কন্টেস্টঃ- আমার এলাকার একটি নদী ||steemCreated with Sketch.

in hive-131369 •  last year 

আসসালামু আলাইকুম

আশা করি সকলে ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও অনেক ভালো আছি। আমি আজ স্টিম ফর ট্রাডিশন কমিউনিটির পক্ষ আয়োজিত আমার এলাকার একটি নদী নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চলেছি। এতো সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য আমি @selimreza1 ভাইয়াকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। আপনারা আমার এই প্রতিযোগিতায় আমন্ত্রিত: @naty16 @mamun123456 @mdimran1


কভার ফটো


ক্যানভা দ্বারা তৈরি


বাংলাদেশ নদীর দেশ। আমরা সকলে জানি পৃথিবীর ৭০ ভাগ পানি এবং ৩০ ভাগ স্থল।আমাদের দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক নদী এবং বীল। আমাদের এলাকা দিয়েও প্রবাহিত হয়েছে একটি নদী। আজকে আমি সেই নদী নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। আমার এলাকায় প্রবাহিত হওয়া নদীটির নাম হলো তিলাই নদী। এই তিলাই নদীর উৎপত্তি স্থান কোথায় তা আমার জানা নেই কিন্তু এর শেষ হয়েছে ফুলবাড়িতে। ফুলবাড়িতে ব্রিজের কাছে গিয়েই যমুনা নদীর সাথে একত্রিত হয়েছে এই তিলাই নদী।



এই তিলাই নদীর সাথে আমাদের অনেকের জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিলাই নদীর মাধ্যমে আমরা অনেক বেশি উপকৃত হয়ে থাকি। আমরা জেনে নিবো তিলাই নদী আমাদের কি কি উপকার করে থাকে।

তিলাই নদীর উপকারীতা:-


  • আমরা জানি নদীর পানিতে কৃত্রিম ভাবেই এক প্রকার নাইট্রোজেন তৈরি হয়ে থাকে। তাই তিলাই নদীর পানিতে উর্বরতা শক্তি অনেক বেশি হয়। আর এর জন্যেই নদী থেকে জমিতে পানি সেচ দিলে চাষাবাদ ভালো হয়।

  • তিলাই নদী থেকে মাছ সংগ্রহ করে অনেকের জীবীকা নির্বাহ হয়ে থাকে। আমার এলাকা দিয়ে প্রবাহিত এই তিলাই নদীতে প্রায় সময় অনেক মানুষকে মাছ ধরতে দেখতে পাওয়া যায়।

  • আপনারা কেউ কি তিলাই নদীতে চাষাবাদ করতে দেখেছিলেন? অনেকেই বলবেন না কিন্তু আমার এলাকায় নদীর পাড় বেধে চাষাবাদ করা হয়। বেশ কয়েকদিন আগে নদীর পাড়ে গিয়েছিলাম সেখানে দেখি সুন্দর করে খুটি দিয়ে নদী আদা চাষ করতেছে।

  • পানির তৃষ্ণা মেটাতেও নদীর ভূমিকা অনেক বেশি। ফুটবল বা ক্রিকেট খেলতে গিয়ে কোথাও পানি না পাওয়া গেলে আমরা কমবেশি সকলেই নদীর জোয়ারের পানি পান করি।


এতোক্ষণে আপনারা বুঝতে পেরেছেন তিলাই নদী আমাদের এলাকার জন্য বেশ উপকারী। আমি নিজেও অনেকবার এই নদীতে জাল এবং বরশি দিয়ে মাছ ধরেছি। যেহেতু এই নদীটি ছোট এবং প্রায় গ্রামের কাছে দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে তাই বর্ষাকালে এর বেশ কিছু অপকারীতাও আমরা দেখতে পাই।


তিলাই নদীর অপকারিতা:-


লাল পিঁপড়া চলাচল করতে দেখলেই আমরা গ্রামে শুনতে চাই এইবার বুঝি বন্যা হবে। এই পিঁপড়া গুলোকে প্রচুর ভাবে নদীর পাড়ে ছুটাছুটি করতে দেখেছি আমি। নদী পানিতে পরিপূর্ণ হলে পিঁপড়া সব উপরের দিকে উঠে আসে।তখন অনেক বেশি পিঁপড়া দেখতে পাওয়া যায়। তিলাই নদীর অপকারিতা গুলো হলোঃ-

  • বর্ষাকালে নদী অনেক বেশি ফুলেফেঁপে উঠে। যার কারনে বন্যা সৃষ্টি হয়ে যায়। আর বন্যার কারনেই প্রচুর পরিমানে আমাদের ফসলের ক্ষতি হয়ে যায়।

  • নদী দিয়ে অনেক আবর্জনা প্রবাহিত হয়ে থাকে যা অনেক সময় নদীতে থাকে কাঠের ব্রিজ গুলোকে ভেঙে দেয় এতে করে মানুষের চলাচলের বিঘ্ন ঘটে।



বর্ষাকালে আমাদের নদীর এই কাঠের ব্রিজটি সবথেকে বেশি পরিমানে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। নদীতে পানির পরিমান বেশি হলেই মানুষ তাদের বাসার সমস্ত আবর্জনা নদীতে ফেলতে শুরু করে দেয় যা ব্রিজের খুটি গুলোতে আটকে ক্ষতি করে। এই ক্ষতি শুধু মাত্র বর্ষাকালেই লক্ষ্য করা যায়।

  • নদীর বন্যা হওয়ার কারনে গবাদিপশু মাঠে বেধে রাখতে পারে না এতে করে অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় গ্রামের মানুষদের।


নদীর উপকারিতা অপকারিতে সবেই রয়েছে। তবুও আমরা বলতে পারি নদী আমাদের জন্য একটি অনেক বড় পাওয়া। কারন খরা মৌসুমে নদী থেকে বালু উত্তলন করে অনেকেই জীবীকা নির্বাহ করে থাকে।বালু আমাদের দালানকোঠা তৈরির জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজন পড়ে। আমাদের কমবেশি সকলের নদীর সাথে কিছু স্মৃতি জড়িত থাকে। আমারও বেশ কিছু স্মৃতি জড়িত রয়েছে এই নদীর সাথে। সেগুলো অনেক গোপন কথা। আজকে এই কথা গুলো আপনাদের সাথে তুলে ধরব।


তিলাই নদীর সাথে আমার কিছু স্মৃতিঃ-


একটা সময় এলাকায় দুষ্ট পোলার হিসেব করলে তালিকায় আমার নামটা আগে থাকতো 😃। বন্যা শুরু হলেই গোসল করার জন্য প্যান্ট নিয়ে চলে যেতাম নদীতে। বন্যার সময় প্রচুর পরিমানে জোঁক দেখতে পাওয়া যেতো। পানিতে একটু হাটাহাটি করলেই জোঁক এসে পায়ের মধ্যে বসে যেতো। আমি কখনোই জোঁক ভয় পাই নাই। জোঁক আমার কাছে আসার সাথে সাথেই এর ভিতর দিয়ে একটা কঞ্চি ঢুকাই দিতাম আর এটা রোদের মধ্যে শুকনোর জন্য রাখতাম। কতবার যে গোপন জায়গায় জোঁক ধরেছে এর কোনো হিসেব নাই এখন 😊। আমি যে কাঠের ব্রিজটি উপরে দেখিয়েছি এই ব্রিজ বর্ষার সময় না ভাঙ্গা পড়লেও ছেলেদের লাফালাফি করাতে নষ্ট হয়ে যায়।এর জন্য বেশ কয়েকবার আমার চাচাকে কথা শুনতে হয়েছে। বন্যার সময় বিকালবেলা গোসল করতে যেতাম কারন একটাই, কার হাঁস এখনো বাসায় যায়নি। হাঁস ধরে নিয়ে এসে পিকনিক খাওয়ার ধান্ধা করা 😃। নদীতে লাফালাফি করা, লুঙ্গি ফুলিয়ে পানিতে ঘুরে বেড়ানো এবং ফুটবল নিয়ে ভেসে থাকা এগুলো তো আছেই। নদীর স্রোতে গা ভাসিয়ে অনেক দূরে ব্রিজ পর্যন্ত যেতাম আর এইখানে গোসল করে বাড়িতে ফিরে আসতাম।


IMG_20230829_164022.jpg

IMG_20230829_163916.jpg

IMG_20230829_163859.jpg

IMG_20230829_163844.jpg

IMG_20230827_185040.jpg

এখন নদীতে হাঁস দেখলে মনে মনে হাসি পায়। খোঁচা দিয়ে নদীতে মাছ ধরা, জোঁক রোদের মধ্যে শুকাতে দেওয়া এগুলো আজ শুধুই স্মৃতি। এখন শুধু মনে হয় বিয়ের বয়স হচ্ছে আর ফাইজলামি করা যাবেনা।



ডিভাইস সংক্রান্ত তথ্যবলিঃ
ডিভাইসরেডমি নোট ১০প্রো
ফটোগ্রাফার@mainuna
লোকেশনHWHF+7R9 চৌপথী বাজার


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

বাহ চমৎকার উপস্থাপনা ভাই। তিলাই নদী সম্পর্কে অনেক তথ্য শেয়ার করছেন ভাই। তিলাই নদীর অনেক উপকারী দিক তুলে ধরেছেন। আপনার স্মৃতি শুনে ভালোই লাগলো। প্যান্ট খুলে তাহলে গোসল করতেন? ওই জায়গা দিয়ে জোঁক ডুকতো না 😄 আপনি সবারই প্যান্ট নিতেন নাকি আপনার প্যান্টটা সবাই নিয়ে যেতো। ফটোগ্রাফি গুলো অসাধারণ করেছেন ভাই। অনেকদিন পর লাল পিঁপড়া দেখতে পেলাম। আপনার পোস্টটা আমার কাছে অসাধারণ লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য

বড় লজ্জার বেপার দাদু 😃। কথা ঠিক ধরেছেন।

Loading...

কনটেস্টে অংশগ্রহণ করায় প্রথমেই আপনার জন্য শুভকামনা রইল। আপনাদের এলাকার এই তিলাই নদীর সম্পর্কে অনেক সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগলো আপনি নদীর উপকারিতা এবং অপকারিতা গুলো আমাদের সামনে সুন্দরভাবে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন। আপনার শেয়ারকৃত স্মরণীয় ঘটনা গুলো পড়েই বোঝা যায় আপনি আসলেই অনেক দুষ্ট ছিলেন। ফটোগ্রাফি গুলো চমৎকার হয়েছে। আপনাকে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

ধন্যবাদ আপু। 🙂

তিলাই নদী নিয়ে চমৎকার একটি পোস্ট করেছেন ভাই। পার্বতীপুরের মধ্যে এই তিলাই নদী বিখ্যাত একটি নদী। চমৎকার সব ফটোগ্রাফি করেছেন। খুবই সুন্দরভাবে তিলাই নদীর উপকারীতা ও উপকারিতা সম্পর্কে লিখেছেন। আসলেই তিলাই নদীতে অনেক আবর্জনা থাকে যেগুলো পানির সাথে সাথে পরিবেশকেও দূষিত করে। কন্টেস্টের জন্য শুভকামনা রইলো।

ধন্যবাদ ভাই।