শেষ পরিনাম
পর্ব -১
খুব সরল শান্ত স্বভাবের মেয়ে সাবিহা। ছোট বেলায় যখন সাবিহার বয়স চার তখন মা মারা যায় সাবিহার। তার ৪ মাস পর মারা যায় বাবা। তাই ছোট বেলা থেকে বাবা মার আদর কি জিনিস তা আর পাওয়া হয়নি। বড় হয়েছে মামা মামির কাছে। মামা মামির অবস্তা তেমন ভালো না তাই আর পড়ালেখা করা হয়নি তার। ওই টুকটাক লেখতে পড়তে পারে আর কি।আজ সাবিহার মামাতো ভাই রাজুর পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। রাজুর আর কোন ভাই বোন নেই বলে সাবিহাকে দিদি বলে ডাকে।
সাবিহা উঠান ঝাড়ু দিচ্ছে রাজু ঘর থেকে বলে উঠলো
- দিদি শুনে যা।তাড়াতাড়ি আয় দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার (রাজু)
- আসছি........।(সাবিহা)
সাবিহা ঘরে গেল
- তা কি হয়েছে ভাই এইভাবে ডাকছিস যে? কিছু কইবি?(সাবিহা)
- দিদি আজকে আমার পরীক্ষার রেজাল্ট দিবো তুমি একটু দোয়া কইরো।(রাজু)
- চিন্তা করিস না ভাই আমি জানি তুই ভালো করবি। (সাবিহা)
রান্না ঘর থেকে মামি এক কথায় চেঁচেয়ে বলল
- কিরে কোথায় গিয়ে মরলি?রান্নার কাজ কে শেষ করবে? কাজ ফাঁকি দেওয়ার ধান্দা করিস?(মামি)
- না মামি এমন কিছু না আমারে রাজু ডাকছিল তাই কথা কইতে আইছিলাম আমি এহনি আইতাছি আমি সব কাম কইরা দিমু চিন্তা কইরো না। (সাবিহা)
তাড়াতাড়ি করে রান্না ঘরে গেল সাবিহা।মামি দেখেই বলে উঠলো
- এই রান্না কে করবে?তোর মা আইসা কইরা দিব?
সাবিহা একদম নিশ্চুপ ভাবে কাজ করছে এখন আর এইসব বকাবকি তার গায়ে লাগে না এখানে আসার পর থেকে প্রায় বাড়ির সব কাজ করতে হয় সাবিহার।
সাবিহার মামা বাজার থেকে এসেছে বাজার গুলো রান্না ঘরে ঘরে গিয়ে সাবিহার মামি কে ডাকছে।
- এই একটু ঘরে আইসো তো!(মামা)
- আসতাছি(মামি)
- কি কইবেন ডাকছেন কে?(মামি)
- আজকে একটা পোলার কথা কইলো সিদ্দিক সাহেব কইলো পোলা ভালো ঢাকায় গিয়া নাকি পড়ালেখা করছে সাবিহার লিগা কইলো।(মামা)
- দেখেন আপনার যা ইচ্ছা করেন।
এই কথা গুলো পাশের ঘর থেকে সাবিহা শুনে ফেলে। তার ভিতরে কেমন জানি করে উঠে তার ভিতরে এক ভয় কাজ করতে থাকে সে ভাবে তার যার সাথে বিয়ে হবে সে কেমন না কেমন হবে কে জানে।একটু পর রাজু এসে জড়িয়ে ধরে বলে,
- জানিস দিদি আমি পরীক্ষায় ১ম হইছি।(রাজু)
সাবিহা নিশ্চুপ প্রতিবার সাবিহা অনেক খুশি থাকে কিন্তু এইবার কিছু বলছে না দেখে রাজু বলল,
**- দিদি কি হইছে? আম্মু কি তোরে অনেক বকছে?
- না তেমন কিছু না তুই যা হাত মুখ ধুয়ে আয়।**
রাজু আর তেমন কিছু বলছে না রাজু হাত মুখ ধুয়ে জামা কাপড় পড়ে খাওয়ার ঘরে বসছে।
সাবিহা কেমন জানি মন মরা হয়ে আছে দেখে রাজু বলেই উঠলো,
- কিরে দিদি কিছু হয়েছে নাকি? এমন মন খারাপ করে বসে আছিস কেন?
- না কিছু না। তুই খা আমি ভাত দিচ্ছি।
- আব্বুকে বলতে শুনলাম তোর জন্য নাকি ছেলে দেখছে?
- হুম।(এক গম্ভীর ভাব নিয়ে বলল সাবিহা)
- তা কি এই কারনে তোর মন খারাপ দিদি ভালো হইছে তোর বিয়ে খাইতে পারমু আমার একটা দোলাভাই হইবো।(রাজু)
- এই চুপ থাক তো ভাত খা তুই।(সাবিহা)
রাজু জোরে জোরে হাসছে।......
মামা খেতে এসেছে খাওয়ার ঘরে মামা চেয়ার টেনে বসে সাবিহা কে বলল
- সাবিহা মা! কাছে আয় তো.....(মামা)
- হুম মামা আসছি।(সাবিহা)
- শুন তোর জন্য একটা পোলার কথা কইছে সিদ্দিক সাহেব তোরে কইদিনের মধ্যেই দেখতে আইবো পোলার বাপ মা।
কথা গুলো শুনে কিছু বলছে না সাবিহা একটা সময় সাবিহার নিজের অজান্তে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর বলে উঠলো
- মামা তোমরা আমারে বড় করছো আমি কখনো কোন অভিযোগ করি নাই আমি তোমাগো ছাড়া থাকতে পারমু না আমারে বিয়া দিয়া দিলে তোমাগো ছাড়া থাকতে হইবো।
মামা এই কথা গুলো শুনার পর একদম নিঃশব্দ অবস্তায় খাওয়া শেষ করে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো
বিকালে বেলায় সিদ্দিক সাহেব সাবিহার মামার সাথে দেখা করতে আসে।
সাবিহার মামার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেই চলে যায়।
একটুপর সাবিহার মামি এসে বলে
- দেখ কালকে তোরে দেখতে আসবো তুই তোর নতুন জামা টা পড়িস।।
- হুম আচ্ছা(সাবিহা)
আজকে রাতের খাবারের পর সাবিহা নিজের ঘরে চলে যায় তাড়াতাড়ি আজ আর নাটক দেখতে মামির ঘরে যাইনি সে।
হাজার চিন্তা মাথায় ঘুরছে তার সে এক চিন্তার মহাসাগরে ভাসছে রাতে তেমন ভালো ঘুম হইনি তার।
সকালে উঠে হাত মুখ ধুয়ে রান্না চাপিয়ে দিয়েছে চুলায়। রান্না শেষ করে, ঘর গুছিয়ে খেতে দিল সবাইকে। সাবিহা এমনেও কথা কম বলে মন খারাপের কারনে একদম ই কথা বলছে না
প্রায় দুপুর ১২ টা বাজে।
সাবিহার মামি সাবিহাকে শাড়ি দিয়ে গেলো লাল রঙের শাড়ি সোনালি পায়ের দেওয়া শাড়ি টা দেখতে অসাধারণ। এমনেই সাবিহা সবসময় শাড়ি পড়তে পছন্দ করে কিন্তু এইবার তার কেন জানি ভালো লাগছে না তবুও নিজের উপর জোর খাটিয়ে এক সময় শাড়ি পড়ে চোখে হালকা কাজল দিলো। সাবিহাকে অন্যদিন থেকে কেন জানি আজকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে এর ই মধ্যে ছেলের বাড়ি থেকে মানুষ চলে এলো। সাবিহার তাদের সামনে যেতে ইচ্ছা না করলেও হাসিমুখে তাদের সামনে যেতে হলো।
গিয়ে সালাম দিলো সাবিহা।
- আসসালামু আলাইকুম।
সবাই সালামের উত্তর দিলেন।
- তা মেয়ে তো অনেক সুন্দর তা মা তোমার নাম কি? মা তোমার মাথার চুল দেখি(ছেলের মা)
- আমার নাম সাবিহা আক্তার।
সাবিহার মাথার কাপড় সরিয়ে চুল খুলে দিল মামি
- বাহ বাহ চুল তো অনেক বড়। মা তুমি তো ঘরের কাজ সব পারো নাহ?(ছেলের মা)
- জী।(সাবিহা)
- তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ আমাদের মেয়ে পছন্দ হইছে।আপনাদের যদি আমার ছেলে পছন্দ হয়ে থাকে তবে আমরা কথা আগাতে পারি (ছেলের বাবা)
- আলহামদুলিল্লাহ আমাদেরও ছেলে পছন্দ হইছে তবে ছেলের নাম টা যে জানা হলো না?
- আমার নাম আবিদ ইসলাম(আবিদ)
- বাবা তুমি জানি কোথায় চাকরি করো বাবা?(মামা)
- ঢাকাতে (আবিদ)
- যাক ভালো। তা আমার মনে হয় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুভ কাজ করে ফেলে উচিত।(মামা)
- আচ্ছা সামনে শুক্রবার দিলে কেমন হয়?(ছেলের বাবা)
- ভালোই হয় হাত এক সপ্তাহ সময় ও থাকলো।(মামা)
- দেখেন বেয়াইন আমরা তেমন কিছু চাই না আপনাদের মেয়ে আপনারা যা খুশি হয়ে দিবেন তাই হবে(ছেলের মা)
- আজকে উঠি তবে বেয়াইন। (ছেলের বাবা)
তারা চলে গেল সাবিহা নিজের ঘরে চলে গেলো।সাবিহার মুখ দেখে যে কেউ বলে দিবে যে সাবিহার ছেলে দেখে পছন্দ হয়নি বা বিয়ে করার ইচ্ছা নাই। সাবিহার ঘরে রাজু এসে হাজির
- এই যা তো নিজের ঘরে যা। (সাবিহা)
- কি বর পছন্দ হয় নাই?(রাজু)
- দেখ ভাই সবসময় ফাজলামি ভালো লাগে না যা তো নিজের ঘরে যা।
রাতের বেলায় সাবিহার মামার ফোনে কল দিলো আবিদ ফোন দিয়ে সালাম জানিয়ে সাবিহাকে চাইলো সাবিহা কথা বলবে না বললে মামি ওপাশ থেকে বলে উঠে
- কি কথা বলবি নাহ কেন?(মামি)
সাবিহা ফোন হাতে নিয়ে বাইরে চলে গেল
- জী বলেন কি বলবেন?(সাবিহা)
- না তেমন কিছু না আপনি কি বিরক্ত?(আবিদ)
- না আপনি বলেন আমি শুনতেছি।(সাবিহা)
- আজকে আপনাকে খুব সুন্দর লাগতেছিলো শাড়িতে। (আবিদ)
- ধন্যবাদ।(সাবিহা)
- আপনাকে আমি তুমি করে বলি?(আবিদ)
- জী আচ্ছা।(সাবিহা)
- আমিই কি কথা বলবো আপনি বলবেন নাহ? (আবিদ)
- আচ্ছা পড়ে কথা হবে একটু কাজ আছে ভালো থাকবেন বলে কলটা রেখে দিলো।
পরে অনেকবার ফোন টা বাজলেও সাবিহা আর ধরেনি।
চলবে........
লেখক : @labibasultana
এই গল্পটা প্রায় বছর তিন আগে লেখা একটু সুন্দর করে লেখার চেষ্টা করলাম। একটা সময় খুব গল্প লিখতাম। আপনাদের কেমন লাগবে জানি না ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।খুব তাড়াতাড়ি আমি ২য় পর্ব পোষ্ট করবো।
ভালো থাকবেন, অন্যকে ভালো রাখবেন।
অসাধারণ দক্ষতা। ভালো গল্প লেখতে পারেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
❤️ধন্যবাদ 😇
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
I just finished reading it. I liked it 😊 and I will be waiting for the next part.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
খুব তাড়াতাড়ি পোষ্ট করবো😇
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি তো দেখি ভালো গল্প লেখতে পারেন।সুন্দর হয়েছে অনেক
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
❤️ধন্যবাদ 😇😇
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit