একটি জ্যোৎস্নাময় রাত ও চাঁদের সৌন্দর্য। ১০% @btm-school

in hive-185999 •  2 years ago 

চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই, সে সূর্যের আলোয় আলোকিত। কিন্তু অন্যর আলোকিত হলেও, মনোমুগ্ধকর সে দৃশ্য। শরতের কাল চলছে, আমি তখন আমার গ্রামের বাড়িতে। পূর্ণিমার মত রাত। ঘরে মন বেঁধে রাখা দায় মনের অজান্তেই হাঁটি হাঁটি করি বাড়ির বারান্দায়।

একটি রাতের অদ্ভুত সৌন্দর্যকে যদি বর্ণনা করতে যাই তাহলে প্রথমেই মনে আসে চাঁদনি রাতের কথা। পূর্ণিমা রাতে পৃথিবীর জলে-স্থলে নেমে আসে সুন্দরের বাস্তবতা। কিন্তু দিনটি পূর্নিমা ছিলো না, পূর্নিমার আগের দিন, মানুষের মনকে চন্দ্রগ্রস্ত করে দিয়ে এক মায়াময় মােহ রচনা করে রাতের চাঁদ।

IMG_20210818_224222.jpg

না আলাে না আঁধার এমন এক রহস্যের মায়াজালে মানব মনকে বন্দি করতে পারে কেবল চাঁদনি রাত। চাঁদনি রাত এদেশের বিভিন্ন ঋতুতে রচনা করে নানা রূপের মায়াজাল । গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরতে, হেমন্তে, শীত ও বসন্তে নব রূপে জ্যোৎস্না আসে আমাদের প্রকৃতিতে।

অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি আমি মৃদু হাওয়ায়, তবুও চাঁদের আলােয় চিকচিক করে দূর থেকেই সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে বাড়ির উঠনে। পুকুর পাড়ে বা দীঘির পাড়ে গেলে হয়তো সেটা আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিবে। কিন্তু রাতের বেলা আর গেলাম না একা একা, বাড়ির পাশে বাঁশ বনে মৃদু বাতাসে পাতার শব্দ, যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই যেন চাঁদ কোলাকুলি করছে মাটির বসুধায়। চাঁদ তার তাপহীন কোমল আলােয় স্নান করিয়ে দিচ্ছে আমাকে, আমার চারপাশকে। জ্যোৎস্না ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। একটা সুন্দর মায়াপুরীতে যেন আমি দিকভ্রমের শিকার। মনে বেজে উঠছে কবিগুরুর কবিতার চরণ –
‘চাঁদের হাসি বাধ ভেঙেছে উছলে পড়ে আলাে।
ও রজনীগন্ধা, তােমার গন্ধসুধা ঢালাে ॥
পাগল হাওয়া বুঝতে নারে ডাক পড়েছে কোথায় তারে ফুলের বনে যার পাশে যাই তারেই লাগে ভালাে।’

IMG_20210818_224013.jpg

ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না অথচ অন্তরে কোন মাধুর্যের ছোঁয়ায় যেন পুলকিত হয়ে আছি। আমি মুগ্ধ বিস্ময়ে চেয়ে আছি, পুলক শিহরণে ক্ষণে ক্ষণে রােমাঞ্চিত হচ্ছি । এত রূপ, এত বৈচিত্র্য, এমন গম্ভীর মুরতি, স্নিগ্ধ সজল সুহাসিনী রাত আর কখনাে আমি প্রত্যক্ষ করিনি। আমি ডুবে আছি একরাশ জ্যোৎস্নার জলে । এই সৌন্দর্য আমাকে মনে করিয়ে দেয়,
হে সুন্দর তুমি দূরে থাক। অনেক রুপকে দূর থেকেই ভালো দেখায়, কাছে গেলে আর অপরুপ থাকে না যেমনঃ চাঁদ। কোন কোন সুন্দরকে স্পর্শ করতে নেই যেমনঃ জ্যোৎস্নার আলো। কোন কোন সুন্দরকে বুকে জড়িয়ে ধরা যায় না যেমনঃ নদীর বুকে চাঁদের আলো। হে সুন্দর তুমি দূরে থাক আমার স্পর্শ থেকে অনেক দূরে।

মান্না দে, শ্রীকান্ত, রাঘব চট্টপাধ্যায় আরও অনেকের গানে পৃথিবীর কত কত কবিতায় যে পূর্ণিমাকে উপমা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে এর কোনাে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। চিত্রশিল্পীর চিত্রপটে পূর্ণিমা রাত ধরা পড়ে এক অপরূপ সৌন্দর্যে। এ জোৎস্না রাতে চোখে পড়ে গ্রাম ও শহর জীবনের পূর্ণিমা রাতের পার্থক্য। গ্রামীণ জীবনে ও নাগরিক জীবনে পূর্ণিমা রাতের সৌন্দর্য উপভােগে তারতম্য ঘটে। নগর জীবনে মানুষ বড় বেশি ব্যস্ত। এখানে তীব্র বেগে ধেয়ে চলে মানুষের জীবনপ্রবাহ। বৈদ্যুতিক বাতির ঝলকানিতে নানা রং-বেরঙের আলােয় আলােকিত হয়ে থাকে চারপাশ। তাই ব্যস্ত জীবনে এ আলাের ফাক দিয়ে ছাদে গিয়ে কেউ জ্যোৎস্নাযাপন করবে এমন সুযােগও খুব একটা মেলে না, কিন্তু আমি যখন ঢাকায় ছিলাম মাঝে মাঝে ছাদে গিয়ে উপভোগ করতাম, ক্লান্তি দূর হয়ে যেতো। এই ছবিটি সেই সময় তোলা।

FB_IMG_1662890273158.jpg

পূর্ণিমা রাত শহুরে জীবনে খুব বেশি আবেদন সৃষ্টি করতে পারে না। অন্যদিকে, উল্টোটি হচ্ছে গ্রামীণ জনপদে। পূর্ণিমা সেখানে সর্বব্যাপী । পূর্ণিমার আলােয় পালাগান আর পুঁথিপড়া শুনতে শুনতে মন নেচে ওঠে বিপুল আনন্দে।

আমার জীবনের কোনাে আনন্দের কাছে যদি ফিরে যেতে চাই তাহলে আমি ফিরতে চাই সেইসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এর কাছে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

খুবই সুন্দর হয়েছে পোস্ট টা অনিক!

আমার কোন এক পোস্টে বলেছিলাম, মানুষ প্রেমে পড়লে কবি হয়ে যায়। তো আপনিও নিশ্চয়ই সে রাতে জ্যোছনার প্রেমে পড়েছিলেন, সেজন্যই এত সুন্দর সুন্দর কথা লিখতে পেরেছেন।

এভাবেই লিখে যান নিত্য-নতুন বিষয় নিয়ে।

অনেক ধন্যবাদ, হ্যাঁ অবশ্যই লিখে যাওয়ার চেষ্টা করবো।

হুম, লেখা থামানো যাবেনা।
প্রতিদিন একটা করে লেখা চাই'ই চাই!

হ্যাঁ, সেই রকমই বলতে পারেন। মোট কথা আমি একজন প্রকৃতি প্রেমী।

খুবই ভালো, চালিয়ে যান।

আয় হায় কি করলেন চাঁদ নিয়া পোস্ট দেয়ার জন্য অনেকগুলা চাঁদের ছবি তুলসিলাম। এখন আর দেওয়া হবেনা ।
তবে আপনার পোস্টটি অনেক ভালো লেগেছে কেনোনা আমার চাঁদনী রাত অনেক প্রিয়।

হায় হায়, তাহলে কি আর করার। অনেক ধন্যবাদ আপু, আমারও খুব প্রিয়।

মাঝে মাঝে এই পূর্ণিমা রাতে আমরা পুকুর পারে বসে থাকি খুব ভাল লাগে

হ্যাঁ, নদীতে আরও বেশি ভালো লাগে।