কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। কাজী নজরুল ইসলাম আমার খুব প্রিয় লেখক। কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী রণডঙ্কা বাজিয়ে ঘুমকাতুরে পরাধীন এক জাতিকে জাগিয়ে তােলার মহান ব্রত নিয়ে বাংলা সাহিত্য জগতে প্রবেশ করে । অনেকে বলতেন তাকে ক্ষ্যাপা নজরুল , অনেকে বলতেন পাগল । কিন্তু মূল বিদ্রোহ বা প্রতিভার বাহ্যরূপ তাে ক্ষ্যাপামির মাঝেই প্রকাশ পায় । তাই তিনি একজন বিদ্রোহী কবি ।
কাজী নজরুল ইসলাম বর্ধমান জেলার আসানসোল মহাকুমার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ সালে ২৪ মে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী নজরুল ইসলামের ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া।
তার পিতার নাম কাজী ফকীর আহমদ ও মাতার নাম জাহেদা খাতুন । নজরুলের পিতার স্থানীয় মসজিদের ইমাম ছিলেন। নজরুলের পূর্বপুরুষগণ সম্রাট শাহ আলমের সময় এ গ্রামে আগমন করেন । তিনি সব সময় স্বাধীন থাকতে পছন্দ করতেন।নিয়মের বেড়াজাল ছিল বালক নজরুলের চক্ষুশূল । স্কুলের ধরাবাধা নিয়ম অগ্রাহ্য করে স্কুল পালানো তার নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল । খুব অল্প বয়সে কবি নজরুল ইসলাম তার পিতাকে হারান। আট বছর বয়সে কবি পিতৃহীন হয়ে পড়লেন । সংসারে নেমে এলো দারিদ্র্য । কবি স্থানীয় মক্তবেই শিক্ষকতার কাজ নিলেন । ১৪ বছর বয়সে কবি রানীগঞ্জের সিয়ারসোল উচ্চ ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন ।
১৯১৪ সালে শুরু হয় বিশ্বযুদ্ধ । কবি যখন দশম শ্রেণীর ছাত্র তখন তার বয়স ১৯ বছর । ১৯১৭ সালে তিনি সৈনিক হিসেবে দেন । এ সময় তাকে করাচি অবস্থান করতে হয় । অল্প বয়সেই তাঁর কবিশক্তির স্ফুরণ ঘটে । যুদ্ধে যোগদান করলেও তার কাব্যচর্চার কোন ঘাটতি হয়নি । এ সময় তিনি ফারসি সাহিত্যের সাথে বিশেষভাবে পরিচিত হবার সুযােগ পান । গল্প - উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে কবি নজরুলের সাহিত্য জীবনের সূচনা হলেও কবি হিসেবেই তিনি সমধিক পরিচিত । তার প্রথম কবিতা আত্মপ্রকাশ করে ১৯১৮ সালে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় নাম ‘ মুক্তি ' । ১৯১৯ সালে কবি করাচী হতে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন । যুদ্ধ তখন শেষ হয়ে গেছে।
১৯২০ সালে মােসলেম ভারত ' পত্রিকায় তার বিখ্যাত “ বিদ্রোহী ' কবিতা ছাপা হয় । কবিতাটি কবিকে খ্যাতির শীর্ষদেশে তুলে দেয় । এরপর হতে কবি অজস্র রচনায় বাঙালি পাঠককে বিস্ময়াভিভূত করে তুলেছেন । দেশের তরুণ চিত্তে চিরস্থায়ী আসন গেড়ে বসলেন ক্ষ্যাপা নজরুল । নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের একজন ব্যতিক্রমধর্মী কবি । বিগত পঁচিশ বছর ধরে তার অসংখ্য গান এবং কবিতা বাংলা সাহিত্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে ।
কাব্যের জগতে তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবেই পরিচিত । কোন অনিয়মের শৃখল তাকে কোনদিন আবদ্ধ করতে পারেনি । তাঁর কবিতার মধ্যে অত্যন্ত তীব্র ও প্রত্যক্ষভাবে ফুটে উঠেছে পরাধীনতার শিকল ছেড়ার আহবান । স্বাধীনতা চেতনার মূল সুরে বিদ্রোহের সুপ্ত বীজ তিনি বপন করে চলেছেন । তার বিদ্রোহী কবিতার আত্মপ্রকাশ বাংলা সাহিত্যে একটি স্মরণীয় ঘটনা । একটিমাত্র কবিতার জোরে কবি খ্যাতি লাভ করা সে যুগে ছিল সত্যি বিরল । অথচ তা - ই ঘটেছিল কবির ভাগ্যে । রবীন্দ্রনাথের ' বলাকা'র যুগে ‘ বিদ্রোহী’র কবি নজরুলের আবির্ভাব ঘটে । করিগুরু যখন পরিমার্জিত ভাষায় সবুজদের - অবুঝদের আহবান করছিলেন বন্দী খাঁচার শিকল ভেঁড়ার জন্য , আধমরাদের ঘা দিয়ে বাঁচাবার জন্য ঠিক তখনই নজরুল প্রতিভার উন্মেষ ঘটে । হয়ত তরুণ কবির বুকে দোলা দিয়ে গেছে কবিগুরুর এ আকুতি , আহবান ।
তাই নজরুল অকস্মাৎ একদিন “ ঝড়ের মতন বিজয় কেতন নেড়ে ' , অট্টহাসিতে ‘ আকাশখানি ফেড়ে বাংলা কাব্যসাহিত্যে বিদ্রোহী’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন । তার সেই দ্বিধা - শঙ্কাহীন দুর্দম এক তারুণ্যের মধ্যে আমরা আবিষ্কার করলাম এক যন্ত্রণাকাতর কবি - মূর্তিকে ।
কবির প্রথম জীবনের কবিতাগুলােতে ধ্বনিত হয়েছে প্রচন্ড বিস্ফোরণ , উনখ সুতীব্র এক বিদ্রোহের সুর ৷ অগ্নিবীণা ' , ‘ বিষের বাঁশী ' , ' ভাঙার গান ' , ' প্রলয় শিখা ' , ' ফণি মনসা ' , সর্বহারা ' , ' সাম্যবাদ ’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থে অন্যায় , অত্যাচার , অবিচার নিপীড়িত মানুষের মূক হৃদয় - বেদনাকেই তিনি তুলে ধরেছেন । সমাজ ও রাষ্ট্রের কুশাসন - বৈষম্যের কথা তাঁর মত বলিষ্ঠ ভাষায় আর কোন কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে উঠেনি । কবি রবীন্দ্রনাথ ‘ ধূমকেতু পত্রিকার সমর্থন দিয়ে কবি নজরুলের বিদ্রোহে তিনি আরও উৎসাহ যুগিয়েছিলেন । কবি নজরুল ইসলামের প্রতিভার সর্বোত্তম বিকাশ ঘটতে দেখা যায় তার সংগীত সষ্টিতে ।
নজরুল 'ধূপছায়া ' নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। এটিতে তিনি একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন। ১৯৩১ সালে প্রথম বাংলা সবাক চলচ্চিত্র ‘জামাই ষষ্ঠী’র ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত ‘গৃহদাহ’ চলচ্চিত্রের সুরকার ছিলেন তিনি। গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন ১৯৩৩ সালে পায়োনিয়ার ফিল্মস কোম্পানির প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ধ্রুব’ এবং সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন ১৯৩৭ সালের ‘গ্রহের ফের’ চলচ্চিত্রের। ১৯৩৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পাতালপুরী’ চলচ্চিত্রের ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৩৮ সালে নির্মিত ‘গোরা’ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন নজরুল। ১৯৩৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাপুড়ে’ চলচ্চিত্রের কাহিনীকার ও সুরকার ছিলেন তিনি। ‘রজত জয়ন্তী’, ‘নন্দিনী’, ‘অভিনয়’, ‘দিকশূল’ চলচ্চিত্রের গীতিকার ছিলেন নজরুল।
শেষ জীবন: নজরুল হাজার ১৯৪২ সালে মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। ১৯৫২ সালে দেশবাসী চাঁদা তুলে তাকে চিকিৎসার জন্য বিলেতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানকার বিশিষ্ট চিকিৎসক চিকিৎসকগণ ব্যর্থ হলে, তাকে আবার কলকাতায় ফিরে আসতে হয়। এসময় তার স্মৃতিশক্তি অনেক লোক পেয়েছে কাউকে তিনি চিনতে পারতেন না,নিজেও ছিলেন নির্বাক। হাজার ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতায় বসবাস করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে হাজার ১৯৭২ সালের মে মাসে তৎকালীন ভারতীয় সরকারের অনুমতি ক্রমে বাংলাদেশে আনা হয়। তখন থেকে কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকা বাস করে করছিলেন।
১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুল ইসলামকে সাহিত্যের ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করেন। এর পরের বছর কাজী নজরুল ইসলামকে সরকার বাংলাদেশের জাতীয়তা দান করে এবং ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে একুশে ফেব্রুয়ারি পদক এ ভূষিত করা হয়। হাজার ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকার পিজি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
Thank you
ভালো লিখেছেন৷ তবে আরও বেশি লিখতে হবে
![Screenshot_20210413-165234_Chrome.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmeqpXsGKg4G9RXf7dEabDTZA4FzEBB8bW49KRAyvRjb7C/Screenshot_20210413-165234_Chrome.jpg)
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit