বদরের ঐতিহাসিক যুদ্ধ

in hive-138339 •  2 years ago 

১৭ ই রমাদান বদরের ঐতিহাসিক যুদ্ধ:

আজ ঐতিহাসিক বদর দিবস এদিনেই মাত্র ৮ খানা তলোয়ার, ২টি ঘোড়া, ৭০ টি উট নিয়ে ৩১৩ জন জান-কুরবান মুসলমান একদিকে আর অন্যদিকে অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ ১০০০ জন সশস্ত্র কাফের- ঘোড়া ছিল ৩০০, উট ছিল ৭০০, যুদ্ধের ফলাফল :বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়। একদিকে ১৪ জন শহীদ, অন্যদিকে ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন বন্দী। বিজয়ের ফলে মুসলমানদের প্রভাব প্রতিপত্তি দারুনভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ।

bodor.jpeg

source

কুরাইশ কাফের দলে - গায়িকা, নর্তকী,যুদ্ধে উতসাহ দেয়ার হরেক কায়দা। এই যুদ্ধে ফেরেশতারা মুমিনদের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেন।

রাসুল (সা:) অত্যন্ত কাতরভাবে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলেন এবং তিনি এমন আত্মভোলা হয়ে পড়লেন যে, তাঁর চাদরখানা তাঁর কাঁধ থেকে পড়ে গেলো।

কাতর কন্ঠে তিনি আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে থাকলেন, " হে আল্লাহ আজ যদি এই ঈমানদার দলকে ধ্বংস করে দাও তবে এ জমিনে আর তোমার ইবাদাত করা হবে না। হে আল্লাহ তুমি কি এটা চাও যে, আজকের পর আর কক্ষনো তোমার ইবাদাত করা না হোক। "

আল্লাহপাক ওহী পাঠালেন :
"আমি তোমাদের এক হাজার ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করব, যারা পর পর আসবে "( সূরা আনফাল-৯)।

"অচিরেই আমি কাফেরদের দিলে ভীতির সৃষ্টি করব " ( সূরা আনফাল-১২) ।

আবূ দাউদ মাজেনী বলেন, আমি একজন মুশরিক কে মারার জন্য তাড়া করছিলাম। হঠাত তার মস্তকটি, আমার তরবারী ওর উপর আসার আগেই কেটে পড়ে যায়। আমি তখন বুঝতে পারলাম যে, তাকে আমি নই, বরং অন্য কেউ হত্যা করেছে। প্রকৃতপক্ষে ফেরেশতারা তাকে হত্যা করে।

যুদ্ধে ফেরেশতাদের অবতরন দেখে যুদ্ধের ময়দানে সুরাকা বিন মালিক বিন জুশুমের সুরতে আসা ইবলীশ শয়তান -যে সবাইকে গুছিয়ে যুদ্ধের ময়দানে এনেছিল - পালিয়ে গেলো এই বলে-

"আমি যা দেখছি তোমরা তা দেখছো না। আল্লাহকে আমার ভীষন ভয় হচ্ছে। তিনি কঠোর শাস্তির মালিক। "(সূরা আনফাল- ৪৮)।

আবু জেহেল, উতবা, শায়বা, উমাইয়া ইবনে খালফ বড় বড় কাফের কুরাইশ সর্দারেরা এই যুদ্ধে নিহত হয়। বড় বড় চব্বিশজন কুরাইশ সর্দারের লাশ বদরে একটি আবর্জনা ও পংকিলময় কুয়ায় ফেলে দেয়া হয়। যুদ্ধশেষে মহানবী (সা:) মদীনায় ফেরার পথে কুপের ধারে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাদেরকে তাদের নাম ধরে ও তাদের পিতাদের নাম ধরে ডেকে যা বললেন তার সারমর্ম ছিল - নবীকে মেনে নেয়ার মধ্যেই ছিল তাদের জন্য কল্যান। সেই লাশগুলো নবীজির কথা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে বলে সাহাবাদেরকে তিনি জানান ।

বদরের যুদ্ধের আগে রাসূল (সা.) সাহাবীদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে যুদ্ধের কথা সাহাবীদের কাছে বলছেন এবং একটু ইতঃস্তত করছেন।

কারণ মক্কা থেকে যারা যুদ্ধ করতে আসছে তারা সবাই আপন আত্মীয় স্বজন, এই আপন লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা খুবই কঠিন কাজ।

রাসূল (সা.) এর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বর্ষিয়ান সাহাবী হযরত মিকদাদ (রা.) বললেন-
قَالَ الْمِقْدَادُ يَوْمَ بَدْرٍ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّا لاَ نَقُولُ لَكَ كَمَا قَالَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ لِمُوسَى فَاذْهَبْ أَنْتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِلاَ إِنَّا هَاهُنَا قَاعِدُونَ
“হে আল্লাহর রাসূল (সা.) (আপনি আমাদেরকে নিয়ে চলুন আল্লাহ আপনাকে যেদিকে নিয়ে যেতে বলেন) আমরা মুসা (আ.) এর উম্মতের মত বলবনা যে, হে মুসা তুমি আর তোমার রব গিয়ে যুদ্ধ কর আর আমরা আরাম করে বসে থাকব।”

বরং আমরা বলব, হে আল্লাহর রাসূল আপনি আমাদেরকে নিয়ে চলুন আল্লাহ যে দিকে নিয়ে যেতে বলেন।

আমরা আপনার সাথী হয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়তে থাকব যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের চোখের একটা পাতাও নড়ে। অর্থাৎ জীবন যতক্ষণ আছে ততক্ষণ আপনার সাথী হয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়তে থাকব।

সাহাবীদের এমন মনোভাব দেখে রাসূল (সা.) খুব খুশি হয়ে গেলেন এবং বললেন-
قُومُوا إِلَى جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ
“(আমার সাহাবীরা তোমদের মানসিকতা যখন এমন) তখন আমার সাথে চলো জান্নাতের দিকে যে জান্নাতের বিশালতা-প্রসস্থতা আকাশ আর জমীনের চেয়ে বেশী।”

হযরত উমাইর ইবনে হুমাম (রা.) এ সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খুরমা খাচ্ছিলেন, এ কথা শুনে হযরত উমায়ের ইবনে হুমাম (রা.) বললেন-
قَالَ يَقُولُ عُمَيْرُ بْنُ الْحُمَامِ الأَنْصَارِىُّ يَا رَسُولَ اللَّهِ جَنَّةٌ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ قَالَ نَعَمْ
“ইয়া রাসূলুল্লাহ জান দিলে মাল দিলে এমন বেহেশত পাব যার বিশালতা-প্রসস্থতা আকাশ আর জমীনের চেয়েও বেশী! রাসূল (সা.) জবাব দিলেন হ্যাঁ।”

এ কথা শুনে উমায়ের বললেন-
لَئِنْ أَنَا حَيِيتُ حَتَّى آكُلَ تَمَرَاتِى هَذِهِ إِنَّهَا لَحَيَاةٌ طَوِيلَةٌ
“আমি যদি হাতের সব খুরমা খেতে যায় তাহলে তো বেহেশতে যেতে দেরী হয়ে যাবে”

এই বলে হাতের সবগুলি খুরমা ফেলে দিলেন এবং বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শহীদ হলেন।

বদরের শহীদানদের জানাজা করার সময় একজন সাহাবী বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.) এই সেই উমায়ের আপনি যখন বেহেশতের কথা বলছিলেন
সে খুরমা খাওয়ার সময়টুকু পায় নাই।

রাসূল (সা.) এ কথা শুনে উমায়েরের শরীরের দিকে আঙ্গুল ইশারা করে বললেন, إِنَّكَ مِنْ أَهْلِهَا (যে বেহেশতের জন্য তুমি খুরমা খাওয়ার সময় পাও নাই আমি নবী সাক্ষী দিচ্ছি ঐ বেহেশত তোমার জন্য।)
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)।

শিক্ষা:

(১) বদরের যুদ্ধের বিজয়ের মাধ্যমে ঈমানদারেরা স্বাধীনভাবে আল্লাহর ইবাদাতের সুযোগ লাভ করেন। দ্বীনের পক্ষে রাজনৈতিক বিজয় এবং ধর্মীয় বিজয় অংগাংগি ভাবে জড়িত ।

(২) ঈমানদারেরা বুদ্ধিমত্তার সাথে খালেসভাবে আল্লাহর উপর ভরসা করে ময়দানে নেমে আসলে আল্লাহর সাহায্য অবধারিত।

"আর মু'মিনদের সাহা্য্য করা আল্লাহর দায়িত্ব "। ( সূরা রুম:৪৭ আয়াত)

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!