||Legendary writer of Bengali literature- Manik Bandopadhyay ||📚🔖📖📑

in hive-138339 •  4 years ago 

সবাইকে শুভ কামনা জানাচ্ছি



আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন এবং নিরাপদ রয়েছেন।




আমার পছন্দের তালিকায় বেশ কয়েকজন লেখক রয়েছে যাদের লিখা আমাকে অনুপ্রানিত করে, জীবনে চলার শক্তি যোগায় এবং অনেক কিছু সম্পর্কে ধারনা দেয়। তবে আজ আমি আমার পছন্দের তালিকায় সবার উপরের দিকে থাকা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর অনবদ্য একটি গল্প প্রাগৈতিহাসিক নিয়ে আলোচনা করবোঃ


The role of a writer is not to say what we can all say. But what we are unable to say.(Tom Henry)



মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু কথা

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তার প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ১৯শে মে ১৯০৮ সালে বিহার জেলার , সাওতাল পরগনা থানার অধিনে দুমকা নামক গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। যদিও প্রবোধকুমার এই নামটী তার বাবা দিয়েছিলেন। তবে তার জন্মসনদে তার নাম দেয়া হয় অধরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পিতার নাম হলো হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার মায়ের নাম নিরদাসুন্দরী দেবি। তবে তাদের আদি নিবাস ছিল ঢাকা জেলার নিকটে বিক্রমপুরে । মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তার শিক্ষা জিবনের বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করেছিলেন কোলকাতা, টাঙাইল, সহ বিভিন্ন স্থানে।


image.png

source



১৯২৬ সালে তিনি প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে তার ম্যাট্রিক সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯২৮ সালে আই.এস.সি পাস করেন এবং এই পরিক্ষাতেও তিনি প্রথম বিভাগে প্রথম হন। আই.এস.সি পাশ করার পর তিনি গনিত নিয়ে তার অনার্স শেষ করার জন্য কোলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভরতি হন। এখানে পড়ার সময়েই তিনি তার প্রথম গল্প ‘অতসীমামী’ লিখেন এবং এই গল্পটি সাহিত্যপত্রিকা ‘বিচিত্রায়’ ছাপা হয়। এরপর তিনি ধীরে ধিরে পড়ালেখায় মন হারিয়ে সাহত্য সাধনায় মন নিবিস্ট করতে থাকেন। এরপর একটা সময়ে তিনি একে পেশা হিসেবেই গ্রহন করে ফেলেন। সাহিত্য সাধানার পাশাপাশি তিনি কমিউনিস্ট রাজনীতির সাথেও নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন।


image.png

source



এত কিছুর পরেও তিনি বাংলা সাহিত্যে যে অবদান রেখে গছেন তা আসলেই বিস্ময়ের ।তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর পৃথিবী জুড়ে যখন মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় পরিস্থিতির আবির্ভাব হয় তখন বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাত ধরে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারার আবির্ভাব হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন।। তার রচনা গুলি সমাজের বিভিন্ন দিক খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতো তবে মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম ইত্যাদি।


image.png

source



তিনি খুব অল্প সময় দিতে পেরেছিলেন সাহিত্য জগতে। এই খুদ্র জীবনে অতি ক্ষুদ্র পরিসরেই তিনি রচনা করে ফেলেন চল্লিশটি উপন্যাস এবং তিনশত ছোটোগল্প। তার রচিত পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি,অহিংসা,সোনার চেয়ে দামী, জননী ইত্যাদি উপন্যাস ও অতসী মামী অন্যান্য গল্প, প্রাগৈতিহাসিক , মিহি ও মোটা কাহিনি, সরীসৃপ , সমুদ্রের স্বাদ ইত্যাদি গল্পগ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। ইংরেজি ছাড়াও তার রচনাসমূহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।১৯৩৫ সালের দিকে তার জটিল এক রোগ শরিরে ধরা পড়ে। এরপর রোগটি ধীরে ধীরে অর হতে থাকে। তীব্র আর্থিক অনটনের কারনে ভালোভাবে চিকিৎসা সেবাও নিতে পারেননি। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর, মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সেই বিংশ শতাব্দীর অন্যতম মেধাবী ও সাহসী এই কথাসাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে।


image.png

source



তিনি যে সকল কাজের জন্য বাংলা সাহিত্যে উজ্জ্বল হয়ে আছেন তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নিচে দেয়ার চেস্টা করছি

