আমার ভাই এই বছরের প্রথম দিন চিরতরে বিদায় নিলো।

in hive-153970 •  4 days ago  (edited)

সকল স্টেমিট সদস্যকে আজ একটা শোক সংবাদ জানতে বাধ্য হলাম । আশাকরি আপনারা আমাকে মার্জনা করবেন।

1000015231.pngMy cousin Aloke Saha, 1987 captain of East Bengal Club, passed away screenshot

এই ছবিটার দিকে আমি গত দুই দিন ধরে তাকিয়ে আছি। ওর পরিচয় ছবির তলায় লেখা রয়েছে। ওর থেকে কেউ আমার প্রিয় হতে পারবে না। আমাদের জ্ঞান হওয়ার দিন থেকে দুজন সর্বক্ষণ একসঙ্গে বড় হয়েছি। আমরা কুমারটুলি পার্কে ফুটবল খেলতাম। আমাদের সঙ্গে প্রনব রায়ও খেলতো। প্রনব রায়ের বাড়ি পার্কের পাশে ছিল। ও পরবর্তী কালে ভারতীয় দলের টেস্ট প্লেয়ার ছিল। আমরা ওর বাড়িতে ডিউজ বল দিয়ে ক্রিকেট খেলেছি। ওর বাবা ছিল পঙ্কজ রায়। উনি ও বিনোদ মানকরের ওপেনিং জুটি টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচে ৪১৩ রানের বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন। এই ম্যাচটি হয়েছিল মাদ্রাজে (অধুনা চেন্নাই) নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এই রেকর্ডটা ২০০৮ সালে অবধি কেউ ভাঙতে পারেনি। উনি অলোককে খুব পছন্দ করতেন। উনি নিশ্চয়ই অলোকের মধ্যে কোন সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন। তখন আমাদের ঐসব বোঝার মত বোধদয় হয়নি। এই সব বিষয় আমাদের বাড়িতে কেউ জানতো না।

খুব অল্পদিনের মধ্যেই আমরা শোভাবাজার ছেড়ে বরানগরের বাড়িতে চলে এলাম। আমরা বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনে স্কুলে ভর্তি হলাম। অলোক ও আমি একি ক্লাসে একি সেকশন পড়তাম। ও আমার থেকে পড়াশোনায় ভালো ছিল। ও ক্লাস ফোরে বৃত্তি পরীক্ষা প্রথম ডিভিশনে উতির্ন হয়। কিন্তু ওর খেলাধুলার প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল। স্কুলে খেলাধুলায় খুব সুনাম অর্জন করেছিল। ও ওর বাবাকে খুব ছোট বেলায় হারায়। ওরা চার ভাই ও দুই বোন ছিলো। আমারও জেঠামশায়ের কথা মনে নেই। আমার বাবা সবার বড় হওয়ায় সংসারের দায়িত্ব বহন করতেন। কিন্তু আমার বাবা বা দাদাদের ওর খেলাধুলার প্রতিভাকে আকর্ষণ করতো না।

আমার বাবা আমাদেরকে প্রতি রবিবার অংঙ্ক করাতেন এবং বিকেলে ধর্মতলায় বেড়াতে নিয়ে যেতেন। অনাদির মোগলাই‌ বা (Ralli's) রালিস কূলপি মাঝে মাঝে প্রাপ্তি হত। আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা ছাড়া দুজন ঘুড়ি ওড়াতাম বা বাড়ির প্যাসেজে ক্রিকেট খেলতাম। এই ভাবে আমরা বড় হতে লাগলাম। একদিন আমরা স্নান করার টিনের মগ নিয়ে লোফালুফি খেলতে খেলতে ওর মাথা ফেটে গিয়েছিল। কয়েকটা স্টিচো হয়েছিল।

১৯৭০ সালে নকশাল আন্দোলনের জন্য আমাদের বাৎসরিক পরীক্ষা হল না। আমাদের স্কুল বন্ধ হয়ে গেল। আমি ১৯৭১ সালে আমার বাবা মার গুরুদেবের আশ্রমে পুরুলিয়া চলে গেলাম । এই প্রথম আমার বিচ্ছিন্ন হলাম।

এবার আমরা চিরতরে বিচ্ছিন্ন হলাম।

আমার প্রতিবেদনটি পাড়ার জন্য ধন্যবাদ 🙏🏾।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

অলোক সাহার মৃত্যুতে সত্যি আমি অনেক বেশি ব্যথিত। অলোক সাহাকে কেন্দ্র করে দারুন স্মৃতি এবং অনুভূতি আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। যাহোক সৃষ্টিকর্তা তাকে যেন শান্তিতে রাখেন এমনটাই আমি প্রত্যাশা করি।

আপনার আন্তরিক সহানুভূতির জন্য ধন্যবাদ 🙏🏾।