চলো মন বেন্দাবন - ৩ || অফিসের দাবী মেনে আপাতত গুজ্রাটের পথে [ 10% reserved for shy-fox brother ]

in hive-129948 •  2 years ago 

ওকে বন্ধুগন। অতএব শুরু হচ্ছে মিশন গুজরাট সিরিজ।

তো লাস্ট দিন যা বলেছিলাম সেদিন হোটেলে পৌঁছে টানা ঘুম দিয়েছি। আসলে ভারতবর্ষ এত বড় দেশ আর এত বিচিত্র তার পরিবেশ শরীরের খাপ খাওয়াতেই এক দিন লেগে যায়। যায় হোক পরের দিন সকালে মিলিটারি এসে হাজির সকাল সকাল, শাস্ত্রে আছে পুলিশ দারোগা মিলিটারি এদের কাছে একদম বেগর বাঁই করতে নেই। আমরাও চাঁদ পানা মুখ করে সোজা মর্নিং স্যারজি বলে নিজের নিজের আইডি কার্ড দেখিয়ে গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি চলতে শুরু করলো। এখানে বেশ কিছু তথ্য বাদ দেব কারন ক্যাম্পে ঢোকার পরেই আমাদের কাজ শুরু হয়ে যায় টানা ৫ দিনের জন্য। নাওয়া খাওয়া বন্ধ। মানে খাওয়া বন্ধ না তবে কাজের চাপে বন্ধ হবার মুখেই বলতে পারেন।

রাত দিন কাজ করে ৫ দিনের মাথায় ষ্টেশন রেডি হয়ে গেল, সিগন্যাল এলো। সব ঠিকঠাক। এরপর শুরু হলো আসল খেল। উলটো দিকে জামনগর। ওখানে নাকি এই সময় কোণ এক বিদেশি সেনা বাহিনী এসে কিছু একটা এক্সসারসাইজ করছে। তাদের সিস্টেম আমাদের সিগ্ন্যাল ধরতে পারছে না। মানে জীবন একদম সোনায় সোহাগা যাকে বলে।

যায় হোক উদ্ধার করলো সেই সময় টিম ব্যাঙ্গালোর। রাতারাতি তাদের উড়িয়ে আনা হল কুর্গ উটি থেকে। তারপর তারা হ্যান্ড ওভার নেবার পর আমরা সূর্যের মুখ দেখতে পেলাম।

বেশ কয়েকদিন ঘুরেছি। চারিদিকে অজস্র গীর প্রজাতির গরু, নীলগাই, জঙ্গলী খচ্ছর, ঘোড়া আর মাঝে মাঝে উট। আর আদিগন্ত আরব সাগর। একদিন বিকেল বেলা মুড অফ থাকার জন্য খান পাঁচেক বিয়ার নিয়ে সুমুদ্রের ধারে গিয়ে বসেছি ওমনি কোথা থেকে একটা মেঘ এসে সব কালো কালো করে দিল। ব্যাস আর কি, উঠে দুদ্দাড় দৌড় শুরু। এমনিতে বোরিং জীবন, সাধারন মানুষের সাথে খুব বেশি কথোপোকখন করা যায় না, আর অত্যন্ত নিয়ম মেনে চলে। এমনিতেই সাধারন গুজরাটি আর রাজস্থানীরা অত্যন্ত বেশি সময় সচেতন মানুষ। আম বাঙ্গালীর মত না যে ৪ টেই আসবো বলে রাত ৮ টাই এসে মেট্রোতে ভিড় ছিল তাই উঠিনি বলে দিব্য কাটিয়ে দেওয়া যায়। সময় সম্পর্কে এদের ধারণা বা সময়ের মুল্য সত্যিই জানে। সকাল ৭ টা মানে সকাল ৭ টাই।

যায় হোক বেশ কয়েকদিন ঘুরলাম, সোমোনাথ মন্দির, জৈন মন্দির, এছাড়াও কচ্চ এরিয়াতে স্যার ক্রিক দেখলাম। দূরে দূরে পাকিস্থানি চেক পোস্ট গুলো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, ওদিকে এখন বর্ষার সময় নাহলে নাকি এত কাছে যাওয়া যায় সে হাত নাড়িয়ে গ্রিট করলেও দেখতে পাওয়া যায় মেঘ পরিস্কার থাকলে।

তবে অত্যন্ত বাজে আবহাওয়া, সারাক্ষন একটা জোলো এবং শুস্ক নোনা হাওয়া । মাটিতে, বাতাসে সর্বত্র নুনের উপস্থিতি বোঝা যায়। সুমুদ্রের ধারে দাঁড়ালেই গায়ের খোলা অংশে একটা পাতলা নুনের স্তর আমাদের মত নতুন আমদানী যারা তাদের জন্য অত্যন্ত বিরক্তিকর।

দিব্যি কেটেছে দিন কাল। তবে বাদ সাধলো টিম বেঙ্গালোর ঢোকার পর। ওহোঃ মাইরি কি বলবো , টিমে এক সুন্দরী ছিলেন, তার নাম উম্মি বারিহার। আহাঃ ভাবলেই মন কেমন যেন হয়ে যায়। এনার গল্প পরের দিন বলবো। এরকম বাজখাই আর রগচটা মানুষ বাপের জন্মে দেখিনি। ওনার ভয়ে আমরা পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। এমনকি আমাদের ক্যাম্পে যিনি বিগ্রেডিয়ার মিস্টার ঢিঁল্লো তাকেও একবার " কি বাবাওয়াল মচাকে রাক্ষা স্যরজি, ইত্থে তান্নু না হো পাবেঁ "" বলে দিয়েছে। আমরা টথস্থ। কিন্তু অমন বিরাট লেবেলের একজন ডেকোরেটেড অফিসারও দেখলাম মহিলার যুক্তিকে খন্ডন করতে পারলেন না। সব মিলিয়ে ভদ্রমহিলা একসাথে ভয়- হাল্কা ভালো লাগা আর প্রচুর বিরক্তিকর পরিস্থিতি তৈরী করা মানুষ।

এরপর আসি খাবারের ব্যাপারে। আহা - মাশাল্লাহ - হে ভগবান - হে ঈশ্বর - জিশু - কেস্ট - নবীজি যে যেখানে যা খেয়েছেন সব গুলো ভুলে যাবেন যদি গুজরাটি খাবার খান। জীবনে আর যায় পাপ করুন না গুজরাটি লাঞ্চ বা ব্রকফাস্ট ভুলেও করবেন না।
ভাই ভেন্ডি, গাজর আর মুলো একসাথে কে রান্না করে ? ওরে বাপরে বাপ । প্রথমত সকাল হলেই চা এর সাথে পাবড়া, ভাবড়া, পোহা । পোহাটা তাও সামলে নেওয়া যায় ম্যাগির মত কিন্তু বাকি দুটো জাস্ট মুখে নেওয়া যায় না, দুপুরে ধোকলা পনীর আর সাথে একবাটি চাটনি। সে চাটনিতে কি গোপোন মশলা আছে তারাই জানে , অত্যন্ত বাজে খেতে আর ততোধিক ঝাল।

তবে এরপর যদি রাতের খাবার বলি আহা - পিওর ঘি মাখা তন্দুর বা হাত রুটি, সাথে একটা কুলচা আর এক লিটার দুধ বা মাখন লাগানো বান। আহা। অমৃত। সকালের সমস্ত রাগ আপনার উড়ে যাবে যদি একবার ওই রাতের খাবার খান।

তবে এটা ভারত জুড়ে বলা হয় গুজরাতি আর রাজস্থানিদের আথিথেয়তা নাকি জুড়ি মেলা ভার। এটা একদম সত্যি। মুম্বাই মহারাস্টে যেখানে বাপ ছেলের সাথে কথা বলার সময় পাই না বা বেঙ্গালোরে মুখ ঘুরিয়ে চলে যায় সেটা এখানে নেই। অপরিচিত মানুষ আপনাকে দেখে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাক্কা দু ঘন্টা গল্প করে বাড়ির সব ভালো কিনা খোঁজ খবর নিয়ে আপনাকে বলবে চলুন গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছি । যায় হোক গুজরাট সফর ভালোই কেটেছে। আপাতত দিল্লি ফিরেছি। চাকরী আগামী পরশু দিন অর্থাৎ ১০ তারিখেই শেষ। তারপর ফিরবো বেঙ্গল। অনেক হলো বেগার খাটনি। এবার নিজের কিছু। মাঝে মাঝে কিছু এই সফরের ছবি আপলোড করবো দেখবেন সবাই।
টাটা

image.png

এটা সেই বিখ্যাত স্যার ক্রিক এরিয়া। সবুজ লাইন যেটা দেখা যাচ্ছে ওটা পাকিস্থান। এদিকে আমাদের ল্যান্ড। ব্যাঙ্গালোর টিম আসার পর সবাই মিলে একদিন বেরিয়েছিলাম ঘুরতে।

image.png

এটা পোর্ট , এখানে সমস্ত আর্মি বোট আর জাহাজ উলটো দিকে। সামনে CDS ক্যান্ট। দুপুর গুলো বিয়ার হাতে এখানেই কাটিয়েছি ।

image.png

সুমুদ্রের ধারে একটা বাউন্ডারী, এখানেই ল্যান্ড জোণ শেষ। একটু দূর থেকেই সুমুদ্র শুরু।

image.png
তখন তার দুটো, আমার প্রচণ্ড সিগারেট খাবার আর্জ এসেছিল, অনেক কস্টে বেরিয়েছি, বাইরে এসেই শুক্ল পক্ষের সাথে এই ভদ্রলোকের সাথে দেখা। ঘোঁত ঘোঁত করে আওয়াজ দিলেই চলে গেল। এরা শুয়োর আর নেকড়ের মধ্যবর্তী একটা প্রানী, সুমুদ্রের মাছ শিকার করে আবার জঙ্গলের ভেতর মাটি ভুড়ে সেখানে আস্তানা বানাইয়ে দল বেঁধে থাকে।

image.png

যে গেস্ট হাওসে লাস্ট দিন ছিলাম সেটার কমিউনিটি কিচেন। এখানেই খাওয়া দাওয়া করে বেরিয়েছি ভুজের উদ্দেশ্যে তারপর সোজা দিল্লি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!