আসসালামু আলাইকুম ,শুভ সকাল, সকলেই আশা করি ভালো আছেন, আমিও ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের জন্য একটি গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি।আশা করি সকলের ভালো লাগবে, চলুন শুরু করা যাক।
রাত থেকে বৃষ্টি। সকালে আধোঘুমে শুয়ে আছে নীল। নীলের ক্লাস আছে কিন্তু বৃষ্টির কারণে উঠতে মন চাচ্ছে না। সকাল সকাল এমন ঠান্ডা পরিবেশে বিছানা থেকে উঠতে কি আর ভালো লাগে? সকাল ১০ টায় ক্লাস, ৯ টার সময় নীলের মনে হলো উঠে ফ্রেশ হওয়া উচিত। হাজার হোক সে এখন গ্রেজুয়েট, এতো সকাল অবধি শুয়ে থাকা মানায় না। মাস্টার্স পরীক্ষার ডেট দিয়ে দিয়েছে, ক্লাস হচ্ছে রেগুলার। ক্লাসও করা উচিত, ৬০% এর নিচে উপস্থিতি থাকলে স্যাররা পরীক্ষা দিতে দিবেন না বলে দিয়েছেন।
নীলের রুমে মোট চারজন, সবার মধ্যে সে সিনিয়র। তার বিছানা জানালার ধারে, এখান থেকে বসে জানালা দিয়ে হলের পুকুর দেখা যায়। পুকুরে বৃষ্টি পড়া দেখতে নীলের ভালো লাগে, কিন্তু আজকে বৃষ্টি দেখার সময় নেই একদম। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে তাকে যেতে হবে ক্লাসে, ১২ টায় ক্লাস টেস্ট আছে একটা, অবশ্যই এটেন্ট করতে হবে, নইলে ফাইনাল পরীক্ষায় একটু আধটু নাম্বারের জন্যই অনেক পিছিয়ে পরতে হয়।
বিছানা ছেড়ে মশারী তুলে নিলো সে। ফ্রেশ হয়ে ক্যান্টিনে আজ আর খাওয়ার মতো সময় নেই তার, ১০ টার ক্লাস ধরতে হবে।
ছাতা নিয়ে হেটে ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো নীল।মাথায় তার এক ঝাক চিন্তা ঘুরছে। তার মধ্যে প্রথম ভাবনা হলো যদি মানুষের তিন বেলা না খাওয়া লাগতো তাহলে সে খাওয়ার টাইমে কি করতো? খাওয়া নিয়ে চিন্তার কারণ হলো নীলের তিন বেলা খেতে মনে থাকে না, সকালে খেলে দুপুরে খাওয়ার নাম নাই, একেবারে রাতে খাবে বা কখনো দুপুরে খেয়েছে কিন্তু রাতে খেয়েছে কিনা মনে নেই।
রাস্তায় কাউকে দেখলে ভাবে সে যদি ওই লোকটার পজিশনে থাকতো তাহলে সে কি করতো? সে এখন ক্লাসে যাচ্ছে তাই করতো? নাকি লোকটা এখন যা করছে তা করতো? উত্তর মিলে না।
চিন্তা করতে করতে নীল একসময় তাদের বিল্ডিং এ এসে পৌঁছে গেছে। তাদের বিল্ডিং নিয়ে তার একটা অভিযোগ আছে। অভিযোগ হলো বিজ্ঞান বিভাগের বিল্ডিং গুলো স্কয়ার আকৃতির, চারদিকে ক্লাস আর অফিস, মাঝখানে জায়গা আছে সেখানে বাগান করা হয়, বসার জায়গাও আছে কিন্তু তাদের বিল্ডিং সচরাচর বিল্ডিং যেমন হয় একমুখী সেরকম। যাক এইখানেই তাকে চার বছরের অনার্স পাঁচ বছরে শেষ করতে হয়েছে, এখন মাস্টার্সও করতে হচ্ছে।
এসময় মনে হলো সকালে খাওয়া হয়নি, হাতে আর সময় আছে ১০ মিনিট। নীল খুব দ্রুত খেতে পারে, তাই তার কাছে ১০ মিনিট অনেক সময়। সে তাড়াতাড়ি গেলো বিল্ডিং এর পেছনে খাবার দোকানে, সেখান থেকে এক প্লেট খিচুড়ি আর একটা পেয়াজু নিয়ে খেয়ে নিলো।
ক্লাস হবে ২য় তলায়, ক্লাসে যাওয়ার পথে কোনো বন্ধু বান্ধবের সাথেই দেখা হলো না, ক্লাস টেস্ট থাকলে ছাত্ররা একটু কম আসে। যাই হোক সে গিয়ে দেখলো স্যার এসে বসে আছেন, সাথে টিউটোরিয়াল এর খাতা। কি ব্যপার!! আজ তো টিউটোরিয়াল ১২ টায়, তাও অন্য স্যার নিবেন, বুঝতে বাকি নেই স্যার আজকে সাররাইজ টেস্ট নিবেন, মানে হলো স্যার মাঝে মাঝে হুটহাট এরকম পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। পরীক্ষা ভালোই হলো, স্যার তাদের দিয়েই খাতা দেখালেন। ২০ থেকে সে ১৬ পেয়েছে এতে সে মহাখুশি, না পড়ে ১৬ পাওয়া অনেক।
এখন বিরতি। আরেকবার ১২ টায় আরেক টিউটোরিয়াল আছে। নীল তখন তিন্নিকে ( নিল এর ফ্রেন্ড) সাথে নিয়ে চা খেতে গেলো। কয়দিন হলো তিন্নি আর নীলের পরিচয়, দুজন ক্লাসমেট, সব সময় এক সাথেই থাকে। চা শেষ করে সেমিনারে গেলো পড়তে,রিভিশন দিতে হবে। আজকে পরীক্ষা হবে ২য় অধ্যায়ের উপরে। দুজনেই সিরিয়াস পরীক্ষা নিয়ে, নীলের চেয়ে তিন্নি বেশিই সিরিয়াস। এক একটা পরীক্ষা আসে আর তিন্নির সিরিয়াসনেস দেখে নীল ভাবে এরকম সিরিয়াস সেও একদিন হবে, কিন্তু সেই একদিন আর কোনোদিন ফিরে আসে না।
অবশেষে ১২ টা বাজতে চললো, ক্লাসটেস্ট শুরু হবে। দুজনেই উঠে রওনা দিলো যাওয়ার জন্য। নীল আজকে কোনোরকম পরীক্ষা দিবে বলে বেশি পড়েনি, কিন্তু তাও পরীক্ষা ভালোই হলো, সকলের পরীক্ষাই ভালো হয়েছে। পরীক্ষার পরে তিন্নি আর নীল গেলো সিঙারা খেতে, ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে একটা ঝুপড়ি দোকানে এসে উঠলো তারা,টুল নিয়ে বসে খাবার ওর্ডার দিলো তারা। শুধু সিঙারায় হবে না, তারা চা নিলো,লেবু চা,নাসির ভাই লেবু চা অস্থির বানায়। খাওয়া শেষে তারা হলের দিকে যাওয়া শুরু করলো,প্রতিদিন নীল তিন্নিকে এগিয়ে দেয় তার হল পর্যন্ত তারপর নিজের হলে যায়, আজও যাচ্ছে এগিয়ে দিতে। যেতে যেতে নীল ভাবছে তিন্নি তার জন্য কতটা ভাবে? হলে গিয়েই ভুলে যাবে? নাকি মনে রাখবে তার কথা। মনে না রাখলে নাই তাতে তার কি! ভাবতেই নীলের ভেতরে কিরকম কেঁপে উঠল, নাহ নিজেকে ফিরিয়ে আনতে হবে, সে বন্ধুর বাইরে আর কিছু ভাবতে পারছে না তিন্নিকে।
তিন্নি ছাড়া নীলের আর তেমন বন্ধু নেই ক্লাসে, তিন্নিরও নীল ছাড়া আর কোনো বন্ধু বান্ধবী ছিলো না, সেদিক দিয়ে দুজন দুজনকে প্রচুর টাইম দিতে পারে। মাঝে মাঝে তিন্নি বলেই ফেলে নীলের সাথে দেখা না হলে ভার্সিটির কিছুই চিনা হতো না তার, সে ডিপার্টমেন্ট আর নিজের হল ছাড়া আর কিছুই চিনতো না, তখন শুনে নীলের খুব আনন্দ পায়।
নীল ফেরার সময় স্টেডিয়াম মার্কেটে দেখলো খুচরা খাতা বিক্রি হচ্ছে, দাম কমই, নীলের নতুন নতুন খাতা কিনতে ভালো লাগে, কিন্তু লিখতে ভালো লাগে না, তার গান শুনতে ভালো লাগে কিন্তু সময় হয়ে উঠে না, সারাদিন যে কি নিয়ে সে ব্যস্ত থাকে তা সে নিজেও বের করতে পারছে না। আজ খাতা থাকুক, এই বলে সে হলের দিকে যাওয়া শুরু করলো।
এখন নীল ভাবছে তিন্নি কি করছে? রান্না? খাওয়া দাওয়া? নাকি অন্যকিছু? তিন্নি রান্না করছে হয়তো, তিন্নি রেগুলার রান্না করে আর নীলকেও বলে রান্না শিখতে, এতেএ নাকি খরচ কম হয় বাইরে খাওয়ার চেয়ে।
নীলের মন চাচ্ছে ভাত আর সবজি রান্না করতে, হিটারে বসিয়ে দিলেই হয়ে যায় কিন্তু তার এখন ক্লান্ত লাগছে,পরীক্ষার পরে ক্লান্ত লাগে। ইদানীং ক্যান্টিনের খাবার ভালো করেছে আগের তুলনায়, তখন খাওয়া না গেলেও এখন ক্যান্টিনের খাবার খাওয়ার উপযুক্ত তাই রান্নার আয়োজন আপাতত বাদ দিলো সে।
রুমে এসে আবার নীল তিন্নির কথা ভাবছে, তিন্নিকে ঘুড়ির মতো মনে হয় তার, যার নাটাই সে ধরতে পারবে না হয়তো কোনোদিন। নীল ভাবছে সুতো ছিড়ে গেলে ঘুড়ি চলে যায় অন্য কোথাও, অথচ নাটাইয়ের সাথে তার ছিল কত সখ্যতা।
আজ আকাশে উঠে আরও কত ঘুড়ির সাথে দেখা হয়েছে,মানুষ গুলো নিচ থেকে কত অবাক হয়ে দেখছিলো, যখন ঘুড়ি নিচের দিকে পরতে শুরু করে এই পরে যায় এই পরে যায় বলে মানুষ হৈ হৈ করে, আবার যখন ঘুড়ি উপরে উঠে তখন উঠার পরে মানুষগুলোরআনন্দিত চোখ গুলি কেমন ছিলো সে সব গল্প হতো নাটাইয়ের সাথে ঘুড়ির...। কিন্তু যখন কোন বন্ধন থাকে না তখন কি নাটাই ঘুড়ির কথা মনে রাখে? বা ঘুড়ি নাটাইয়ের? যদি তিন্নির সাথে নীলের কোনো বন্ধন না হয় কোনোদিন তাহলে তিন্নি তাকে ভুলে যাবে? নতুন ঘুড়ি এসে যোগ হয় নাটাইয়ের সাথে কিন্তু পুরুনো ঘুড়ির কথা কি এত সহজে ভুলা যায়?তিন্নির ব্যপার সে বলতে পারছে না, তবে নীল ভুলবে না। একজন আদর্শ মানুষ মনে হয় তিন্নিকে, যে নীলকে কোনো কাজে সহযোগিতা করতে কখনো পিছপা হয় না।
ঘুড়ি যিনি চালান তিনি কি কখনো ঘুড়ি আর নাটাইয়ের সম্পর্ক খেয়াল করেন? এসব ভাবতে ভাবতে নীলের ঘুম এসে গেছে, ঘুমানো উচিত, ক্লান্ত থাকলে নীল এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে আরও ক্লান্ত হয়ে যায়। হালকা ঠান্ডা লাগছে, বৃষ্টি হচ্ছে বাহিরে, নীল কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পরলো। একটু ঘুমানো উচিত, আজকে বেশিই হাবিজাবি ভেবে ফেলেছে।
আজকে এই পর্যন্তই ,অন্যকোনোদিন অন্যকোনো গল্প নিয়ে হাজির হবো। সকলকে আন্তরিক ধনবাদ।
thank you so much for sharing a nice article
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Greeting friend @junaidahmed, thank you for sharing your valuable post with us in our community. We take Crypto related posts, thediarygame, art/drawing, Papercraft, Photography, Travel, Recipe & Community Contest posts more seriously in our community. So I request you to share with us those posts that you can.
Join our community discord server for details: https://discord.gg/Yr3HKtD9S8
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit