SEC-S6W5 : "A memorable day with my friends". প্রতিযোগিতায় আমার অংশগ্রহণ।

in hive-170554 •  2 years ago  (edited)

স্টিমিটের বন্ধুরা,

"আসসালামু আলাইকুম" কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহ তাআলার অশেষ মেহেরবানীতে সবাই ভালই আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও আপনাদের দোয়ায় বেশ ভাল আছি। আবারও চলে আসলাম আপনাদের মাঝে আরেকটি নতুন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য। আসলে প্রতিযোগিতা মানে অনেক উৎসাহ অনেক উদ্দীপনা। সেইসাথে থাকে ভালো কিছু উপস্থাপন করার বা পুরনো স্মৃতিগুলোকে জেগে তোলার চমৎকার একটা সুযোগ। আমি বিশ্বাস করি প্রতিযোগিতায় আমাদের সকলেরই অংশগ্রহণ করা উচিত। আমি পারিনা আমি পারবো না আমি কি অংশগ্রহণ করতে পারব এরকম কিছু চিন্তাভাবনা না করেই নিজের প্রতিভাকে বিকশিত করা যায় এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাই আমাদের সকলকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা উচিত।

20221224_183642_0000.png
[ক্যানভা দিয়ে তৈরি]

খুবই চমৎকার একটি বিষয় নিয়ে সিজন-৬ এর সপ্তাহ ৫ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। বন্ধুর সাথে সময় কাটানোর অনেক ঘটনায় আমাদের জীবনে ঘটে থাকে। সেটা আমাদের প্রত্যেকেরই হয়ে থাকে এটা আমি মনে করি। এমন কোন লোক নেই যে তার বন্ধু নেই বা সেই বন্ধুদের সাথে কোন একদিন আড্ডা দিতে গিয়েছে সেরকম একটা স্মৃতি নেই এমটা খুঁজে পাওয়াও যাবে না। এরকম একটি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা সবাই সকলের বন্ধুর সাথে কাটানোর যে আনন্দঘন মুহূর্ত বা অপ্রত্যাশিত কোন ঘটনা যদি ঘটে থাকে সেটাও আমরা খুব সহজেই জানতে পারবো। আমি মনে করি বন্ধুত্ব অনেক বড় একটা পাওয়া যেখানে আমরা আমাদের সবাই সবার সুখে-দুখে বিপদে আপদে আনন্দ উদযাপনে ভাগাভাগি করে নিতে পারি। হ্যাঁ এই ক্ষেত্রে কিছু কিছু বন্ধু আছে যেগুলা এ সকল বিষয়ে কাজে আসে না তবে আমি মনে করি সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠতার উপর। যেই বন্ধুর সাথে যত বেশি ঘনিষ্ঠতা থাকবে তত বেশি তাকে আমরা আপন করে নিতে পারব, বা সেও আমাদের আপন করে নিতে পারবে। এতে করেই আমরা আমাদের সবকিছুই শেয়ার করতে পারব। যাই হোক বন্ধু নিয়ে বলতে গেলে আমার মনে হয় বইলা শেষ করতে পারবো না। এখন চলে যাই মূল ঘটনায়।

pexels-photo-4833957.jpeg
উৎস

আমি এখন আপনাদের মাঝে আমার বান্ধুবীদের সাথে কাটানো চমৎকার কিছু মুহূর্ত এবং সেই সাথে খুবই স্মরণীয় একটি দিন নিয়ে শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করি আমার এই স্মৃতিচারণটি পড়ে আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। আমি দাখিল পরীক্ষা দিয়েছিলাম ২০০২ সালে। আমার বিয়ে হয়েছিল ২০০৩ এর শেষের দিকে। বিয়ে হওয়ার পর আমার স্বামীরা চট্টগ্রামে থাকার সুবাদে আমাকে নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামে চলে যেতে হয়েছিল। যদিও তখনও মোবাইলের তেমন একটা প্রচলন ছিল না এই বলা যেতে পারে সবার হাতে হাতে কিন্তু এতটা মোবাইল ছিল না। মোবাইল ছিল মূলত যাদের অনেক পয়সা ছিল বা বলতে পারেন বৃত্তশালী তারাই মূলত তখন মোবাইল ব্যবহার করতো। এছাড়া প্রয়োজনে আমরা মোবাইল দোকান থেকে ফোন দিয়ে বাড়িতে খোঁজখবর নিতাম বা ওই দোকানে ফোন দিয়ে আমাদের খোঁজখবর নিত এভাবেই চলছিল।

pexels-photo-4834142.jpeg
উৎস

আমি মাদ্রাসা থেকেই দাখিল পাশ করেছিলাম। তাই আমাদের ওইটা ছিল বালিকা মাদ্রাসা তো মোটামুটি বলতে পারেন সবাই মেয়ে বান্ধুবী ছিল। আসলে তো গ্রাম অঞ্চলের ব্যাপার আপনারা বুঝবেনই মেয়েরা সাধারণত দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ে হয়ে যায় আমারও তেমনি হয়েছিল এছাড়াও আমার বান্ধবীদেরও বিয়ে হয়েছিল। তবে বেশিরভাগ বান্ধবীর বিয়ে হয়েছে গ্রামের আশেপাশেই তাই তারা সেখানে একসাথে সবাই আড্ডা মারতে পারতো বা দেখা-সাক্ষাৎ করত কিন্তু আমি ছিলাম একটু দূরে চট্টগ্রামে থাকার কারণে আমার তেমন একটা যোগাযোগ হতো না তাদের সাথে।

আমাদের মধ্যে দু তিনজন বান্ধবী খুবই চালাক চতুর ছিল এবং বলতে পারেন অনেকটা বৃত্তশালী ছিল তাদের বাবা। কিন্তু তাদের মন মানসিকতা ছিল অনেক অনেক ভালো। সবাইকে তারা আপন করে নিত এমনকি আমার বিয়ের পরও আমার অনেক খোঁজ খবর নিত তারা। হঠাৎ একদিন আমাকে ফোন দিল সবাই একদিন একসাথে হওয়া দরকার। অনেকদিন কারো সাথে কারো দেখা হয় নাই। আসলে বাড়িতে গেলেও খুব অল্প সময়ের জন্য যাওয়া হত তেমন করে সময় করে উঠতে পারতাম না বা তাদের সাথে দেখা হতো না অথবা কখনো বা তারা থাকতো না। যে কোনভাবেই হোক মিস হয়ে যেত একজন একজনের সাথে দেখা হতো না। সে কারণেই সবাই এবার সিদ্ধান্ত নিল সবাই একসাথে হবে। তখন তারা আমাদের সেই মাদ্রাসায় শিক্ষকদের সাথে কথা বলে একটা পূর্ণমিলনীর আয়োজন করলো এবং সবাই মিলে একটা তারিখ নির্ধারণ করা হলো সেই তারিখে আমাদের সকলের যেতে হবে।

এখানে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হল আমাদের ওই বালিকা মাদ্রাসায় এর আগে কখনো এরকম পূর্ণ মিলনী আয়োজন করা হয়নি সেই জন্য আমাদের শিক্ষকরা অনেক উচ্ছ্বাসিত আনন্দিত ছিল। আমি অনেক অনেক বেশি আনন্দে ছিলাম যে অনেকদিন পর সকল বন্ধুদের সাথে দেখা হবে। এখন শুধু সেই দিনটার অপেক্ষার পালা। একে একে করে দিন গনিয়ে আসলো আমিও চলে গেলাম সবার সাথে দেখা করতে চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালী একদিন আগে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে আমাদের শিক্ষকরাও এই অনুষ্ঠানটাকে অনেক গুরুত্ব ভাবে নিয়েছিল সেজন্য তারা আমাদের এলাকার কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কেউও দাওয়াত দিয়েছিলেন বিশেষ করে যারা এই বালিকা মাদ্রাসার কমিটিতে রয়েছেন।

pexels-athena-1963622.jpg
উৎস

এখানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল দীর্ঘ প্রায় পাঁচ ছয় বছর পরে সে পুরনো বন্ধুদেরকে কাছে পেয়ে সবাই একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে সে যে কি কান্না কি হাসা। একবার কান্না করি একবার হাসি এই পরিস্থিতি দেখে পুরো মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ বিস্মিত সবাই আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিল।

সবাই যখন একসাথে হয়েছিলাম তখন মনে হয়েছিল যেন সেই পুরনো দিনে ফিরে গিয়েছি। সে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ সে মাদ্রাসার মাঠ ঘুরাঘুরি ছোটাছুটি কি যে একটা আনন্দঘন মুহূর্ত বলে বোঝানোর মত ক্ষমতা এখন আমার নেই। সত্যি মনে হয়েছিল যেন বিয়ের পরবর্তী জীবনে যেরকম একটি সীমাবদ্ধতার মধ্যে আটকে গিয়েছিলাম ঠিক ওই মুহূর্তে মনে হয়েছিল একটা পরাধীনতার শিকল ছিড়ে স্বাধীন ভাবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেছি। আজ কোন বাধা নেই আজ কোন দায়বদ্ধতা নেই আজ কোন সীমাবদ্ধতা নেই সবকিছুই কেমন যেন নিজের কাছে নতুন মনে হচ্ছে। নতুন করে মনে হচ্ছে যেন সেই পুরনো দিনগুলোকে ফিরে পেয়েছি।

সকলের সাথে একত্রিত হওয়ার আগে আমি পারিবারিকভাবে কিছুটা সমস্যার মধ্যেই ছিলাম। বলতে লজ্জা নেই আসলে আর্থিকভাবে অনেকটা সমস্যায় ছিলাম। পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা সেই সাথে সেখানে কন্ট্রিবিউট করা সব মিলিয়ে আমার পক্ষে একটু কঠিন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই বান্ধুবীরাই আমাকে সে সাহস দিয়েছে এবং আমাকে সম্পূর্ণ ফ্রিতে এখানে আমন্ত্রণ করেছিল এমনকি আমার চিটাগং এ ফিরে আসার জন্য তারা আমার ভাড়াও পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছিল। আসলে এই বিষয়গুলা মনে হলে এখনো চোখের পানি চলে আসে। আজও অনেকদিন হয়ে গেছে ঠিক ওরকম একটি সময়ের মধ্যে আছি আর তেমন একটা দেখা হয় না কারো সাথে। সকালের সাথে একত্রিত হয়ে এটাই বুঝলাম যে বন্ধুত্ব এমন একটা বিষয় যেখানে বিপদে-আপদে সুখে দুখে একজন একজনের পাশে এগিয়ে আসে।

এত আনন্দ উচ্ছ্বাসের ভিতরও একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গিয়েছিল সেটি হচ্ছে আমরা যখন সবাই অনেক আনন্দে উচ্ছ্বাসিত তখন আমাদের একজন বান্ধবী সে কিছুটা অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও আমাদের সাথে অংশগ্রহণ করেছিল। এত আনন্দ উল্লাস দেখে সেও অনেক উচ্ছ্বাসিত আনন্দিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল এতে করে আমরা সবাই কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এবং মনে মনে ভাবলাম যে আমাদের এই বুঝি আনন্দটা মাটি হয়ে গেল। তারপর বান্ধবীর মাথায় পানি দিয়ে তাকে আবার উঠিয়ে একটা ভালো জায়গায় শুয়ে দিলাম এবং কিছুক্ষণ পরে সে উঠল কিন্তু সে এখান থেকে কোনভাবেই যেতে চাইলো না। সে আমাদেরকে বলল তোরা তোদের মত আনন্দ কর আমি এখানে শূয়ে সেগুলো অনুভব করব।

এরকম একটি দিন আবারো যদি ফিরে পেতাম তাহলে আমিও আমার বান্ধবীদের মতো কাউকে না কাউকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করতাম। কারণ আল্লাহ তাআলা এখন সে সামর্থ্য দিয়েছেন এজন্যই আল্লাহতালার দরবারে শুকরিয়া। সেই সাথে সবাই মিলে আমাদের আনন্দগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়ার চেষ্টা করতাম। সব মিলিয়ে আরো চেষ্টা করতাম এটাকে কিভাবে পুরো গ্রাম নিয়ে এইরকম একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায়।

আসলে ওই দিনটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন ছিল সে সাথে আমরা একেকজন একেকজনের সাংসারিক অনেক কথাবার্তা শেয়ার করেছিলাম। কে কিভাবে আছে, কোন সুখে কোন দুঃখে আছে, কার হাজবেন্ড কেমন কে কিভাবে চলছে অনেক কিছুই একে অপরের মধ্যে শেয়ার করেছিলাম। এটা তো বুঝবেন যে মেয়েরা সাধারণত এই বিষয়গুলো নিয়ে বেশি আলোচনা করে থাকে তো সেটাই আসলে হয়েছিল এবং সবাই মোটামুটি ভালো পরিবারের মধ্যেই তাদের বিয়ে হয়েছে বা সবাই ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমি সবার জন্য দোয়া করি আল্লাহ তা'আলা যাতে সবাইকে আরো ভালোভাবে সুস্থভাবে জীবন যাপন করার তৌফিক দান করেন আমিন।

pexels-photo-4993293.jpeg
উৎস

এরপর আমরা ওই দিনটি খুবই ভালোভাবে উদযাপন করি এবং বেশ কিছু খাওয়া দাওয়ার ও আয়োজন ছিল খাওয়া-দাওয়া শেষ করে যেহেতু অনেকদিন পর দেখা হয়েছিল তাই সবাই মিলে এক এক করে সবার বাড়িতে গিয়ে সবার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে আসা হয়েছিল। এই ছিল মোটামুটি আমার স্মৃতিচারণের মধ্যে খুবই আনন্দমুখর একটি দিন যে আমি আপনাদের সামনে শেয়ার করলাম। আশা করি এই স্মৃতিচারণ গুলো পড়ে আপনাদের কাছে খুবই ভালো লাগবে। আমার এই পোস্টটি আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই আমার জন্য আমার ছেলে-মেয়েদের এবং পরিবারের জন্য দোয়া করবেন আমিও আপনাদের জন্য দোয়া করি।

ধন্যবাদান্তে
@sanuu

I invite @aflatunn @morioum @isratmim to participate in this contest.
Contest link

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Sometimes we explain to others with clear image presentation even when we don't understand the language. You have clearly explained we'll using your pictures which simply shows a great outing with your friends given the nice environment of gathering. Not forgetting the meal shared.
Best of luck with your entry

Loading...

¡Congratulations! This post has been upvoted through -steemcurator06.
We support quality posts, and good comments anywhere, with any tags.

Curated by :@msharif