বিড়াল ও এক অসহায় চাষীর কাহিনী || "বাংলায় তারার মেলা" || ১০% @btm-school

in hive-185999 •  2 years ago 

নমস্কার বন্ধুরা !
কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সবাই ভালো আছেন । আমিও অনেক ভালো আছি আপনাদের আশীর্বাদ ও দোয়াই । বন্ধুরা আজ আমি এক বিড়াল ও এক গরীব অসহায় চাষীর কাহিনী আপনাদের সাথে শেয়ার করবো । আশা করছি আপনাদের সবার ভালো লাগবে গল্পটি।

rural-beauty-g32079cd31_1920.jpg
source
একদা কাশিপুর বলে এক গ্রাম ছিল। গ্রামটিতে প্রায় ৫০০ জন এর বসবাস। কাশিপুর গ্রামের লোকেরা বেশিরভাগ সবাই কৃষি কাজের সাথে লিপ্ত ছিল এবং অনেক খুশিতে তারা জীবন যাপন করতো। গ্রামের পূর্ব দিকের শেষ প্রান্তে ছিল এক বৃদ্ধ চাষীর বাস। বৃদ্ধ চাষী টির বয়স প্রায় ৮০ বছর ছুঁইছুঁই । অনেক কষ্টের সাথে চাষবাস করে বৃদ্ধ চাষী ও ওনার স্ত্রী তাদের সংসার চালাতেন। সন্তান বলতে তাদের এক মেয়ে আছে কিন্তু তার বিয়ে অনেক দূরে হওয়ায় আসা যাওয়া তেমন হয়না । বৃদ্ধ চাষীর প্রায় ১ বিঘা খানিক জমি ছিল। সেই ১ বিঘা জমিতে প্রায় সব ধরনের চাষবাস করতেন তিনি । তিনি ধান, গম, পটল, বেগুণ, সিম, কাকরোল আরো বিভিন্ন ধরনের চাষবাস করতেন । এই ভাবে তার সংসার মোটামুটি ভালো ভাবেই চলতো। একদিন বৃদ্ধ চাষীটি সকাল বেলায় নিজের জমিতে যান পটলের ফুল ছোঁয়ানোর জন্য। জমিতে গিয়ে তিনি শুনতেপান অদ্ভুত এক শব্দ। তিনি ভাবেন কিসের এমন শব্দ । তিনি আস্তে আস্তে শব্দটির দিকে যেতে থাকেন এবং দেখতে পান এক বিড়াল বিশাল জোরে আর্তনাদ করছে। এবং দেখতে পান বিড়ালটির পেছনের এক পায়ে আঘাত পেয়ে অনেক রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। তিনি বিড়ালটিকে তার বাড়িতে নিয়ে যান এবং ক্ষত স্থানটির ওপর কিছু ঔষদি লাগিয়ে দেন। কিছু দিন বিড়ালটিকে নিজের ছেলের মত করে যত্ন করেন এবং ধীরে ধীরে বিড়াল টি সুস্থ করে তোলেন। তিনি ভাবেন বিড়াল টিকে এবার ছেড়ে দেবেন।

এবং একদিন তিনি বিড়াল টিকে ছাড়তে নিয়ে যান মাঠের শেষ প্রান্তে। কিন্তু বিড়াল টি কিছুতেই তাকে ছেড়ে যেতে চাইনা এবং তার পিছু পিছু আসতে থেকে। বিড়াল টি যে বৃদ্ধ চাষীর পেছনে পেছনে আসছে তিনি সেটা বুঝতে পারেন না। তিনি বাড়িতে পৌঁছিয়ে দেখাতে পান বিড়ালটি দরজার সামনে বসে আছে। এমন ভাবে বিড়াল টিকে তিনি যতবারই ছেড়ে দিয়ে আসেন ততবার বিড়ালটি আবার তার বাড়িতে চলে আসে। তিনি এবার চিন্তা ভাবনা করেন আর বিড়ালটিকে ছাড়তে যাবেন না।
কিছু দিন পর বৃদ্ধ চাষীটি হটাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরেন । কোনো কিছুতেই তার অসুখ ঠিক হয় না। এমন ভাবে প্রায় মাস খানেক হয়ে যাওয়ার পর তিনি মোটা মুটি সুস্থ হয়ে ওঠেন। এতদিতে তার মাঠে সব ফসল প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়িতে যা অল্প কিছু অন্ন আছে তাই দিয়ে হয়তো তাদের আর ১ মাস মত সংসার চলবে। তিনি চেষ্টা করেন আবার মাঠের হাল ধরার কিন্তু বৃদ্ধ চাষীটির শরীর কোনো ভাবে তার সঙ্গ দেয় না। তিনি যতবার কিছু কাজ করতে যান ততবার তার শরীর অসুস্থ হয়ে পরে। তারপর বৃদ্ধ চাষীটিকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ডাক্তার বলেন তিনি আর কোনো কাজ কখনোই করতে পারেন না । অসহায় বৃদ্ধ চাষীটি গ্রামের সবার কাছে সহায়তা চান কিন্তু সবাই তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেন। হটাৎ মাসখানিক পর গ্রামের কিছু লোক তার বাড়িতে আসেন দেখতে পান বৃদ্ধ চাষীটি এক গামলা দুধ ও ভাত একটি বেড়ালকে খাওয়াচ্ছেন। গ্রামের সবাই তো তখন হতবাক হয়ে দেখতে থাকে যার নিজের খাওয়া জোটে না সে বিড়াল কে এক গামলা দুধ ও ভাত খাওয়াই কি ভাবে। গ্রামের লোকজন সবাই অনেক কৈতুহলের সাথে বৃদ্ধ চাষীকে জিজ্ঞাসা করেন আপনি কিভাবে এতটা দুধ ও ভাত বিড়াল কে খাওয়াচ্ছেন। তখন বৃদ্ধ চাষী মৃদু হেসে তাদেরকে বলেন আমার অসহায় দিনে এই বেড়ালটি প্রতিদিন পাশের খাল থেকে মাছ ধরে আনতো আমি সেই সময় মাছ বেঁচে আমার সংসার চালিয়েছি। বিড়ালটি না থাকলে হয়তো আমি এতদিন এই পৃথিবীতে থাকতে পারতাম না। এখন আমি যদি বিড়ালটিকে না সেবা যত্ন করি ভগবান আমাকে কখনোই মাপ করবে না।

এই ভাবে বৃদ্ধ চাষী ও বেড়াল সারাটি জীবন সুখের সাথে কাটাতে থেকে।

ধন্যবাদ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

অসাধারণ ব্রাদার

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ধারুন হয়েছে!

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

অসাধারণ

ধন্যবাদ দিদি ।

খুবই চমৎকার শিক্ষামূলক গল্প!

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

সব জায়গায় চাষীদের সার্থপরী কিছু লোকজন ঠকিয়ে যায়। পোষ্ট টা খুব ভাল হয়েছে। চালিয়ে যাও ভাই

অনেক ধন্যবাদ দাদা আপনাকে।

ভাগনে শুধু একটা কথায় বলবো সত্যিই অসাধারণ।

অনেক অনেক ধন্যবাদ মামা।
আপনার উৎসাহের ফলেই আমি আজ মোটামুটি ভালো লিখতে পারছি।
এই ভাবে সব সময় আমার পশে থাকবেন মামা। আর আমাকে আরো ভালো লেখার উৎসাহ দেবেন মামা।

ভাগনে অসাধারণ একটা পোস্ট

অসংখ্য ধন্যবাদ মামী।

বিপদে যে পাশে দাঁড়ায় সে প্রকৃত বন্ধু।

একদম ঠিক কথা।

খুভ ভালো হয়েছে ব্রাদার