স্বপ্নের দীপ সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ শেষ পর্ব।

in hive-170554 •  2 years ago 
আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভাল আছেন। আরও একটি নতুন বিষয় নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি।সবার জন্য অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা রইলো। সেন্টমার্টিন ভ্রমণ নিয়ে আপনাদের সামনে তিনটি পর্ব উপস্থাপন করেছিলাম। আজকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের চতুর্থ এবং শেষ পর্ব আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি। কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করাটা ছিল আমার জীবনের একটা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার মতো। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর কক্সবাজার শহর হয়ে বসবাস করার পরেও সেনমাটিন যাওয়া হয়নি। তাই হঠাৎ করে যখন একবার সেন্ট মার্টিন গিয়েছিলাম তখন সেটা আমার কাছে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার মতোই ছিল। সেন্ট মার্টিনে একদিন এবং এক রাতের যে সময়টা কেটেছে সেই সময়টা আসলে ভোলার মত সময় নয়। সেন্ট মার্টিনের নাম আর মুহূর্ত থেকে ফিরে আসার মুহূর্তটা আমার স্মৃতির মাঝে এখনো পর্যন্ত টাটকা অনুভূতির মতো আছে।

az_recorder_20230606_204315.jpg

saintmartin[Location Map(https://what3words.com/evade.snails.stresses)

সেন্ট মার্টিনের ভালোলাগা সম্পর্কে যদি বলতে যাই তাহলে এখানে খারাপ কোন অনুভূতি ছিলই না। সেন্ট মার্টিনের খারাপ দিক শুধু একটাই সেটা হচ্ছে এখানের পণ্য সামগ্রীর দাম একটু বেশি। তবে যে কোন দ্বীপ এলাকায় পণ্য সামগ্রী একটু বেশি হবেই কারণ বাহির থেকে জাহাজ কিংবা ডলার করে পণ্য এখানে নিয়ে যেতে হয়। যেহেতু জাহাজ এবং ডলারের কস্টিং খরচ পণ্যের সাথে যোগ করে দাম নির্ধারণ করা হয় তাই পণ্যের দাম একটু বেশি হবেই। এখানের আরো একটা বিষয় আছে যে সেটা হল আপনারা এখানে ভালো কোন রকমের চিকিৎসা পাবেন না। যেহেতু এটা একটা দ্বীপ এলাকা এখানে ভালো মানের কোন হাসপাতাল তৈরি হয়নি ছোটখাটো একটা ক্লিনিক রয়েছে যেখানে প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। এছাড়া সেনমাটিন হতে একটি পর্যটন এবং ভ্রমণ করার মত স্থান আপনারা ভ্রমণ করার চিন্তা ভাবনা নিয়ে যখন সেন্টমার্টিন যাবেন তাহলে সেন্টমার্টিন এর মতো অতুলনীয় জায়গা আর কোনটা এখনো পর্যন্ত আমি দেখিনি। এলাকার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মাছ আপনি পাবেন অন্যান্য জিনিসের তুলনায় মাছ একটু কম দামে পাওয়া যায়। খাবারের মেনুতে আপনি যদি মাংস কিংবা মুরগি রাখেন তাহলে সেটা মাছের তুলনায় দাম একটু বেশি হবে। আমি এবং আমার বন্ধু সেন্টমার্টিন এর মোট চার বেলা খাবার খেয়েছি এর মধ্যে দুপুরের খাবার রাতের খাবার এবং তারপরের দিন দুপুরের খাবার ছিল আমরা চেষ্টা করেছি প্রতিবার রাতে সামুদ্রিক বিভিন্ন রকমের মাছ দিয়ে খাবার খাইতে। কারণ মাংস কিংবা মুরগি জাতীয় খাবার আমরা সব সময় আমাদের এলাকায় খেয়েছেন মার্টিনে গিয়ে আমরা সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার অভিজ্ঞতাটা নিয়েছি। সেন্ট মার্টিনে রয়েছে বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ স্যারের একটি নিজস্ব রিসোর্ট। সমুদ্র বিলাস নামকরণ করে তিনি একটি রিসোর্ট তৈরি করেন এবং এরপর থেকেই সেন্ট মার্টিনে অন্যান্য রিসোর্ট গুলো তৈরি হয়।

IMG_20200311_164430-01.jpeg

saintmartin[Location Map(https://what3words.com/evade.snails.stresses)

সেন্টমার্টিন এতটা জনপ্রিয় দ্বীপ ছিল না কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ তার গল্প এবং সেন্ট মার্টিন কে নিয়ে বিভিন্ন সিনেমা তৈরি করার পর সেন্ট মার্টিনের প্রতি মানুষের একটা আলাদা আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে 2010 সালের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে পর্যটক সেন্টমার্টিন এর দিকে আকর্ষিত হয়েছে এবং ভ্রমণ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকটা জায়গায় আমরা যখন ভ্রমণ করতে চাই সেই জায়গার প্রাকৃতিক ভারসাম্যের উপর আমাদের সকলের নজর দেওয়া উচিত। সেন্টমার্টিন দ্বীপে অতিরিক্ত পর্যটক যাওয়ার কারণে তাদের বর্জ্য ময়লা আবর্জনা ইত্যাদি ফেলে আসার ফলে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক ভারসাম্য আগের তুলনায় অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছে। এ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য এবং মানুষকে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মাঝখানে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সেন্টমার্টিন এ রাত্রে জাপান ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার একটা প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল । কিন্তু পরবর্তীতে সেটা হয়তো বা বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমরা সবাই ঝগড় কোন একটা পর্যটন স্থানে ভ্রমন করতে যায় তখন আমাদের সকলের উচিত সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশের রক্ষণাবেক্ষণ এর দিকে খেয়াল রাখা। যেখানে সেখানে মরা আবর্জনা না ফেলা এবং পরিবেশ নোংরা না করা। কিন্তু আমরা মানুষরা যখন কোন সুন্দর জায়গায় ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাই আমাদের মাথা থেকে এই বিষয়টা সরে যায় এবং আমরা প্রকৃতির প্রতি কোন যত্ন নিই না। এই জিনিসটা যদি আমরা না করি তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমরা যে সৌন্দর্য উপভোগ করে যাচ্ছি সেটা তারা আর উপভোগ করতে পারবে না।

IMG_20200311_151531-01.jpeg

saintmartin[Location Map(https://what3words.com/evade.snails.stresses)

সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার সময় এবং ফিরে আসার পথে আপনার পথের সকল সঙ্গী হবে এক ঝাঁক গাংচিল। প্রতিবছর প্রায় সাত থেকে আটটি জাহাজ সেন্টমার্টিন দ্বীপের দিকে রওনা দেয় এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে টেকনাফ জেঠির দিকে ফিরে আসে। নদীপথ থেকে সাগরে ওটা পর্যন্ত প্রায় এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় এই গাংচিল গুলো প্রত্যেকটা জাহাজের পাশে উড়ে বেড়ায়। এরকম একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় দৃশ্য দেখার জন্য আপনাকে বারবার সেন্ট মার্টিন দিকে ফিরে যেতে ইচ্ছে করবে। এমন মন মুগ্ধকর অনুভূতির কারণেই হয়তবা হুমায়ূন আহমেদ বারবার সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যেতেন এবং নতুন নতুন গল্প সেখানে বসে তিনি লিখে নিয়ে আসতেন এবং আমাদেরকে উপহার দিতেন। আমাদের দেশের প্রত্যেকটা পর্যটন স্থানকে আমাদের যত্ন করে রাখা উচিত। এই পর্যটন স্থানগুলোই আমাদের দেশের সম্পদ এবং এগুলোর মাধ্যমে আমরা মানসিক প্রশান্তি অর্জন করতে পারি। আপনাদের সবাইকে কক্সবাজার সেন্টমার্টিন ভ্রমণের আহবান করছি আমরা যতবারই যেকোনো পর্যটনের স্থানে যখন যাব অবশ্যই আমরা পরিবেশের ভারসাম্য এবং সৌন্দর্য বজায় রাখার চেষ্টা করব।

az_recorder_20230606_204156.jpg

az_recorder_20230606_204228.jpg

saintmartin[Location Map(https://what3words.com/evade.snails.stresses)

ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে শেষ পর্যন্ত লেখাটি পড়ার জন্য আরও একটি নতুন লেখা নিয়ে পুনরায় আপনাদের মাঝে উপস্থিত হব ইনশাল্লাহ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...