প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁও। ১০% @btm-school

in hive-185999 •  2 years ago 

FB_IMG_1662369901988.jpg

আমি নতুন যখন ঢাকায় আমার বড় ভাইয়ের বাসায় আসি, কিছু দিন যাওয়ার পর কেমন জানি একঘেয়েমি লাগছিল। তারপর একদিন আমার দাদাকে বললাম, ব্যস্ত যান্ত্রিক নগরীর একঘেয়েমী জীবন থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য খানিকটা স্বস্তি আর নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে কিছুটা সময় পরিবার পরিজন কিংবা বন্ধুমহল কে নিয়ে কাটানোর উপযুক্ত দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসি, দাদা তখন বলল পানামা নগরের কথা। সাপ্তাহিক যে কোন ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন প্রাচীন বাংলার পানাম সিটি। আমি, দাদা আর আমার ভাতিজা পিকু একদিন শুক্রবার বেরিয়ে পড়লাম পানাম নগর দেখার উদ্দেশ্য। ইতিহাস ঐতিহ্য সর্ম্পকে যেমন জানতে পারলাম তেমনি ঐ সময়ের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলী দেখে মুগ্ধ হলাম। চারপাশের সবুঝের আবহে নয়ন জুড়িয়ে যাবে। দুষণমুক্ত পরিবেশে নিশ্বাস নিতে পারবেন প্রাণ ভরে।

পানাম নগর নারায়ণগঞ্জ জেলার, নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জেলা, সেই সাথে এই জেলা বন্দর নগরী। সোনারগাঁতে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর। বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর -প্রাচীন সোনারগাঁর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখানে কয়েক শতাব্দীর পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। স্কুল জীবনে আমরা বারভূঁইয়াদের কথা সবাই পড়েছি। সোনারগাঁর ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নগরী গড়ে ওঠে। এই ছবিটি আমার আর পিকুর, দাদা তুলে দিয়েছিলো। পানাম নগরীর একটা দেওয়ালের সাথে। আরেকটি মজার বিষয় হলো ওখানে ঘুরতে গিয়ে পিকু আমাদেরকে হারিয়ে ফেলেছিল, সেটাও এক লম্বা কাহিনি আজকে আর বলবো না, সেটা আরেকদিন হবে।

FB_IMG_1662371340467.jpg

সোনারগাঁ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর থেকে উত্তর দিকে হাঁটাপথেই পৌঁছানো যায় অর্ধ্বচন্দ্রাকৃতি পানাম পুলে। (যদিও পুলটি ধ্বংস হয়ে গেছে)। পুলটির দৈর্ঘ্য ছিলো ৭২ ফুট আর প্রস্থ ছিলো ১৫.৫ ফুট, মাঝখানটা ছিলো উঁচু। এই পুল পেরিয়েই পানাম নগর এবং নগরী চিরে চলে যাওয়া পানাম সড়ক। আর সড়কের দুপাশে সারি সারি আবাসিক একতলা ও দ্বিতল বাড়িতে ভরপুর পানাম নগর। অনেক বিদেশীদের তখন দেখেছিলাম, তারাও ছবি তুলছে বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস জানার আগ্রহ তাদের কাছে মজার ছিল, এটাই মনে হয়েছিল তাদেরকে দেখে। ১৫ শতকে ঈসা খাঁ বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সোনাগাঁওয়ে। পূর্বে মেঘনা আর পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদীপথে বিলেত থেকে আসতো বিলাতি থানকাপড়, দেশ থেকে যেতো মসলিন। শীতলক্ষ্যা আর মেঘনার ঘাটে প্রতিদিনই ভিড়তো পালতোলা নৌকা। প্রায় ঐসময়ই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ইউরোপীয় অনুপ্রেরণায় নতুন ঔপনিবেশিক স্থাপত্যরীতিতে গড়ে উঠে পানাম নগরী। পরবর্তিতে এই পোশাক বাণিজ্যের স্থান দখল করে নেয় নীল বাণিজ্য। ইংরেজরা এখানে বসিয়েছিলেন নীলের বাণিজ্যকেন্দ্র।

FB_IMG_1662371181864.jpg

প্রায় চারশত বছর আগ হতে পানাম নগরী স্থাপন শুরু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ধাপে ধাপে মোগল নির্মাণ শৈলীর সাথে বৃটিশ স্থাপত্য শৈলীর সংমিশ্রনে প্রায় চারশত বছরের পর্যায় ক্রমিক স্থাপন পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়ায় পানাম নগরী বর্তমান রূপলাভ করে।

গুলিস্থান থেকে মোগড়া পাড়া চৌরাস্তা পর্যন্ত বাস আছে। স্পেশাল বাস গুলো ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যায় তাই ভাড়া একটু বেশি হলে ও সময় কম লাগে । মোগড়া পাড়া থেকে সোনারগাঁও লোকশিল্প যাদুঘর পর্যন্ত অটোরিকশায় আর সরাসরি পানাম সিটিতেও যেতে পারবেন । সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে জনপ্রতি টিকেট এর ব্যবস্থা আছে এবং পানাম নগরীতেও। আপনার ব্যক্তিগত ক্যামেরা/ মোবাইল ফোন নিতে ভুলবেন না, কারণ সেখানে ছবি তোলার জন্য আলাদা করে তেমন ভালো কোন ব্যবস্থা নেই । আর ছবি না তুলতে পারলে ভ্রমণটা বৃথা বলে মনে হবে।

কেমন লাগলো অব্যশই জানাবেন। ভালো থাকবেন এবং সুস্থ্য থাকবেন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম

অনেক ইনফোরমেটিভ একটা পোস্ট।
আপনি অনেক সুন্দর ভাবে লেখাটি উপস্থাপন করেছেন।

আজকে আপনার লেখার গ্রামার প্লাস ঘটনার বর্ণনা সেই সাথে প্রয়োজনীয় ছবি, সবকিছু ঠিকঠাক হয়েছে। এভাবেই দিনে দিনে আরও এগিয়ে যান।

ধন্যবাদ আপনাদেরকে এত সুন্দর মতামত দেওয়ার জন্য।

সত্যি অনেক সুন্দর জায়গা আর সুন্দর ভাবেই আপনি ফুটিয়ে তুলেছেন আপনার লেখাতে।

কতোবার যে চাইলাম এখানে ঘুরতে একবারও সুযোগ হলো না।