আহসান মঞ্জিলে ঐতিহাসিক ঘটনা এবং আমার সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ

in hive-131369 •  2 years ago  (edited)
আহসান মঞ্জিলে ঐতিহাসিক ঘটনা

IMG20230117141450.jpg

IMG20230117142422.jpg

আহসান মঞ্জিল এমন একটি স্থাপত্য যার সাথে বাংলাদেশের ইতিহাসের বেশ কিছুটা অধ্যায় জড়িত। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ থেকে পাকিস্তান আমলের প্রারম্ভ কাল পর্যন্ত প্রায় একশত বছর ধরে ভারতের পূর্বাঞ্চলের মুসলমানদেরকে যেসব খ্যাতনামা মনীষী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন অবিসংবাদিত নেতা এই প্রাসাদে বসবাস করেন। এঁরা হলেন, নওয়াব আব্দুল গনি, নওয়াব আহসানুল্লাহ, নওয়াব সলিমুল্লাহ, নওয়াব হাবিবুল্লাহ এবং স্যার খাজা নাজিমুদ্দিন। ঢাকার নওয়াবদের পূর্বপুরুষ এবং এই প্রাসাদের প্রতিষ্ঠাতা খাজা আলিমুল্লাহর সাথে ব্রিটিশ রাজপুরুষদের খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পদস্থ কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন সময়ে এই প্রাসাদে আসতেন এবং খাজা আলিমুল্লাহ তাঁদের ইউরোপীয় স্টাইলে আপ্যায়ন করাতেন। ১৮৪৬ খ্রিঃ (২৭ বৈশাখ ১২৫৩ বাংলা) এই প্রাসাদে বসেই খাজা আলিমুল্লাহ এক ওয়াকফনামা করে তাঁর সুযোগ্য পুত্র খাজা আব্দুল গনিকে যাবতীয় সম্পত্তি পরিচালনার জন্য মোতাওয়ারী নিযুক্ত করেন এবং অন্যান্য পুত্র-কন্যাদের ভাতা ধার্য করে দেন।

IMG20230117132311.jpg

IMG20230117132047.jpg

১৮৫৭ খ্রিঃ সারা ভারতে সিপাহী বিদ্রোহের সময় নওয়াব আব্দুল গনি ঢাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এ প্রাসাদে এক সভায় মিলিত হয়ে সর্ব প্রকার অরাজকতা, লুটতরাজ ও সহিংসতা থেকে রক্ষা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। দেশীয়দের নানা সমস্যা মেটানোর জন্য বাদশাহী আমল থেকে ঢাকায় যে পঞ্চায়েত প্রথা চলে আসছিল সে মোতাবেক ঢাকার নওয়াবগণ এ প্রাসাদের দরবার কক্ষে বিচার সভা বসাতেন । ১৮৬৬ খ্রিঃ খাজা আব্দুল গনি ঢাকার অনারারী মেজিস্ট্রেট নিযুক্ত হওয়ার পর প্রয়োজনীয় বিচারকার্য পরিচালনা করা তাঁর নৈতিক দায়িত্ব হয়ে যায়। ১৮৬৯ খ্রিঃ ঢাকায় মারাত্মক শিয়া-সুন্নী দাঙ্গা দেখা দিলে নওয়াব আব্দুল গনির ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে তা মেটানো সম্ভব হয়। উভয় সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় লোকদের নিয়ে নওয়াব আব্দুল গনি তাঁর দরবারে চারদিন ধরে আলোচনা করে সুষ্ঠু মীমাংসা করেন। এই উপলক্ষে নওয়াবকে চার দিন ধরে বিশ হাজার লোককে ভোজ দিতে হয়েছিল।

IMG-20230118-WA0010.jpg

ঢাকার নওয়াবগণ বিভিন্ন সময়ে ইংরেজ সরকার প্রদত্ত উচ্চ উপাধিসমূহে ভূষিত হয়েছিলেন। ১৮৭১ খ্রিঃ নওয়াব আব্দুল গনির সি.এস. আই. উপাধি প্রাপ্তি উপলক্ষে আহসান মঞ্জিলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকার কমিশনার মিঃ সিম্পসন ইংরেজ সরকারের পক্ষে আব্দুল গনিকে উক্ত উপাধিতে বরণ করেন। ঢাকায় ফিল্টার পানির কল স্থাপনের জন্য নওয়াব আব্দুল গনি ১৮৭৪ খ্রিঃ ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় জমিদার ও অর্থশালী গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তা লাভের আশায় এই ভবনে এক সভার আয়োজন করেন। কিন্তু কেউ তাঁর আহবানে আশানুরূপ সাড়া না দেয়ায় তিনি একাই আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে উক্ত পানির কল স্থাপনের ব্যবস্থা করেন। ১৮৭৪ খ্রিঃ ৬ আগস্ট এই পানির কলের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন কাজে বড়লাট লর্ড নর্থব্রুক ঢাকায় এসে নওয়াবের অতিথিরূপে এই প্রাসাদে অবস্থান করেন। ১৮৭৮ খ্রিঃ ২৪ মে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে ঢাকার কমিশনার মিঃ এফ. বি. পিকক কর্তৃক উক্ত পানীয় জলের কল উদ্বোধন করা হয়। এরপর ব্রিটিশ ভারতের যতজন ভাইসরয় ও গভর্নর ঢাকায় এসেছিলেন তাঁদের সবাই আহসান মঞ্জিলে আগমন করেছেন। অফিসিয়াল ভিজিট ছাড়াও নওয়াবজাদা নসরুল্লাহর বিয়েতে যোগদানের জন্য লর্ড লিটন এখানে এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে আগত লেডী লিটন অন্দর মহলে নওয়াব বেগমদের সাথে মিশেছিলেন। ১৮৮৬ খ্রিঃ লর্ড ডাফরিন স্পেশাল ভিজিটে এখানে আসেন। এছাড়া লেডী ডাফরিনের লেখা থেকে জানা যায়, আহসান মঞ্জিল ভ্রমণ কালে তিনি নওয়াবদের বিশ্ববিখ্যাত হীরক 'দরিয়া-ই-নূর' দেখেছিলেন। ঐ সময় অসংখ্য মোমবাতি শোভিত এই প্রাসাদ চতুরের বাগানটি লেডী ডাফরিন ধরাপৃষ্ঠে গার্ডেন অব লাইট বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

IMG-20230118-WA0009.jpg

ঢাকার নওয়াবদের গৌরবময় দিনগুলোতে এই প্রাসাদের প্রধান সিঁড়িকক্ষে স্বর্ণমণ্ডিত বাঁধাইযুক্ত একটি ভিজিটর বুক রাখা থাকতো এবং তাতে ইউরোপীয়গণ সহ দেশের উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিবর্গ তাঁদের মন্তব্য ও স্বাক্ষর লিপিবদ্ধ করতেন। প্রতি বছর মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রকমারি সামগ্রী ও আলোকমালা দ্বারা এই প্রাসাদ অপরূপ সাজে সজ্জিত করা হতো। নওয়াব আব্দুল গনির সময় প্রতি বছর বুড়িগঙ্গার ওপারে জিঞ্জিরায় পালিত বসন্তোৎসব মেলা স্থানান্তর করে এনে কয়েকবার আহসান মঞ্জিল চত্বরে পালনের ব্যবস্থা করা হয়।

Black & White Minimalist Business Logo.png


You can also vote for @bangla.witness witnesses

3zpz8WQe4SNGWd7TzozjPgq3rggennavDx3XPY35pEAVnpvDGTmz6yM4BdeUwpQ8vMxtR3sQse9kG46R2Lk4NBaGfzPmL5tiA85DdFd7TDvbMGaNMAY2RBgSWfNp5kM1Qjr3515gWKvjxzADBcu4.png
Vote for @bangla.witness


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

সেই ঘোরাঘুরি করছো ভাই। আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস সুন্দর ভাবে সবকিছু আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছো। ধন্যবাদ

ধন্যবাদ ভাই

CategoryYes ✅ / No ❌
Club StatusClub100 ✅
plagiarism-free
#steemexclusive
Verified user
Bot-free
300 Words

We expected you to be friendly and active in the Steem For Tradition Community. We appreciate your effort. Thank you for sharing your beautiful content with us ❤️.


Regards
shamimhossain (Moderator)

ঐতিহাসিক জায়গায় সম্পর্কে অনেক সুন্দর লিখেছেন ফটোগ্রাফি সুন্দর হয়েছে আপনার পোস্ট অনেক ভালো লাগলো

ধন্যবাদ ভাই

খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে লেখেছেন ভাই, আপনার পোস্ট পরে আমাকে খুব ভালো লাগলো, আর আপনার ফোটগ্রাফি খুব সুন্দর হয়েছে ভাই, ধন্যবাদ

ধন্যবাদ ভাই

আহসান মঞ্জিল এর ইতিহাস নিয়ে দারুন একটি পোস্ট লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

ধন্যবাদ আপু


This post was selected for Curación Manual (Manual Curation)

@tipu curate

আপনি বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক জায়গায় ভ্রমন করেছেন। ছবিগুলো অনেক সুন্দর ভাবে ফটোগ্রাফি করেছেন। ধন্যবাদ

ধন্যবাদ ভাই

অনেক সুন্দর জায়গা, তুলে ধরার জন্য খুবই ধন্যবাদ ভাই

ধন্যবাদ ভাই

আহসান মঞ্জিল বাংলাদেশের ঐতিজ্যের একটি অন্যতম স্থান যুগ যুগ ধরে স্থাপনাটি বাংলাদেশের টিকে আছে তার চমৎকার নির্মাণশৈলী এর উপর খুব সুন্দর ভাবে পোস্টটি উপস্থাপন করেছেন আপনি অনেক কিছুই জানতে পারলাম মানুষের সম্পর্কে ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর পোস্ট করার জন্য।

ধন্যবাদ ভাই

আহসান মঞ্জিল অনেক ঐতিহাসিক একটি স্থান।সেটা নিয়ে খুব ভালোভাবে লিখেছেন ভাই। শুভকামনা রইল ভাই আপনার জন্য