আমার বন্ধু শফিউল | বাংলা ছোট গল্প | মেহেদী হাসান রাব্বী

in hive-138339 •  4 years ago 

‘আমার বন্ধু শফিউল’
‘মেহেদী হাসান রাব্বী’

‘মা, আমার অটোমেটিক ব্রাশটা কোথায়?’
‘ওটা তোর অটোমেটিক ওয়ারড্রবের অটোমেটিক ড্রয়ারে রাখা আছে।’
‘ধন্যবাদ।’
আমি রাফি। এবার ছাব্বিসে পা রাখলাম। যদি কেউ আমার ঘরে প্রথমবারের জন্য প্রবেশ করে, তবে আর যা কিছু হোক বা না হোক, সে বড়সড় একটা ধাক্কা খাবেই! কেন? কারণটা হলো আমার বন্ধু শফিউল। তার তৈরি বিভিন্ন গ্যাজেটস দিয়ে এই ঘর পরিপূর্ণ।
দেশের নামকরা বিজ্ঞানী না হলেও আমাদের পাড়ায় তার বেশ কদর। তার হাত দিয়ে আজ পর্যন্ত একশোটার বেশি গ্যাজেটস তৈরী হয়েছে। সবগুলো গ্যাজেটস সমাজের ভালো কাজগুলোতে ব্যবহার হয়।
এইত, সেদিন নর্দমা পরিস্কারের একটা গ্যাজেট আবিস্কার করল সে। যন্ত্রটির সামনে লম্বা একটি পাইপ। এই পাইপটি নর্দমার ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। আর পেছনে ফুটবলের মতো দেখতে অংশটি ময়লাগুলোকে টেনে তুলে। ফুটবলের মতো হলেও অংশটি ফুটবল থেকে বেশ বড়।
পেছনের অংশটিতে একটা ছিদ্র রয়েছে। এটাতে একটা এলপি গ্যাসের পাইপ লাগানো আছে। পাইপটা আমার থেকেই নিয়েছিল। বলেছিল, যখন এক্সপেরিমেন্টটা সফল হবে তখন আমাকে দিয়েই যন্ত্রটি উদ্বোধন করবে ও।
ময়লাগুলো সেই গোলাকৃতি অংশটির ভেতরে জমা হয়। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান দিয়ে তৈরী হয় বায়োগ্যাস। আর অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিচে স্বয়ংক্রিয় কপাটিকা দ্বারা বের হয়ে যায়। উৎপন্ন বায়োগ্যাস সেই বেশ কয়েকটা চুলা জ্বালাতে সক্ষম। এভাবে কয়েকটি ফাঁকা এলপি গ্যাসের বোতল সংগ্রহ করে সেখানে আমরা প্রচুর পরিমাণে বায়োগ্যাস সংগ্রহ করে পুরো এলাকায় একদম বিনামূল্যে বিতরণ করেছিলাম।
তাছাড়া আমার প্লেটে যেই পড়াটা রয়েছে সেটাও এই যন্ত্রটির গ্যাস দিয়েই বানানো। শফিউলের এই আবিস্কারের জন্য আজ বাংলাদেশ সরকার তাকে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত করবে। সেখানে দেশের নামি-দামি গবেষক উপস্থিত থাকবেন। থাকবেন দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। আমার বন্ধু শফিউল আমাকে সেখানে নিয়ে যাবে। ভাবতেই অবাক লাগছে। যাদের এতদিন টিভি বা পেপারে দেখেছি, তাদের আমি কতটা কাছ থেকে দেখবো!
‘কীরে তোর হলো?’ আজকে কী হবে তা ভাবতে থাকা আমিকে ধাক্কা দিয়ে বললো মা।
আমি তড়িঘড়ি করে উঠে গেলাম খাবার টেবিল থেকে। শফিউল আমার জন্য বাসস্টপে অপেক্ষা করছে। তাই ঝটপট প্রস্তুত হওয়ার জন্য আমার অটোমেটিক ওয়ারড্রবের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ডান পাশে আজ যা পড়বো তা রেখে বাটনে চাপ দিতেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমার পরনে থাকা পোষাকটি পরিবর্তন হয়ে গেলো।
তৈরি হওয়া শেষ হলে বাস স্টপ এর দিকে রওনা দিলাম। মিনিট দশেক পরে বাসস্টপে চলে আসলাম আমি। শফিউল আগে থেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। স্যুট প্যান্টে তাকে কোনো সাহেবের থেকে কম লাগছে না। আমিও বা কম কীসে। পাঞ্জাবি এবং পায়জামা পড়ে একদম জামাই সেজে চলে আসছি।
বাসস্টপে পৌঁছানো মাত্রই শফিউল আমার কানে কানে বললো, ‘তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।’
কথাটা শোনা মাত্রই আমার মুখে লেগে থাকা হাসিটা আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো। চোখ দুটো বড় বড় করে শফিউলের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, ‘কী সারপ্রাইজ?’
বন্ধু আমার একগাল হেসে দিল। হাসি থামিয়ে সে বললো, ‘সেমিনারে একটা আবিস্কার সকলের সামনে প্রদর্শন করব। তবে চিন্তা করিস না। এটাও সর্বপ্রথম তোকেই দেখাবো।’
আমার খুশি আর দেখে কে! নেহাতই সাজগোজ করে এসেছি, তা নাহলে এক্ষুনি শফিউলকে জড়িয়ে ধরে একটা লাফ দিতাম।
কয়েক মিনিট পরেই বাসস্টপে বাস এসে থামল। আমরাও বাসে উঠে নির্দিষ্ট স্থানে এসে পৌঁছালাম। দুরেই একটি বড় হলরুম দেখা যাচ্ছে। আশেপাশের সাজগোজে বেশ উৎসবমুখর লাগছে পরিবেশটা। জায়গায় জায়গায় শফিউলের ছবি লাগিয়ে রেখেছে তারা।
সেখানে পৌঁছানোর মাত্রই শফিউল বিভিন্ন নামিদামি লোকের সাথে কথা বলতে লাগলো। তার যাত্রাসঙ্গী হওয়ায় আমিও গুণী ব্যক্তিদের সান্নিধ্য পাচ্ছিলাম।
কোরআন থেকে তেলাওয়াত, গীতা পাঠ এবং সবশেষে জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হলো সেমিনারটি। জাতীয় সংগীত শেষে শফিউল আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো, ‘চল এবার।’
শফিউলের পেছন পেছন হাটতে লাগলাম ড্রেসিং রুমের দিকে। হল রুম থেকে হাতের বাম দিকে ড্রেসিংরুম অবস্থিত।
রুমটির পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম আমরা দুজন। শফিউল পকেট থেকে একটি ঘড়ি বের করে ফিসফিসিয়ে বললো,
‘দেখতে তো এটাকে সাধারণ একটা ঘড়ি মনে হয়, তবে বাস্তবে এর ক্ষমতা অনেক। এর নিচে একটি সুইচ আছে। এই সুচটি চাপ দিলে ঘড়িটি যার কাছে থাকবে, সে বাদে পুরো পৃথিবীর সময় থেমে যাবে!’
শফিউলের কথা শুনে আমার শিরদাঁড়া বেয়ে শিহরণ বয়ে গেলো। চোখদুটো ছানাবড়া হওয়ার উপক্রম।
আমি ঘড়িটিকে হাতে নেয়ার জন্য মুখিয়ে আছি। তবে শফিউল তার বক্তৃতা চালিয়েই যাচ্ছে। আমার সামনে এত বক্তৃতা দেয়ার কী আছে বুঝলাম না।
ঘড়িটা নেওয়ার জন্য ওর হাতে ধাক্কা দিতেই সেটা নিচে পড়ে গেলো। শফিউল কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি সরি বলে নিচু হয়ে ঘড়িটা খুঁজতে লাগলাম। আমাদের পাশে হার্ডবোর্ডের তৈরি একটা দেয়াল আছে। নিচ দিয়ে কিছুটা জায়গা ফাঁকা। আমি নিচু হয়ে সেই ফাঁকা অংশটি দিয়ে তাকালাম।
হ্যাঁ, ঘড়িটি দেখা যাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে সেটা নিতে যাবো, ঠিক সেই মুহুর্তেই খাঁচা থেকে একটা বাঘকে নামানোর জন্য খাঁচার দরজা খোলা হলো। এমন সময় বাঘের থাবাটাও সরাসরি ঘড়িটির উল্টো দিকে সেই সুইচের উপর গিয়ে পড়ল।
সেমিনার শুরুতে সারকাস হওয়ার কথা আছে, বাঘটি সেই সারকাস টিমেরই সদস্য। ঘড়িটি বাঘের খাঁচার ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল।

(সমাপ্ত)

গল্পটি কেমন হয়েছে জানাবেন অবশ্যই। হ্যাপি রিডিং।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

This post has received a 14.99 % upvote from @boomerang.