ফিচার | পান খাওয়ার সংস্কৃতি নিয়ে কিছু কথা | ১০% @btm-school

in hive-185999 •  2 years ago  (edited)

20211104_215412.jpg

পান খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। বিশেষ করে আমাদের সিনিয়র সিটিজেন তথা দাদা-দাদি, নানা-নানিদের প্রিয় একটা খাবার হচ্ছে এই পান-সুপারি। অবসর সময় পেলেই তারা মুখের মধ্যে পান পুরে দিয়ে চিবাতে থাকেন, এটাই তাদের কাছে অবসর বিনোদন। অবশ্য বাবা-চাচা, ফুফু-চাচিদেরও অনেকেই পান খেয়ে থাকেন। বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় আবহমান কাল ধরে পান-সুপারী খাওয়ার একটা সংস্কৃতি চলে আসছে। গ্রামে এখনো অনেকের বাড়িতে সুপারি গাছ লাগানো থাকে। আর যেসব এলাকায় পানের চাষ হয় সেসব এলাকার ম্যাক্সিমাম মানুষই পান খান। এই পান খাওয়া ও পানের বরজকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এখনো কোটি টাকার বিজনেস চালু রয়েছে।

বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে অনেকেই আবার সিজিওনাল পানখোর রয়েছে। যারা মাঝেমধ্যে, হাতের নাগালে পেলে, বন্ধুরা জোর করলে, কোন বিয়েবাড়িতে গেলে কিংবা হালখাতার দোকান থেকে পান খেয়ে থাকেন, তবে সেটা নিয়মিত নয়। আমি বাংলাদেশের দুই অঞ্চলের মানুষকে সবচেয়ে বেশি পান খেতে দেখেছি, এক হলো সিলেট অঞ্চলের মানুষ, আর দুই হলো কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মানুষ। এই দুই অঞ্চলের প্রায় সবাই অর্থাৎ ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে ছোকরা-ছোকরি পর্যন্ত প্রায় সবাই পান খায়। এটা তাদের আঞ্চলিক সংস্কৃতি। ঐসব এলাকায় আপনি প্রচুর পানের দোকান দেখতে পাবেন।

20211104_215407.jpg

কক্সবাজারের মহেশখালীতে এক ধরনের বিখ্যাত মিষ্টি পান পাওয়া যায়, যার নাম সাঁচি মিষ্টি পান। এই পানের নাম-ডাক বা সুখ্যাতি অনেক। সারাদেশে এই পানের চাহিদা তুঙ্গে। মহেশখালীর চাহিদা মিটিয়ে এই পান দেশের প্রায় সব অঞ্চলে চলে যায়। এই পানের সাথে ডজন খানেক বা কয়েক ডজন নানারকম মশলা মিশিয়ে খাওয়া হয়। দেশের বাইরেও এসব পান রপ্তানী করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে মিডলইস্টের দুবাই, কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব ছাড়াও আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক দেশেই পৌঁছে যায় এই দেশী পান। এগুলোর প্রধান ভোক্তা আবার প্রবাসী বাঙালীরাই।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের বিহারীক্যাম্পে বা পুরান ঢাকায় বাহারী নাম ও ডিজাইনের পান পাওয়া যায়। এসব পান খেতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ ছুটে আসেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই বয়সে তরূণ-তরুণী। কাঁচঘেরা সেসব দোকানে হাজারো ছোট ছোট পাত্রে থরে থরে সাজানো থাকে হাজারো রকমের মশলা। সেখানে মশলা পান, শাহী পান, আগুন পান ছাড়াও বাহারী নামের হাজারো রকমের পান পাওয়া যায়। এসব পানের একেকটার দাম শুরু হয় সাধারণত ৪০ টাকা থেকে প্রায় ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আমি একবার মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে মোস্তাকিমের চাপের সামনের রাস্তায় এরকম বেশ কয়েকটা বাহারী পানের দোকান দেখে লোভ সামলাতে না পেরে একটা পান টেস্ট করার জন্য গেলাম।

20211104_214650~2.jpg

১২০ টাকার একটা পান নিলাম, তাতে ঐ দোকানদার অন্তত ১০০ প্রকারের মশলা অল্প অল্প করে দিলো দেখলাম। সেসব মশলার মধ্যে নানারকম ক্যান্ডি, ড্রাই ফ্রুটস, মধু ও বিভিন্ন নাম না জানা দেশী-বিদেশী পান মশলা থাকে। মুখে দেয়ার পরে আর মনে হয়না যে পান খাচ্ছি। এত এত মিষ্টি জাতীয় মশলার ভিড়ে পানের কোন টেষ্ট জিবে ধরা দেয়না। সব মিলিয়ে খেতে খারাপ না, কিন্তু সেটাকে পান না বলে অন্য কোন মিষ্টি জাতীয় ডেজার্ট বলাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত হবে।

এই ছিল আমার মিষ্টি পান খাওয়ার অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের পান খাওয়ার সংস্কৃতি সম্পর্কে একটা ছোট্ট আলোকপাত। আজ এই পর্যন্ত, খুব শীঘ্রই আবার হাজির হবো অন্য কোন টপিক নিয়ে। সেই পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
অনেক ধন্যবাদ।

SmartSelect_20220901_091244_Photos.jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া।
বাংলাদেশ এ পানের এই সংস্কৃতি কথা শুনে অনেক ভালো লাগলো। আমদের ওয়েস্ট বেঙ্গল এ প্রায় এই ধরনের সংস্কৃতি দেখা যায়।

ধন্যবাদ দাদা।

অসাধারন ভাইয়া

অনেক ধন্যবাদ।

সরি ভাই আমি পান খেতে পারিনে। আমার খুব কষ্ট হয় খেলে। তারপরও মিষ্টি পান আমার পছন্দ। আপনার লেখাটি সত্যিই চমৎকার।

পান আমিও খেতে পারিনা। সেভাবে কখনো খাইওনা, ছোটবেলায় দাদির থেকে নিয়ে খেতাম। বড় হয়ে আর কখনোই খাইনি। কিন্তু সেদিন কি মনে করে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পের এই মিষ্টি পান খেতে ইচ্ছে হয়েছিল! 😁

আমি মাঝে মাঝে মিষ্টি পান খেয়েছি তবে আমার খুব একটা অভ্যাস নাই মাঝে মাঝে ট্রাই করি আর কি

পানের অভ্যাস না করাই ভাল, তবে চাইলে অকেশনালী দুই-একটা তো খেতেই পারেন, যেমন বিয়েবাড়িতে গিয়ে বা কোথাও দাওয়াত খাওয়ার পরে একটা মিষ্টি পান পেলে খারাপ হয়না, কি বলেন?

লেখাটা অনেক সুন্দর হয়েছে আর পান রংবেরণের সত্যি দারুন।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।