গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি সরা বা কাসা এখন প্রায় বিলুপ্ত।

in hive-131369 •  last year  (edited)

শনিবার ,
তারিখ -১২ আগষ্ট ২০২৩

আসসালামু আলাইকুম,

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, সকলে কেমন আছেন। আশা করি আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানিতে আপনারা সবাই ভালোই আছেন। আমিও আল্লাহ তায়ালার রহমতে ভালোই আছি। স্টিম ফর ট্রাডিশন কমিউনিটিতে আজ মাটির তৈরি সরা নিয়ে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করি সকলের ভালো লাগবে।

IMG_20230812_110046.jpg
মাটির তৈরি সরার কিছু ছবি ধারণ
ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি সরাঃ

আমাদের দেশের সবচেয়ে পুরনো বা প্রাচীনতম শিল্প হলো মাটির তৈরি শিল্প।এই মাটির তৈরি শিল্পকেই বলা হয় মৃৎশিল্প।আমদের দেশের কুমারেরা প্রাচীনকাল থেকেই মাটি দিয়ে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিস তৈরি করে আসছে।যেমন-মাটির বাসন-কোসন,হাড়ি-পাতিল,মাটির বাটনা,সরা,মটকা,কলস ইত্যাদি। নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহৃত জিনিসপত্র ছাড়াও এরা মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলনা,হাতি,পুতুল,ফুলের টব ইত্যাদি শখের নানান জিনিসপত্র তারা তৈরি করে আসছে। মাটির তৈরি এসব খেলনা গ্রামীণ মেলাতেই বেশি দেখা যায়। আমি আজ আপনাদের সাথে মাটির তৈরি সরা নিয়ে আলোচনা করব।

IMG_20230812_164553.jpg

পাতিলের উপরে যে ঢাকনা ব্যবহার করা হয় তাকেই সরা বলে থাকে।আমাদের গ্রামে এই সরাকে কাসা বলা হয়।এই সরা বা কাসা তৈরির মূল উপাদান হলো মাটি।তবে সবধরনের মাটি দিয়ে সরা তৈরি করা যায় না।এর জন্য দরকার পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এঁটেল মাটি আঠালো তাই এটি দিয়ে খুব সহজেই মাটির জিনিস বানানো যায়। কুমারেরা সরা তৈরি করার জন্য প্রথমে এঁটেল মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে গোল গোল মন্ড তৈরি করে।এরপর তারা মাটির মন্ডগুলো চাকায় ঘুরিয়ে সরার আকৃতি দেয়।এই সরাগুলো কড়া রোদে শুকানো হয়।ভালোভাবে শুকনো হয়ে গেলে এটা তারা আগুনে পোড়ায়।এরপর তারা এর উপরে রং করে।অনেকে আবার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এর উপরে বিভিন্ন ধরনের নকশা ফুটিয়ে তোলে।

IMG_20230812_110204.jpg

আমাদের দেশে মাটির তৈরি দুই ধরনের সরা দেখা যায়।একটি হলো গোল যেটি পাতিলের ঢাকনা হিসেবে এবং আরেকটি হলো উপরিভাগ উঁচু ও মধ্যেখানে ধরার জন্য একটি হাতল থাকে। এই হাতলটি থাকায় সরাটি ব্যবহার করতে অনেক সুবিধা হয়।এটি সাধারণত কড়াইয়ের ঢাকনা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

IMG_20230812_164609.jpg

মাটির তৈরি সরা সাধারণত গ্রামেই ব্যবহৃত হয় বেশি।শহরে এর ব্যবহার তেমন একটা দেখা যায় না।ছোট বেলায় দাদিকে দেখতাম মাটির হাড়িতে রান্না করতে।আর রান্নার সময় তিনি হাড়িতে এই সরাগুলো ব্যবহার করতেন।তবে আমাদের বাসায় এখনো একটি হাড়ি ও সরা রয়েছে।আমাদের বাসায় যদি আলুর ডাল রান্না করা হয় তাহলে এই হাড়িতেই রান্না করেন।কারন হাড়িতে রান্না করা ডাল ছাড়া দাদি খেতে চান না।তবে আমি আবারর খেতে পারি না কেমন জানি একটা গন্ধ লাগে।আপনারা প্রথমে যে সরাটি দেখতে পাচ্ছেন এটি আমাদের বাসার।আর হাতলসহ যে সরাটি দেখতে পাচ্ছেন ঐটা আমার পাশের বাসার বড়আম্মুর রান্নাঘর থেকে তোলা।আমি আজ সকালে ওদের বাসায় বেড়াতে গিয়ে এই সরাটি দেখতে পাই এবং কিছু ফটোগ্রাফি করি। একসময় এই সরা গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে আর দেখাই যায়না। এখন মানুষ মাটির সরার পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের স্টিল কিংবা সিলভারের ঢাকনা ব্যবহার করছে।

IMG_20230812_110141.jpg

আমার লেখা পোস্ট পড়ার জন্য সকলকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। সকলে সুস্থ ও ভালো থাকবেন।

মোবাইলের তথ্য সংরক্ষণঃ
মোবাইলTecno 9t spark
ক্যামেরা৩৮ মেগাপিক্সেল
পোস্টের ধরণমাটির তৈরি সরা।
লোকেশনচিরিরবন্দর, গুড়িয়া পাড়া।
3zpz8WQe4SNGWd7TzozjPgq3rggennavDx3XPY35pEAVnpvDGTmz6yM4BdeUwpQ8vMxtR3sQse9kG46R2Lk4NBaGfzPmL5tiA85DdFd7TDvbMGaNMAY2RBgSWfNp5kM1Qjr3515gWKvjxzADBcu4.png
Vote for @bangla.witness

ধন্যবাদ,
@siza

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

এখনো গ্রামে অনেক মানুষ এ ধরনের মাটির তৈরি কাসা ব্যবহার করে। দাদি নানি দেখতাম রান্না করতো এমন কাসাতে।আগের বেশিরভাগ মানুষ এসব ব্যবহার করতো।আপনার পোস্টের
উপস্থাপন সুন্দর হয়েছে সাথে ফটোগ্রাফি সুন্দর হয়েছে, ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনাকে ও ধন্যবাদ আপু

Loading...

আগে দেখতাম দাদি মাটির হাড়িতে ভাত রান্না করতো। কিন্তু এখন আর এই মাটির হাঁড়ি তেমন দেখা যায় না।বর্তমানে এখন মাটির হাঁড়ির পরিবর্তে অন্যান্য হাড়ি ও রাইসকুকার ব্যবহার করা হয়।সুন্দর লিখেছেন ধন্যবাদ আপনাকে

মাটির সরা নিয়ে আপনি দারুন আলোচনা করেছেন।আমাদের বাড়িতে এ দুই ধরনের সারাই রয়েছে। আমার আম্মু এখনও মাটির হাড়িতেই রান্না করেন।তাই আমার আম্মুর এখনো সরার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এই জিনিসটি এখন প্রায় বিলুপ্তই হয়ে গেছে। প্রায় বাড়িতেই খুঁজলে দেখা যাবে এটি আর নেই। সুন্দর একটি বিষয় তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ আপু

আগের যুগের মানুষ মাটির পাতিলে রান্না করতো। সেই রান্না খেতে অনেক সুস্বাদু লাগতো। মাটির সরা আমাদের বাড়িতে এখনো ব্যবহার হয়। কুমারেরা মাটির তৈরি নানা রকম আসবাবপত্র করে। আপনি অনেক সুন্দর উপস্থাপন করছেন আপু, তবে আপনার পোস্ট এর মাধ্যমে মাটির পাতিল দেখতে পেলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এতো সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

আপনাকে ও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যটি করার জন্য।

সরা বা কাসা নিয়ে আপনি অনেক সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আপু। প্রাচীন যুগ থেকে এসব জিনিস ব্যবহার করা হইতেছে, কিন্তু এখন আর এসব মাটির জিনিসপত্র দেখায় যায় না। একবারে খুব কম দেখা যায় হঠাৎ চোখে পরে। মাটির তৈরি জিনিস কিভাবে তৈরি করে এ নিয়েও আপনি অনেক সুন্দর আলোচনা করেছেন। সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর ছিল পোস্টি, শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

ধন্যবাদ ভাইয়া

মাটির তৈরি সরা আমাদের বাড়িতেও ব্যবহার করা হয় আপু। আমরাও এই সরা টিকে কাসা বলি। মাটির তৈরি পুরনো জিনিসটি নিয়ে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন আপু। ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

ধন্যবাদ আপু

আগে দেখতাম দাদি মাটির হাড়িতে ভাত রান্না করতো। কিন্তু এখন আর এই মাটির হাঁড়ি তেমন দেখা যায় না।বর্তমানে এখন মাটির হাঁড়ির পরিবর্তে অন্যান্য হাড়ি ও রাইসকুকার ব্যবহার করা হয়।সুন্দর লিখেছেন ধন্যবাদ আপনাকে

আপনাকে ও ধন্যবাদ ভাইয়া।

পাতিলের উপর যে ঢাকনা ব্যবহার করা হয় তা আপনাদের এলাকায় সরা বলা হলেও আমাদের এলাকায় সেটিকে পেয়ালা বলা হয়। অনেক আগে মানুষ এই মাটির পেয়ালা ব্যবহার করলেও এখন আবার গ্রামের অধিকাংশ মানুষ সিলভারের তৈরি ঢাকনা ব্যবহার করে রান্নার কাজ করে। ধন্যবাদ আপনাকে আপু।

ধন্যবাদ আপু

মাটির তৈরি সরা বা কাসা নিয়ে সুন্দর একটা পোস্ট উপস্থাপন করেছেন আপনি।মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি করে কুমাররা।তারা খুব সুন্দর ভাবে মাটির তৈরি খেলনা,হাঁড়ি পাতিল ইত্যাদি। তবে বর্তমান এগুলো মাটির তৈরি সরা দেখা যায় না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আপনি খুব সুন্দর ভাবে বিস্তারিত আলোচনা করছেন আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

আপনাদের ঐ দিকে সরা বলে, আমাদের এইদিকে মাটির ঢাকনা বা মাটির হাঁড়ি এরকম বলে। আপনার পোস্টের মাধ্যমে আরো সুন্দর একটি নাম জানতে পারলাম। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

আমাদের এলাকায় এই সরাকে কাসা বলে থাকে। কাসা তৈরির পদ্ধতি অনেকটা কঠিন বলা চলে। আমাদের এলাকায় কুমার পাড়ায় আমি মাটির তৈরি আসবাবপত্র কেনার জন্য গিয়েছিলাম আর সেখানেই দেখা হয়েছে কেমন করে বানায় সেইসব প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র গুলো। আগে প্রতিটি বাসায় এই কাসা ব্যবহার হলেও আজ প্রযুক্তির ভিড়ে প্রায় বিলুপ্ত এই সকল মাটির তৈরি আসবাবপত্র।

মাটির জিনিসপত্র গ্রাম অঞ্চলের প্রাচীনকালের ঐতিহ্য। আগের মানুষেরা সব সময় মাটির জিনিসপত্র ব্যবহার করত। কিন্তু এখন আর মাটির জিনিসপত্র তেমন দেখা যায় না, আপনি সরা বা কাঁসা নিয়ে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

মাটির সরা সম্পর্কে অনেক সুন্দর একটি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন আপনি। এবং এগুলো আসলেই দিন দিন বিলুপ্তর পথে কারণ এখন আর এই মাটির জিনিসপত্র ব্যবহার করা হয় না। সব এখন স্টিলের ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করছেন ধন্যবাদ আপনাকে।

চমৎকার একটি পোস্ট করেছেন আপনি এই কাসাগুলো মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়। এগুলো হাড়ির সঙ্গে থাকে আমার জানামতে। পাতিল ঢেকে রাখার জন্য এগুলো ব্যবহার করা হয়। রান্নাবান্না করার সময় এসব সরাগুলো ব্যবহার করা হয়। দারুন একটি পোস্ট উপস্থাপন করেছেন ধন্যবাদ আপনাকে।