গল্পঃ #বিকৃত_বধ।
পর্বঃ ০৩
লেখকঃ মেহেদী হাসান রাব্বি
রাফি দৌড়াতে দৌড়াতে রামপুরা থানার সামনে চলে এলো। থানার সামনে সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে হাটুতে হাত দিয়ে হাপাতে লাগলো সে। মাথা উঁচু করে থানার ভিতরে যাবে ঠিক এরই মধ্যে তার ডান পাশে বোরকা পরিহিত এক মেয়ে রাফিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
"ভিতরে যাবেন না।"
রাফি একটু অবাক হয়ে সেই মেয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
"আমাকে বলছেন?"
"হুম।"
"সরি, আমাকে জরুরী কাজে ভিতরে যেতে হবে।"
"যাবেন না।"
"আজব। কে আপনি? আর আমাকে ভিতরে যেতে নিষেধই বা করছেন কেনো?"
"আপনার ভালোর জন্যেই বলছি। ভিতরে গেলে সমস্যা হবে রাফি।"
"আপনি আমাকে চিনেন!" চোখ দুটো বড় বড় করে বলল রাফি।
"হুম। আপনি এখানে বেশিক্ষণ থাকবেন না। আমার পিছন পিছন আসতে থাকুন।"
রাফি মেয়েটির কথা শুনে রেগে গেলো।
"ভিতরে আমার মামাকে জোর করে ধরে নিয়ে আঁটকে রেখেছে, আর আমি আপনার সাথে যাবো!"
"জোরে কথা বলবেন না রাফি। এখানে বেশিক্ষণ থাকলে কিংবা ভিতরে গেলে আপনারই বিপদ। তাই চলে আসুন।"
রাফি কিছুক্ষণ ভেবে নিলো। আসলে মেয়েটি ঠিকই বলেছে। মামুকে ধরেছে। তাকে যে ধরবে না এমন কোন কথা নেই। তাই অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাফি বোরকা পরা মেয়ের পিছু নিলো।
"তা হারকিউলিসকে গ্রেফতার করানোর কাজ কতদূর?" হাটতে হাটতে বলল মেয়েটি।
"আপনার নাম?" সরাসরি প্রশ্ন করলো রাফি।
"পরে বলছি। আগে বলুন হারকিউলিসকে গ্রেফতারের কার্যক্রম কেমন এগোচ্ছে।"
"কীভানে এগোবে। মামুকে তো...।"
"আমি আফসানা আক্তার।" রাফিকে থামিয়ে দিয়ে বলল মেয়েটি।
"কী! আপনিই সেই প্রথম কেইসের আফ...।"
"চুপ। একজন ধর্ষিতার নাম মুখে নিতে নেই। সমাজ আপনাকে পঁচা বলবে।" রাফিকে আবারও থামিয়ে দিয়ে বলল আফসানা।
"প্লিজ এভাবে বলবেন না। আপনাকে আমাদের দরকার। কত কিছু জনার আছে আমাদের!"
"কারোরই কিছু জানার নেই রাফি। পুলিশ তো ধর্ষনের কেইস জানেই না। কাকে জানাবেম আপনি? আমার বাবাকে ওরা...।"
মেয়েটি ডুকরে কেঁদে উঠলো। তবে বোরকার আড়ালে তার কান্না রাফি দেখতে পেলো না।
"আমি আসলে দুঃখিত। তারা যা করেছে তাতে অবশ্যই তারা অপরাধী। কিন্তু হারকিউলিসও নির্দোষ নয়।"
"আমি ওনার ব্যাপারে কিছু বলবো না। কাউকে হত্যা করলেই মহান কিছু হওয়া যায় না। তবে আমার এই পালিয়ে বেঁচে থাকা সার্থক হয়েছে।"
কথা বলতে বলতে আফসানা আর রাফি একটি চায়ের দোকানে এসে দাঁড়ায়।
"সার্থক কেনো?"
"এইযে ওই কুত্তাদের মৃত্যু দেখতে পেরেছি। এতেই আমি খুশি। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই হারকিউলিসের অভিশাপ যেনো প্রতিটা ধর্ষনকারীর জন্য বরাদ্দ হয়।"
"যদি আমিও এমন চাওয়া চাইতে পারতাম।" আনমনা হয়ে বলল রাফি।
"চা খাবেন? আমার ছয় বছরের বোনটার চা খুব প্রিয় ছিলো। এই মামা আমাদের দুই চাপ চা দাও তো।"
"আপনার বোনকেও তো...।"
রাফির কথা শুনে চুপ করে রইলো মেয়েটি।
"আসলে আমি দুঃখিত।" মন খারাপ করে বলল রাফি।
"না, না। দুঃখিত হবেন না। ওকে তারা মেরে ফেলেছে না-কি জীবিত রেখেছে খোদা মালুম। তুলে নিয়ে গিয়েছিলো বাসা থেকে। আমি অফিসে ছিলাম। নাহলে আমাকেও হয়তোবা!" মেয়েটা আর বলতে পারলো না।
"তা এখন কীভাবে চলছেন?"
"কেড়ে নিয়ে।"
"মানে?"
"মানে, একটা মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানিতে ফিল্ড অফিসার হিসেবে আছি।"
"ও আচ্ছা। তাহলে এর সাথে কেড়ে নেওয়ার কী সম্পর্ক?"
"মাইক্রো ফাইন্যান্সগুলো তো গরিবদের টাকা কেড়ে নেয়। বড় রকমের একটা ইন্টারেস্ট নিয়ে নেয় তারা। এজন্যই বললাম আরকি।"
"ওহ! এবার বুঝলাম। তা আপনার থানায় আসা ও আমায় এখানে আনার উদ্দেশ্যটা কিন্তু এখনো বুঝিনি।"
"আমি শুনেছি আপনারা বস্তিতে গিয়েছিলেন আমার সাথে কথা বলতে। কিন্তু আমায় পাননি। তাই আমি নিজেই চলে এসেছি এখানে। আমার থেকে যেকোনো...।"
"ওয়েট, ওয়েট, ওয়েট। আপনি কীভাবে জানতেন আমি রামপুরা থানায় আসবো?"
দোকানদার তাদেরকে চায় এগিয়ে দিলো।
"চা টা খেয়ে নিন রাফি। ঠান্ডা হয়ে যাবে।"
আফসানা বোরকার মুখোশটা খুলে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। মেয়েটা যেকোনো রোমান্টিক গল্পের নাইকাদের মত অসম্ভব রকমের সুন্দর না হলেও তার ভিতর একটা ন্যাচারাল সৌন্দর্য রয়েছে। ঠোঁটের কোণে একটা ছোট তীল দেখা যাচ্ছে। গোলগাল চেহারাটা মলিন, ঘেমে একাকার। ঘামযুক্ত মেয়েটাকে দেখে একদম সাদাসিধা মনে হচ্ছে। চেহারায় অদ্ভুত এক মায়া আছে। চোখে কাজল দিয়ে এসেছে।
"আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু পেলাম না মিস আফসানা।"
.
.
রবির সামনে এসপি তরিকুল ইসলাম হাতে মোটা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে রবির গলা শুকিয়ে আসছে। সে হামাগুড়ি দিতে দিতে পেছনে যেতে লাগলো। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কাপা কাপা কন্ঠে সে বলল,
"স্যার, আমাকে এভাবে এখানে নিয়ে আসার মানে কী?"
এসপি তরিকুল ইসলাম থানায় অবস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
"হারুন, এই মামুর একটা ভাগ্নে আছে। ফোর্স নিয়ে মামুর সেই ভাগ্নেকে এখানে হাজির করো, দ্রুত! আমি কাউকে এখন থানার ভিতর চাই না, সবাই কাজে নেমে যাও!"
থানায় উপস্থিত সব পুলিশরা দৌড়ে বাহিরে চলে গেলো। পুরো থানায় এখন এসপি তরিকুল ইসলাম ও রবি ছাড়া আর কেউ নেই। এসপি তরিকুল লাঠিটা মুষ্টিবদ্ধ করে মাটিতে আঘাত করতে লাগলো। প্রতিটা আঘাতের সাথে সাথে যেনো রবির বুকে ধুকপুক শুরু হয়ে গেলো। তবে তাকে অবাক করে দিয়ে এসপি তরিকুল ইসলাম লাঠিটা সোজা রেখে সেলের রডের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে মাটিতে ধপাস করে বসে পরল। লাঠি ছেড়ে দিয়ে দুই হাত দিয়ে নিজেই নিজের চুল ছিড়তে শুরু করলেন তিনি।
"স্যার?" ভয়ে ভয়ে তাকে ডাক দিলো রবি।
"আমার সন্তানকেও মেরে ফেলল ও! আমার ছেলে কী করেছলো!" চিৎকার দিয়ে কথাটি বলল এসপি তরিকুল।
"স্যার, সে...।"
"কাল সকালে আমার থেকে কিছু টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। ইউনিভার্সিটির কিছু প্রজেক্ট তৈরী করার জন্য সানির বাসায় রাতে থাকার কথা বলেছিলো। সেখানে কী দিয়ে কী হয়ে গেলো!"
" স্যার সে ইউনিভার্সিটি যায়নি।"
"তাহলে?" ধীরে ধীরে মাথা উঁচু করে রবির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন এসপি তরিকুল ইসলাম।
"নাভিদ কাল দুপুরে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছে স্যার।"
রবির কথা শুনে এস পি তরিকুল ইসলাম যেন আকাশ থেকে পড়লেন। কোন কিছু না ভেবে হাতে থাকা লাঠিটা দিয়ে রবিকে সমানে পিটাতে লাগলেন।
"আমার ছেলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, দাড়ি আছে! তুই আমার ছেলের নামে এসব মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী বলার সাহস কী করে পাস!"
রবির শরীরে লাঠির আঘাত করা সত্বেও সে কোন অনুভূতি প্রকাশ করছে না। ব্যাথা সত্ত্বেও সে এসপি তরিকুল ইসলামকে বললেন,
"না স্যার আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে! আমার কাছে প্রমান আছে।"
রবি ঝটপট তার পকেট থেকে বেশ কিছু প্রিন্ট আউট কাগজ বের করে এসপি তরিকুল ইসলামকে দেখালো। এগুলো নাভিদ ও তার বন্ধুদের চ্যাটিংয়ের স্ক্রিনশটের প্রিন্ট করা কাগজ। অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাগের মাথায় তিনি কাগজগুলো নিতেই অবাক হয়ে গেল। কাগজগুলো দেখে হাতে থাকা লাঠিটি ঠাস করে মাটিতে পড়ে গেল। রাগী দৃষ্টি মুহূর্তের মধ্যেই নত হয়ে এল। এসপি তরিকুল রবির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
"এসব সত্যি?"
"জি স্যার। সেদিন নাভিদসহ বাকিরা ইউনিভার্সিটি তে যায়নি। তারা লাঞ্চে আওয়ারের সময় একটি মেয়েকে সানির বাবা অর্থাৎ আইজিপি স্যারের বাগান বাড়িয়ে তুলে নিয়ে যায়। তারপরের ঘটনা আশা করি আপনি ধারনা করতে পারছেন স্যার। এসব তাদের আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ছিলো।"
"এ কীভাবে সম্ভব! আমার ছেলে...!"
"আপনি না বিশ্বাস করলে আমাদের কাছে আরও প্রমাণ আছে স্যার। নাভির এর ফেসবুক আইডি হ্যাক করা হয়েছে এবং সেখানে তার সকল মেসেজ আছে। আপনি চাইলেই আমি সেগুলো আপনাকে দেখাতে পারব।"
রবির কথা শেষ হতেই এসপি তরিকুল ইসলাম একদম শান্ত হয়ে বসে পড়ল। উঁহু মাথা মুহূর্তের মধ্যেই নিচু হয়ে গেল। তার চোখে-মুখে নিজের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ পাচ্ছিল।
"স্যার...।"
রবিকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলেন তরিকুল ইসলাম।
"আমার নিজের ভেতরই কেমন যেনো একটা অস্থির অস্থির এসেছিল। যার কারণে আমি সেলের ভেতরে ঢোকার পরপরই পুরো থানা ফাঁকা করে দেই। এই কেসের প্রথম দিনই আমি সন্দেহ করি হারকিউলিসের সাথে কোন না কোন ভাবে ধর্ষণ জড়িত আছে। আর আমার ধারণাটাই সঠিক হয়। শুধু তাই নয় আমার পোড়া কপাল যে আমার ছেলের মৃত্যুটাও এইভাবে দেখতে হল। আমার কাছে এখন দুটি পথ খোলা আছে মিঃ রবি। এক, আপনারা হারকিউলিসকে ধরে তার মুখ থেকে স্বীকার করান এসব কিছু সে নিজে করেছে। এবং এর মধ্যে ধর্ষণ এর বিষয় ছিল না। দুই, আমার মান, ইজ্জত, সম্মান সব কিছু বিসর্জন দিয়ে কেইসটাকে ধর্ষন হিসেবে নিয়ে হারকিউলিসকে হত্যাকারী প্রমাণ করেন। আপনি বলেন মিস্টার রবি, আপনি কোন পথে যাবেন?"
"আমি তৃতীয় পথে যাবো স্যার।"
"মানে?"
"সব সময় যে রাস্তা দুটি হবে এমন কোন কথা নয় এসপি সাহেব। মাঝে মাঝে তৃতীয় কোন রাস্তাও আমাদের বাঁচিয়ে দেয়।"
"যেমন?"
"হারকিউলিসকে আপনি নিজে ধরুন। নাভিদ ও তার বন্ধুদের ব্যাপার নিজে মিডিয়ার সামনে অকপটে স্বীকার করবেন। এবং সবাইকে বলে দিন যে আপনি একজন বাবা, আপনার নিজের কাছেও ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যু।"
তরিকুল ইসলাম ভাবনায় পড়ে গেলেন। বেশ কিছুক্ষণ ভাবার পরে রবির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন তিনি।
"তবে তাই হোক মিস্টার রবি। আমি তৃতীয় রাস্তাটিতে যাব। মিডিয়া কিছু বের করার আগে আমি নিজেই অকপটে সবকিছু স্বীকার করে নেব। কিন্তু আমার নিজের কাছেই খারাপ লাগছে। হারকিউলিসদের আমাদের সমাজের দরকার। কিন্তু আমরা যে আইনের চাকর। আইন যা বলবে আমাদেরকেও তাই করতে হবে। চলুন মিস্টার রবি, দুজনে একসাথে মিলে আইনের চাকর হয়ে কার্য সাধন করি!"
.
.
"আপনার মামু এসপি তরিকুল ইসলামের থেকে যেভাবে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে হাতিয়ে নিয়েছিল। আমার পূর্ণ ধারণা ছিল কোনো না কোনো সময়ে মামার উপর পুলিশ নির্ঘাত সন্দেহ করবে। আর সেই সন্দেহের বশেই আমি আজ এখানে সকাল থেকে বসে রয়েছি।"
চা শেষ করে বোরকার মুখোশটা পড়ে নিল আফসানা।
"আপনার কাছে আমার একটি রিকোয়েস্ট রাফি। আর এজন্যই আমি এখানে এসেছি।"
"হ্যাঁ বলুন?"
"হারকিউলিসকে ধরুন বা ছেড়ে দেন, এ বিষয়ে আমার মতামত নেই। তবে আমার যেকোনো সাহায্য লাগলে আমাকে আপনি পাশে পাবেন। কেননা সবাই ভাবে আমরা মেয়েরা দুর্বল। কিন্তু এই চিন্তাভাবনা যাদের আছে তারাই যে সত্যিকার অর্থে দুর্বল, একথা তারা বোঝে না। আমি সেইসব দুর্বলদের বলে দিতে চাই মেয়েরা তাদের চেয়ে কম না। আল্লাহ তা'আলা কাউকে কোন কমতি দিয়ে পাঠাননি। ভালো থাকবেন রাফি। যেকোনো প্রয়োজনে কিংবা সাক্ষী দেওয়ার জন্য আমাকে সব সময় পাবেন।"
আফসানা রাফির হাতে একটি মোবাইল নাম্বার ধরিয়ে দিয়ে হাঁটা শুরু করলো। রাফির দৃষ্টি যেনো তার থেকে সরছেই না। এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে হাতের নাম্বারটি নিয়ে উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করল রাফি।
.
.
রাফি হাঁটতে হাঁটতে রামপুরা থানার সামনে পৌঁছাতেই তার মামু এবং এসপি তরিকুল ইসলামকে একসাথে চা খেতে দেখলো। রাফি তার মামুকে সেখানে কোনো কিছু না বললেও যখন এসপি তরিকুলকে বিদায় দিয়ে রবি তার সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল, তখন সে আফসানার ব্যাপারে নানান কথা বলল। রবিও এসপি সাহেবের তাদের সঙ্গে থাকার কথাটি রাফিকে বলল।
"এবার তাহলে ভালই হবে, কী বলো মামু? যেহেতু পুলিশের সাহায্য পাচ্ছি, সেহেতু কেসটা এবার আলোর মুখ দেখবে।"
"হ্যাঁ রে ভাগ্নে। তরিকুল সাহেবের কষ্টটা আমি বুঝেছি। তিনি আমাকে তার মনের সন্দেহটা মেটানোর জন্য ধরেছিলেন। তবে একটা কথা কী ভাগ্নে, মৃত্যু সবারই হবে। কিন্তু সেই মৃত্যুর কারণটা ব্যতিক্রম। কেউ মানতে পারে, আবার কেউ মানতে পারে না। কেননা মৃত্যুর এই কারণের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সকল রহস্য।"
.
.
বেশ কয়েকদিন পার হয়ে গিয়েছে। হারকিউলিস তার শিকার চালিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হারকিউলিসকে নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। সবার মনেই একটা প্রশ্ন, কে এই হারকিউলিস, যে ধর্ষকদের এভাবে বিকৃতভাবে হত্যা করে। তার হত্যার ধরণ সকলের কাছে নতুন। অনেকেই মনে করছে, ধর্ষকদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্যে হারকিউলিসের এভাবে খুন করার পদ্ধতি বেশ কার্যকর। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, দেশের নিউজ মিডিয়া সবাই প্রতিদিন হারকিউলিসের গুণগান গাইতে ব্যস্ত।
.
.
হারকিউলিসের খুনের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। প্রতিদিনই তিন জন করে মারা যাচ্ছে। মামা ভাগ্নে দুজনেই গত রাতে ঘটে যাওয়া শাওন সাহেবের খুনের তদন্ত করতে তার বাসায় এসেছে।
"বুঝলি ভাগ্নে উপরমহল থেকে বেশ চাপ আসছে। শুনলাম এসপি তরিকুল সাহেবের উপরেও নাকি রাগ ঝাড়ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আসলে এসব জিনিসকে সাধুবাদ জানানো উচিত। কিন্তু হারকিউলিসের মতন মানুষদের কারণে জনগণের আইনের প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়।"
"তুমি আবার কোন আইনের কথা বলছ মামু? দেশেতো আইন বলতে কিছুই নেই।"
"ভুলে যাসনে একটি জাতি যখনই আইনের উপরে কথা বলে, তখনই শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। আইন বানানো হয় রাষ্ট্রকে সোজা রাখার জন্য। আইনের কিছু হলে রাষ্ট্র বেঁকে যায় জনগণের ক্ষোভের ভরে।"
"তা তদন্ত কতদূর এগোলে?" রবির পাশে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো রাফি।
"হারকিউলিস প্রতিটা খুন করে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু শাওন সাহেবের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয় গতবছর।"
রুমের মধ্যে থাকা মৃতদেহটির সামনে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রাফিকে বলল রবি।
"কিছু পেলে এখানে? নাকি প্রতিবারের মত হারকিউলিস কোন প্রমাণ রাখেনি?"
"একটা গোলাপ ফুলের কি হোল্ডার পেলাম।"
"মানে?"
"ব্যাগে লাগানো থাকে এগুলো। আমার সন্দেহ যদি ঠিক হয়, তবে ব্যাগটা হারকিউলিসের!"
"যদি এরকমই হয়, তবে গোলাপ ফুলের হোল্ডারটি অবশ্যই কোন ছেলের হবে না।"
রাফির কথা শেষ হতেই রবির চোখ শাওন সাহেবের বিছানার নিচে পড়লো। সে ভালোমতো খেয়াল করতেই বুঝতে পারলো সেখানে একটি মোবাইল পড়ে আছে। রবি মোবাইলটা হাতে নিয়ে ঘাঁটতে লাগল।
"ভাগ্নে, মোবাইলটা শাওন সাহেবের। কোন লক নেই। দেখা যাক কিছু পাওয়া যায় কি-না।"
রবি কথা না বাড়িয়ে টাচস্ক্রিনে চাপতে লাগলো।
"কাল রাতে শাওন সাহেব একজনের সাথে কথা বলেছে। কলটার রেকর্ড আছে ভাগ্নে!"
রবি মোবাইল টাচ করে শাওন সাহেবের সাথে তার বন্ধুর ফোন আলাপ শুনতে পেল। দুজনেই বেশ মনোযোগ সহকারে ফোনালাপ শুনছে। কলটি করা হয়েছে ১২ঃ১০ মিনিটে। ঘড়িতে যখন কাটায় কাটায় ১২ঃ১৮ মিনিট, ঠিক তখনই শাওন সাহেবের আচরণ বদলে যেতে লাগে। সে কথা বলা বন্ধ করে মুখ দিয়ে আজব শব্দ বের করা শুরু করে। ঘটনার এক পর্যায়ে শাওন সাহেব এর আর্তনাদ শুনতে পাওয়া যায় আর ঠিক পরমুহূর্তেই ফোনের লাইন কেটে যায়।
"কিছু বুঝলে মামু?" প্রশ্ন করলো রাফি।
"দাঁড়া, আরেকবার শুনে নেই।"
দুজনে আবারও বেশ কয়েকবার রেকর্ডটি শোনার পর মামু হঠাৎ লাফ দিল।
"ভাগ্নে পেয়েছি!"
"কী হলো?"
"রেকর্ড এর ১০ মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি শব্দ ভালো করে খেয়াল কর। মনে হচ্ছে কেউ একজন শাওন সাহেবের মাথায় আঘাত করার সময় মুখ দিয়ে অজান্তেই রাগ এর প্রতিফলন হিসেবে একটা শব্দ করছে!"
"হ্যাঁ, তাইতো মামু। আমরা কাউকে মারার সময় মুখ দিয়ে যেরকম 'উহ' শব্দ বের করি ঠিক সেইরকমই মনে হচ্ছে শব্দটা। আর গলার স্বর শুনে মনে হচ্ছে না এটা কোন পুরুষের গলা মামু! তবে কি হারকিউলিস মেয়ে?"
চলবে...........।
This post has received a 17.66 % upvote from @boomerang.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit