের মত অখণ্ড নিরবতা পালন করে তারা। অথচ আমরাই তাদের পাগল বলি। জীবনের সত্য তাদের থেকে ভালো সম্ভবত কেউ জানে না। কেউ একজন পাগল দের সম্পর্কে একটা গান গেয়েছিলেন -
10th June, 1:45am
Delhi
Great post, we've upvoted and shared it
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাই আপনার লেখা পড়ে আমি হতবিহম্বল। আপনার আবেগকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। আসলে জীবনটাই একটা রেস, একজনের শুরু, আরেকজনের শেষ। এটাই বাস্তবতা। ধন্যবাদ আপনার পোষ্টের জন্য। শুভকামনা রইল। ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit