ফিচার | সাতক্ষীরার মাছ | হোয়াইট গোল্ড অব বাংলাদেশ (শেষ পর্ব) | ১০% @btm-school

in hive-185999 •  2 years ago 

2.jpg

(গত পর্বের পর)
চিংড়ির পাশাপাশি মাছের ঘেরে অন্যান্য সকল প্রকার মাছও চাষ করা হয় (স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে সাদা মাছ')। তো এই সাদা মাছের মধ্যে থাকে রুই, কাতলা, মৃগেল, গ্রাস কার্প, মিরর কার্প, সিলভার কার্প, ভেটকি তথা সাদা কোরাল, কালি বাউস, তেলাপিয়া, নাইলোটিকা, মলা, ঢেলা, স্বরপুটি ইত্যাদি। এসব মাছও পোনা ছাড়ার ৫-৬ মাসের মধ্যেই ধরার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। এভাবেই সাতক্ষীরা অঞ্চলের প্রায় সকল মাঠে বিভিন্ন ঘেরে সারাবছর ধরেই এসব মাছ উৎপাদিত হতে থাকে। এই মাছ চাষ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্রীক অর্থনীতিই এ অঞ্চলকে টিকিয়ে রেখেছে। ঘেরের পাড়ের উচু মাটিতে এবং পাড়ঘেঁষে ঘেরের ভেতরে মাচা করে অনেকে নানা প্রকার সবজির চাষ করে থাকেন। সেসব সবজি বাজারে বিক্রয় করেও অনেকে বেশ ভাল ইনকাম করেন।

20211214_095648.jpg

20211214_092207.jpg

ঘেরের মাছ ধরার উপযুক্ত হলে সেগুলো জাল দিয়ে এবং দোয়াড় দিয়ে (চিংড়ি ধরার খাঁচা) ধরে স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন মাছের আড়ৎ বা কমিশন এজেন্টের ঘর থাকে সেখানে বিক্রয় করা হয়। এরপর সেসব আড়ৎ থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা ডাক বা নিলামের মাধ্যমে যাবতীয় মাছ কিনে থাকেন। এসব ব্যবসায়ী আবার দুই ধরণের হয়ে থাকে। এক হচ্ছে ছোট ব্যবসায়ী যারা অল্প টাকার মাছ কিনে স্থানীয় বাজারগুলোতে খুচরা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। আর দুই হচ্ছে বড় ব্যবসায়ী যারা অনেক বেশি অর্থাৎ ট্রাক ভরে নানা রকম মাছ কিনে বরফসহ প্রসেসিং করে সেসব মাছ সরাসরি রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এমনকি দেশের বাইরেও পাঠিয়ে থাকেন।

20211214_095954.jpg

20211214_095118.jpg

সাতক্ষীরা জেলার মোট ৭ টি উপজেলা, এরমধ্যে প্রায় সবগুলো উপজেলায়ই চিংড়ি মাছ চাষ করা হয়। প্রতিটি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে বড় বড় ফসলের মাঠ রয়েছে, সেগুলো বর্তমানে প্রায় সবই মাছের ঘেরের দখলে। অবশ্য বছরে একটা সময় তাতে ধান হয়, কিন্তু অন্যান্য সময় মাছ চাষ হয়ে থাকে। কেননা মাছ চাষে অল্প সময়ে লাভ বেশি হয়ে থাকে। প্রতিটা গ্রামের বাজারে লাইন দিয়ে অনেকগুলো করে মাছের আড়ৎ থাকে, আনুমানিক একেকটা বাজারে প্রায় ৪০-৫০ টি মাছের আড়ৎ থাকে যারা সরাসরি ঘের মালিক ও মাছের ব্যাপারিদের সাথে মাছ কেনা-বেচায় জড়িত। এই মাছের আড়ৎ গুলোকে স্থানীয় ভাষায় 'কাটা' বা 'মাছের কাটা' বলা হয়। এই কাটা কিন্তু মাছের ভেতরের কাটা নয়, এই কাটা শব্দটা এসেছে দাঁড়িপাল্লা বা নিক্তির কাটা থেকে। যেহেতু মাছের আড়তে দাঁড়িপাল্লার সাহায্যে মাছ ওজন করা হয়ে থাকে।

20211214_102504.jpg

20211214_092025.jpg

অনেক সময় শত্রুতাবশত একজন আরেকজনের মাছের ঘেরে গোপনে রাতের আঁধারে বিষ ঢেলে দেয়। তাতে পুরো ঘেরের মাছে মারা যায়। সবগুলো মাছে মরে পানির উপরে ভেসে ওঠে। সেসব মাছ আর কোন কাজে লাগানো যায়না। সেগুলো খাওয়া যায়না আবার বিক্রিও করা যায়না। ঐ ঘের মালিকের অনেক লস হয়ে যায়, অনেকসময় অনেক ঘের মালিক পথে বসে যায়। এজন্য প্রতিটা মাছের ঘেরে উচু পাড়ের উপর ছোট ছোট ঘর বানানো হয়, স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে 'টোঙ ঘর'। এখানে রাতে এক-দুই জন করে পাহারাদার থাকে। মাছ যখন ধরার উপযোগী হয় তখন সারারাত জেগে জেগে এসব পাহারাদারগণ ঘেরের মাছ পাহারা দেন, যাতে কেউ মাছ চুরি করে বা বিষ দিতে না পারে। ছোট ঘেরে একটা করে টোঙ ঘর থাকে, কিন্তু বড় বড় ঘেরে অধিক নিরাপত্তার জন্য চারিপাশে অনেকগুলো করে টোঙ ঘর বানাতে হয়।

IMG-20211213-WA0003.jpg
ছবিঃ যেখানে চিংড়ি চাষ হয় অর্থাৎ 'মাছের ঘের'।

এই ছিল সাতক্ষীরা অঞ্চলের মাছ চাষের উপর ২ পর্বের একটা ছোট্ট প্রতিবেদন। অবশ্য সাতক্ষীরা ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা ও বাগেরহাট জেলায়ও একইভাবে মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। আমার নিজের বাড়ি সাতক্ষীরায় হওয়াতে আমি এসব সম্পর্কে একটু বেশিই জানি, তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আশাকরি আপনারা একটা ভাল ধারণা পেয়েছেন।

সবাই ভাল থাকবেন।
অনেক ধন্যবাদ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

As exciting as a casting spoon!🎣

Many thanks!

Keep growing!🌱 We’ve reposted this.🌳

Thanks dear!

চিংড়ি আমার অনেক প্রিয়

হুম, আমারও!

আমি ছোট বেলায় পাইকগাছা ও সাতক্ষীরা গেছি। আমি আমার জীবনের সব থেকে সুস্বাদু মাছ খেয়েছি ওখানেই এই টুকু একদম গ্যারেন্টির সাথে বলতে পারি।

আমার এলাকা সম্পর্কে এত সুন্দর কমপ্লিমেন্ট দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ দাদা।