তার উল্লেখজোগ্য উপন্যাস সমূহ-

উপন্যাসউপন্যাসের প্রকাশের সাল
নাগপাশ১৯৫৩ সাল
মাশুল১৯৫৬ সাল
চালচলন১৯৫৩ সাল
ইতিকথার পরের কথা১৯৫২ সাল
দর্পণ১৯৪৫ সাল
পেশা১৯৫১ সাল
চিহ্ন১৯৪৭ সাল
হরফ১৯৫৪ সাল
চিন্তা মনি১৯৪৬ সাল
জননী১৯৩৫ সাল

তার অনবদ্য ছোটগল্প সমূহঃ

গল্পের নাম্প্রকাশ সাল
প্রাগৈতিহাসিক১৯৩৭ সাল
ভেজাল১৯৪৪ সাল
পরিস্থিতি১৯৪৬ সাল
খতিয়ান১৯৪৭ সাল
ছোট বড়১৯৪৭ সাল
ফেরিওয়ালা১৯৫৩ সাল
লাজুক্লতা১৯৫৪ সাল
বৌ১৯৪৪ সাল


আমি ব্যক্তিগতভাবেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একজন ভক্ত। তার প্রতিটি গল্প উপন্যাস আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। তারপরেও আজকে আমি তার অন্যতম একটি সেরা গল্প নিয়ে বিস্তারিত কিছু কথা লিখব। গল্পটির নাম ‘প্রাগৈতিহাসিক’। এটি তার অন্যতম সেরা গল্প গুলির ভেতরে একটি। নিম্নে এই গল্প নিয়ে আমি বিস্তারিত তুলে ধরছি-


image.png

source




সূচনা বচনঃ

প্রাগৈতিহাসিক গল্পটি পটভূমি হলো বাংলাদেশের এক অসভ্য ও পিছিয়ে থাকা সমজজীবনের এক নগ্ন চিত্র। যে সমাজে তখনো শিক্ষার আলো, অথবা আধুনিক সভ্যতার ছোয়া কোনকিছুই প্রবেশ করেনি। সেই সমাজের কয়েকটি প্রতিকী চরিত্র ভিখু,পাচী, পেহ্লাদ ও বসিরকে তুলে এনেছেন লেখক। এদের অসভ্য জিবনের কামনা, বাসনা ও নানাবিধ সমস্যার কথা খুব সুন্দর ভাবে লেখক তুলে এনেছেন এই গল্পের ভিতরে।


গল্পের মূল বক্তব্যঃ

যে সময় পর্যন্ত আমরা ইতিহাস জানি তার আগের সময়হের কোন ঘটনাকে সাধারণত প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়ে থাকজুগেই জুগে শিক্ষা , সভ্যতা বা আধুনিকতার কোন ছোয়া ছিল না। এই সময়ে মানুষের ক্ষুদা ও কাম এই দুটি বিষয়ের প্রতি বেশী আগ্রহী ছিল। কিন্তু এর বাহিরেও যে জীবনে আরো অনেক কিছু করার রয়েছে এই বিষয়ে তাদের কোন ধারনা ছিল না। বর্তমান এই জুগে এসো আমাদের এই সমাজের অনেকের মাঝেই এই নগ্ন মানুষিকতা দেখা যায়। এই গল্পে লেখক আদিম জুগের মানুষের নোংরা ও অসভ্য মানুষিকতার েক বাস্তব চিত্র তুলে এনেছেন।ভিখু,পাচী, পেহ্লাদ ও বসির তাদের কামনা ,বাসনা সফল করার জন্য তাদের চরিত্রে যে আদিমতা এনেছিলেন এবং এই আদিমতা যে কতটা নোংরা তাই বলা হয়েছে এই প্রাগৈতিহাসিক গল্পে।


image.png

source



নোংরা চরিত্রের চিত্রঃ

এই গল্পের ভিখু একজন জঘন্য চরিত্রের মানুষ। ডাকাতি করে সে তার জীবিকানির্বাহ করে এবং এই কাজ তাকে খুবই আনন্দ দান করে।মায়ের সামনে ক্ষনো মেয়েকে খুন করে আবার পিতার সামনে পুত্রকে খুন করতে সে একটুও সংকোচ বোধ করেনা। বসন্তপুর নামক এক জায়গায় সে ডাকাতি করতে গিয়ে একজন মানুষেকে সে দা দিয়ে কুপিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। পাচী নামে এক ভিক্ষুককে পাবার আশায় সে অশির নামক এক ব্যক্তির মাথায় লোহার শিক ঢুকিয়ে হত্যা করে । মানুষ খুন করা তার কাছে খুবই সহজ একটি কাজ ছিল।


image.png

source



একজন কামুক মানুষের প্রতিচ্ছবিঃ

ভিখু ছিলেন একজন কামান্ধ পুরুষ। কামনাকে চরিতার্থ করার জন্য সে যে কোন নোংরা কাজ করতে পিছুপা হত না। কামের আশায় সে শ্রীপতি নামক এক ব্যক্তির বোঙ্কে অপহরণ করে ছিল এছাড়াও রাখু নামল এক ব্যক্তির স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে একটি হাত কেটে নেয়ার পরেও তার নোংরা কাজ গুলি থেমে থাকেনি। ন্দীর ধারে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে রমণীদের দেখেও সে এক বিশাল আনন্দ উপভোগ করতো। এরপর সবার শেষে বশিরকে হত্যা করে পাচিকে নিয়ে অনিশ্চিত জাত্রা করে। লেখক মূলত ভিখু চরিত্র দিয়েই আদিম মানুষের কামনার নোংরা ছবি তুলে এনেছেন।


image.png

source



সংক্ষেপে গল্পটির বর্ণনাঃ

গল্পের প্রধান চরিত্রের অধিকারি ভিখুর মুল পেশা ডাকাতি। ডাকাতি করতে গেয়ে ধাওয়া খেয়ে সে চিতলপুর নামক এক স্থানে আসে। এখানে এসে সে তার ছোটবেলার বন্ধু প্লেহাদের কাছে আশ্রয় চায়।প্লেহাদ তার বন্ধুর চরিত্র সম্পর্কে আগে থেকেই জান্তো তবুও বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বনের ভিতরে একটি গাছের সাথে সে মাচা বানিয়ে দেয়। সেখানে অনাদরে ,খুদায় সে দুর্বল হয়ে পড়ে। বন্ধুর এমন অবস্থা দেখে পেহ্লাদ তাকে বাসায় নিয়ে আসে। এরপর সে আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে। একটু সুস্থ হয়েই সে বন্ধুর স্ত্রীর দিকে নোংরা হাত বাড়ায়। পেহ্লাদ জানতে পারার পর তার আরেক বন্ধুর সাহায্যে তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। প্রতিশোধ হিসেবে সে রাতের বেলায় ফিরে এসে পেহ্লাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় এবং পালিয়ে জাও্যার সময় ঘাট থেকে একটি নৌকা নিয়েজায়। ডাকাতি করে ধাওয়া খওয়ার সময় বর্শার আঘাতে তার হাত আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল । পরে সেই হাত পচন ধরায় কেটে ফেলতে হয়। হাত কেটে ফেলার পর তার আর ডাকাতি করার পথ খোলা ছিল না। পরে বেচে থাকার তাগিদে বাজারে বসে ভিক্ষা করা শুরু করে।


image.png

source



এরপর থেকে ভয়ানক ডাকাত থেকে সে হয়ে উঠে রাজপথের একজন ভিক্ষুক। অপ্ল কয়েকদিনের ভিতরেই চালাক ভিখু ভিক্ষার নানা কৌশল রপ্ত করে ফেলে এবং এখান থেকে ভালো টাকা আয় করা শুরু করে। বিনু মাঝু নামক এক লোকের বাসায় সে আট আনা ভাড়া দিয়ে একা একা জীবন কাটাতে শুরু করে। কিন্তু নারি ছাড়া এই জীবন তার ভাল লাগত না। তাই সময় পেলে নদীর ধারে গিয়ে নারীদের গোসল করা দেখত। এভাবে দিন জেতে জেতে একদিন পাচী নামক এক অল্প বয়সী নারী ভিক্ষুকের সাথে পরিচয় হয় তার। পাচি রাত কাটাত বসির নামক আরেক ভিক্ষুকের সাথে। ভিখু পাচিলে বশিরের সঙ্গ বাদ দিয়ে তার সাথে থাকার প্রস্তাব দেয় কিন্তু পাচী তা অমান্য করে।


image.png

source



এরপর ভিখুর মাথায় জিদ চেপে বসে । সে বশিরকেও বলে পাচিকে জেন সে ছেড়ে দেয় কিন্তু বশির অপমান করে ভিখুকে তাড়িয়ে দিলে সে খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এরপর সে বশিরকে প্রানে মেরে ফেলার উপায় খুজে বের করতে থাকে। নদির ধারে হাটার সময় সে একটি ল্মবা লোহার শিক খুজে পায় । সেই লোহার শিকটি পাথরের গায়ে ঘষে ঘষে সে খুব তীক্ষ্ণ করে তোলে। এরপর একদিন রাতে সে বশিরের কুড়ে ঘরে ঢুকে কৌশলে মাথায় লোহার শিক ঢুকিয়ে বশিরকে হত্যা করে ফেলে। এমন সময় পাচির ঘুম ভেঙ্গে যায়। বশিরকে খুন করার পর ভিখু পাচিকে তার সাথে চলে আসতে বলে। ভয়ে কাপতে থাকা পাচী তার ও বশিরের জমা করা সব টাকা পয়সা নিয়ে ভিখুর ্সাথে নতুন জিবনের আশায় পালিয়ে যায়।



সমাপ্তি উক্তিঃ

এই গল্পের ভিতর দিয়ে লেখক আদিম জুগের মানুষের নগ্ন চিন্তাধারার বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে রুলেছেম। ভিখু, পাচি, পেহ্লাদ ,বশির আমাদের সভ্য সমাজের এক অন্ধকার জায়গার মানুষ। মানুষের মাঝে জখন পশুর জায়গা হয় তখন সে যে কোন নোংরা কাজ করতে দ্বিধা করে না। এই আদিমতা থেকে আমাদের বর্তমান যুগ এখনো মুক্ত হতে পারেনি। কবে আমরা এই আদিম কালের মানুষিকতা পরিহার করতে পারবো আমরা কেউই জানি না।



আমার অভিমতঃ

গল্পটি পড়ার পর আমার কাছে মনে হয়েছে লেখক তার সাহিত্য প্রতিভার সবটুকুই এখানে নিংড়ে দিয়েছেন। গল্পের কথগুলো যদিও অনেক দিন আগের তবুও ব্রতমান জুগের অনেক ঘটনা এই গল্পের ঘটনাকেও হার মানায়। তাই এই গল্পটি আমার পরা অন্যতম গল্পগুলির ভেতরে জায়গা করে নিয়েছে।



সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি।



Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

You have been upvoted by @toufiq777 A Country Representative, we are voting with the Steemit Community Curator @steemcurator07 account to support the newcomers coming into steemit.


Follow @steemitblog for the latest update. You can also check out this link which provides the name of the existing community according to specialized subject

There are also various contest is going on in steemit, You just have to enter in this link and then you will find all the contest link, I hope you will also get some interest,

For general information about what is happening on Steem follow @steemitblog.