আসসালামুয়ালাইকুম বন্ধুগণ। কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই সুস্থ আছেন। ধন্যবাদ স্টীম-বাংলাদেশ কমিউনিটিকে এরকম সুন্দর একটা কন্টেস্টের আয়োজন করার জন্য। আজকে আমি কমিউনিটির নিয়ম অনুযায়ী খেলাধুলা বিষয়ে কিছু উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করি আমার লেখা আপনাদের পছন্দসই হবে।
আজ আমি ক্রিকেট বিষয়ক এমন একজন ব্যক্তিকে নিয়ে লিখতে যাচ্ছি, যার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে নাটকীয়ভাবে। তিনি আরে কেউ নন, তিনি হচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান, মার্নাস লাবুশানে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক ব্যাটসম্যানেরই অভিষেক হয়েছে, কিন্তু এরকম নাটকীয় ভাবে কেউই অভিষেক করেননি। আজকে আমি তাকে নিয়েই সংক্ষেপে কিছু লিখছি।
জন্ম এবং ছেলেবেলা
তিনি ১৯৯৪ সালের ২২শে জুন সাউথ আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিম রাজ্যের ক্লার্কসডর্প শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার বয়স যখন ১০ ছিল তখন তার বাবা অস্ট্রেলিয়ায় একটি খনিতে চাকরি পান এবং সেই কারণে তার পুরো পরিবারকে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাতে হয়েছিলো। অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার আগে তিনি আফ্রিকান ভাষাতে কথা বলতেন, তবে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পর তিনি ইংরেজি ভাষা রপ্ত করতে শিখেছিলেন। সেখানে তিনি ব্রিসবেন রাজ্য হাই স্কুলে ছাত্রজীবন শুরু করেছিলেন।
ক্রিকেট শেখা এবং ঘরোয়া ক্রিকেট
একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে মার্নাস ল্যাবুশেন তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। তিনি কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের হয়ে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন এবং তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে ২০১২-২০১৩ সেশনে অধিনায়কত্ত করেছিলেন। তিনি ২০১৩ সালের পুরোটাই ইংরেজ ক্লাব প্লেমাউথের হয়ে এবং ২০১৪ সালে স্যান্ডউইচ টাউন ক্লাবের হয়ে কাউন্টি খেলেছিলেন, যা তাকে পরে একজন দক্ষ ব্যাটসম্যান হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করেছে। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ডের কন্ডিশনকে তার খেলার উন্নতির আসল চাবিকাঠি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
তার অস্ট্রেলিয়া ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেক হয় কুইন্সল্যান্ড ক্রিকেট একাডেমির হয়ে। তিনি ২০১৪-২০১৫ সেফিল্ড শিল্ড সেশনে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেকের দিনই একেবারে ওপেনার হিসেবে জো বার্নসের সাথে নামেন এবং সেই প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসেই ৮৩ রান করেন। এমনকি সে ২য় ইনিংসেও নিক স্টিভেন্সকে সাথে নিয়ে ৯৯ রানের পার্টনারশিপ করেন। ঠিক ২০১৪-২০১৫ সেশনেই তিনি অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের হয়ে ভারতের বিপরীতে বিকল্প ফিল্ডার হয়ে একটি ক্যাচ মুঠোবন্দী করেন।
- কাউন্টি ক্রিকেট
মার্নাস ল্যাবুশেন ২০১৯ সালে গ্ল্যামরগান ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে অন্য কাউন্টি সেশন শুরু করেন। তিনি সেই বছর এবং সেই সেশনে ৩টি সেঞ্চুরি সহ ১,১১৪ রান করেন। তিনি কাউন্টি ২ইয় ডিভিশনে ২য় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের সম্মান অর্জন করেন। আশ্চর্যজনকভাবে তিনি সেই বছর ৩৮.১১ বোলিং এভারেজে ১৯টি উইকেট নিতে পেরেছেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাটকীয় পদার্পন
- টেস্ট ক্রিকেট
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষ টেস্ট ম্যাচে তিনি দলে ডাক পান। তবে তার এই অভিষেক সুখকর ছিলো না। ২০১৮ সালের ৮ই অক্টোবর মাইক হাসির হাত থেকে বাগি গ্রীন ক্যাপ পেয়ে দুই বল খেলে আউট হওয়ার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করেন। অবশ্য তার লেগ-স্পিন কারিশ্মার মাধ্যমে তিনি ২টি উইকেট নিতে সক্ষম হন। অবশ্য ২য় টেস্টে তিনি ৪৩ বলে ব্লার মতন ২৫ রান করেন।একই বছর তিনি ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে দলে ডাক পান। তবে সেই সিরিজে খারাপ খেলার কারণে তার সমালোচনাও করা হয়।
দলে তার নির্দিষ্ট কোনো পজিশন ছিলো না।তিনি তার ৫ টেস্ট ম্যাচে খেলেছেনও ৫টি বিভিন্ন পজিশনে, যা রয়েছে ওয়ান-ডাউন থেকে ৭ম পর্যন্ত। তার টেস্ট ম্যাচের ১ম আর ৩য় ইনিংসে তার গড় ছিল মাত্র ৬.০০ আর ৪.০০।সেজন্য স্বভাবতই তার এই পরিসংখ্যান দেখে তাকে নিয়ে অতি উচ্চাশা করার কোনো কারণ ছিল না । তবে তার খেলার ধরণ দেখে অনেকেই যে ভেবেছে যে সে একেবারেই চলবে না, এমনটা ভেবেছে, সেটা বলা আসলেই কঠিন। এমনো অনেক মানুষ আছেন, যারা ব্যতিক্রমও ভেবেছেন।
এরপরের বছর ২০১৯ সালে তিনি আশ্চর্যজনকভাবে অ্যাশেজ সিরিজে তিনি দল্ভুক্ত হন। অ্যাশেজের আগ পর্যন্ত তার বলার মতন কোন পারফরম্যান্স ছিলো না। কিন্তু এই অ্যাশেজ তার জীবনে নাটকীয় মোর দান করে। যা তার সারা জীবন মনে রাখার মতন। তিনি ২০১৯ এর অ্যাশেজের ২য় টেস্টের ২য় ইনিংসের পর থেকে শুরু করে, ২০২১ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আরও ১৩ ম্যাচে ২২ ইনিংস, যেই ২২ ইনিংসে তিনি ১০-এরও কম রান করে উইকেট হারিয়েছেন মাত্র ১ বার।
তিনি তার ১০৮, ১৪৩, ১৬২ আর ১৮৫ রানের এই স্মরণীয় ইনিংসগুলো খেলেছেন ভারত, পাকিস্তান ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। যার অর্ধশতক এই কম সময়ে ৯টি। মাত্র ৯টি ইনিংসে আউট হয়েছেন ৫০ রানের কম করে, এর মাঝে আবার একটি ৪৭ রানের আর দু'টি ৪৮ রানের লড়াকু ইনিংসও। অবিস্মরণীয়ভাবে লাবুশান নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০ রানও করেছেন ।
- ওয়ানডে ক্রিকেট
লাবুশেনের ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ২০২০ সালে ভারত সফরে। অভিষেক ম্যাচে তিনি ব্যাট হাতে নামতে পারেন নি। তবে তিনি শেষ দুই ওয়ানডেতে ৪৬ এবং ৫৪ রান করতে সক্ষম হন। যদিও অনেকের মতন তিনি প্রথম ম্যাচে শতক করার গৌরব অর্জন করতে পারেন নি। দক্ষিণ আফ্রিকায় নিজ জন্মভূমিতে ওয়ানডে সিরিজে প্রথম শতরানের দেখা পান। টিনি সেই ম্যাচে ১০৮ বলে ১০৮ রান করেন, যার স্ট্রাইক রেট ছিলো ১০০.০০! তার ওয়ানডেতে আছে ৯১ এর উপরে স্ট্রাইকরেট আর প্রায় ৪০ ছুইছুই গড়ে মোট রান ৪৭৩। সাথে শতক ১টি এবং অর্ধশতকের সংখ্যাটা এখন পর্যন্ত ৩টি।
লাবুশানের ক্রিকেটীও পরিসংখ্যান
বিষয়সমূহ | টেস্ট | ওয়ানডে |
---|---|---|
ম্যাচ | ১৮ | ১৩ |
ইনিংস | ৩১ | ১২ |
রান | ১৮৮৫ | ৪৭৩ |
সর্বোচ্চ স্কোর | ২১৫ | ১০৮ |
গড় | ৬০.৮১ | ৩৯.৪২ |
স্ট্রাইক রেট | ৫৪.৯৪ | ৯১.১৪ |
৫০/১০০/২০০ | ১০/৫/১ | ৩/১/০ |
পরিশেষ
তার ক্যারিয়ারে শুধুমাত্র ১২ টি টেস্ট খেলেই আন্তর্জাতিক টেস্ট ব্যাটসম্যানদের সেরা দশে ঢুকে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত তিনি ১৮টি ম্যাচ খেলে ৮৭৮ রেটিং নিয়ে টপ ৩ নাম্বার পজিশনে আছেন। তিনি যেভাবে খেলছেন তাতে করে তিনি ক্রিকেটীয় সর্বোচ্চ শিখরে উঠার ইঙ্গিত অনেক আগেই দিয়েছেন । তিনি যেমন বোলারের ভালো বলকে প্রাপ্য সম্মান প্রদর্শন করেন, তেমনি একদিন তিনিও সম্মান পাবেন পুরো ক্রিকেট বিশ্ব থেকে এবং সেটাই আমরা আশা করতেই পারি।
স্মিথ, কোহলি, উইলিয়ামসনেরা যেমন ক্রিকেট খেলে সবটুকু রশ্নি তাদের থেকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছেন, ঠিক তেমনি লাবুশানে এভাবেই উজ্জ্বল হতে থাকবেন, এটাই ক্রিকেট বিশ্বে সবসময় চায়। তার সেই উজ্জ্বল রশ্নিতে অপলক তাকিয়ে রয়ে মুগ্ধ হতে চাইবেন যেকোনো ক্রিকেট বোদ্ধা । আমরা অপেক্ষায় থাকলাম এক অবাক বিস্ময়-যুবক মারনাস লাবুশানের কিংবদন্তি হবার দিকে ।
আমার এই লেখা সময় নিয়ে পড়বার জন্য পাঠকগনকে অশেষ ধন্যবাদ। আপনাদের মূল্যবান সমর্থন আমার জন্য প্রেরণাদায়ক। আশা করি সবসময় যেনো এধরণের লেখা উপহার দিতে পারি।
GODSPEED
FIND ME ON
Steemit: https://steemit.com/@razoanmostofa
E-Mail: [email protected]
ভালো হয়েছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Thanks for the qualityful post.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Welcome and thanks in return for appreciating my article.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit