সত্য ঘটনা | পদ্মা নদীতে আমার স্পীডবোট ডুবি (শেষ পর্ব) | ১০% @btm-school

in hive-185999 •  2 years ago 

4.jpg
Source

(গত পর্বের পর)
আমরা সবাই নিরাপদে ওপারে পার হতে সক্ষম হলাম। ত্রাণকর্তা হিসেবে আর্বিভূত হওয়া বোট চালকদেরকে পুনরায় ভাড়াসহ বকশিশ দিলাম। ওপারে গিয়ে বোট থেকে নেমে পাড়ে উঠে সবাই কান্নাকাটি জুড়ে দিল। সবাই সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলো, কেননা আরেকটু হলেই তো আমাদের সলিল সমাধী হয়ে যাচ্ছিল। পাড়ে উঠে ব্যাগটা পিঠ থেকে নামিয়ে (পুরো ভিজে টইটম্বুর) কিছুক্ষণ বসে রেস্ট করলাম। নদীতে প্রায় ২০ মিনিট বড় বড় ঢেউয়ের মধ্যে ভেসে থেকে শরীর অনেকটা ক্লান্ত হয়ে গেছিল। আশেপাশের মানুষজন আসলো আমাদের কাছে, আমাদের দূর্দশার কথা জানলো, সবাই আফসোস করতে থাকলো। আমি তখন পাশের একটা দোকান থেকে হালকা কিছু খাবার কিনে খেলাম, তাতে কিছুটা শক্তি ফিরে পেলাম। বলা বাহুল্য, যখন আমাদের বোট ফেটে পানি ঢুকতে শুরু করেছিল তখন আমি বুদ্ধি করে আমার মোবাইল আর মানিব্যাগ এদুটো একটা পলিথিন জড়িয়ে পিঠ ব্যাগের ভেতরের পকেটে রেখে দিয়েছিলাম। ফলে নদী পার হয়ে আমার মোবাইল আর টাকা সেইফ ছিল। বাদবাকি ব্যাগের যাবতীয় জিনিসপত্র ও আমি পুরোটাই ভিজে গেছিলাম।

ওপারে গিয়ে অভিযোগ করার মতো কোন জায়গা পেলাম না। তাছাড়া ঈদের সময়, সবাই ব্যস্ত বাড়ির পানে ছুঁটতে। চিন্তা করলাম কি আর হবে অভিযোগ করে, এসব কখনোই ঠিক হবেনা। নদীর পাড়ে বেশ বাতাস ছিল, সেই বাতাসে কিছুক্ষণ বসে থেকে গায়ের কাপড়-চোপড়গুলো কিছুটা শুকিয়ে নিলাম। এরপর আবারও পরবর্তী গন্তব্যে রওনা দিলাম। এই যে এত বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেল সেটা আমি কাউকে জানালাম না। না বাড়িতে বাবা-মাকে, আর না বৌ-বাচ্চাকে। কেননা, শুনলে তারা প্রচুর টেনশন করবে। তারচেয়ে ভাবলাম কোনরকম শারীরিক ক্ষয়-ক্ষতি ছাড়াই বেঁচে যখন গেছি, ঠিকঠাক বাড়ি পৌঁছি আগে তারপর আস্তে ধীরে সবাইকে জানানো যাবে। এভাবে আবারও যাত্রা শুরু করলাম, সাতক্ষীরা পৌঁছালাম রাত ১১ টার দিকে। শহরেই আমার ফুফুর বাসা, সোজা তার বাসাতেই উঠলাম, ফুফুর সাথে রাতে ঘটনাটা শেয়ার করলাম। পরেরদিন সকালবেলা আমি বাড়ির পথে পা বাড়ালাম (সাতক্ষীরা শহর থেকে আমার বাড়ি আরও ৭-৮ কিলোমিটার দূরে, একেবারে ইন্ডিয়ান বর্ডারের কাছাকাছি)।

ভালভাবেই ঈদ শেষ করলাম। পরেরবার আর এইপথে পা বাড়াইনি। দেরি হয় হোক তবুও স্পীডবোট নদী পারাপার আর নয়। তারপর থেকে আর কখনোই স্পীডবোটে নদীপার হইনি। যতবারই যাতায়াত করেছি হয় লঞ্চে অথবা ফেরীতে পার হয়েছি। আর বর্তমানে তো সেগুলোরও প্রয়োজন নেই। অলরেডি পদ্মা ব্রীজ চালু হয়ে গেছে। এখন আরও দ্রুত ডায়রেক্ট ব্রীজ পার হয়ে বাড়ি যেতে পারি আমরা। আজও আমি এই ঘটনা বাড়িতে বাবা-মাকে জানাইনি, বৌকেও বলি নাই। শুধুমাত্র আমার ফুফু জানতো আর কিছু ফ্রেন্ড ও কলিগকে শেয়ার করেছিলাম।

এই হচ্ছে আমার পদ্মা নদীতে স্পীডবোট ডুবির ঘটনা। যা গত ৪ টি পর্বে বিস্তারিত লিখে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। বারবার আমি আল্লাহর রহমতে বড় বড় দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছি। এটা নিয়ে কখনোই কোথাও লিখিনি। ভাবলাম, স্টিমিটের মত এত সুন্দর একটা প্লাটফর্মে ঘটনাটি লিখে রাখি, হয়তো একদিন এটা অনেকের চোখেই পড়বে এবং ব্রীজ হওয়ার আগে পদ্মা নদীর বিভিন্ন ঘটনাবলী সম্পর্কে মানুষ জানতে পারবে।

সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সাবধানে থাকবেন। আবারও হাজির হবো নতুন কোন লেখা নিয়ে। আশাকরি সবাইকে পাশে পাবো, সবার জন্য শুভ কামনা। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আসলেই স্টিমিটে না আসলে সবার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো শুনাই যেত না। উপরওলার কৃপায় সব কিছু ভাল ভাবে গেছে। আর এই সব ঘটনা পরিবারের সাথে শেয়ার না করাই উত্তম।

হ্যাঁ রোমেন, স্টিমিটে এসে অনেকের অনেক কিছুই জানতে পারছি।

যাক পদ্মা সেতু হয়ে গেছে আর যেন এমন পরিস্থিতিতে না পরেন এইটাই কামনা করি

জী, পদ্মা সেতু হওয়ায় আমাদের ঐ অঞ্চলের তথা খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জনগণ সীমাহীন দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেয়েছে। বিশেষ করে আমার মতো এমন ঘটনার শিকার যে কত হাজারো মানুষ হয়েছে তার হিসাব নাই। আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে আসতে পেরেছি, কিন্তু অনেকেই হয়তো এভাবেই পদ্মায় লাশ হয়েছে।

আল্লাহ মাফ করুন।

হ্যাঁ আল্লাহ এমন বিপদ থেকে সবাইকে রক্ষা করুক

আমিন!