বিকৃত বধ| পর্বঃঃ ২| ধারাবাহিক থ্রিলার গল্প| মেহেদী হাসান রাব্বী

in hive-138339 •  4 years ago 

FB_IMG_1617821434421.jpg

গল্পঃ #বিকৃত_বধ।
পর্বঃ ০২
লেখকঃ মেহেদী হাসান রাব্বি

নিকষ অন্ধকার রুমের জানালার গ্রিল কেটে হুডি পরিহিত ব্যক্তিটি তার পরবর্তী শিকার আশরাফ হোসেন সানির রুমে প্রবেশ করল। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগটি ফ্লোরে রেখে বিছানার দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করল সেখানে শুধু আশরাফ একা নয়, তার সঙ্গে আরো দুজন ঘুমিয়ে আছে। হুডি পরিহিত লোকটি মনে মনে বলল,

"আজ আমার কাজ অনেক সোজা হয়ে গেল। তিন তিনটে জানোয়ারকে একত্রে পাওয়া গিয়েছে!"

ঠোঁটের কোনায় পৈচাশিক হাসি দিয়ে গ্লাভস পরিহিত হাত নিয়ে এগিয়ে গেল তিনজন ঘুমন্ত জানোয়ারের দিকে। বিছানার মধ্যে মাতাল অবস্থায় তিনজন এলোমেলোভাবে ঘুমিয়ে আছে। তাদের মধ্যে একজন আইজিপি রায়হান চৌধুরীর একমাত্র সন্তান, আশরাফ হোসেন সানি। তাকে মধ্যে রেখে দুই পাশে তার দুই বন্ধু ঘুমিয়ে আছে। হুডি পরিহিত ব্যক্তিটি পকেট থেকে তিনটি ছবি বের করল। প্রতিটা ছবির পেছনে ছবির মালিকের নাম লেখা আছে। সে ছবিগুলো দেখে সানির দুইপাশের দুজনকে চিনতে পারল। এদের একজনের নাম নাভিদ খাঁন ও আরেকজনের নাম সাজ্জাদুর রহমান। নাভিদ, এসপি তরিকুল ইসলামের বড় ছেলে। আর সাজ্জাদ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আকরাম খানের ছোট ছেলে। লোকটি আবারো মনে মনে বললো,

"মাত্র ২০ বছর! ২০ বছরের ছোকরা তোরা কত কী করেছিস। এবার তোদের মাশুল গোনার পালা!"

তিনি বেশ সাবধানতার সাথে তিনজনকেই ফ্লোরে সারিবদ্ধভাবে শুইয়ে দিল। তাদেরকে শুইয়ে রেখে তার ব্যাগের মধ্যে থেকে মেয়েদের বেশ কয়েকটা অন্তর্বাস বের করে প্রত্যেকের মুখের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিল। এরপর সবার হাত প্রসারিত করে নির্দয় ভাবে একে একে প্রত্যেকের হাতে পেরেক মারতে শুরু করল হুডি পরিহিত চিকন চাকন দেহের গঠনের সেই ব্যক্তিটি।

হাতে পেরেক মারার সময় সাজ্জাদ বাদে আর কারও জ্ঞান ফেরেনি। তার জ্ঞান ফেরার সাথে সাথেই চোখ দুটো বড় করে হুডি পরিহিত সেই ব্যক্তির দিকে তাকালো। মুখ দিয়ে কিছু বলতে যাবে কিন্তু মুখের মধ্যে থাকা অন্তর্বাসের চাপে মুখ দিয়ে একটি ধ্বনিও উচ্চারিত হলো না। নরক যন্ত্রণায় সাজ্জাদ ছটফটাতে শুরু করলো। মাথা বাম দিকে ঘুরাতেই লক্ষ্য করলো তার দুজন বন্ধুদেরও একইভাবে হাতে পেরেক মারা অবস্থায় ফ্লোরে শুইয়ে রাখা হয়েছে।

কালো রঙের টুপিটা মাথার উপরে টেনে দিয়ে ব্যাগের মধ্য থেকে একটি টেপ রেকর্ডার বের করে সুইচ অন করে হাতের মধ্যে একটি ছুরি নিয়ে বিছানার উপরে বসলো হুডি পরিহিত ব্যক্তিটি। টেপরেকর্ডারে একটি ভারী কন্ঠের ব্যক্তি কিছু বলতে শুরু করল,

"আশরাফ হোসেন সানি, নাভিদ খাঁন ও সাজ্জাদুর রহমান। তোরা ভাবছিস আমি এখানে এলাম কীভাবে? তোরা ভাবছিস বাড়ির সবাই কোথায়? তোরা ভাবছিস আমি কে? তিনটি প্রশ্ন থেকে আমি তোদের একটি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। বাড়ির সবাই গভীর ঘুম ঘুমিয়েছে। মনে আছে আজকে সন্ধ্যার নাস্তায় তোরা কি খেয়েছিলি?"

টেপ রেকর্ডারের শব্দ সানি এবং নাভিদ দুজনই জেগে উঠলো। নরক যন্ত্রণায় সেখানে উপস্থিত তিনজনই জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।

"তোরা আজ সন্ধ্যার নাস্তায় পায়েশ খেয়েছিলি। আইজিপি রায়হান চৌধুরীর স্ত্রী নিজ হাতে তোদের পায়েস রান্না করে খাইয়েছে। শুধু তাই নয়, বাড়িতে উপস্থিত প্রত্যেকেই সেই পায়েস চেটেপুটে খেয়েছে। কেননা পায়েসটা ছিল খাঁটি গরুর দুধের। এই খাঁটি গরুর দুধের মধ্যে আরও একটি খাঁটি জিনিস মেশানো ছিল। আর সেই খাঁটি জিনিসটার বদৌলতেই এই পুরো বাড়ির লোকজন গভীর ঘুম ঘুমাচ্ছে। এখন রাত একটা বেজে পাঁচ মিনিট। আমি ঠিক তোদের চোখের বরাবর বসে আছি হাতের মধ্যে একটি ছুরি নিয়ে। এরপর তোদের সাথে কী হবে তা তোরা নিজ চোখে দেখে নে। আমি হারকিউলিস, তোদের সাথে কী কী করি।"

টেপ রেকর্ডারের শব্দ শেষ হওয়ার পর হারকিউলিস হাতের ছুরিটি তিনজনের চোখের উপর ঝুলাতে শুরু করলো। মাঝখানে থাকা সানির পেরেক মারা পায়ের দিকে নজর দিল সে। সামনে বসে তার হাতে থাকা ছুরিটি দিয়ে সজোরে ডান পায়ের পাতার উপর আঘাত করতেই পায়ের আঙ্গুলগুলো ছিড়ে দুরে আছড়ে পরল। অসম্ভব যন্ত্রণায় কাতরাতে শুরু করল সানি।

ডান পা কাটা হয়ে গেলে একে একে সবার দেহ থেকে কাপড় সরাতে শুরু করল হারকিউলিস। কাপড়গুলো একপাশে রেখে ব্যাগের মধ্য থেকে বেশ কয়েকটি ব্লেড বের করে সাদা ধবধবে দেহগুলোর উপর নিজের ক্ষোভ মেটাতে শুরু করল সে। মুহুর্তেই শতশত ব্লেডের ক্যাচ ক্যাচ শব্দ নেচে উঠল সাদা ধবধবে শরীরগুলো। চোখের পলকেই দুধে আলতা শরীরগুলোর দুধ বাদ দিয়ে শুধু আলতা রঙের পরিণত হলো।

ব্লেডগুলো ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে রেখে হাতের চুরিটি দ্বারা একে একে তিনজনেরই পুরুষাঙ্গ কচ কচ করে কেটে ফেলল হারকিউলিস। পুরুষাঙ্গ তিনটি গতকালের সেই পলিথিনে রেখে টেপ রেকর্ডার টি আরো একবার অন করে সানির অন্ডকোষের দিকে এগিয়ে গেল সে।

"কীরে, তোদের তো কাটাকুটি করতে বেশ ভালো লাগে। তাইনা? সবসময় তো অন্যের জিনিস কাটাকাটি করিস। এবার নিজের জিনিস কাটা গেল দেখ কেমন লাগে!"

টেপ রেকর্ডারের শব্দ থেমে যেতেই হারকিউলিস সানির অন্ডকোষটি টান টান করে ধরে সজোরে ছুরি বসিয়ে দিলো তার উপরে। নরক যন্ত্রণা বারবার শরীরে নড়ে উঠছিল সানির। একে একে তিনজনের অন্ডকোষ একত্রে করে ব্যাগে থাকা হাতুড়ি দিয়ে থিতলে দিতে লাগলো সে। হাতুড়ির আঘাতে যেন হারকিউলিসের চোখেমুখে আনন্দ ফুটে উঠল। রক্তের প্রতিটিটা ফোটায় যেন পৈচাশিক আনন্দ পাচ্ছেন তিনি। থিতলে যাওয়া অন্ডকোষ তিনটির মধ্যে একরাশ ক্ষোভ নিয়ে থুথু ছিটিয়ে ওদের তিনজনের মুখে পুরে দিল। কেউ টু শব্দটি করতে পারলো না।

গতদিনের মত আজকেও শেষ আঘাত হিসেবে ব্যাগের মধ্য থেকে তিন প্যাকেট লবণ বের করল হারকিউলিস। বিন্দুমাত্র সময় ব্যয় না করে তিনটে ভীতসন্ত্রস্ত দেহের মধ্যে ছিটিয়ে দিতে লাগলো সেই লবণের প্রতিটি কণা। গলা কাটা মুরগীর মত একজন যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে সেখানেই মৃত্যুবরণ করল। নাভিদের লিঙ্গটা হাতে নিয়ে দেওয়ালে বড় করে লিখে দিলো, 'This the curse from Herceulis'। কাজ হয়ে গেলে পলিথিনে মোট ছয়টি পুরুষাঙ্গ নিয়ে জানালা নিচে নেমে গেলো হুডি পরিহিত হারকিউলিস।
.
.
মামুর হাতে তিনটে খুনেরই পোস্টমর্টেম রিপোর্টের কপি রয়েছে। রাফি তার ল্যাপটপের সামনে বসে আছে।

"বুঝলি ভাগ্নে, মাঝে মাঝে গোয়েন্দাদের এরকম মার খেতে হয়। তা না হলে এই সব কাগজপত্র আনা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পরে।"
"তা ঠিক বলেছ। কিন্তু এবার তুমি কী করতে চাচ্ছো? আমার তো ভয় লাগছে।"
"আরে ভয় পাস নে। আমি আছি তো।"
"তা রিপোর্ট অনুযায়ী কী দেখলে?"
"তিনটে খুনের কারণ শরীরে অজস্র আঘাত এবং শেষে হার্ট অ্যাটাক।"
"হার্ট অ্যাটাক কেন?"
"শরীর যখন প্রচণ্ড মাত্রার ব্যথা অনুভব করে তখন এরকমটা হয়ে থাকে। যেমন ধর আমি যদি তোর নাভিতে ২০ ডেল এর আঘাত করি তাহলে তুই তৎক্ষণাৎ সেখানে মারা যাবি। তো এইরকম কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে আঘাত করলে এতোটা ব্যথা হঠাৎ করে সহ্য করতে পারে না যার ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়।"
"ও আচ্ছা। তাহলে তাদেরকে খুব যন্ত্রণা দিয়েই মারা হয়েছে।"
"তা তো অবশ্যই। শুধু তাই নয় তাদের মুখের মধ্যে অণ্ডকোষ পাওয়া গিয়েছে। এবং প্রত্যেকেরই পুরুষাঙ্গ কেটে নিয়ে গিয়েছে।"
"মামু এইটায় নিশ্চিত কোন না কোন সাইকো! এভাবে কাউকে মারে কোন মানুষ!"
"কী জানি। যাই হোক, সেই হারকিউলিসের অভিশাপের কথা বলছে, আমি ৯০% শিওর এই খুনের পেছনে ধর্ষণ জরিয়ে আছে। কেননা, চিন্তা কর হাত পা চোখ ইত্যাদি অঙ্গ থাকতে কেন পুরুষাঙ্গের পেছনে পড়ল উনি?"
"তা ঠিক বলেছ। এখন কী করতে যাচ্ছো?"
"এটা যদি ধর্ষণ হয়ে থাকে তাহলে এর আগে ওরা অবশ্যই কোন পরিকল্পনা করে রেখেছিল। আর এখন অধিকাংশ পরিকল্পনা কিংবা দৈনন্দিন কথাবার্তা হয় আমাদের মেসেঞ্জারে। সেক্ষেত্রে আমরা যদি কোনভাবে খুন হওয়া ৩ জনের মধ্যে একজনের ফেসবুক হ্যাক করতে পারি তাহলেই কেল্লা ফতে। এবার তুই দেখ। আমি ব্যাখ্যা করে দিলাম, বাকিটা তোর কাজ।"

রাফি তৎক্ষণাৎ ল্যাপটপটা নিয়ে বসে পড়ল।

"এই জন্য তুমি আমাকে ল্যাপটপ নিয়ে আসতে বলেছো মামু।"

রাফি তার কাজ শুরু করে দিলো। সাইবার এক্সপার্ট হিসেবে তার গুণ সেই ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে। ক্লাস সিক্সেই এলাকার চেয়ারম্যানের ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছিল সে। সেখান থেকে যাত্রা শুরু। আজও তার সাইবার ক্ষমতা এলাকার লোকজনের মুখে মুখে। টানা আধা ঘন্টা বিভিন্ন পদ্ধতিতে চেষ্টা করার ফলে অবশেষে খুন হওয়া তিন জনের মধ্যে রাতুলের ফেসবুক আইডি হ্যাক করতে পেরেছে রাফি।

"মামু, গতকাল খুন হওয়া রাতুলের আইডি আমার হাতে।"
"মেসেজ চেক কর! ম্যাসেজে অবশ্যই কোন না কোন ক্লু পাওয়া যাবে।"

মামুর কথামতো রাফি কাজে লেগে পড়ল। মেসেজ অপশনে ঢুকে একটু নিচে নামতেই ইশমাম এর সাথে চ্যাটিং দেখতে পেল।

"মামু ইউরেকা!"
"ইশমামের মেসেজগুলো পর জলদি।"
"মামু কিরে সাদিকের দেওয়া মালটা খেতে কেমন লাগলো তোর?"
"এটা কে বলেছে?" জিজ্ঞেস করল রবি।
"এটা রাতুল বলেছে। আর রাতুলের মেসেজের রিপ্লাইয়ে ইশমাম বলছে,
-মামা সেই লাগছে। বিশেষ কইরা যখন ওই মালটার বাপেরে কপাইলাম!
-ঠিক কইছস বন্ধু। কত বড় সাহস আমাগো নামে বিচার দিবো মালটার! আর তাছাড়া মালটার ছয় বছরের বইনটারেও ভালো লাগছে আমার। (রাতুল।)
-ঠিক কইছস রে রাতুল।"

রবি রাফিকে থামিয়ে দিলো।

"রাফি, আর পড়ার দরকার নেই। আমার ঘেন্না লাগছে।"
"এবার কী করবে মামু? আসল দোষী তো এরা। তাদের কর্মের শাস্তি পেয়েছে তিনজনই।"
"রাফি, সকল কিছুর জন্য নির্দিষ্ট লোক থাকে। আজ আমি যদি খুন হয়ে যাই কাল তুই সেই খুনিকে মারতে পারিস না। খুনিকে মারার জন্য লোক আছে।!
"এটা কেমন যুক্তি মামু? আমি তোমার সাথে একমত হতে পারলাম না।"
"মাথা ঠান্ডা কর। একটু বসে ভাব। আমরা বিদ্যালয় কেন যাই? শিক্ষা নিতে। আমরা হাসপাতালে কেন যাই? চিকিৎসা নিতে। আমরা মসজিদ-মন্দিরে কেন যাই? প্রার্থনা করতে। সবকিছুই নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে রাফি। যে কেউ চাইলেই সবকিছু হয়ে যেতে পারে না। কোন ডাক্তার চাইলেই পুলিশ হতে পারবে না, কোন পুলিশ চাইলেই ডাক্তার হতে পারবে না। তেমনি কোন সাধারণ জনগণ চাইলেই হত্যাকারী হতে পারবে না। তুই মানিস আর না মানিস, হারকিউলিস হত্যাকারী!"

মামুর কথা শেষ হতেই রাফির চোখের কোনায় পানি জমে এল।

"মামু এই সমাজ থেকে যদি হারকিউলিসদের মিটিয়ে ফেলতে চাও তবে সমাজ থেকে ধর্ষন মিটবে না। আর যদি ধর্ষনকে মেটাতে চাও তাহলে হারকিউলিসদের মেটানো যাবে না! সিদ্ধান্ত তোমার, তুমি কী করবে?"
"রাফি আমরা গোয়েন্দা। আইনের প্রতি আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধাই হচ্ছে আমাদের প্রথম শপথ। আবেগকে প্রশ্রয় দেওয়া আমাদের শপথের মধ্যে কোথাও উল্লেখ নেই। তুই মেসেজগুলো প্রিন্ট আউট কর। আরো যত তথ্য সংগ্রহ করতে পারিস কর। আমাদের ওই ভিকটিমকে খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে হয়তোবা কোন কিছু পাওয়া যাবে।"

হঠাৎ রুমের দরজায় ঠকঠক শব্দ তাদের কানে এল। রবি এগিয়ে যেয়ে দরজা খুলতেই সেখানে নুরজাহানকে দেখতে পেল।

"বুবু তুই এখানে?" ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করল রবি। কেননা তার বড় বোন নুরজাহানকে সে রবি বেশ ভয় পায়।
"রাত দুইটা বাজে। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম সব কিছু ফেলে রেখে তোদের এই ফাও কাজ কবে শেষ হবে শুনি? তোর তো কম বয়স কম হলো না রবি। এখনো এই ছেলেমানুষই রয়ে গেলি। দেশের অবস্থা ভালো না। হারকিউলিস আজকেও তিনটা খুন করেছে। আর তোরা এখানে...।"

"বুবু, বুবু তুই এটা কী বললি?" নুরজাহান কে থামিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করল রবি।

"আরে ওই যে গতকাল খবরে দেখালো না হারকিউলিসকে? সে আজকেও আবার তিনটে খুন করেছে।"
"ও মাই গড! কী তথ্য দিলি তুই আমাদের! খুব জরুরী একটা কেইস সলভ করতে হবে বুবু। আমরা এখানেই ঘুমিয়ে যাবো। তুই নিশ্চিন্তে থাক।"

নূরজাহানকে কোনমতে কথার মারপ্যাঁচে ফেলে তাদের ঘর থেকে বের করল রবি। এরপর রাফির সামনে এসে ল্যাপটপের দিকে তাকালো।

"ভাগ্নে, নিউজে যাদের নাম বলবে প্রত্যেকের আইডি হ্যাক করবি। কাল সকালে আমরা সব প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামব!"
.
.
পরের দিন খুব সকাল সকাল মামু ভাগ্নে নুরজাহান মঞ্জিল থেকে রওনা দিলো সেই ভিকটিমের ঠিকানা অনুযায়ী।
প্রথম ভিক্টিম আফসানা আক্তার। খিলগাঁও এরিয়াতে ছোট একটি বস্তিতে তাদের বসবাস।। ছোট বোন, বৃদ্ধ বাবাই তার একমাত্র সম্বল। একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করতো। ঘটনার রাতে জব থেকে ফেরার পথে তাকে অপহরণ করে সাদিক এবং তার বন্ধুরা। পুরো পরিকল্পনাটাই ফেইসবুকের একটি চ্যাট গ্রুপের মাধ্যমে হয়েছিল। কোথা থেকে তুলতে হবে, কোথায় যেয়ে নামানো হবে, কীভাবে কী করা হবে, সবকিছুই সেই গ্রুপের মধ্যেই ডিসকাশন হয়েছিল। যেদিন তাকে ধর্ষণ করা হয় তার পরের দিন থেকেই তাদের পুরো পরিবার নিখোঁজ। তারা চ্যাট থেকে জানতে পারে আফসানার বাবাকে কোপানো হয়েছে। ও তার ছোট বোনকেও ধর্ষন করা হয়েছে একই সাথে।

"মামু, এই তো সেই গলি। আসো এখানে কাউকে জিজ্ঞেস করা যাক।"

