আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্না প্রথম ভারতীয় অভিনেতা/অভিনেত্রী।steemCreated with Sketch.

in hive-138339 •  3 years ago 

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো বন্ধুরা!

কেমন আছেন সবাই। আমি @mamunxxx 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি চুনিবালা দেবী সম্পর্কে লিখবো।


FB_IMG_1630670483055.jpg

FB_IMG_1630670485581.jpg

সত্যজিৎ রায়ের আবিষ্কার "চুনিবালা দেবী" .....
সত্যজিৎ রায়ের নিজের কথা, উত্তমকুমার না থাকলে যেমন "নায়ক" সিনেমা করতেন না তেমনি চুনিবালা দেবী না থাকলে "পথের পাঁচালী" করা সম্ভব হ'ত না।
★★
সত্যজিৎ রায়ের "পথের পাঁচালী"-র ইন্দির ঠাকরুন এর ভূমিকায় অভিনেত্রী "চুনীবালা দেবী" - হলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্না প্রথম ভারতীয় অভিনেতা/অভিনেত্রী। এ খবর সম্ভবত আমরা খুব কম জনই রাখি!
সেই চুনীবালা দেবীকে নিয়ে অনেকের কাছে কিছু অজানা খবর নিয়ে আজ আপনাদের দরবারে পেশ করতে এসেছি।
★★
সত্যজিৎ রায় তখন "পথের পাঁচালী" সিনেমার হরিহর, সর্বজায়া, অপু, দুর্গা সব চরিত্রের অভিনেতা/অভিনেত্রী পেয়ে গেছেন কিন্ত ইন্দির ঠাকরুন চরিত্রের অভিনেত্রীকে খুঁজে পাচ্ছেন না। মাথায় হাত। ঐ রকম একজন বৃদ্ধা অভিনেত্রী না পেলে যে এ সিনেমা করাই যাবে না!
অবশেষে সন্ধান মিলল ঠাকরুনের। পাইকপাড়ায় থাকেন এক বৃদ্ধা। বয়েস আশি। নাম তার চুনীবালা দেবী।
এক সকালে সত্যজিৎ হাজির হলেন চুনীবালা দেবীর বস্তির বাড়ীতে। সত্যজিৎ একটা মোড়ায় মুখোমুখি বসলেন ওনার সামনে।
বহুদিন আগে একটি সিনেমার ছোট্ট একটি দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন চুনীবালা।
সত্যজিৎ রায় এক জায়গায় বলেছেন ..... তখন চুনীবালা দেবীর বয়েস আশি পেরিয়ে গেছে। তোবড়ানো গাল, দেহের চামড়া ঝুলে পড়েছে। ঠিক যেমনটি সত্যজিৎ ভেবেছিলেন এই চরিত্রটিকে ঠিক তেমনি। কথায় কথায় সত্যজিৎ জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি পথের পাঁচালী পড়েছেন?
বৃদ্ধা চুনীবালা অল্প লেখাপড়া শিখেছিলেন। কিছু বইও পড়েছিলেন।
চুনীবালা বললেন, হ্যাঁ পড়েছি বাবা।

  • সিনেমায় ইন্দির ঠাকরুন করতে পারবেন?
    চুনীবালা ফোকলা দাঁত বার করে হেসে বললেন, "তা তোমরা একটু শিখিয়ে পড়িয়ে নিলে পারবো বই কি বাবা!"
    সত্যজিৎ বললেন, "বলুন তো একটা ছড়া? শুনি একটু।"
    চুনীবালা "ঘুম পাড়ানির মাসিপিসি ....." পুরো ছড়াটা গড়গড় করে সুন্দর করে বলে দিলেন।
    সত্যজিৎ রায় পরে এক জায়গায় বলেছেন, ঐ ছড়াটা আমি চার লাইনের বেশি বলতে পারতাম না। কিন্তু উনি সবটা বলে দিলেন। এই বয়েসে আশ্চর্য স্মৃতি দেখে সত্যজিৎ স্তম্ভিত হয়ে গেলেন!
    সত্যজিৎ বুঝে গেলেন ইন্দির ঠাকরুন পেয়ে গেছেন। কিন্তু কলকাতা থেকে বড়াল গ্রামে প্রতিদিন শুটিং - এ যাবার ধকল এই বয়েসে নিতে পারবেন কিনা জিজ্ঞাসা করাতে চুনীবালা বললেন, "খুব পারবো। তোমরা এত কষ্ট করে বই করছো, ওটুকু কষ্ট আমি ঠিক করতে পারবো।"
    ওনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল প্রতিদিন কত টাকা পারিশ্রমিক নেবেন। উনি বলেছিলেন "দিনে দশ টাকা দিও।"
    সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, "আপনাকে প্রতিদিন কুড়ি টাকা দেওয়া হবে।"
    শুটিং এগিয়ে চলল। প্রতিদিন সকালবেলায় ট্যাক্সি করে চুনীবালাকে শুটিং স্পটে নিয়ে যাওয়া হত। সন্ধ্যেবেলায় আবার ট্যাক্সি করে ফিরিয়ে দেওয়া হত বাড়িতে।
    সত্যজিৎ একদিন চুনীবালাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনি ধর্মমূলক গান গাইতে পারবেন?"
    চুনীবালা বললেন, "পারবো।"
    পথের পাঁচালীতে চুনীবালা চাঁদনি রাতে দাওয়ায় বসে হাততালি দিয়ে গাইছেন সেই গান "হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো, পার করো আমারে ....."
    এই গানটা চুনীবালা সত্যজিৎ রায়কে শুনিয়েছিলেন। সেই খালি গলায় গান শুনে সত্যজিৎ মুগ্ধ! সেই গানই রেকর্ড করা হল। ছবিতে খালি গলায় সেই গানই গাইলেন চুনীবালা। এক অসম্ভব সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে সেই গান পথের পাঁচালী ছবিকে এক অন্য জগতে পৌঁছে দিলেন চুনীবালা।
    পথের পাঁচালী সিনেমা ১৯৫২ সালে এক শরৎকালে কাশ ফুল আর রেলগাড়ির দৃশ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল; শেষ হতে সময় নিয়েছিল তিন বছর।
    ১৯৫৫ সালে ২৬ অগাস্ট পথের পাঁচালী মুক্তি পেয়েছিল। সেই বছরেই নিউইয়র্কে এ ছবি প্রথম মুক্তি পেয়েছিল।
    সত্যজিৎ বুঝেছিলেন এ ছবির মুক্তি চুনীবালা দেবী দেখে যেতে পারবেন না। তাই একদিন প্রজেকটার মেশিন নিয়ে সত্যজিৎ রায় এ সিনেমা চুনীবালাকে তাঁর বাড়িতে দেখিয়ে এসেছিলেন।
    চুনীবালা পথের পাঁচালী ছবি বাড়িতে বসেই দেখে গেছিলেন, মুক্তির আগে মহান হৃদয় সত্যজিৎ রায়ের উদ্যোগে।
    ছবির মুক্তি চুনীবালা দেখে যেতে পারেননি তার আগেই "হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো পার করো আমারে ....." গাইতে গাইতে চলে গেলেন!
    এবার আসল চমক এলো!
    ম্যানিলা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আন্তর্জাতিক সম্মানের পুরস্কারে সম্মানিতা অভিনেত্রীর নাম ঘোষিত হল।
    চুনীবালা দেবী হলেন, ভারতীয় অভিনেতা ও অভিনেত্রীর মধ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিতা অভিনেত্রী! এক বিরল সম্মানের অধিকারিনী।
    অনেকেই সম্ভবত এ খবর জানেন না।
    কিন্তু এই পুরস্কার তিনি গ্রহণ করতে ম্যানিলায় যেতে পারেননি কারণ তার আগেই তিনি বিদায় নিয়েছিলেন।
    চুনীবালা বেঁচে থাকলে আজ তাঁর বয়স ১৫০ বছর হতো।
    দুর্ভাগ্য চুনীবালার! দুভার্গ্য বাঙালির !

ইন্দির ঠাকরুন "চুনীবালা" - র প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা।


সকলকে ধন্যবাদ!

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপনার পোস্টটি ৩৫% চৌর্যবৃত্তির অন্তর্ভুক্ত। আপনাকে প্রথম বারের মত সতর্ক করে দেয়া হলো। দ্বিতীয় বার এই ধরনের কাজ করলে আপনাকে মিউট করে দেয়া হবে। ধন্যবাদ।

Screenshot_2021-09-04-15-18-32-738_com.android.chrome.jpg