আসসালামু আলাইকুম।
আশা করি সবাই ভাল আছেন।
আরও একটি নতুন বিষয় নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি।সবার জন্য অনেক অনেক দোয়া এবং ভালোবাসা রইলো। আমি চেষ্টা করি প্রতিদিন নিত্য নতুন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হওয়ার। কক্সবাজারের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে আপনাদের সামনে একটি ব্লগ লিখে ছিলাম গত তিন চার দিন আগে। কক্সবাজারের এইরকম অনেকগুলো স্থান রয়েছে যেগুলো সমগ্র বাংলাদেশ ব্যাপী প্রসিদ্ধ। কক্সবাজারের রামু এলাকাটা শুধু বাংলাদেশ নয় বৌদ্ধ প্রেমী বুদ্ধ ধর্মের অনুসারী যে দেশগুলো রয়েছে প্রত্যেকটা দেশে রামু এলাকাটা জনপ্রিয়। কারণ এখানে যারা বুদ্ধ ধর্মালম্বীরা বসবাস করে তাদের সঙ্গে সমগ্র বুদ্ধ সম্প্রদায়ের সাথে একটা ভালো যোগাযোগ রয়েছে। ২০১১ সালের দিকে যখন একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল তখন বুদ্ধ মন্দির গুলো ভেঙ্গে ফেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় বাংলাদেশ সরকার সহ আরো কয়েকটি দেশের সরকারের পক্ষ থেকে প্রচুর পরিমাণে সহযোগিতা এসেছে এই মন্দিরগুলোকে পুনরায় স্থাপন করার জন্য। এই রামু এত প্রসিদ্ধ হওয়ার পেছনে রয়েছে বিরাট ইতিহাস ইতিহাসের কিছু সারসংক্ষেপ উল্লেখ করলাম
রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ বিহার। এই বিহারকে কেন্দ্র করে এক সময় এ অঞ্চলে বৌদ্ধ শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল। মৌর্য বংশের তৃতীয় সম্রাট অশোক এটি স্থাপন করেন। অনেকের কাছে এটি রামকোট বৌদ্ধ বিহার নামেও পরিচিত।খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে প্রাচীন আরাকানের ধন্যবতী (ধাঁঈয়াওয়াদি) নগরের রাজা মহাচন্দ্র সুরিয়ার আমন্ত্রণে গৌতম বুদ্ধ তার শিষ্যদের নিয়ে তৎকালীন সমতটের চৈতগ্রামের (বর্তমান চট্টগ্রাম) উপর দিয়ে ধন্যবতী নগরে যাওয়ার পথে এই স্থানে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করেছিলেন। তখন তার প্রধান সেবক আনন্দ স্থবিরকে উদ্দেশ্য করে ভবিষ্যত বাণী করে বলেন, “হে আনন্দ! পশ্চিম সমুদ্রের পূর্ব তীরে রম্যবতি (রম্মাওয়াদি) নগরের পর্বত শীর্ষে আমার বক্ষাস্থি স্থাপিত হবে, তখন এর নাম হবে রাং (বুদ্ধের বুকের অস্থি) কূট (স্থান)। সম্রাট অশোক বুদ্ধের ৪৫ বছর ব্যাপী ৮৪ হাজার ধর্মবানীকে বুদ্ধ জ্ঞানের প্রতীকরূপে বুদ্ধের অস্থি সংযোজিত ৮৪ হাজার চৈত্য স্থাপন করেছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম রামুর এ চৈত্যটি। পরবর্তিতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০৮ অব্দে আরাকান রাজা চন্দ্রজ্যোতি (চেঁদি রাজা) কর্তৃক বুদ্ধের উক্ত বক্ষাস্থি সাদা পাথরের ৬ ফিট উঁচু বুদ্ধবিম্বের মাথায় সংযোজিত করে বুদ্ধবিম্বটি স্থাপন করেন। সময়ের বিবর্তনে রাংকূটের অস্তিত্ব বিলীন হল হয়ে যায়। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীলংকান পুরোহিত জগৎ জ্যোতি মহাস্থবির রামকোট বৌদ্ধ বিহারটি সংস্কার পূর্বক পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেন।(তথ্য গুগল)
ইতিহাসের এই তথ্যগুলো জানার পর রামু দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করার ইচ্ছা জাগে। এরপর একটি একটি করে প্রত্যেকটা দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করা শুরু করি অনেক আগে থেকেই। যেহেতু আমি কক্সবাজার জেলায় বসবাস করে কক্সবাজার থেকে রামোর দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। চাইলেই তিন চার ঘন্টার মধ্যে রামু ভ্রমণ করে চলে আসা যায়। আমি মাঝেমধ্যে প্রতি সপ্তাহে একবার করে রামুর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করার জন্য চলে যেতাম।রামুর যতগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে তার মধ্যে রাঙ্ককূট অন্যতম। আপনারা যারা পাহাড় এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ ভালোবাসেন তাদের জন্য হতে পারে এটি একটি আদর্শ দর্শনীয় স্থান। পাহাড়ের উপরে খুবই চমৎকার ভাবে বুদ্ধমন্দির এবং বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করা আছে এই জায়গায়। আজ থেকে আরো দশ বছর আগে এটার মধ্যে একটা প্রাচীন ছোঁয়া ছিল। বর্তমানে মন্দির গুলোর মধ্যে প্রাচীন ছোঁয়ার আদলের আধুনিকভাবে ডিজাইন করে তৈরি করা হয়েছে। আপনারা যদি বর্তমান সময়ে রামু ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আসেন তাহলে নতুন নতুন আরো অনেকগুলো মূর্তি দেখতে পাবেন। আমরা বিভিন্ন সময় টিভিতে থাইল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন বুদ্ধ মন্দির দেখেছি যেখানে দারুণ সব কারো কাজ করে তৈরি করা হয়েছে। বর্তমান সময়ের রামো রামকোট এলাকার বৌদ্ধ মন্দিরের সৌন্দর্য অনেকটা বিদেশি এই মন্দির গুলোর মত করে তৈরি করা হয়েছে। আর আম্মুর এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভ্রমণ করলে আপনার ভ্রমণ হবে আনন্দদায়ক। প্রকৃতির এই দর্শনীয় স্থান আপনাকে নিরাশ করবে না। সম্রাট আসক সম্পর্কে যে ইতিহাস পাওয়া যায় সেই ইতিহাসের সম্মান রক্ষার্থে এখানে একটি আসোকের মূর্তি তৈরি করা আছে। রামকোড মন্দিরের প্রবেশ আগে বিশাল একটি বট গাছ রয়েছে এই বট গাছের পাশে বিশাল আকৃতির একটি মূর্তি তৈরি করা আছে আসোক মহারাজের। কক্সবাজারের এইরকম ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে আপনাদের আরো জানাবো ইনশাল্লাহ।
ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে শেষ পর্যন্ত লেখাটি পড়ার জন্য আরও একটি নতুন রাখা নিয়ে পুনরায় আপনাদের মাঝে উপস্থিত হব ইনশাল্লাহ।