২০২০ সাল। করোনা পরিস্থিতিতে আমরা সবাই তখন বাড়িতে। হঠাৎ একদিন কবুতর পালন করার ইচ্ছে জাগল। অনাদিকাল থেকেই “শান্তির দূত” হিসেবে কবুতর বাংগালীর তথা বাংলার সর্বত্র খ্যাত। গৃহপালিত সব পাখিদের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বত্র জনপ্রিয় একটি পাখি ‘কবুতর’। ‘কপোত’ নামেও পরিচিত। এ জন্য সব সময় বলা হয় “ভালোবাস কপোত কপোতীর মত” কারণ কবুতর অতি শান্তিপ্রিয়। অতি অল্প সময়ে কবুতর বংশ বিস্তার করে। প্রতি ১২ (বার) মাসে প্রায় তের জোড়া বাচ্চা প্রদান করে যা অতি অল্প সময়ে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মাংসের উৎস হিসেবে মানুষের খাদ্য উপকরণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। কবুতরের মাংস রুগীকে পথ্য হিসেবে খাওয়া হয় এবং খুব উপকারীও।
হাঁস-মুরগির তুলনায় কবুতরের বাজার মূল্য বেশি এবং কবুতর পালন সর্বক্ষণই লাভজনক। পারিবারিক পর্যায়ে বসত বাড়ির ঘরের আশপাশে অনেকটা অপরিকল্পিত অবস্থায় শুধুমাত্র ছোট একটা খোপে খাদ্য-পানির সরবরাহের মাধ্যমে কবুতর লালিত পালিত হয়ে থাকে। গম, ধান, সরিষা দানাসহ অন্যান্য শস্যকণা খেয়ে কবুতর বেঁচে থাকে। তুলনামূলকভাবে কবুতরের রোগবালাই অনেক কম। তবুও পারিবারিক পর্যায়ে কিংবা বৃহৎ পরিসরে বাণিজ্যিক পর্যায়ে লাভজনক কবুতর পালন।
বিগত কয়েক দশক আগেও কবুতর পালনের প্রচলন ছিল গ্রামে। তবে ইট-পাথরে ঘেরা জনবহুল শহরের ছাদে বা জানালার কার্নিশে এখন কবুতর পালনের দৃশ্য খুব স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এটা পরিবারের পুষ্টি সরবরাহ, সমৃদ্ধি, শোভাবর্ধনকারী এবং বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনা কবুতর পালনে কবুতর প্রতিপালন এখন শুধু শখ ও বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং শহর-গ্রাম সর্বত্র এটি লাভজনক একটি ব্যবসা হিসেবে পরিণত হয়েছে। দেশব্যাপী মানুষের অর্থনৈতিক অভাব পূরণে সহযোগিতা করছে। শহর কিংবা নগরের বহুসংখ্যক পরিবার এখন অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কবুতর পালনে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন।
সুষ্ঠু পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সঠিকভাবে কবুতর পালন করে আর্থিক উন্নয়ন ও বেকারত্ব লাঘব করতে পারে যে কোনো বেকার যুবক। বর্তমানে আমাদের দেশে অনেকেই বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর পালন শুরু করেছেন। বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করে অনেকেই স্বল্প সময়েই লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিণত করতে পেরেছেন। উন্নত জাতের কবুতর পালন করে অনেকের নিজ ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পেরেছেন। এক তথ্যসূত্র বলছে, রাজধানী ঢাকায় আনুমানিক ৪-৭ হাজার কবুতর পালনকারী আছে, যারা অনেক উন্নত জাতের কবুতর পালন করছেন। বেকারত্ব ও চাকরির পাশাপাশি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক-এর মাধ্যমেও অনেকেই কবুতর বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
বর্তমান বাজারে ভালো জাতের কবুতরের মূল্য অনেক। ম্যাগপাই জোড়া ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। বুডারবল ৭ থেকে ১০ হাজার। লক্ষ্যা ১ থেকে ৭ হাজার টাকা। লালসিরাজী ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। সিলভার সিরাজী ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা। এছাড়া বিভিন্ন দেশি কবুতর ২০০ টাকা থেকে শুরু করে নানা প্রজাতির কবুতর ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। আমাদের কবুতর গুলো দেশি প্রজাতির। কবুতরকে খেলার পাখি বা সংবাদবাহক হিসেবে ব্যবহার করার গল্প প্রচলিত আছে। শোনা যায়, প্রাচীনকালে কবুতরের মাধ্যমে চিঠি আদান-প্রদান করা হতো। প্রাচীনকালে রাজা-বাদশাহ তাদের বিভিন্ন ধরনের বার্তা প্রেরণের জন্য বেছে নিতেন কবুতরকে। কবুতর উড়ানোর প্রতিযোগিতা প্রাচীনকাল থেকে অদ্যাবধি প্রচলিত আছে। এসব কারণেই কবুতর এখটি পাখি হলেও মানব সমাজের ভরসার জায়গা কেড়ে নিয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। তবে এখন আর কবুতর সেসব কাজের জন্য ব্যবহার করা হয় না বরং পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ব্যবহারের চাহিদাই বেশি। কবুতরের মাংস মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, ফলে কবুতর পরিবারের পুষ্টি সরবরাহের ভূমিকা রাখে। কবুতরের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বলকারক হিসেবে সদ্যরোগমুক্ত ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। রোগীর পথ্য হিসেবে কবুতরের মাংস ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কবুতরের মাংসে সাধারণ অন্যান্য পাখির মাংসের তুলনায় প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি। যার ফলে আমিষের পাশাপাশি প্রোটিনের বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য-ও কবুতরের মাংস খাওয়া হয়ে থাকে।
কবুতরের জাত সমগ্র পৃথিবীতে ২০০ প্রজাতির কবুতর থাকলেও বাংলাদেশে সচরাচর দেখা যায় প্রায় ৩০ প্রজাতির কবুতর। বাংলাদেশে নানা জাতের কবুতর দেখা যায়। তবে বাংলাদেশে কবুতরের জাতের মধ্যে ‘গিরিবাজ’ গ্রাম-শহরে সর্বত্র জনপ্রিয়। তবে কিছু বিদেশি কবুতরও এখন আমাদের দেশে চোখে পড়ে। বিদেশি সেই জাতগুলো এখন বাংলাদেশে নানা নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। সেসব জাতের মধ্যে রয়েছে গোলা, গোলি, ময়ূরপঙ্খী, ফ্যানটেল, টাম্বলার, লোটান, লাহরি, কিং, জ্যাকোবিন, মুকি, সিরাজী, গিরিবাজ, চন্দন ইত্যাদি। আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যর কারণে এসব কবুতর বাংলাদেশেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জাত বা ধরনগুলো নির্দিষ্ট নয়। বিভিন্ন গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য, রং, চোখ ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে কবুতরের জাত নির্ধারণ করা হয়। দুটি কবুতর পাশাপাশি ছাড়া হলে এরা নিজেরা প্রতিযোগিতা করে উড়ে আবার ঘুরে আগের জায়গায় চলে আসে। আপনারা চাইলে ছোট করে শুরু করতে পারেন।
ভালো থাকবেন সবাই।
ওয়াও, খুবই চমৎকার একটা পোস্ট দিয়েছেন অনিক।
আমাদের গ্রামের বাড়িতেও একসময় অনেক কবুতর ছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। হ্যাঁ, আগে গ্রামের সব বাড়িতেই ছিল। আপনি কি কখনো কবুতরের মাংস খেয়েছেন?
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক অনেক বার খেয়েছি।
ছোটবেলায় অসুস্থ হলেই (কইতরের পিলি*) খেতাম।
এছাড়া আমি স্কুল-কলেজে পড়াকালীন আমাদের বাড়িতেও কবুতর ছিল, সেকারণে মাঝেমধ্যে খাওয়া হতো।
*আমাদের এলাকায় কবুতরকে আঞ্চলিক ভাষায় 'কইতর' বলে। আর কবুতরের বাচ্চাকে কইতরের পিলি বলা হয়! 😁
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আচ্ছা। আমাদের এলাকায় কবুতরের ডিমকে বলে আঁখির।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কইতরের ডিম! 😁
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক সুন্দর লেখেছেন ভাইজান
আমাদের বাড়িতে অনেক কবুতর পোষে
আপনাদের কয়টা কবুতর আছে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমাদের বাড়িতে আগে কবুতর ছিলো
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আচ্ছা, কোন গল্প থাকলে করে ফেলুন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit