শনি গ্রহ সম্পর্কে কিছু তথ্য

in hive-139293 •  4 years ago 


image.png
source

  • সূর্য থেকে দূরত্বের নিরিখে ষষ্ঠ গ্রহ এবং বৃহস্পতির পরই সৌরজগতের দ্বিতীয়-বৃহত্তম গ্রহ। এটি একটি গ্যাসীয় দৈত্য, যার ব্যাসার্ধ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের প্রায় নয় গুণ। শনি গ্রহের গড় ঘনত্ব অবশ্য পৃথিবীর গড় ঘনত্বের এক-অষ্টমাংশ। কিন্তু এই গ্রহের বৃহত্তর আয়তনের জন্য এটি পৃথিবীর তুলনায় ৯৫ গুণ বেশি ভারী। শনি গ্রহের বাংলা নামটি এসেছে হিন্দু গ্রহদেবতা শনির নাম থেকে। অন্যদিকে ইংরেজি নাম স্যাটার্ন এসেছে রোমান কৃষিদেবতা স্যাটার্নের নাম থেকে এবং শনির জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক চিহ্নটি (♄) উক্ত রোমান দেবতার কাস্তের প্রতীক।


image.png
source

  • শনির অভ্যন্তরীণ অংশটি সম্ভবত লোহা-নিকেলের একটি কেন্দ্রস্থল ও পাথর (সিলিকন ও অক্সিজেন যৌগ) দ্বারা গঠিত। এই কেন্দ্রস্থলটিকে ঘিরে রয়েছে ধাতব হাইড্রোজেনের একটি গভীর স্তর, তরল হাইড্রোজেন ও তরল হিলিয়ামের একটি মধ্যবর্তী স্তর এবং সর্বোপরি একটি গ্যাসীয় বহিঃস্তর। বায়ুমণ্ডলের উপরিতলে অ্যামোনিয়া কেলাসের উপস্থিতির জন্য শনি গ্রহের রং একটি ফিকে হলুদ। ধাতব হাইড্রোজেনের মধ্যে প্রবহমান তড়িৎ প্রবাহটিকে শনির গ্রহগত চৌম্বক ক্ষেত্রের উৎস মনে করা হয়। এই চৌম্বক ক্ষেত্রটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের তুলনায় দুর্বল হলেও শনির বৃহত্তর আকারের জন্য এটির চৌম্বক মুহুর্ত পৃথিবীর তুলনায় ৫৮০ গুণ বেশি। শনির চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি বৃহস্পতির কুড়িভাগের প্রায় একভাগ। গ্রহের বহিঃস্থ বায়ুমণ্ডল সাধারণভাবে বৈশিষ্ট্যহীন ও বৈচিত্র্যহীন। যদিও কিছু দীর্ঘস্থায়ী বৈশিষ্ট্যেরও উদ্ভব ঘটে থাকে। শনি গ্রহে বায়ুপ্রবাহের গতি ১,৮০০ কিমি/ঘ (১,১০০ মা/ঘ; ৫০০ মি/সে) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা বৃহস্পতির বায়ুপ্রবাহের গতির থেকে বেশি হলেও নেপচুনের বায়ুপ্রভাবের গতির মতো অধিক মাত্রার নয়।


image.png
source

  • শনির সবচেয়ে বিখ্যাত বৈশিষ্ট্য হল এই গ্রহের সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান বলয় ব্যবস্থা। মূলত বরফ কণা দিয়ে গঠিত এই বলয়গুলিতে তুলনামূলকভাবে অল্প পরিমাণে পাথুরে ভগ্নাবশেষ ও ধূলিও রয়েছে। অন্তত ৮২ টি। এর মধ্যে ২৯ টির নামকরণ করা হয় নি। কিন্তু নামকরণ করার চেষ্টা চলছে। প্রাকৃতিক উপগ্রহের দিক থেকে শনি বৃহস্পতিকে পিছে ফেলে প্রথম স্থান দখল করে আছে। প্রাকৃতিক উপগ্রহ শনির চারপাশে আবর্তন করছে। এগুলির মধ্যে ৫৩টির আনুষ্ঠানিক নামকরণ হয়েছে। তবে শনির বলয়ের মধ্যে অবস্থিত শতাধিক অনু-উপগ্রহগুলিকে এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। শনির বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ টাইটান হল সৌরজগতের দ্বিতীয়-বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ। এটি আকারে বুধ গ্রহের চেয়েও বড়ো। যদিও টাইটানের ভর বুধের ভরের চেয়ে কম। টাইটানই সৌরজগতের একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ, যেখানে একটি উল্লেখযোগ্য বায়ুমণ্ডল রয়েছে। নিরক্ষীয় এলাকায় এর ব্যাস ১২০৮০ কিলোমিটার। সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ১৪৭,২০,০০,০০০। মেরু অঞ্চলের ব্যাস ১০৯০০০। এর ঘনত্ব পানির ০.৬৮ গুণ। সূর্যপ্রদক্ষিণকাল ২৯.৪৬ পার্থিব বৎসর। এটি নিজ অক্ষের উপর একবার আবর্তিত হতে সময় নেয় ১০ ঘণ্টা ৩৯ মিনিট ২৪ সেকেন্ড।


image.png
source

  • ই গ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে পাথুরে উপকরণ। মধ্য ও উপরিভাগের অধিকাংশই হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম দিয়ে তৈরি। এর সাথে রয়েছে পানি, মিথেন এবং এ্যামোনিয়া। আর এই গ্রহকে ঘিরে রয়েছে বিস্তৃত বলয়। শনির উপরিভাগের ৭০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত মেঘরাশির উপর থেকে এই বলয়ের শুরু এবং তা প্রায় ৭৪০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বলয়রাশির ভিতর বিভিন্ন পরিমাপের ফাঁকা জায়গা আছে। এই ফাঁকা স্থানের বিচারে এর বলয়গুলিকে কয়েকটি নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ভাগগুলি হলো- ডি, সি, বি, এ, এফ , জি, ই। এর সবচেয়ে বড় ফাঁকা স্থানের নাম ক্যাসিনি বিভাজন (Cassini Division)। এর বিস্তৃতির পরিমাণ প্রায় ১২০,৬০০ কিলোমিটার। পক্ষান্তরে এ এবং বি বলয়ের মধ্যকার দূরত্ব প্রায় ৪৮০০ কিলোমিটার।


image.png
source

  • শনির প্রকৃতি : শনিও বৃহস্পতি গ্রহের মতো একটি গ্যাস জায়ান্ট। এর প্রধান উপাদান হলো হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেন ইত্যাদি। শনির ঘনত্ব খুবই কম, পানির ঘনত্বের ০.৭ গুণ, মানে পুরোটা শনি গ্রহকে পানিতে ডোবালে তা ভেসে উঠবে। তবে এর আবর্তন বেগ অনেক তীব্র। ফলে দিনের দৈর্ঘ্যের স্বল্পতা অনেক কম। শনি সৌর জগতের সবচাইতে চ্যাপ্টা গ্রহ। শনির বায়ুমন্ডল হাইড্রোজেন, হিলিয়াম সমৃদ্ধ এবং কিছু পুঞ্জিভূত মেঘের আস্তরণ দ্বারা গঠিত। সবচেয়ে উপরের স্তরে অ্যামোনিয়া বরফ দিয়ে ঢাকা। সামান্য মিথেন থাকে তা সূর্যের আলোয় ভেঙে অ্যাসিটিলিন,ইথেন ও প্রপেন তৈরী করে। শনির মূল উপাদান হাইড্রোজেন। ভেতরের দিকে হাইড্রোজেনের ঘনত্ব ক্রমশ বেশি। আর কেন্দ্রের দিকে তাপমাত্রা অনেক বেশি।


image.png
source

  • শনির বলয়: শনি গ্রহটি তার আকর্ষণীয় বলয়ের কারণেই সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের তুলনায় সৌন্দর্য্যের উৎকর্ষে রয়েছে, যা মহাজাগতিক ক্যানভাসে সৃষ্টি করেছে এক বিমূর্ত চিত্র। ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি সর্বপ্রথম টেলিস্কোপের মাধ্যমে শনি গ্রহকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং এর দৃষ্টিনন্দন বলয় দেখতে পান। নাসার বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের বিশাল গ্রহ শনির চারপাশে ঘূর্ণায়মান বিশাল আকারের নতুন একটি বলয় (রিং)-এর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অবশ্য দীর্ঘদিন চেষ্টার পর বিজ্ঞানীরা এটি আবিষ্কারে সফল হন। মজার ব্যাপার হলো সদ্য আবিষ্কৃত বলয়টি এতটাই বিশাল যে, এর ভেতর একশ কোটি বা এক বিলিয়ন পৃথিবী ভরে রাখার মত জায়গা আছে। বলয়টির মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বরফ, ধুলাবালি ইত্যাদি ধরা পড়ে।বলয় নিয়ে সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হলো শনির আসলে একটি বলয় না কয়েক হাজার বলয় রয়েছে, যা এতকাল মানুষ জানতো না। কিছুদিন আগে তা আবিষ্কার করা হয়েছে। নিতে ৭টি গ্রুপে ৩০+ টি রিং রয়েছে । শনির রিংগুলো তৈরি হয়েছে এর চারপাশের ময়লা, আবর্জনা দ্বারা । শনি গ্রহ এত দ্রুত ঘুরছে যে, এর চারপাশের পাথর, বরফ এবং অন্যান্য ময়লা ঘূর্ণনের ফলে রিংয়ের মত তৈরি করে ফেলেছে ।


image.png
source

  • উপগ্রহ: মূলত শনি গ্রহের রয়েছে ৮২ টি উপগ্রহ , কিন্তু এর মধ্যে নাম দেয়া হয়েছে মাত্র ৫৩ টি উপগ্রহের , এবং আকার বিবেচনায় ২৯ টি উপ গ্রহ কে মূল উপগ্রহ ধরা হয় । টাইটান উপগ্রহটি সবচেয়ে বড়। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের সাথে তুলনা করলে এটি ব্যাসে প্রায় ১৪৮% বড়।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

This post is chosen for a recommendation for booming curation support today. Continue creating quality content here at Steeming Community.

Thank You.

আমি বাংলাদেশের Steemit ব্যবহারকারীদের তথ্য বিশ্লেষণের জন্য একটি গুগল ফর্ম ডিজাইন করেছি। অনুগ্রহ করে উক্ত গুগল ফর্মে আপনি আপনার তথ্যাবলি সংযুক্ত করুন।

ফর্ম লিংক: https://forms.gle/w2a4FtCVarnRUP5f8