অপারেশন ফার্মগেট - ৮ আগস্ট ১৯৭১
সময় - রাত ৮টা বেজে ৭ মিনিট
অপারেশন সময় - ১ মিনিট ২৫ সেকেন্ড
ম্যান - জুয়েল , বদিউজ্জামান , আলম , পুলু , স্বপন আর সামাদ
অস্ত্র - ৫ টা স্টেনগান, একটা চাইনিজ এল.এম.জি, কয়েকটি ফসফরাস গ্রেণেড, গ্রেণেড-৩৬ ও রিভলবার।
মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮ই আগস্ট অপারেশনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল সামাদের ইস্কাটনের বাসায়। সারাদিন ব্যাপী বিভিন্ন ভাবে প্রানের ঝুঁকি নিয়ে পুরো ফার্মগেট বারবার রেকি করা হয়। সারাদিন সবকিছু পরিকল্পনামাফিক হলেও, সন্ধ্যার দিকে মিলিটারি পুলিশের টহল বেড়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় অভিযান অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ বোধ হওয়াতে ও সাধারন মানুষের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে দিনের বেলায় আক্রমণের সিদ্ধান্ত পেছানো হয়। ফার্মগেট অপারেশনে অংশ নেয় ক্র্যাক প্লাটুনের ৬ জন গেরিলা মুক্তিয়োদ্ধা। জুয়েল, বদিউজ্জামান, আলম, পুলু, স্বপন আর সামাদ।
সবুজ রঙের একটি ভক্স ওয়াগন তেজকুনিপাড়ার গলি ঘুপচি ঘুরে হলিক্রস স্কুল পেরিয়ে ফার্মগেটের মুখে থামলো। ড্রাইভিংয়ে সামাদ, পাশে জুয়েল, পেছনে বদি, আলম, পুলু, আর স্বপন। অমিয় তেজী জুয়েল চিতার মত ক্ষিপ্র গতিতে গাড়ি থেকে নেমে এলো, একই সাথে বাকি আলোর পথের যাত্রীরা। চোখের পলকে অবস্থান নিতেই গর্জে উঠলো পাঁচটি স্টেনগান ও এল এম জি। তৎকালীন পৃথিবীর অন্যতম সেরা দাবীদার পাকি আর্মির ৭ সদস্য কাঁটা কলাগাছের মতই মাটিতে পড়ে এবং তৎক্ষণাৎ তাদের জন্য নির্ধারিত হাবিয়া দোজখে যাত্রা করে, আর আহত হয় আরও ৮ জন পাকি সেনা ও তাঁদের স্বদেশী বেজন্মা ভাইসুলভ কয়েকজন রাজাকার। পরবর্তীতে হাসপাতাল থেকে এদের মাঝে আরও চারজন স্ট্রেইট জাহান্নামে যাত্রা করে। পরদিন ঢাকা শহরব্যাপী বেজন্মা পাকিপশুদের চোখেমুখে আতঙ্ক ছিল স্পষ্ট। ফার্মগেট ছিল জনশুন্য, মুক্তিকামী মানুষ আশাবাদী হয়েছিলো নতুন করে আর পাকিপ্রেমিরা ছিল চরম হতাশ।
১৯শে আগস্ট ১৯৭১ এর মাঝে আরও কয়েকটি দুর্ধর্ষ অভিযান চালায় এই অকুতোভয়, মৃত্যুঞ্জয়ী দলটির সদস্যরা। স্বাধীনতার ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি ক্র্যাক প্লাটুনের অবদান স্বীকার না করা হয়। ১৯৭১ এর জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে যারা পাকিপশুদের ঘুম হারাম করে ছেড়েছিল। আমি নিশ্চিত সেদিনের কথা ভেবে পাকি হায়েনাদের অফিসার র্যাঙ্কে থাকা অফিসারগুলোও প্যান্ট ভিজিয়েছে দিনে ৩-৪ বার করে, স্রেফ ক্র্যাক প্লাটুনের নাম শুনে।একাত্তরের স্মৃতি সুনিশ্চিতভাবেই বেদনার এবং একই সাথে এই স্মৃতি আনন্দের, গৌরবের। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে শহীদ বদি, শহীদ রুমি, শহীদ আজাদ, শহীদ জুয়েল, সজিব, বারী, হুমায়ুন ফরিদি, বুলবুল, চুল্লু, আজম ভাই, মায়া, স্বপন সহ জানা অজানা আরও অনেকে একটুও পিছ’পা হয়নি।
ক্র্যাক প্লাটুন, আমাদের পরম গৌরবের উচ্চারন, উচ্ছাসের নাম! ক্র্যাক প্লাটুন এই দেশের সবচেয়ে দুঃসাহসী মানুষদের সর্বোচ্চ ত্যাগের ও বীরত্বের অমলিন ইতিহাস।
আজ অনেকেই পাবজি গেমে অনেক কিছু করে বসেন, কিলিং এর পরে কিলিং করেন, নিজেকে ট্রেন্ডি ভাবেন! বিশ্বাস করুন, সেদিন ১ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে ক্র্যাক প্লাটুন যেটা করেছিল; সেটা কোন পাবজি গেম ছিলনা, যুদ্ধ ছিল; সাধারণ আগ্নেযাস্ত্র হাতে অসাধারণ এক যুদ্ধ ছিল, ইতিহাসের সেরা একটা এটাক ছিল, কিছু স্মার্ট ও ক্র্যাক সিল লাগানো তরুণের রিয়াল ক্রেজি একটা অ্যাকশন ছিল!