ঢাকার শ্যামলীতে আমার বাসা। আমার ফ্ল্যাটটা এগারো তলা বিল্ডিংয়ের দশম তলায়। উপরে থাকার সুবাদে মাঝেমধ্যেই ছাদে যাওয়া হয়। আমাদের বিল্ডিংয়ের ছাদটা অনেক বড়, সুন্দর ও গোছানো। চারিপাশে স্টিল ফ্রেমের রেলিং দেয়া এবং কালারফুল ছাদের টাইলস লাগানো। তাছাড়া সাধারণত উঁচু বিল্ডিংয়ের ছাদের পরিবেশটা অন্যরকম হয়, সবসময় খোলামেলা একটা আবহ বিরাজ করে সেখানে। ছাদের ধার ঘেঁষে রেলিংয়ের পাশ দিয়ে বেশকিছু সবুজ গাছ-গাছালি, প্রচুর ঝিরিঝিরি বাতাস, উপরে খোলা আকাশ, এক নজরে পুরো শহর দেখার অভিজ্ঞতা -সব মিলিয়ে ছাদে গেলে অন্যরকম একটা ফিলিংস কাজ করে।
ছাদে গেলেই মনটা খোলা আকাশের মতো বড় হয়ে যায়। মনের মধ্যে যত দুঃখ, কষ্ট, বেদনা থাকুক না কেন ছাদে যাওয়া মাত্রই এক নিমিষেই মন ভালো হয়ে যায়। প্রচুর বাতাসে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। আমি তো কারণে-অকারণে যখনই সময় পাই ছাদে চলে যাই। প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় ফিরে সবার আগে ছাদে গিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করে তারপর বাসায় ঢুকি। ছুটির দিনে সকালের দিকে বা বিকালের দিকেও ছাদে যাওয়া হয়। অনেক সময় রাতে খাবার খাওয়ার পরে ছাদে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ পায়চারি করে আসি। তাতে শরীরটাও ফিট থাকে আর মনটাও চাঙ্গা থাকে।
রাতের বেলা ছাদের পরিবেশনটা আরও সুন্দর থাকে। একটা ঠান্ডা ঠান্ডা শরীর-মন শীতল করা আবহাওয়া সেখানে থাকে। আমাদের ছাদ থেকে আশেপাশের অনেকদূর পর্যন্ত দেখা যায়। ছাদ থেকে উত্তর-পূর্ব কোণে তাকালে ঢাকা এয়ারপোর্ট দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরপর সেখানকার ছোট-বড় প্লেনের ওঠানামাও দেখা যায়। কিছু কিছু প্লেন এয়ারপোর্ট থেকে টেক-অফ করে সোজা আমাদের ছাদের উপরের আকাশ দিয়ে চলে যায় বিশেষ করে ইন্ডিয়া ও মিডলইস্টের প্লেনগুলো। আমার মোবাইলে প্লেট ট্র্যাক করার একটা অ্যাপ আছে সেটা দিয়ে দেখা যায় কোন প্লেনটা কোথা থেকে আসলো, কোথায় যাবে, কোন কোম্পানীর প্লেন, কতটুকু উচ্চতা ও স্পীডে চলছে ইত্যাদি। রাতের বেলা ছাদে গেলে এগুলো আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খেয়াল করি।
আমাদের বাসার ছাদে যে শুধু আমি একা যাই তা নয়, পুরো বিল্ডিংয়ের অনেকেই নয়মিত ছাদে আসা-যাওয়া করেন। বিশেষ করে ভোরে ফজরের নামাজের পরে বিল্ডিংয়ের অনেক মুরুব্বি ছাদে হাঁটাহাঁটি করতে আসেন। আর বাচ্চারা তাদের মা অথবা বাবার সাথে বিকালের দিকে নানা খেলনা যেমন সাইকেল, ফুটবল ইত্যাদি নিয়ে খেলতে আসে এবং মাগরিবের আজান দেয়ার সাথে সাথে তারা সবাই যার যার বাসায় চলে যায়। সাধারণত সন্ধ্যার পরে খুব প্রয়োজন ছাড়া আর তেমন কেউ ছাদে আসেনা। আমাদের বাসার ছাদে কেউ কাপড় শুকায়না এবং সেই ব্যবস্থাও নেই, কেননা সবার বাসাতেই বড় বড় ৩-৪ টা করে বারান্দা আছে, সেখানেই যাবতীয় কাপড় শুকানোর প্রয়োজন মিটে যায়।
এই লেখাটাও যখন আমি লিখছি আমাদের ছাদে বসেই লিখছি। সন্ধ্যার পরে চারিদিকে কিছুটা আলো-আঁধারির খেলা, ঝিরিঝিরি বাতাস, উপরে খোলা আকাশে দুয়েকটা তারা জ্বলজ্বল করছে, মাঝেমাঝে দুয়েকটা পাখি ও প্লেন সাই সাই করে উড়ে যাচ্ছে, দূরের বিল্ডিংগুলোতে রংবেরংয়ের লাইট জ্বলছে, দূরের রাস্তা দিয়ে লাইট জ্বালিয়ে গাড়িগুলো যাওয়া-আসা করছে। এই মুহুর্তে ছাদে আমি একাই আছি, অবশ্য অধিকাংশ সময় ছাদে আমি একাই থাকি। চারিদিকে আমি এসব দেখছি আর লিখছি, খুব ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে এভাবে লিখতেই থাকি লিখতেই থাকি।
আজ এই পর্যন্ত থাকুক, তা না হলে লেখা বাড়তেই থাকবে। আবারও হাজির হবো নতুন কোন টপিক নিয়ে।
ততক্ষণে সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
সব ঠিক থাক আছে পোস্ট টাতে।অনেক ভালো হয়েছে পোস্ট টা। কিন্তু আমি যে ছাদে যাবো রাতে আমার যে ভয় লাগে ভূতের ।
তাইজন্য আর রাতে আমি এমন দৃশ্য দেখতে পাইনা 🥲।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হা হা হা 😁
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমি তো টাইম ফিক্সড রাখছি প্রতিদিন রাতে ছাদে যাওয়ার জন্য
বাসায় আসলে তো রাতে ছাদে যেতে দেয় না বাট ঢাকায় একদম রেগুলার সময় বের করে যাই
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হুম, মাঝে মাঝে মন ভাল করার জন্য ছাদে যাওয়া উচিত।
ছাদে গিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকালেই মন ভাল হয়ে যায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি ভাইয়া
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit