আসসালামু আলাইকুম
আরো একটি নতুন বিষয় নিয়ে পুনরায় আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি।
আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন সবার জন্য অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা রইলো।
আমাদের চট্টগ্রাম বিভিন্ন ঐতিহ্য জন্য বিখ্যাত। চট্টগ্রামের অনেকগুলো ঐতিহ্যের মধ্যে অন্যতম একটি হলো বৈশাখী মেলা ও বলি খেলা উদযাপন। প্রতিবছর বৈশাখ মাসে বৈশাখী মেলার পরে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘির ময়দানে বলি খেলার আয়োজন করা হয়। এই বলি খেলার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে চলে আসে। সাধারণত তিনদিন পর্যন্ত এই মেলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু তিন দিনের জন্য নির্ধারণ করা থাকলেও মেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় সাত দিনের মতো এই মেলা পরিচালনা করা হয়। চট্টগ্রামের আন্দর কেল্লা থেকে শুরু করে একদম কোতোয়ালির মোড় পর্যন্ত এই মেলা বসে। এই মেলাতে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন রকমের পণ্যসহ বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অনেক রকমের জিনিসপত্র যেটা বাঙালির ঐতিহ্যকে ফুটে তুলে। এই মেলায় অনেক অনেক রকমের জিনিস দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো আমরা সবসময় স্বাভাবিক বাজারে দেখতে পায় না তাই অনেক মানুষ এখান থেকে হরেক রকমের সুন্দর জিনিস কেনাকাটা করার জন্য আসে। চট্টগ্রামের বলি খেলা তৈরি করার পেছনে রয়েছে সুন্দর একটি ইতিহাস।
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর এই দেশে ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং একই সঙ্গে বাঙালি যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর বলী খেলা বা কুস্তি প্রতিযোগিতার প্রবর্তন করেন। ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলীখেলার সূচনা করেন তিনি। ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামী-দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন।সেই থেকে বলি কলা আর জয় পচালন শুরু হয়েছিল সেটা বর্তমান যুগ পর্যন্ত ধরে রাখা হয়েছে। এখন পেশাদার বলির (কুস্তিগির) অভাবে বলিখেলার তেমন আকর্ষণ না থাকলেও জব্বারের বলীখেলার মূল উপজীব্য হয়ে উঠেছে মেলা। তাই অনেকে বলীখেলার পরিবর্তে একে বৈশাখী মেলা হিসেবেই চিনে। জব্বার মিয়ার বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অহংকারে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় লোকজ উৎসব হিসেবে এটিকে চিহ্নিত করা হয়। খেলাকে কেন্দ্র করে তিন দিনের আনুষ্ঠানিক মেলা বসার কথা থাকলেও কার্যত পাঁচ-ছয় দিনের মেলা বসে লালদীঘির ময়দানের চারপাশের এলাকা ঘিরে।
জব্বারের বলী খেলার পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন স্থানে যেমন কক্সবাজারে ডিসি সাহেবের বলী খেলা, সাতকানিয়ায় মক্কার বলি খেলা, আনোয়ারায় সরকারের বলী খেলা, রাউজানে দোস্ত মোহাম্মদের বলী খেলা, হাটহাজারীতে চুরখাঁর বলী খেলা, চান্দগাঁওতে মৌলভীর বলী খেলা এখনও কোনরকমে বিদ্যমান।
আমাদের দেশের স্থানীয়ভাবে আয়োজিত এই প্রত্যেক অনুষ্ঠানগুলো আমাদের এক একটি ঐতিহ্য। আমাদের উদযাপনের মাধ্যমে এই ঐতিহ্যগুলো টিকে থাকবে এবং আমাদের সমাজের সংস্কৃতি গুলো বারবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।
ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে শেষ পর্যন্ত লেখাটি পড়ার জন্য আরও একটি নতুন লেখা নিয়ে পুনরায় আপনাদের সামনে উপস্থিত হব ইনশাআল্লাহ।