একটি রোমান্টিক অনুভূতি গল্প "হাসতে শিখো"

in hive-144064 •  3 years ago 


কলেজের পাশ দিয়ে বাসস্ট্যান্ড যাবার সময় ছেলে মেয়েরা আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের উপর গড়িয়ে পড়ছে। কেউ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলে সাথেরজন তাকে খোঁচা দিয়ে আমাকে দেখিয়ে হাসছে। কেউ শব্দ করে হাসে। কেউ মুচকি হাসে। কেউ হা হা হো হো করে হাসে। মনে হচ্ছে কতদিনের জমানো হাসিগুলো এখন হেসে নিচ্ছে। হাসির কারণ হলো, আমি আমার চুলে তিনটা ঝুঁটি বেঁধেছি। বাচ্চা বয়সে মেয়েদের মাথার চুল দুই তিন আঙ্গুল পরিমান বড় হলে যেরকম ঝুঁটি বাঁধে ঠিক তেমন। একটি নয়, দুটি নয় তিন তিনটি ঝুঁটি বেঁধেছি রাবারের ভ্যান দিয়ে। মাঝখানে কলাগাছের মত দাঁড় করিয়ে বেঁধেছি একটা, আর সামনের দিকে গরুর শিং এর মত দুইটা। যে দেখছে সে আর না হেসে থাকতে পারছে না। আমি চারিদিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকিয়ে মানুষের হাসিকে সমর্থন জানাচ্ছি। কিন্তু কেউ আমাকে কিছুই বলছে না। কিছু জিজ্ঞেসও করছে না। চারিদিকে কত মানুষের প্রাণখোলা হাসি।

গতকাল অবশ্য অনেকে অনেক কিছু বলেছে। কারণ গতকাল ঝুঁটি বাঁধিনি। বাচ্চারা যেমন ভুল করে দুই পায়ের জুতো উল্টা করে পরে। তেমনি আমিও দুই পায়ের জুতো উল্টা করে পরেছি। ডান পায়ের জুতো বাম পায়ে আর বাম পায়েরটা ডান পায়ে। কয়েকজন আমাকে দেখে ডেকে বলেছিল, কী ব্যাপার পিচ্চি আজ কী রং ঢং নিয়ে বের হয়েছো নিজেকে জোকার বানাতে?
আমি অবশ্য কিছু বলিনি। নিচের দিকে তাকাতেই আমার দেখাদেখি সবাই আমার পায়ের দিকে তাকায়, ব্যাস হয়ে গেল। এত বড় একটা যুবক ছেলে দুই পায়ের জুতা উল্টা করে রাস্তায় নেমেছে এটা ভেবেই তো মানুষ হেসে কুটিকুটি। ছোট ছেলে মেয়ে থেকে যুবক কিংবা বৃদ্ধ কেউ বাদ যায় না হাসি দিতে। কেউ কপাল কুচকে হয়তো বিড়বিড় করে আমাকে গাধা বা পাগল বলে ঠোঁট নাড়িয়ে যাচ্ছে। তাতে আমার কোনো যায় আসে না। আমার যা ভালো লাগে আমি তাই করব। আমি তো আর কারো পাকা ধানে মই দিচ্ছি না। কারো গরম ভাতে পানিও ঢেলে দিচ্ছি না। লোকে আমাকে দেখে হাসল না পাগল বলল তাতে আমার কোনোকিছু যায় আসে না।

আমি এই শহরে নতুন। সপ্তাহখানেক থেকে চলে যাব নতুন কোনো শহরে, বা নিজের বাড়িতে। আবারো হয়তো কোনো একসময় চলে যাব অচেনা কোনো নতুন শহরে। পেছন থেকে হয়তো কেউ ডাকছে। আমি পেছনে না তাকিয়ে অনুমান করার চেষ্টা করছি কন্ঠটা কোনো মেয়ের নাকি কোনো মহিলার। আমরা পনেরো ষোল বছরের মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে তাকেও মহিলা বলি। অথচ বাইশ তেইশ বছরের তরুণীকে দিব্যি মেয়ে বলেই সম্মোধন করি। পেছন থেকে আবারো ডাক আসছে, "এই যে ভবঘুরে দাঁড়ান না একটু।"
আমি তবুও পেছন ফিরে না তাকিয়ে হাঁটার গতি কমিয়ে দিয়েছি। মেয়েটি আমার পাশাপাশি হাঁটছে। আমি আড়চোখেও একবার তাকাইনি। মেয়েটি বলছে, আপনি কোনো কারণে শুনতে পান না? আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। মেয়েটিও আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমি বললাম, চলতি পথে কথা বললে শরীরের অনেক শক্তি ক্ষয় হয়। তাই থেমে কথা বলতে চেয়েছি। এবার বলুন কেন ডেকেছেন?
মেয়েটি বলল, আমি আপনার সম্পর্কে জানতে চাই। "কে আপনি? তিন চারদিন ধরে বাচ্চাদের মত আচরণ কেন করছেন রাস্তায় রাস্তায়। দেখে তো মনে হচ্ছে আপনি মানষিকভাবে সুস্থ একজন মানুষ।"

মনে মনে ভাবছি, এই প্রথম কেউ আমার সম্পর্কে জানতে চাইল। মানুষের তো এই যুগে সময়ই হয় না অন্যকে নিয়ে ভাববার। আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম, "আমি শাওন। তবে আপনার ভবঘুরে ডাকটি ভালো লেগেছে। আমি বাচ্চাদের মত এমন করছি না আমাকে বাচ্চা ভাবতে পারেন। সবার ভিতরে একটা ছোট বাচ্চা থাকে। আমি আমার ভিতরের বাচ্চা স্বভাবটাকে বাইরে নিয়ে এসেছি এতটুকুই।"
আমি আবারো হাঁটতে লাগলাম রেলস্টেশনের দিকে। আজ বাড়ি চলে যাব। সামনের মাসে আবার চার পাঁচদিনের জন্য আবার বের হবো অন্য কোনো শহরে। মেয়েটি আবার বলছে, একটু দাঁড়ান না। নয়তো আস্তে হাঁটেন একটু কথা বলি।
-আপনি বলুন, আমি উত্তর দিচ্ছি।
-নাম তো জানলাম। কোথা থেকে এসেছেন? কোথায় থাকেন?
-ওসব বলা যাবে না। শুধু এতটুকু বলতে পারি এখন রেল স্টেশন যাচ্ছি। আজকেই এই শহর ছেড়ে যাব।
-তার মানে কাল থেকে আর আপনাকে দেখতে পাব না?
-হয়তো কোনোদিন দেখা হতেও পারে।

মেয়েটার পেছন ফিরে ইশারা করার কারণে আমিও পেছনে তাকালাম। আরো দুইটি মেয়ে পেছন পেছন আসছে। সাথের মেয়েটি মুচকি হাসি দিয়ে বলল, আমার বান্ধবী। তাদেরও কৌতূহল আপনাকে নিয়ে। আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। তাদের পেছন পেছন নিয়ে হাঁটতে বিরক্ত লাগছে। তাদের কৌতূহল মিটানো হলেই যাব। তাদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম, ঠিক আছে কী জানতে চান বলুন।
বাকি দুই মেয়ে থেকে একজন বলল, "আসলে আজকে নিয়ে চারদিন দেখলাম আপনাকে কলেজের পাশ দিয়ে বাসস্ট্যান্ড হয়ে এদিকে আসেন। আমি অবশ্য দুইদিন দেখেছি। কিন্তু আপনাকে সুস্থ মানুষ মনে হয়। সুস্থ হয়েও বাচ্চাদের মত অদ্ভুত আচরণ আমাদের কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছে।"
আমি তাদের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করলাম..
আমার মাঝেমধ্যেই ছোটবেলায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। সেই অবুঝ বেলায়। যেই বয়সটাতে শত ভুল করলেও বাবা মায়ের কাছে প্রতিবেশির কাছে ভুল মনে হয়নি। তারা ভেবেই নিয়েছে সেই ভুলগুলো করব এটাই বরং সঠিক। জুতো উল্টা করে পড়ব। হামাগুড়ি দিয়ে বালি আর মাটি গায়ে মাখব। একা একা খিলখিল করে হাসব। কেউ ভেংচি দিলে গাল ফুলিয়ে কেঁদে দেব। আমাকে সবাই কোলে নিবে। হাতে ঝনঝনি দিয়ে আমাকে খেলা করতে দিবে। আমি হাসব, আমার হাসি দেখে সবাই হাসবে। আমার ভুলগুলো দেখেও মানুষ হাসবে।
আমি তাই হয়েছি। আমার ইচ্ছে করে করা ভুল দেখেও সবাই কত প্রাণখোলে হাসে। চারিদিকে নাকি দুঃখের ঘনঘটা। মানুষ নাকি হাসতে ভুলে গেছে। বাস্তবতা আমাদের ঠোঁটের হাসি কেড়ে নিয়েছে। সবাই হতাশায়, চিন্তা ভাবনায় হাসতেই পারে না। আমার খুব ইচ্ছে করে সবাইকে হাসিখুশি দেখব। সবাই প্রাণখোলে হাসবে, আনন্দ করবে। দুঃখরা ভয়ে পালাবে। তাই মাসের তিন চারটা দিন অচেনা শহরে গিয়ে মানুষকে হাসাই, হাসি দেখি। এতে আমি খুব আনন্দ পাই। আমি হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালা হতে পারব না। আমি সবাইকে একটু হাসাতে চাই, হাসির কারণ হতে চাই।

আমি আবারো পথ চলতে শুরু করলাম। মেয়ে তিনটি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। স্টেশনের দিকে হেঁটে চলেছি। সামনের মাসে যেতে হবে অন্য কোনো শহরে।

লেখনীর শেষ প্রান্তে,,,,,,,,
writer: Shibli

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Hi, @shiblir233
Make an introduction post in the community to get yourself labeled as Verified Member.

Make sure you add a verification picture in your introduction post

Verification Picture:

Take a selfie while holding a page written Beauty of Creativity with the date and your Steemit username

for more information join us on Discord

It's an automated message, If you already created an introduction post then you can ignore it. Thank You

Hi at first you have to make a introduce post, then you can share your story photogtaphy etc..thanks

It is your own picture that you are using in your post ? If it is not your own picture then add the source of picture. Otherwise it will consider as plagiarism content.