আসসালামু আলাইকুম,
আশা করি সকলে ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আজকে নতুন আর একটি ব্লক নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হলাম। আজকের এই ব্লগে মুলত গত ১ জুন কি হল সেই বিষয়টা নিয়ে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। আগের দিনের ব্লগে বলেছিলাম আমার একটা জব ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য চট্টগ্রামে আসার কথা। যেহেতু আগের দিন আসতে পারিনি তাই সকালে আসার প্ল্যান ছিল। যেহেতু সকাল ৯ টা থেকে ইন্টারভিউ ছিল রাতে ঘুমানোর আগে মোবাইল এলাম দিয়ে রাখি সকাল ৪:০০ টায়। ৪:০০ সময় যখন মোবাইল এলাম বাজে ঘুম থেকে উঠে তখনই গোসল করে নিলাম এবং তখন ফজরের আজান হচ্ছিল। ফজরের নামাজটা আদায় করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য তৈরি হতে শুরু করলাম। চারটা ত্রিশ মিনিটে বাসা থেকে বাইর হলাম। বাসা ২ মিনিটের রাস্তা মেইন রাস্তার। প্রধান সড়কে কিছুক্ষন অপেক্ষা করছিলাম বাসের জন্য। সকালে প্রথম টিপে যে গাড়ি গুলো পাওয়া যায় সেগুলোর জন্য। ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পর দেখতেছি কোন গাড়ি আসছে না। তখন একটু সামনের দিকে হাটা শুরু করলাম। কিছুদুর যেতেই দেখলাম সৌদিয়া একটা বাস আসতেছে। সিগনাল দিলাম। সাথে সাথে গাড়ি দাড়িয়ে গেল। কোথায় যাব জানতে চাইল। চট্টগ্রাম বলাতে গাড়িতে তুলে নিল। গাড়িতে উঠেই একটু পর ঘুম। মনে মনে ভয় হচ্ছিল সময়মত পৌঁছাতে পাব কিনা। কারন দিনের বেলা ৪-৫ ঘন্টা লাগে চট্টগ্রাম যেতে। ৭.৪০ মিনিটের দিকে ঘুম ভাংগে। ততক্ষণে চট্টগ্রাম পৌঁছে গেছি। ২ ঘন্টা ৩৫ মিনিটের মত সময় লেগেছে। সকালে রাস্তা ফ্রি থাকে তাই দ্রুত চলে এসেছে।
আমার আগের প্রজেক্টের এক কলিগও আজকে ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। আমি গাড়ি থেকে নেমে মোবাইল চেক করতে গিয়ে দেখলাম তার ম্যাসেজ। সে হোটেল জামানে নাস্তা করতে গেছে। আমিও সকালের নাস্তা করার চিন্তা করছিলাম। তার মেসেজ দেখে হোটেলে গেলাম। নাস্তা শেষ করে ২ জনের অফিসের দিকে রওনা দিলাম। ৮:৪০ এর সময় অফিসে ডুকি। পুরনো লোকজন সবার সাথে একে একে দেখা হতে লাগলো। সবাই বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন, বিভিন্ন জিজ্ঞাসা করতে লাগল। সব শেষে লিখিত পরীক্ষার জন্য সকাল ১০ টার দিলে ডাকা হল। ১০-১১ টা ১ ঘন্টা লিখিত পরীক্ষা দিলাম। আবার ১২ টা থেকে ভাইভা পরীক্ষার সময় দেওয়া হল। ১:৪০ এর সময় ভাইভা শেষ করে অফিস থেকে বাহির হলাম। আমি চট্টগ্রাম আসার ভার্সিটির চ্যাট গ্রুপে একটা মেসেজ দিয়েছিলাম কেউ ফ্রি থাকলে দেখা করব। কয়েকজন তাদের এলাকায় যাওয়ার দাওয়াত দেয়। কিন্তু সেগুলো একটু দূরে। দুই বান্ধুবী দেখা করবে বলে। আমি যেখানে স্থান দিব তারা সেখানে আসবে। আমি চকবাজার স্থান দিলাম। যেহেতু আমি আনোয়ারা চলে আসব তাই কাছাকাছি হলে আমর জন্য ভাল হয়। তাই পরীক্ষা দিয়ে চকবাজার চলে আসলাম। মামুনির কাচ্ছি এমন একটা নাম মনে হয় সেখানে ডুকলাম দুপুরের খাবার খেতে। আক্কনি অর্ডার দিলাম। সেখানে খাবার মেন্যু ছিল শুধু ২ টা খাচ্ছি আর আক্কনি। ১৯০ টাকা হল। তবে আমি আশা করি নাই ১৯০ টাকা বিল হবে। ১২০-১৫০ টাকা এমন কিছু মনে করেছিলাম। ২:৪০ এর মত সময় হল। বান্ধুবীরা আসবে ৪:৩০। এখনো অনেক সময়। খাবার আগে জোহরের নামাজ টা আদায় করে নিয়েছিলাম। সময় কাটানোর জন্য চট্টগ্রাম কলেজের মাঠের দিকে গেলাম। মাঠের বাহিরে একটা যাত্রী ছাউনি আছে সেখানে গিয়ে বসলাম। সামনে একজন লেবু শরবত বিক্রি করছে। প্রচন্ড রকম গরম পড়ছে। তার কাছে থেকে এক গ্লাস শরবত কিনে খেলাম। কিছু সময় সেখানে বসে ছিলাম।
বেশিক্ষন বসে থাকতে ভাল লাগছিল না। মাঠে কেউ কেউ অ্যাডা দিচ্ছে, আবার কেউ অনুশীলন করছে। চিন্তা করলাম ভিতরে গিয়ে বসি। ফুটপাতের এক পাশ ধরে হাটা শুরু করলাম। পুর্বপাশের শেষ মাথা এসে দাড়ালাম। কোস তার ছাত্রদের ব্যাটেং টেকনিক শিখানোর চেষ্টা করছে। দাড়িয়ে দাড়িয়ে ৩০ মিনিট সেগুলোই দেখলাম। আর মনে মনে ভাবনা আসছিল এরাই আগামী দিনের তামিম, সাকিব, মুশফিক হবে। প্রায় ৪.২০ টা বাজে তখন। এক বান্ধবিকে কল দিলাম রওনা দিছে কিনা জানতে, তখনো সে রওনা দেয় নাই। আমি হাটতে হাটতে বালি অর্কিডের দিকে আসলাম। আমাদের মুলত এখানে সবার মিট করার কথা আজকে।
আমি ভিতর ডুকি। হাটাহাটি করতে থাকি আর বার বার ঘড়ির দিকে দেখতে থাকি। ৫:১০ এর দিকে এক বান্ধুবি নিপু আসল। নিপুর বাসা কাছেই ছিল। ২ জন ফুড কোটে গিয়ে বসলাম। নিপুর সাথে ১১ বছর পর দেখা। এমবিএ এর পর আর দেখা হয়নি। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অল্প অল্প কিছু কথা
হচ্ছি। ৫:৩০ এর অন্য বান্ধবী ও চলে এসেছে। সুমি তার নাম। ৩ জন সাথে অনেক বছর পর। অনেক কিছু আলোচনা হল।
অনেক তো কথা বার্তা হল। এবার খাওয়া দাওয়ার পালা। ভার্সিটিতে থাকা কালানী সময়ে আমি প্রায় বান্ধবীদের টাকা নাস্তা খেয়ে পার করেছি। আজকেও সেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করলাম এবং সফলও হলাম। ২ বান্ধবি মিলে নাস্তা অর্ডার করে এসেছে। আমি জাস্ট নিয়ে আসতে গেছি। এর মাঝে নিপুর মা নাকি কল দিয়ে ছিল।আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে। সুমিও চাইছিল যেতে।
আমরা নাস্তা শেষ করে কিছুক্ষন বসলাম। আন্টির জন্য আমরা যা খেলাম সেগুলো এক সেট নিলাম। তারপর নিপুর বাসায় গেলাম। ভার্সিটিতে থাকাখালীন সময়ে প্রায় নিপুর বাসায় যাওয়া হত। আন্টি খুব দেখতে পারত। বাসায় ভাল রান্না হলে আমার জন্য বক্সে করে পাঠিয়ে দিত। বান্ধবিদের ভিতর সুমি আর নিপুর বাসায় আমার বেশি যাওয়া আসা হয়েছে। সুমির মা ও ভীষণ আদর করে আমাকে।
ফাইনালি আমরা ৩ জন নিপুর বাসায় আসি। আন্টি আমাকে দেখেয় জড়িয়ে ধরে ফেলে। তারপর শুরু হয় আমাদের আড্ডা। পুরাতন অনেক কথা চলে। প্রায় ২ ঘন্টা ছিলাম। আসা সময় আন্টি ছবি নিতে চাইল স্বৃতি হিসেবে রাখার জন্য। ২ ঘন্টায় অনেক মজা করেছি। তারপর সুমিকে নিপুর বাসা থেকে বাহির হলাম। একটা সিএনজি ঠিক করি সুমির বাসা পর্যন্ত। সুমিকে কিছু দূর এগিয়ে দিয়ে আমি গ্রামের পথে রওনা দিলাম।