বিভিন্ন রঙের ফুল আমরা দেখতে পাই। এর মাঝে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি, সাদা- কত রঙের ফুল আছে। কিন্তু নীল ফুল মানেই অপরাজিতা। আরও চমকপ্রদ নাম রয়েছে ফুলটির, এর বৈশিষ্ট্যও অনেক। অপরাজিতা ফুলটি Popilionaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং ইংরেজি নাম ‘বাটারফ্লাই পি’। এই ফুল এসেছে মালাক্কা দ্বীপ থেকে তাই অপরাজিতার বৈজ্ঞানিক নাম ক্লিটোরিয়া টারনেটিকা। ফুলেরভেতরের আকৃতির জন্যই এই নামরাখা হয়েছে। কেরালায় একে বলে ‘শঙ্খপুষ্পী’ আবার গাঢ় নীল বলে একে ‘নীলকণ্ঠ’ নামেও ডাকা হয়।
এই ফুলটা সাধারণত নীল রঙের হয়ে থাকে তবে নীল ছাড়াও সাদা এবং হালকা বেগুনি রঙের ফুল হয়ে থাকে, এই ফুলের ভেতরের দিকটা সাদা বা ঈষৎ হলুদ রঙের হয়ে থাকে। লতানো এবং সবুজ পাতা বিশিষ্ট গাছে এই ফুল হয়ে থাকে, তবে এই ফুলে কোনো গন্ধ নেই কিন্তু তারপরেও রঙের বাহারে ফুলটি অনন্য।
অপরাজিতা গাছের হালকা সবুজ রঙের পাতার গড়ন উপবৃত্তাকার। ঝোপজাতীয় এই গাছে প্রায় সারা বছর ফুল ফোটে, বহুবর্ষজীবী এ লতা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। লতা জাতীয় গাছে এক পাপড়ি ও দুই স্তর পাপড়িতে এই ফুল হয় এবং লতা জাতীয় উদ্ভিদ হওয়ায় কোন কিছুতে ভর দিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।
বর্ষাকালে স্যাঁতস্যাঁতে ভেজা ধরণের মাটিতে অপরাজিতা ফুল গাছের ডাল রোপণ করতে হয়। বর্ষাকালে স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে এই গাছ ভাল হয়। ছোট ছোট ধূসর ও কালো বর্ণের বিচি রোদে শুকিয়ে স্যাঁতস্যাঁতে নরম মাটিতে রোপণ করতে হয়। রোদে অবশ্যই ভালো ভাবে শুকিয়ে তারপর বাড়ির আঙিনায়, টবে,বাগানে, ছাদবাগানে এ গাছ লাগানো যায়। আশেপাশের উঁচু গাছ বেয়ে এটি বেড়ে ওঠে, এটি শোভাবর্ধনে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে, বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল ও কোনো কোনো অফিসের বাগানে এই ফুলের গাছ রয়েছে।
এই ফুলের বয়স প্রায় ৫ কোটি বছর। নীল অপরাজিতা বারো মাস ফোটলেও শীতে কমে যায়। অপরাজিতা কেবল সৌন্দর্যে নয়, ওষুধি গুণেও অতুলনীয় কারণ এর ফুল, পাপড়ি, মূল ও গাছের লতা নানা ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।