ঐতিহ্যবাহী কাঁসার তৈরি পানের ডাবর, চামচ এবং পানির কলসি🏺🏺🏺

in hive-131369 •  2 years ago  (edited)

আসসালামু আলাইকুম

সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন আপনাদের দোয়ায় এবং আল্লাহতালার অশেষ রহমতে আমিও ভালো আছি। সবার প্রিয় কমিউনিটিতে আজকে আমি ঐতিহ্যবাহী কাঁসার তৈরির চামচ, পানের ডাবর এবং কলস। তাহলে চলুন দেরি না করে বিস্তারিত কিছু আলোচনা করি:--------

কাঁসার বিবরণ:---------

কাঁসা হচ্ছে রাং/টিন এবং তামার সংমিশ্রণে তৈরী একটি মিশ্র ধাতু দিয়ে তৈরি করা হয়। কাঁসা চিনার একমাত্র উপায় হলো কালচে এবং সোনালী রঙের হয়ে থাকে। কাঁসা চিনার একটি সহজ পদ্ধতি হলো কোন কিছু দিয়ে শব্দ করলে শব্দের প্রতিধ্বনি আসে না, তা আমি নিজেও পরীক্ষা করে দেখলাম। কাঁসা আসলে কেজি দ্বারা বিক্রি হয় ১ কেজি কাঁসা দাম প্রায় ২৫০০ টাকার মতো। বাঁকুড়ার বিখ্যাত কাঁসার থালা বাসন অনেক জনপ্রিয়।
কাঁসার তৈরি পানের ডাবর:----------
গ্রামগঞ্জে সকলের পরিচিত পানের ডাবর। এই কাঁসার তৈরি পানের ডাবরে পান রাখলে পান সহজে নষ্ট হয় না এবং পান সতেজ থাকে। আমাদের বাড়িতেও একটি পানের ডাবর রয়েছে সেটার কোন কাজ নেই বাক্সে বন্দী হয়ে আছে। এই পুরনো ঐতিহ্যের পানের ডাবর মনে হয় বলতেছে আমাকে মুক্তি দাও আমি বাইরে জগতে সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলবো। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন এই পানের ডাবরে আমার দাদিমা পান সুপারি রাখতো। প্রাচীন ঐতিহ্যের এই পানের ডাবরটি ওই সময়ে স্বল্প পরিমাণ মূল্য ছিলো, যার পরিমাণ এখন দ্বিগুণ হয়ে গেছে। একটি কাঁসার তৈরি পানের ডাবর প্রায় ৮০০ - ৯০০ গ্রামের হয়ে থাকবে যার মূল্য এখনকার সময়ে অনেক বেশি।
কাঁসার তৈরি চামচ:---------
আজ থেকে প্রায় দশ বারো বছর আগে প্রত্যেকটি বাড়িতে কাঁসার জিনিসের বিভিন্ন প্রকারের সামগ্রী ছিলো। তারা সুন্দরভাবে এই কাঁসার জিনিসের ব্যবহার করতো। কাঁসার তৈরি চামচ বিভিন্ন প্রকারের হতো যেমন ছোট বড় পান পাতা বিভিন্ন
প্রকার চামচের বিভিন্ন প্রকারের কাজ। ভাত পরিবেশন করার জন্য একটি চামচ, তরকারি পরিবেশন করার জন্য একটি চামচ এবং ডাল জাতীয় কিছু ব্যবহার করার জন্য আরেক প্রকারের চামচ। এরকম আমাদের বাড়িতেও রয়েছে তিন প্রকারের চামচ যা দেখতে অসাধারণ লাগে। কাঁসার তৈরি চামচ গুলো শক্তপুক্ত আবার ওজনেও অনেক ভারী। এখনকার চামচ হাত থেকে নিচে পড়ে গেলে বাঁকা হয়ে যায় কিন্তু প্রাচীন ঐতিহ্যের কাঁসার তৈরি চামচ গুলো দিয়ে ইট ভাঙ্গা সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয়।
কাঁসার তৈরি পানির কলস:------------
প্রাচীন ঐতিহ্যের কাঁসার তৈরি এবং মাটির তৈরি পানির কলসের কথা কারো অজানা নয়। আগে যুগের সবাই আমরা এই কাঁসার তৈরি কলসে পানি নিয়ে এসে গ্লাসে করে খাইতাম। আমাদের বাড়িতে লোক সংখ্যা একটু বেশি ছিলো বলে আমাদের কাঁসার তৈরি কলসটিও অনেক বড়। আমি দেখেছি কৃষকরা জমিতে চাষাবাদ করার সময় বাড়ি থেকে গিন্নিরা বাটিতে করে ভাত এবং কাঁসার তৈরি কলসে পানি নিয়ে যেতো। মাথায় নিতো ভাতের বাটি এবং কোমরে নিতো পানির কলস দেখতে অসাধারণ লাগতো। গ্রাম অঞ্চলের বেশিরভাগ দোকানে দেখা মিলতো এই কলসের। দোকানে ক্রেতারা আহার করে এই কলসের পানি দিয়ে তাদের পিপাসা মিটাতো। এখন গ্রাম অঞ্চলের প্রত্যেকটা দোকানপাটে রয়েছে পানির ট্যাংকি এবং শহর অঞ্চলের দোকানপাটে রয়েছে পিওরিট। কালের বিবর্তনের কারণে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের কিছু জিনিসপত্র।
কাঁসার তৈরি থালাজবাসন এবং পানির কলসের উপকারিতা:-----

IMG20230330150808.jpg

বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া এবং মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে কাঁসার তৈরি উপকরণে। কাঁসার তৈরি বিশেষ কিছু ধাতুর কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং জীবাণু নাশক ক্ষমতা রয়েছে। কাঁসার প্লেটে এবং কাঁসার গ্লাসে পানি পান করলে শরীর সুস্থ এবং সবল থাকে। আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু লোকের বাড়িতে কাঁসার তৈরি জিনিসপত্র পাওয়া যায়। আপরদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রত্যেকটি বাড়িতে কাঁসার প্লেট কলস এবং গ্লাস রয়েছে। আমার বন্ধুদের বাড়িতে আমি যখন যাই তখন তখন আমাদের কাঁসার প্লেটে নাস্তা দেয় এবং কাঁসার গ্লাসে পানি দেন।
তো বন্ধুরা এই ছিল আমার আজকের ঐতিহ্যবাহী কাঁসার তৈরি থালা-বাসন এবং কলস নিয়ে পোস্ট। আশা করি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে সকলের সুস্বাস্থ্য এবং মঙ্গল কামনা করি।

🙋‍♂️আমার পরিচয়🙋‍♂️

আমার নাম মোঃ পারভেজ আকতার, আমার স্টিমিট ইউজার আইডির নাম @mdparvaj. আমি পড়ালেখার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করি। আমি দিনাজপুর জেলায় পার্বতীপুর থানায় জমিরহাট তোকেয়াপাড়ায় বসবাস করি। আমি খেলাধুলা এবং ভ্রমণ করতে অনেক ভালোবাসি।


Vote for @bangla.witness

Steemit thank you card.jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

কাসার তৈরি আসবাবপত্র আগের যুগে ব্যবহার করা হতো। এসব এখন বিলুপ্তপ্রায়। আগের দিনে বিশেষ অনুষ্ঠানে এসব তৈরি পাত্র উপহার হিসেবে দেওয়া হতো।কাসার তৈরী খাবার মানব দেহের ব্যাকটেরিয়া এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য বিশেষ উপকারী। আপনি অনেক সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন, এবং ফটোগ্রাফি অনেক সুন্দর তুলেছেন। আপনার মাধ্যমে আমরা কাসার তৈরি আসবাবপত্র দেখতে পেলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাই

TEAM 5 CURATORS

This post has been upvoted through steemcurator08. We support quality posts anywhere and with any tags.
Curated by: @sohanurrahman

কাঁসার তৈরি আসবাবপত্র নিয়ে অসাধারণ লেখছেন ভাই, কাঁসার তৈরি জিনিস গুলো দেখতেও খুব সুন্দর লাগে, কাঁসার তৈরি জিনিস আগে সবার ঘরে ঘরে ছিল, আমাদের বাসায় একটা কাঁসার তৈরি কলস ছিল কিন্তু এখন এগুলো আর নাই, এখর আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই সব জিনিস হারিয়ে গেছে। আপনি অনেক সুন্দর ভাবে ছবি গুলো তুলছেন ভাই, অসাধারণ ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে পোস্ট উপস্থাপন করেছেন, অনেক সুন্দর ভাবে কাঁসার বিবরণ ও কলসের উপকারীতা উপস্থাপন করেছেন। আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের মাঝে উপহার দেওয়ার জন্য।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

প্রাচীন কাল থেকে আমাদের দেশে কাঁসার তৈরি আসবাবপত্র ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমানে কাসার দাম অনেক বেশি। কাঁচামাল কিনতে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় এই শিল্প এখন অনেক দাম বেড়ে গেছে।তাই আর মানুষ এত বেশি অর্থ দিয়ে কাসার আসবাবপত্র কিনে না।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে কাসা নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট করার জন্য।

ধন্যবাদ

ঐতিহ্যবাহী কাঁসার তৈরি পানের ডাবর, চামচ এবং পানির কলসি এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে আমাদের বাড়িতে এখানো আছে।এগুলো দেখতে বেশ ভালো লাগে। আগের যুগের মানুষ রা এই বাসন গুলো বেশি ব্যবহার করতো।এখন আর নেই। তবে এখনো হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠানে কাসার জিনিসপত্রের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আপনার ফটোগ্রাফি সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি উপস্থাপন করার জন্য।

ধন্যবাদ ভাই

কাসার তৈরি এ সরঞ্জাম গুলো এখন আর তেমন দেখা যায় না। আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠানে কাসার জিনিসপত্রের প্রয়োজন হয়।আপনি বেশ চমৎকার তুলেছেন ছবি গুলো। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

ধন্যবাদ ভাই

ছোটবেলার এসব জিনিসপত্র অনেক দেখেছি। গ্রামের বাড়িতে অগে যখন যেতাম মাঝে মাঝে কাসার থালায় ভাত খেতাম। আপনার পোস্টটি দেখে অনেক পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকবেন। পোস্ট কোয়ালিটির উন্নতি করতে হবে।শুভকামনা রইল

ঠিক আছে ভাইয়া

কাঁসার তৈরি আসবাবপত্র নিয়ে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন। এই কাঁসার তৈরি আসবাবপত্র গুলে তেমন একটা দেখা যায় না। এগুলো আমাদের ঐতিহ্য। সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের কাছে সেয়ার করেছেন।সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ ভাই।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

ঐতিহ্যবাহী এসব কাসা তৈরি জিনিস বাংলাদেশের এক সময় খুব ব্যবহার করা হতো। তবে যত দিন হারিয়ে যাচ্ছে এসব জিনিসের চাহিদা তত কমে যাচ্ছে। আমাদের বাড়িতে কাঁসার তৈরি একটি হাতল ছিল তবে বর্তমানে সেটি নেই।খুব সুন্দর লিখেছেন আপনি ফটোগ্রাফি গুলো খুব সুন্দর করেছেন ভাই ।ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য।

ধন্যবাদ ভাই

দীর্ঘকাল ধরে প্রাচীনকালের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এই কাসার তৈরি চামচ এবং পানির কলসি। একটা সময় ছিল যে সময় এগুলো খুব দেখা যেত। বর্তমানে একেবারে এগুলো বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন এগুলোর নানাবিধ ব্যবহার করে থাকেন। বর্তমানে অনেকেই তাদের বাড়িতে এগুলো সংরক্ষণ করে রেখেছেন। এগুলো আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীক। ছবিগুলো সুন্দর হয়েছে। পোস্টটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ ভাই

ঐতিহ্যবাহী কাসা, পানের ডাবর এবং হাতা এগুলো বর্তমান সময়ে বিলুপ্তি হয়ে গেছে।আগেকার মানুষ পিতলের ডাবর, কাসা এবং হাতা ব্যবহার করতেন। পিতলের তৈরি পানের ডাবর, কাসা,এবং হাতা গুলো বেশ মজবুত ও টেকশই।তবে অনেকেরই বাড়িতে এখনো আগেকার পিতলের তৈরি পানের ডাবর এখনো রয়েছে। অনেকেই আবার অতীতকে আকঁড়ে ধরে বেঁচে আছে। আপনি অনেক সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করেছেন ভাই।

ধন্যবাদ আপু

কাসার তৈরি পানের ডাবর কলস নিয়ে আপনি অসাধারণ একটি পোস্ট করেছেন। আগের কার মানুষ এসব কাসার তৈরি আসবাবপত্র ব্যবহার করতো।হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখন ও কাসার তৈরি এসব জিনিস দেখা যায়। আমাদের বাসায় এখনও এরকম কয়েকটি আসবাবপএ আছে।আপনি সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে পোস্টটি উপস্থাপন করেছেন। ধন্যবাদ ভাইয়া এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

ধন্যবাদ