"দুই বছর আগেও রাফি হিমেল, মায়িশা আহমেদ, রাইসুল আবেদীন আনন্দ, র্যাচেল অদিতি রেমা, ইনশিরাহ্ আলীর মধ্যে পরিচয় ছিল না। পাঁচটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিন্ন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে নিজ আগ্রহে টিচ ফর বাংলাদেশে, ফেলো হিসেবে যোগদান করেছেন এই ৫ জন তরুণ।
ইঞ্জিনিয়ারিং, অর্থনীতি, মার্কেটিং এন্ড ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস নিয়ে পড়াশুনা করার পরেও সবারই ইচ্ছে ছিল দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য কিছু করার। শিশুদের শিক্ষার জন্য কাজ করার আগ্রহ থেকে ২০১৮ সালে তারা ফেলো হিসেবে টিচ ফর বাংলাদেশে যোগদান করেন।
ঢাকার ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, প্রায় ২ বছর তারা পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সরাসরি কাজ করেছেন। সেই সুবাদে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যমান নানা অসঙ্গতি নিরসনে শিশুদের সাথে কাজ করে যাচ্ছিলেন শ্রেণিকক্ষের ভিতর থেকে।
সেই কাজের ধারাবাহিকতায় এলো করোনা মহামারির ভয়াল থাবার আগ্রাসন, এলো সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা! সবাই দিশেহারা হয়ে পড়লেন! অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর হওয়ায়, অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে পাঠদান করে ছাত্র-ছাত্রীদের দৈনিক পড়াশোনা নিশ্চিত করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে গেল।
দেশের করোনা পরিস্থিতির সার্বিক বিবেচনায়, বিদ্যালয় পুনরায় খোলার ঘোষণা বারবার পিছিয়ে পড়ায় তারা বুঝে উঠতে পারছিলেন না আবার কবে বাচ্চাদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে পারবেন! এমতাবস্থায় তারা চিন্তা করলেন, চুপ করে বসে থাকা যাবেনা! ৫ জন ফেলো একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেদের উদ্যোগে এই ক্রান্তিলগ্নে শিশুদের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার জন্য কিছু একটা করতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই ৫জন একত্রিত হয়ে তৈরি করলেন, টিম "টুইংকেলস অফ লিটল স্টারস্"। সিদ্ধান্ত নিলেন শিশুদের মহামারীর মাঝে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার নিমিত্তে ওয়ার্কবুক "হাওয়াই মিঠাই" তৈরি করার।
বইটি বাচ্চাদের কাছে শীঘ্রই পৌছে দেওয়ার জন্য তারা দিন-রাত নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছেন। কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য তাদের সহযোগিতা করেছে Bangladesh Emergency Action Against Covid-19( BEACON)। এখন পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট- প্রায় চল্লিশ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই হাজার পাঁচশ শিশুর কাছে বইটি পৌছে গেছে।