বাংলার অগ্নিকন্যা বীণা দাসsteemCreated with Sketch.

in hive-138339 •  3 years ago  (edited)

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো বন্ধুরা!

কেমন আছেন সবাই। আমি @mamunxxx 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি অগ্নিকন্যা বীণা দাস সম্পর্কে লিখবো।


FB_IMG_1629791849924.jpg

FB_IMG_1629791852738.jpg

FB_IMG_1629791855354.jpg

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বাংলার" অগ্নিকন্যা বীণা দাস"
ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিকন্যা বীণা দাস ১৯১১ সালের ২৪ আগস্ট নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের আদি বাড়ি ছিল চট্টগ্রাম। তার পিতা ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের পন্ডিত ও দেশপ্রেমিক বেণী মাধব দাস ও মাতা সরলা দাস। তার দিদি ছিলেন বিপ্লবী কল্যাণী দাস।
পিতার আদর্শে প্রভাবিত হয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। কলকাতায় তিনি বেথুন কলেজে পড়াশুনা করেছেন। পরবর্তিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।
রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা বীনা দাস ছাত্রাবস্থায় রাজনৈতিক মনস্ক হয়ে ওঠেন। সে সময় যুগান্তর দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশন বয়কট করার জন্য বেথুন কলেজের ছাত্রীদের নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন। ১৯৩০ সালে ডালহৌসির অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য ছোট ছোট দলের নেতৃত্ব দেন এবং গ্রেপ্তার হন। বীণা দাস ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবের নেত্রী ছিলেন।

১৯৩২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী, সিনেট হলে চলছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসব। মঞ্চে উপস্থিত আচার্য বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসন ও আরও অনেক বিশিষ্ট অতিথি। একে একে তাদের হাত থেকে মানপত্র নিচ্ছে কৃতি ছাত্র ছাত্রীরা, শেষদিকে মঞ্চে উঠে এলো কনভোকেশন গাউন পরিহিতা এক বঙ্গ তনয়া।

গভর্নর করমর্দন করার জন্য যেই হাত বাড়িয়েছেন অমনি গাউনের ভেতর থেকে বের করলো রিভলভার। পরপর পাঁচটা গুলি .... কিন্ত অনভিজ্ঞতার জন্য একটাও জ্যাকসনের দেহ স্পর্শ করলো না। তৎকালীন ভিসি স্যার হাসান সোহরায়ার্দী বিনা দাসকে তাৎক্ষণিক জাপটে ধরেন এবং দেহরক্ষীরা নিমেষে ধরে ফেলে তাকে, তারপর সেই চিরাচরিত প্রশ্ন, কোথায় পেলে রিভলভার! কে দিলো ?

শত অত্যাচারেও মুখ খোলাতে না পেরে পুলিশ লকআপে হাজির করা হলো তার বাবা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বেণীমাধব দাসকে; যিনি নেতাজীর শিক্ষক ছিলেন। অর্থাৎ তিনি যেনো একবার মেয়েকে বুঝিয়ে বলেন মুখ খুলতে।
সেই মেয়ে তখন পুলিশকে বললো, কেন শুধু শুধু বাবাকে আনলেন, উনি কি আমাকে বিশ্বাসঘাতক হতে বলবেন! বীণার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হল ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ (খুনের চেষ্টা) ধারা এবং অস্ত্র আইনে।

       কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বীণা ঘোষণা করলেন সদর্পে, "হ্যাঁ, আমি রাজ্যপালকে মারতে চেয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য, পারিনি। স্ট্যানলি জ্যাকসন আমার পিতৃপ্রতিম, তাঁর প্রতি আমার কোন ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নেই। কিন্তু তিনি এমন এক সরকারের প্রতিভূ, এমন এক শাসনব্যবস্থার মূর্ত প্রতীক, এমন এক supreme symbol, যা আমার দেশকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রেখেছে দমনপীড়নের মাধ্যমে। আমি আঘাত হানতে চেয়েছিলাম সেই প্রতীকের উপর।"

বিচার কালে তাঁর বিবৃতি শুনে হৈচৈ পড়ে গেল শুধু এদেশে নয় বিলেতেও। এতো শুধুমাত্র বিবৃতি নয়, যেনো Classic literature !

অভিযোগ স্বীকার করে নেওয়ায় ফাঁসির বদলে হলো নয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। জেল থেকে মুক্তির পর তিনি কংগ্রেস দলে যোগ দেন এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় আবারও তিন বছরের জন্য জেলে যান।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী সহযোদ্ধা যতীশ ভৌমিকের সাথে তার বিয়ে হয়। স্বাধীনতার পর তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হন। মরিচঝাঁপি গনহত্যার সময় তিনি প্রতিবাদী হন। উদ্বাস্তু মহিলাদের পুনর্বাসনের কাজে সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ; ১৯৬০ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন। যদিও তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য পেনশন প্রত্যাখান করেছিলেন।

১৯৮২ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানাদি না থাকায় নিঃসঙ্গতা তাকে গ্রাস করে এবং শান্তির আশায় সবকিছু ছেড়ে পাহাড়ের কোলে ঋষিকেশে থাকতে শুরু করেন। ১৯৮৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর প্রচন্ড ঠান্ডায় ঋষিকেশের বাসিন্দারা পথের ধারে এক মহিলার মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে জানা যায় মৃত্যুর কারণ অপুষ্টি ও অনাহার। কোন দাবীদার না থাকায় পুলিশ সেই দেহ ছবি তুলে অঞ্জাতনামা লাশ হিসাবে পুড়িয়ে দেয়। মাসখানেক পর জানা যায় তিনি আর কেউ নন, বাংলার অগ্নিকন্যা বীণা দাস।

দুর্ভাগ্য যে, এক বাঙালী স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিধায়ক ও পদ্মশ্রীর কি করুণ পরিণতি ! ‌তাঁর প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা জানাই।


সকলকে ধন্যবাদ!

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!