ফেসবুক গ্রুপে আফসানার বেশ কয়েকটি ছবি আপলোড করা হয়েছিল। ছবিগুলো প্রিন্ট আউট দিয়েই সবাইকে দেখাচ্ছে রাফি। একটি দোকানদারকে জিজ্ঞেস করতেই দোকানদার দেখিয়ে দিল তাদেরকে আফসানাদের গলি। বেশ নংরা জায়গা সেটা। আশেপাশে ময়লা জমে আছে। গলির সাত নম্বর ঘরটিতে থাকতো তারা।

ঘরটির সামনে যেতেই বড় একটি তালা চোখে পড়লো। আফসানাদের ঘরের দরজায় অপরিচিত লোকদের দেখে পুরো বস্তির মানুষজন জড়ো হয়ে যায় সেখানে। কারো কাছেই কোন উত্তর খুঁজে পায়নি তারা। অনেকে বলল তারা নাকি এখান থেকে পালিয়ে গিয়েছে। কাজের কাজ কিছু হলো না দেখে মামু ভাগ্নে দুজনেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে বস্তি ত্যাগ করল।

"এবার কী করবে মামু?"

রাফির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রবি দোকান থেকে একটি সিগারেট কিনে সেটা ফুকতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

"মামু এই সময়ে যদি বলো এই কেইস তোমার প্রেসার বাড়াচ্ছে তবে কিন্তজ...!"

"রাফি!"

হঠাৎ চেচিয়ে উঠলো রবি।

"দ্বিতীয় খুনটাও হারকিউলিস করেছে! আর তোর হ্যাকিংয়ের ফলে জানা যায় দ্বিতীয় খুনের জন্যেও ধর্ষন দায়ী। এই ঘটনা ঘটেছে উত্তরায়। সেখানেও ধর্ষণের আগে গ্রুপ চ্যাটে সবার সাথে কথা হয় সকলের!"
"চিন্তা করো মামু, ধর্ষণের খবর সংবাদ মাধ্যমে আসে না। কিন্তু এই রকম খবর সংবাদ মাধ্যমে হেডলাইনে থাকে। কার বিরুদ্ধে লড়বে তুমি? কেউ না কেউ ভুল পথে আছেই।"

মামু ভাগ্নে দুজনেই উত্তরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ পেছন থেকে পুলিশের একটি গাড়ি তাদের সামনে এসে ব্রেক কষলো। তারা দুজনে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বেশ কয়েকজন পুলিশ এসে রবিকে হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে গাড়িতে বসালো। রাফি বারবার চিৎকার করলেও তারা কোন কথাই শুনছিল না। রবি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। তাকে গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো।

রাফি এখনো বুঝল না কী দিয়ে কি হয়ে গেল! হঠাৎ রবির উপর কেন পুলিশি আক্রমণ! রাফি যত দ্রুত সম্ভব পুলিশের গাড়িটিকে উদ্দেশ্য করে দৌড়াতে লাগলো পেছন পেছন। দৌড়ানোর সময় সে গাড়িটির নাম্বার মোবাইলের নোটপ্যাডে লিখে রাখল।

পুলিশের গাড়িটি রামপুরা থানায় এসে থামল। রবিকে থানার মধ্যে থাকা হাজতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো চার-পাঁচজন পুলিশ। রবি নিজে এখনো কিছুই বুঝতে পারছে না। তার সাথে কী হচ্ছে, কেনই বা তাকে এখানে নিয়ে আসা হল, কেনই বা তার সঙ্গে এই ব্যবহার করা হচ্ছে। হঠাৎ সেখানে শু জুতার ঠক ঠক শব্দ করে একজন পুলিশ সেই সেলের ভিতরে ঢুকলো হাতে মোটা একটি লাঠি নিয়ে। রবি তার দৃষ্টি লাঠি হাতে পুলিশটার পা থেকে ধীরে ধীরে মাথা পর্যন্ত নিতেই যেন আকাশ থেকে পড়ল। এ যে এসপি তরিকুল ইসলাম! গতরাতে যার সন্তান হারকিউলিসের অভিশাপের শিকার হয়েছে!

চলবে..........।

আপনারা সকলেই যার যার মন্তব্য জানিয়ে যাবেন প্লিজ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

This post has received a 21.12 % upvote from @boomerang.